তুর্কমেনিস্তান কর্তৃপক্ষ দোকানিদের সিগারেট বেচা বন্ধ করতে বাধ্য করছেন, বলে জানিয়েছেন আশগাবাতের দোকানিরা৷ প্রেসিডেন্ট গুর্বাঙ্গুলি বের্দিমুখামেদভ দেশবাসীদের ধূমপান ছাড়তে বলেছেন৷
বিজ্ঞাপন
মাদক প্রতিরোধী কর্মকর্তারা দৃশ্যত দোকানে দোকানে ঢুকে দোকানিদের তাক থেকে সিগারেটের প্যাকেট সরাতে বলছেন – নয়ত বিপুল ফাইন হবে বলে ভয় দেখাচ্ছেন৷ প্রেসিডেন্ট বের্দিমুখামেদভ গত ৫ই জানুয়ারি একটি সরকারি বৈঠকে দেশের ধূমপান প্রতিরোধ নীতির সমালোচনা করেন৷ বৈঠকটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়৷
বের্দিমুখামেদভ নিজে আগে দাঁতের ডাক্তার ছিলেন৷ তুর্কমেনিস্তানের সরকারি মাদক প্রতিরোধী সংস্থার নাম হল ‘স্বাস্থ্যবান সমাজের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রীয় পরিষেবা'৷ বের্দিমুখামেদভ এই সংস্থার কাছ থেকে ‘‘ধূমপান দূরীকরণের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ'' দাবি করেছেন৷
ধূমপান ছাড়ার পর শরীরে যা যা ঘটে
একটি সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে দুশো’রও বেশি বিষাক্ত পদার্থ যা শরীরের জন্য একটি বোঝা৷ কিন্তু ধূমপান বন্ধ করার ঠিক পরপরই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে কী ভাবে পরিবর্তন ঘটে, তারই কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Fotolia/Rumkugel
মাত্র ২০ মিনিট বিরতির পর
শেষ ধূমপানের মাত্র ২০ মিনিট পরেই শরীরের রক্তচাপ ও নাড়ির গতি স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ ধূমপানের সময় সিগারেটের নিকোটিন শরীরের নার্ভ সিস্টেমকে সক্রিয় রাখার ফলে যতটুকু বেড়ে গিয়েছিলো তা আবার নামিয়ে নিয়ে আসে৷
ছবি: Fotolia/Andrei Tsalko
১২ ঘণ্টা ধূমপান না করলে যা হয়
সিগারেটের জ্বলন্ত আগুন থেকে বের হওয়া যে বিষাক্ত গ্যাস শরীর গ্রহণ করেছিলো, তা ১২ ঘণ্টা পর থেকে স্বাভাবিক হয়ে আসে৷ এবং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে থাকে কারণ ধূমপান করার সময় রক্তে অক্সিজেন যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে৷
ছবি: Fotolia/ Gina Sanders
সিগারেট ছাড়া দুই দিন
ধূমপানের কারণে স্বাদ ও গন্ধ নেওয়ার যে ক্ষমতা কমে গিয়েছিলো, তা ধূমপান বন্ধ করার মাত্র দুইদিন পরেই বাড়তে শুরু করে৷
ধূমপান বন্ধের তিনদিন
ধূমপান থেকে বিরত থাকার তিনদিন পরে থেকেই বুকের ভেতরটা হালকা মনে হয় এবং শ্বাস ক্রিয়া সহজ হয়, কারণ তখন আর শরীরের ভেতরে নিকোটিন থাকেনা৷ আর সে কারণেই ধূমপান না করার লক্ষণগুলো ভালোভাবে ধরা পড়ে বা বোঝা যায়৷ তখন মাথাব্যথা, বমিভাব, প্রচণ্ড ক্ষুধা পাওয়া, হতাশা বা আতঙ্কভাব হয়ে থাকে৷
ছবি: Andrzej Wilusz/Fotolia
ধূমপান বন্ধের কয়েক মাস পর
ধূমপান বাদ দেওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় শরীরে রক্ত চলাচল অনেক ভালোভাবে হচ্ছে৷ আর আগের তুলনায় ফুসফুস শতকরা ৩০ ভাগ বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে এবং কাশিভাবও কমতে শুরু করে৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Kaulitzki
ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার এক বছর, ১০ বছর বা ১৫ বছর পর
ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার এক বছর পর থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়৷ তাছাড়া দশ বছর ধূমপান না করলে একজন ধুমপায়ীর ফুসফুসের ক্যানসারে মারা যাওয়ার ঝুঁকির তুলনায় অর্ধেক কমে যায়৷ শুধু তাই নয়, ১৫ বছর ধূমপান থেকে বিরত থাকলে তার করোনারি হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়, যে জীবনে কখনো ধূমপান করেনি তার মতো৷
ছবি: Fotolia/Alexander Raths
6 ছবি1 | 6
