জার্মানির কয়েকটি গণমাধ্যম বলছে, দেশটিতে থাকা ন্যাটোর বিভিন্ন ঘাঁটিতে কর্মরত তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে বলেও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে৷
জার্মানির দুটি রাজ্যের সরকারি প্রচারমাধ্যম ডাব্লিউডিআর ও এনডিআর এবং দৈনিক স্যুডডয়চে সাইটুং পত্রিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলছে, তুর্কি সেনাসদস্য, কূটনীতিক, বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ৪১৪টি আশ্রয়ের আবেদন এসেছে৷ এই সংখ্যার মধ্যে পরিবারের সদস্যরাও আছেন৷ ৪১৪ জনের মধ্যে ২৬২ জন আবেদনকারীর কূটনীতিক পাসপোর্ট বলেও জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ তবে আবেদনগুলোর মধ্যে কতগুলো সামরিক বাহিনীর সদস্যদের, সেটি নির্দিষ্ট করে বলেনি মন্ত্রণালয়৷
আবেদনগুলোর মধ্যে কতগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, সেটি প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়নি৷ তাছাড়া আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করে যে সরকারি সংস্থা, সেই ‘ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজিস' বা বিএএমএফ-এরও সরাসরি কোনো মন্তব্য নেই সেখানে৷
তবে সংস্থাটির বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম বেশ কয়েকটি আশ্রয় আবেদন অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷
এর্দোয়ানের পক্ষে, বিপক্ষে যারা
ক্ষমতা বাড়ানোর গণভোটে জয়ের পর এর্দোয়ানকে নিয়ে আলোচনা চলছে গোটা বিশ্বেই৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ তুর্কি তাঁর ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, তবে বিপক্ষেও আছেন অনেক মানুষ৷ রবিবারের সেই গণভোটের পর বিক্ষোভ হয়েছে ইস্তানবুলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
প্রতিবাদ, গ্রেপ্তার
রবিবারের গণভোটের পর থেকে তুরস্কের ইস্তানবুলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছিলেন রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর বিপক্ষে থাকা একদল প্রতিবাদকারী৷ শুরুতে পুলিশ তাদের বাধা না দিলেও বুধবারের খবর হচ্ছে, অন্তত ৩৮ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/K. Aslan
অল্প ব্যবধানে জয়
তুরস্ক সরকারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, রবিবার ভোট দেওয়া তুর্কিদের মধ্যে ৫১ দশমিক চার শতাংশ ভোটর ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন৷ এই ভোট সেদেশের প্রেসিডেন্টের হাতে অভূতপূর্ব ক্ষমতা তুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট৷ বিক্ষোভকারীরা অবশ্য মনে করছেন, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হয়নি৷ ৬০ শতাংশ ভোট পুর্নগণনার দাবি জানিয়েছেন এর্দোয়ানের বিরোধী পক্ষ৷
ছবি: Reuters/K. Aslan
অভিনব প্রতিবাদ
ইস্তানবুলে প্রতিবাদকারীরা হাড়ি পাতিল হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন৷ তারা সেসব দিয়ে শব্দ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ কেউ কেউ আবার এর্দোয়ানকে ‘চোর, খুনি’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিক্ষোভের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
ভিন্নচিত্র
তুরস্কের সামগ্রিক চিত্রটা অবশ্য ভিন্ন৷ এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষের মানুষরা তুরস্কের বিভিন্ন শহরে আনন্দ মিছিল করেছেন৷ অনেক নারীও তাঁকে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
এর্দোয়ানের জনপ্রিয়তায় কমতি নেই
একরোখা আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর্দোয়ান এক সমালোচিত চরিত্র হলেও নিজের দেশের জনগণের মধ্যে তাঁর সমর্থন তেমন একটা কমেনি বলেই মনে হচ্ছে৷ গতবছর তাঁর বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছিল কার্যত জনগণ প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের পাশে থাকায়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Pitarakis
‘ডিক্টেটর’ এর্দোয়ান?
