সিরিয়ায় কুর্দিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে তুরস্ক৷ এই হামলা বন্ধের দাবিতে জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দিরা প্রতিদিন বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করছেন৷ তুর্কিরা এসব বিক্ষোভে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার ল্যুডেনশাইড শহরে কুর্দি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তুর্কিদের সংঘর্ষের সময় ৫০ বছর বয়সি এক তুর্কি নাগরিক ছুরিকাহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে৷
ঐ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ নয়জন আহত হন৷
একইদিন বট্রপ শহরে আরেকটি সংঘর্ষে আটজন সামান্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে৷ পুলিশ বলছে, প্রায় ৫০ জন কুর্দি অনুমতি নিয়ে একটি বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছিলেন৷ সেই সময় একদল তুর্কি বিক্ষোভে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন৷ ‘‘সেখানে উসকানি ও পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে,’’ বলে জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা৷
কুর্দি কারা, কোথায় থাকে?
কুর্দিশ ইন্সটিটিউট অফ প্যারিসের ২০১৭ সালের হিসেবে বিশ্বে কুর্দিদের আনুমানিক সর্বোচ্চ সংখ্যা সাড়ে চার কোটির বেশি৷ আর্মেনিয়া, ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও তুরস্কে বেশিরভাগ কুর্দির বাস৷
ছবি: Reuters/A. Lashkari
কুর্দির সংখ্যা ও ধর্ম
কুর্দিশ ইন্সটিটিউট অফ প্যারিসের ২০১৭ সালের হিসেবে বিশ্বে কুর্দিদের আনুমানিক সর্বোচ্চ সংখ্যা সাড়ে চার কোটির বেশি৷ তাদের বেশিরভাগই সুন্নি মুসলমান৷ বাকিরা শিয়া, অ্যালেভিজম, ইয়াদিজম, ইয়ারসানিজমসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী৷ কুর্দিদের ভাষা অনেকটা ফার্সির মতো৷
ছবি: AFP/D. Souleiman
স্বাধীনতার প্রায় কাছাকাছি
অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ দিকে ১৮৯০ দশকে কুর্দি জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিতে কুর্দিদের স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল৷ কিন্তু মাত্র তিন বছর পরই সেই চুক্তি ছিড়ে ফেলেন তুর্কি নেতা কামাল আতাতুর্ক৷ এরপর ১৯২৪ সালে অনুমোদন পাওয়া আরেক চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্টি হওয়া দেশগুলোর মধ্যে কুর্দিদের আবাসস্থল ভাগ হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
যেখানে থাকে
বর্তমানে বেশিরভাগ কুর্দির বাস আর্মেনিয়া, ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও তুরস্কে৷ সেসব দেশে তারা মাঝেমধ্যে স্বশাসনের দাবি তুলে ধরে৷ এছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে কুর্দিরা বাস করেন৷
ছবি: Getty Images/C. Court
সিরিয়া
আরব বসন্ত শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যার ৮-১০ শতাংশ ছিল কুর্দি৷ ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়তে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ আর সিরিয়ার সরকার মূলত ব্যস্ত ছিল সুন্নি আরব বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে৷ ফলে একসময় কুর্দিরা সিরিয়ার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে সক্ষম হয়৷ তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার কুর্দি এলাকা থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিলে তুরস্ক সেখানে হামলা শুরু করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
তুরস্ক
তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ কুর্দি৷ স্বশাসনের দাবিতে ১৯৮৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি, পিকেকে৷ সেই থেকে সংঘাতে প্রায় ৪০ হাজার জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্ক পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে৷ তুর্কি প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান অবশ্য কুর্দি ভাষা ব্যবহারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Al-Khatib
ইরাক
উত্তরাঞ্চলের তিন রাজ্যে কুর্দিদের বাস৷ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫-২০ শতাংশ৷ ১৯৮০-র দশকে সাদ্দাম হোসেন কুর্দিদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করেছিলেন৷ ২০১৪ সালে আইএস ইরাকের একটি অংশ দখল করলে কেন্দ্রীয় সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে৷ সেই সুযোগ কির্কুকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল কুর্দিরা৷ পরে ২০১৭ সালে স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটের আয়োজন করে ব্যর্থ হয় তারা৷ উলটো বাগদাদের কাছ থেকে প্রতিশোধের শিকার হয় কুর্দিরা৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Mohammed
ইরান
ইরানের জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ কুর্দি৷ তুরস্কের পিকেকে সংগঠনের অনুসারী ইরানের ‘পার্টি অফ ফ্রি লাইফ অফ কুর্দিস্তান’এর বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি নিয়োগ করা হয়েছিল৷ সংগঠনটি ইরানের কুর্দিদের জন্য আরও বেশি সায়ত্ত্বশাসনের দাবি জানিয়েছিল৷ ইরানের কুর্দিরা বৈষম্যের শিকার ও তাদের নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করে থাকে৷
ছবি: IRNA
7 ছবি1 | 7
দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন৷
পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
এর আগে সোমবার হ্যার্নে শহরে কুর্দিদের বিক্ষোভের সময় তুর্কিরা উসকানি দিলে কুর্দিরা তুর্কি মালিকানাধীন একটি ক্যাফে ভাঙচুর করেন৷
ঐ সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন আহত হয়েছিলেন৷
জার্মানিতে তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি৷ এর মধ্যে কুর্দিদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি৷
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ৯ অক্টোবর শুরু হওয়া অভিযানের কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন৷ নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাধারণ নাগরিক৷