সে'যাবৎ দোকানিরা লুকিয়ে-চুরিয়ে নিয়মিত খদ্দের আর বন্ধুবান্ধবের কাছে সিগারেট বিক্রি করছেন, খোলাখুলিভাবে নয়৷ অথচ সিগারেট বিক্রির ওপর কোনো সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি৷ তবুও এই অলিখিত ও অবিজ্ঞপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ফাইন নাকি প্রায় দশ মাসের মাইনের সমান – বলছেন দোকানিরা৷
এর একটি ফল হয়েছে এই যে, এক প্যাকেট চোরাই সিগারেটের দাম ২৫ মানাট থেকে বেড়ে ৫০ মানাট, অর্থাৎ ১৪ ডলারের বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ দাম বেশি হওয়ায়, খোলা বা খুচরো সিগারেটের দাম বাড়ছে –আপাতত সিগারেট প্রতি দুই মানাট, জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা৷
ধূমপান ও মদ্যপানে এগিয়ে ইউরোপীয়রা
অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপীয়রা সবচেয়ে বেশি মদ্যপান ও ধূমপান করেন৷ সময়মতো সতর্ক না হলে ফলাফল ভয়ঙ্কর৷ তাই এ ব্যাপারে ইউরোপীয়দের সাবধান করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা৷
যা মোটেই সুখের নয়
ডাব্লিউএইচও-র লন্ডন প্রতিনিধি ক্লাউডিয়া স্টাইন বলেন ‘‘অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপীয়রা মদ্যপান ও ধূমপান বেশি করেন৷ তাছাড়াও অতিরিক্ত ওজনের কারণে হৃদরোগ, ক্যানসার ও অন্যান্য অসুখের ঝুঁকিও বেশি৷ এদিক দিয়ে আমরা বিশ্ব রেকর্ড করেছি, যা মোটেই সুখের নয়৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Fluger
বেশিরভাগ মানুষই মোটা
যে সময়ে অন্যান্য দেশে এসব সমস্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে, তখন ইউরোপে তামাক, মদ অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা বাড়ছে৷ ইউরোপের শতকরা ৬০ ভাগ মানুষই অতিরিক্ত মোটা৷ যদিও অ্যামেরিকাই অতিরিক্ত মোটা মানুষের দিক থেকে এক নম্বরে রয়েছে৷ তারপরেই ইউরোপের স্থান৷ ইউরোপের শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ ধূমপান করেন৷ আর মদ্যপান করেন মাথাপিছু বছরে ১১ লিটার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hesse
গড় আয়ু কমার আশঙ্কা
ইউরোপীয়রা যেভাবে মদ ও ধূমপান করেন, এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের ইউরোপীয়দের গড় আয়ু কমবে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷ এই সমীক্ষাটি করা হয়েছে ইউরোপের ৩৯টি দেশের যাতে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রও ছিলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইতিবাচক দিক
আরেকটি সমীক্ষা করা হয় অ্যামেরিকাসহ মোট ৫৩টি দেশে – যার মধ্যে পুরো রাশিয়া এবং তুর্কমেনিস্তানও রয়েছে৷ তবে ইতিবাচক দিক হলো,২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মদ্যপানের মাত্রা শতকরা ১০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পেনের মাধ্যমে৷
ছবি: Imago/teutopress
কম মদ্যপান মুসলিম দেশগুলোতে
সবচেয়ে বেশি অ্যালকোহল পান করা হয় বেলারুশ এবং লিথুয়েনিয়ায়৷ সমীক্ষায় জানা গেছে সবচেয়ে কম মদ্য পান করা হয়েছে তুরস্ক ও আজারবাইজানের মতো মুসলিম দেশগুলোতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
5 ছবি1 | 5
বের্দিমুখামেদভ ২০০৬ সাল যাবৎ তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান৷ তিনি ইতিপূর্বেও ধূমপান বিরোধী অভিযান চালিয়েছেন৷ কারণ যাই হোক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠনের বিবৃতি অনুযায়ী বিশ্বের সব দেশের মধ্যে তুর্কমেনিস্তানেই আজ ধূমপায়ীদের অনুপাত সবচেয়ে কম – মাত্র আট শতাংশ৷
বের্দিমুখামেদভের আগে দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন সাপারমুরাত নিয়াজভ, যিনি ছিলেন চেন স্মোকার৷ হার্ট সার্জারির পর ২০০০ সালে স্মোকিং ছাড়েন নিয়াজভ, পরে একটি ধূমপান প্রতিরোধী অনুশাসনেও স্বাক্ষর করেছিলেন৷ ধীরে ধীরে আরো কড়া বিধিনিষেধ এসেছে৷ ২০১১ সালে তামাকের উপর শুল্ক বাড়ানো হয়; ২০১৩ সালে প্রকাশ্য স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়৷