গণভোটে জয়ের পর এর্দোয়ান কি ‘ডিক্টেটরদের’ মতো ব্যবহার শুরু করবেন? এটা সত্য যে, এর ফলে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে৷ তুরস্কের সংবিধানে পরিবর্তন আনার ইচ্ছা বহু আগেই প্রকাশ করেছিলেন তিনি৷ এখন সে পথ পরিষ্কার৷ তবে সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, গণভোট তাঁকে ‘ডিক্টেটর’ বানাচ্ছে না৷ বরং নতুন ব্যবস্থা তাংর জন্যনয়, তুরস্কের মঙ্গলের জন্যই, বলেন এর্দোয়ান৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M. Meissner
6 ছবি1 | 6
গণমাধ্যমের তথ্য সত্য হলে বিষয়টি তুর্কি-জার্মান সম্পর্ককে আরও সংকটে ফেলতে পারে, কারণ, গত জানুয়ারিতে তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিকরি ইসিক তুর্কি কর্মকর্তাদের আশ্রয়ের আবেদন অনুমোদন না করতে জার্মানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ তুর্কি সরকার মনে করে, এই কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফেতুল্লাহ গ্যুলেনের সমর্থক এবং তাঁরা গত বছরের জুলাইতে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ উল্লেখ্য, এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পেছনে গ্যুলেনকে দায়ী করে তুর্কি সরকার৷ তবে গ্যুলেন ও তাঁর সমর্থকরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
ঐ ঘটনার পর তুর্কি সরকার হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছে৷ শুধু গত সপ্তাহেই একশ' জন বিচারক ও আইনজীবীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে৷ তার আগের সপ্তাহান্তে প্রায় চার হাজার জনকে চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়৷ এর আগে এপ্রিলের ২৬ তারিখ প্রায় নয় হাজার একশ' জন পুলিশকে বরখাস্ত করা হয়৷
তুর্কি-জার্মান সংকট
গত মাসে তুরস্কে অনুষ্ঠিত গণভোটের আগে দুই দেশের সম্পর্কে সংকট শুরু হয়৷ ঐ গণভোট নিয়ে জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিদের মধ্যে প্রচারণা চালাতে তুর্কি মন্ত্রীদের জার্মানি সফর নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছিল৷ এরপর জার্মান-তুর্কি সাংবাদিক ডেনিস ইউচেলকে সন্ত্রাসের অভিযোগে তুরস্কে গ্রেপ্তারের বিষয়টিরও সমালোচনা করে জার্মানি৷ইউচেল জার্মানির দৈনিক ‘ডি ভেল্ট'-এ কর্মরত ছিলেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, ইউচেলের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হচ্ছে তা ‘সাংবিধানিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷'
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ, কেএনএ)
আংকারার বস্তির ভোটারদের মাঝে অনিশ্চয়তা
আংকারার নিম্ন আয়ের মানুষরা আগের তুলনায় প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের আমলে সামাজিক এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি পেয়েছেন৷ তাসত্ত্বেও আসন্ন গণভোটে এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত কিনা – সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন তাঁরা৷
ছবি: DW/D. Cupolo
ধোঁয়ার মধ্যে বসবাস
তুরস্কের নিম্ন আয়ের মানুষরা যে এলাকায় বাস করেন, সেখানকার আকাশ শীতের মাসগুলোয় ধোঁয়ায় ঢাকা থাকে৷ মূলত ঘর গরম রাখতে যে কয়লা ব্যবহার করা হয়, তারই ধোয়া জড়ো হয়ে থাকে এভাবে৷ এর্দোয়ান নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিনা পয়সায় কয়লার সংস্থান করে দিয়েছেন, দিয়েছেন অন্যান্য সুবিধাও৷ অবশ্য এতেও তাঁর পকেটে ভোট পড়বে কিনা, তা নিশ্চিত নয়৷
