বৃহস্পতিবার তুরস্কের ইসলামপন্থি সরকারি দলের চারজন পার্লামেন্ট সদস্য হিজাব পরে পার্লামেন্টে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ কয়েক সপ্তাহ আগে মাথায় স্কার্ফ পরার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর, তাঁরাই প্রথম হিজাব পরে সেখানে গেলেন৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্কে দীর্ঘ সময় ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীদের হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল৷ কেননা, আগের সব সরকারই ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে নারীদের হিজাব করা বা পরার অনুমোদন করেনি৷
কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ গণতান্ত্রিক সংস্কার আর নারী স্বাধীনতার অংশ হিসেবে গত এই ঘোষণা দেন তিনি৷
এর্দোয়ানের দল জানায়, নাগরিক অধিকারের অংশ হিসেবেই এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে, কেননা এর আগে মুসলিম নারীরা নিজেদের আস্থা ও বিশ্বাস জনসমক্ষে প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করত৷ তবে এখনও বিচারপতি, আইনজীবী, পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে৷
জার্মানিতে সফল কয়েকজন তুর্কি
১৯৮২ সালে জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল বলেছিলেন, তিনি জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিদের সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেকে নিয়ে আসতে চান৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানির কয়েকজন সফল মানুষের কথা, যাদের শেকড় তুরস্কে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
চিত্র পরিচালক ফাতিহ আকিন
ফাতিহ আকিন জার্মানির চিত্রজগতের সুপারস্টারদের মধ্যে একজন, যার আন্তর্জাতিক পরিচিতি রয়েছে৷ তাঁর অভিনীত ছবি ‘গেগেন ডি ভান্ড’ (দেয়ালের বিপরীতে) ছবির জন্য তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কারও পেয়েছেন৷ সেগুলোর মধ্যে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব বার্লিনালের ‘গ্লোডেন বেয়ার’ও রয়েছে৷ তাঁর বাবা, মা দুজনই তুরস্ক থেকে এসেছেন৷ ফাতিহ আকিনের জন্ম ১৯৭৩ সালে জার্মানির হামবুর্গ শহরে৷
ছবি: dapd
রাঁধুনি আলি গ্যুনগোরমুস
গ্যুনগোরমুস ২০০৬ সালে একটি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সেরা রাঁধুনির পুরস্কার লাভ করেন৷ তাঁর ‘ল্য কানার নুভো’ নামের রেস্তোরাঁটি নামকরা রেস্তোরাঁর মধ্যে একটি৷ আলি ১০ বছর বয়সে তুরস্ক থেকে এসেছেন৷ ৩৭ বছর বয়সি আলি বলেন, তিনি যে একটি দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছেন সেটাই তাঁকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা যুগিয়েছে৷
ব্যবসায়ী ভুরাল ওয়গার
ব্যবসায়ী ভুরাল ওয়গার ১৯৬০ সালে তুরস্ক থেকে জার্মানিতে এসেছেন৷ তিনি পড়াশোনা শেষ করার পর একটি আন্তর্জাতিক ট্রাভেল এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন৷ যেটা জার্মানির বৃহত্তম ট্রাভেল এজেন্সি হিসেবে গড়ে উঠে৷ তিনি ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এসপিডি দলের হয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য ছিলেন৷ তাঁর আন্ত:সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য তাঁকে জার্মানির সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘জার্মান সেবা পদক’ দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাজনীতিক: সেম ওসডেমিয়ার
তুর্কি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে সেমি ওসডেমিয়ারই প্রথম যিনি ১৯৯৪ সালে সবুজ দলের সদস্য হিসেবে জার্মানির সংসদ সদস্য হন৷ শুধু তাই নয়, পরে তিনি সবুজ দলের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন৷ তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের অন্তর্ভুক্তির একজন সমর্থক৷ ওসডেমিয়ার জার্মান স্কুলে তুর্কি ভাষা শিক্ষা দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উপস্থাপিকা নাজান একেস
হাসি মুখে যিনি বসার ঘরের টিভিতে উপস্থিত হন তিনি হচ্ছেন নাজান একেস৷ তিনি জার্মানির একজন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপিকা৷ অভিবাসী তুর্কি বাবা-ময়ের সন্তান নাজান ছোট বড় অনেক টিভি অনুষ্ঠানেই উপস্থাপনা করেন৷ ২০১০ সালে নাজানের পরিবারের গল্প নিয়ে তাঁর লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়েছে৷ তিনি সামাজিক কর্মকান্ডের সাথেও জড়িত৷ ২০১১ সাল থেকে তিনি জার্মান সরকারের ইন্টিগ্রেশন কাউন্সিল-এ আছেন৷
ছবি: Getty Images
জার্মান ফুটবল দলের খেলোয়াড় মেসুত ওজিল
মেসুত ওজিল জার্মান ফুটবল তারকাদের একজন৷ তুর্কি বাবা মায়ের সন্তান ওজিল জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালে জার্মান জাতীয় ফুটবল দলে খেলার সুযোগ লাভ করেন৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় ফুটবল প্রেমীদের হৃদয় জয় করায় তাঁকে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল৷ মেসুত ওজিল জার্মানির সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেলমুট কোলের বিতর্কিত বিবৃতি
জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল ১৯৮২ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে বলেছিলেন, তিনি জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিদের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে ফেলতে চান৷ কারণ তাঁর মনে হয়েছিল, তুর্কিরা জার্মান সমাজের সঙ্গে নিজেদের ভালভাবে খাপ খাওয়াতে পারছেন না৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানির কয়েকজন সফল তুর্কি বংশোদ্ভূত নাগরিকের কথা৷
ছবি: Keystone/Getty Images
7 ছবি1 | 7
বৃহস্পতিবার চার নারী সংসদ সদস্য যখন হিজার পরে পার্লামেন্ট কক্ষে প্রবেশ করেন, তখন প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি'-র অন্য সদস্যরা তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান৷ নারীদের একজন নুরকান ডালবুডাক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, একটি নতুন যুগের শুরু হলো, যার নেতুত্ব দিলেন তাঁরা৷ এমনকি এ ঘটনার সাক্ষীও থাকলেন৷
অপর এক নারী সদস্য গোনুল বেকিন সাকুলুবে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান যে, তাঁরা হজ করে এসে স্কার্ফ পরা শুরু করেছেন৷ আর এখন থেকে কখনোই এটা খুলে ফেলার প্রয়োজন পরবে না বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর বিশ্বাস, সবাই তাঁর এই পদক্ষেপের প্রতি সম্মান করবেন৷
উল্লেখ্য এর আগে, বিরোধী দল ‘রিপাবলিকান পিপলস পার্টি'-র সদস্যরা হিজাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও সেদিন তাঁরা কোনো মন্তব্য করেননি৷
১৯৯৯ সালে তুর্কি-মার্কিন সংসদ সদস্য মার্ভে কাভাচি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হিজাব পরে এলে তাঁকে তাতে অংশ নিতে দেয়া হয়নি৷ তাঁকে পার্লামেন্ট থেকে কেবল বেরই করে দেয়া হয়নি, তুরস্কের নাগরিকত্বও বাতিল করে দেয়া হয়েছিল৷