ফলে প্রাক্তন সোভিয়েত রাজ্যগুলির মধ্যে তুর্কমেনিস্তানেই আজ সিগারেটের দাম সবচেয়ে বেশি৷ সেটা তাদের সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য, সেটা তুর্কমেনিরাই বলতে পারবেন৷
এসি/ডিজি (এএফপি)
বাংলাদেশ এমন ধূমপান বিরোধী অভিযানের কি প্রয়োজন আছে? জানান নীচের ঘরে৷
বাংলাদেশে ২৪ শতাংশ মানুষ ধূমপায়ী
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্ব ফুসফুস ফাউন্ডেশন ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা ধরণের কর্মসূচি পালন করে৷ তারপরও ধূমপান খুব একটা কমানো যাচ্ছে না৷ ছবিঘরে দেখুন বিশ্বের কোন দেশে কত ধূমপায়ী...৷
ছবি: Colourbox/A. Armyagov
সার্বিয়ায় সবচেয়ে বেশি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, শতকরা হারে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ ধূমপান করে সার্বিয়ায়৷ দেশের মোট জনসংখ্যার ৪১ ভাগই ধূমপায়ী৷ সার্বিয়ার একজন ধূমপায়ীর প্রতি বছর গড়ে মোট ২ হাজার ৮৬১টি সিগারেট লাগে৷
ছবি: Getty Images/C. Hondros
বুলগেরিয়ার ধূমপায়ীরাও কম যান না
মাথাপিছু মোট সিগারেটের হিসেবে সার্বিয়ার পরই আছে ইউরোপের আরেক দেশ বুলগেরিয়া৷ সেখানে মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশই ধূমপানে অভ্যস্ত৷ ইউরোপে সিগারেটের অনেক দাম৷ তারপরও ধূমপায়ীরা কিন্তু সিগারেট ঠিকই কিনছেন৷ বুলগেরিয়ায় একজন ধূমপায়ী গড়ে প্রতিবছর ২ হাজার ৮২২টি সিগারেটের ধোঁয়া পান করেন৷
ছবি: Getty Images/N. Doychinov
গ্রিসও বা কম কিসে!
শতকরা হারে আবার গ্রিস বুলগেরিয়ার চেয়ে এগিয়ে৷ সে দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৪ শতাংশই ধূমপায়ী৷ আশেপাশের দেশগুলোর তুলণায় গ্রিসে সিগারেটের দাম অনেক বেশি৷ তারপরও ধূমপায়ী খুব একটা কমছে না৷ গ্রিসের একজন স্বাভাবিক ধূমপায়ীর বছরে গড়ে ২,৭৯৫টি সিগারেট লাগে৷
ছবি: Getty Images/A. Messinis
রাশিয়ার শতকরা ৩৮ ভাগ মানুষ ধূমপায়ী
এই ৩৮ ভাগ অবশ্য সার্বিয়া, গ্রিস এবং বুলগেরিয়ার তুলনায় কমই৷ ওই দেশগুলোর তুলনায় রাশিয়ার সিগারেটের দামও কম৷ তাই সে দেশের একজন স্বাভাবিক ধূমপায়ীর বছরে গড়ে ২ হাজার ৭৮৬টি সিগারেটের দরকার হতেই তো পারে৷
ছবি: Getty Images/A. Utkin
ইউক্রেনে নারী ধূমপায়ী বাড়ছে
ইউক্রেনে গত কয়েক বছরে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা বেশ বেড়েছে৷ সিগারেটের বিক্রিও বাড়ছে বৈ কমছে না৷ ইউক্রেনের একজন ধূমপায়ী বছরে অন্তত ২ হাজার ৪০১টি সিগারেট পান করেন৷
ছবি: Getty Images/A. Stepanov
এশিয়ায় প্রবণতা কিছুটা কম
সার্বিয়া, গ্রিস, বুলগেরিয়া, রাশিয়া, ইউক্রেনের পর একে একে এসেছে বসনিয়া, বেলারুশ ও চেক প্রজাতন্ত্রের নাম৷ অর্থাৎ ওপরের দিকে সবই ইউরোপীয় দেশ৷ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে আছে দক্ষিণ কোরিয়া৷ সরকার সে দেশে ধূমপান কমানোর জন্য সিগারেটের দাম দ্বিগুণ করেছে৷ এখনো একজন ধূমপায়ীর সেখানে বছরে গড়ে ১ হাজার ৯৫৮টি সিগারেট দরকার হয়৷ দামবৃদ্ধির ফলে তাঁদের ধূমপানের প্রবণতা কমবে বলেই মনে করছে সরকার৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Yeon-Je
বাংলাদেশে কি অবস্থা একটু ভালো?
তা বলা মুশকিল৷ কেননা ডাব্লিউএইচও যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তা ২০১০ সালের৷ তখনই বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৪ ভাগই ছিলেন ধূমপায়ী৷ তাছাড়া মোট পুরুষের ৪৫ ভাগই তখন ধূমপান করতেন৷ অবশ্য মোট নারীর মধ্যে মাত্র একভাগ তখন নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ধূমপান করতেন৷