ছবি: DW/D. Cupolo
দ্বিধান্বিত ভোটাররা
আগামী রবিবার তুর্কিরা এক গণভোটে অংশ নেবেন, যার মাধ্যমে তুরস্কের সংসদীয় ব্যবস্থা বদলে গিয়ে আদৌ এর্দোয়ান এবং তাঁর একেপি দলের নেতৃত্বাধীন প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থায় রূপ নেবে কিনা – তা নির্ধারণ করা হবে৷ তবে গণভোটে এর্দোয়ানের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় কিছু কম নয়৷
ছবি: DW/D. Cupolo
গরিবের দল
‘‘আমার স্বামী যখন বেকার ছিলেন, তখন আমি ঘর গরম রাখার কয়লা কোথায় পাবো, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম৷ একেপি আমাদের বিনা পয়ায় কয়লা দিয়েছে৷ এর মাধ্যমে আমি বুঝতে পেরেছি যে, দলটি গরিবের জন্য৷’’ এ কথা বলেন তিন সন্তানের মা এমেল ইলদিরিম৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘আগে ডাক্তার দেখানো অনেক কঠিন ছিল৷ কিন্তু এখন হাসপাতালগুলো গরির রোগীদের নেওয়ার ব্যাপারে অনেক উদার৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
কুর্দদের ভোট
ইলদিরিম, যিনি কুর্দ, তুরস্ক রাষ্ট্র এবং কুর্দি যোদ্ধাদের মধ্যকার সংঘাত সম্পর্কেও উদ্বিগ্ন৷ ‘‘এর্দোয়ান যদি ‘হ্যাঁ’ ভোট পান, তাহলে পরিস্থিতি ভালো হতে পারে৷ তিনি বলেছেন, তিনি শান্তির পক্ষে,’’বলেন ইলদিরিম৷ তবে ‘‘সেলাহাতিন দিমিত্রাসকে (কুর্দি বিরোধী নেতা) যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে তিনি বলবেন যে, এর্দোয়ান কুর্দিদের তাঁদের রক্তের মধ্যে ডুবিয়া মারবে৷ তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার জন্য কঠিন’’, বলেন তিনি৷
ছবি: DW/D. Cupolo
সংশয় বাড়ছে
ক্যাম্পেইনের ব্যানার দিয়ে একটি কোওচ ঢেকে রাখা হয়েছে৷ আংকারার এই এলাকায় এর্দোয়ানকে নিয়ে মিশ্র অনুভূতি রয়েছে৷ কলিজার স্যান্ডউইচ বিক্রেতা ২৫ বছর বয়সি আলী বলেন, ‘‘গত ১৫ মার্চ তারা এখানকার মানুষকে কয়লার ব্যাগ দিয়েছে৷ কিন্তু বসন্তে কয়লা কেন? শীত তো শেষ৷ এটা নিঃসন্দেহে তারা করেছে গণভোটে জেতার জন্য৷ এই হলো ভোটের রাজনীতি৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সিস্টেমে সমস্যা
আলী বলেন, তাঁর কাছে বড় সমস্যা সরকারের দুর্নীতি৷ ‘‘আমি ঠিক জানি না যে, সমস্যাটা সিস্টেমে নাকি যাঁরা সিস্টেম ব্যবহার করেন তাঁদের মধ্যে৷’’ ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, ‘‘ইসলাম নিয়েও আমার একই প্রশ্ন রয়েছে৷ এটা কি ধর্ম নাকি যাঁরা এই ধর্মের অনুসারী, তাঁরাই নানা সমস্যা তৈরি করছেন? আমার কথা শুনলে মনে হতে পারে যে, আমি ‘না’ ভোট দেবো৷ তবে আসল কথা হলো, আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
স্বামীর মতই তাঁর মত
তিন বছর বয়সি আয়েশা তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ তাঁর মা, যিনি নাম জানাতে চান না বা ছবি তুলতে চান না, বলেছেন যে তিনি ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবেন শুধুমাত্র এইজন্য যে, তাঁর স্বামীও ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
বিনিয়োগ দরকার স্কুলে
আংকারার বস্তির মুস্তফা তুহরান (ছবিতে নেই) জানান, আশেপাশের স্কুলগুলোর উন্নতি করা হয়নি৷ ফলে ভালো মানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিনা পয়সায় কয়লা পাই, কেননা রাষ্ট্র আমাদের কাছ থেকে কর আদায় করে৷ এটা বিনিময়ে কিছু দেওয়ার মতো ব্যাপার৷ কিন্তু আমরা চাই, শিক্ষাখাতে আরো বেশি করে বিনিয়োগ করা হোক, যাতে আমাদের জন্য আরো সম্ভাবনা তৈরি হয়৷’’