1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তুলে দেওয়া হল শাহিনবাগের বিক্ষোভ, অধিকাংশ রাজ্য অবরুদ্ধ

২৪ মার্চ ২০২০

করোনা আতঙ্ক সত্ত্বেও বিক্ষোভ চালু ছিল শাহিনবাগে। অবশেষে পুলিশ সেই বিক্ষোভ তুলে দিল। অন্য দিকে, করোনা আটকাতে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিল দেশের ৩০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।

ছবি: Mohsin Javed

করোনা রুখতে সারা দেশ যখন কার্যত অবরুদ্ধ, তার মধ্যেও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছিল শহিনবাগ। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও বিক্ষোভের রাস্তা থেকে সরছিলেন না তাঁরা। করোন রুখতে  দিল্লিতে যাবতীয় বিক্ষোভ, জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, শহর ঘরবন্দি, তারপরেও সিএএ, এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভ চালু রেখেছিল শাহিনবাগ। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার ভোররাতে শাহিনবাগের বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় দিল্লি পুলিশ। ১০১ দিন ধরে চলা বিক্ষোভের অবসান হল। আপাতত শাহিনবাগ-পর্ব শেষ হল। তবে শান্তিপূর্ণ ভাবে দীর্ঘ দিন ধরে বিক্ষোভ দেখিয়ে শাহিনবাগ তাদের বার্তা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছে। জামিয়া মিলিয়ার সামনের বিক্ষোভের জায়গাও পরিস্কার করে দিয়েছে পুলিশ। 

দিল্লির ডিসিপি(দক্ষিণপূর্ব) আর পি মিনা জানিয়েছেন, পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন শেষ করে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে। তাঁরা তা মানতে না চাওয়ায় তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। পাঁচদিন আগেই ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে শাহিনবাগের ছবি সরাসরি তুলে ধরেছিল ডিডাব্লিউ বাংলা। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি পালন করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁরা স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। মাঝে মাঝেই বিক্ষোভস্থল জীবাণুশূন্য করা হচ্ছে। চৌকি একফুট দূরে দূরে রাখা হয়েছে। বাচ্চা ও বয়ষ্কদের আসতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও বিক্ষোভ একেবারে তুলে দিতে রাজি হননি তাঁরা। গত কয়েক দিনে বিশ্ব জুড়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কয়েকদিন আগেই মক্কা সহ অধিকাংশ মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে। ভারতে বন্ধ হয়েছে শিরডি, সিদ্ধি বিণায়ক সহ অধিকাংশ মন্দির। বন্ধ ভ্যাটিকান। এমন পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ চললে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারত বলেই মনে করেছে প্রশাসন। তাই বিক্ষোভ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

দিল্লি সহ প্রায় গোটা ভারতই এখন অবরুদ্ধ। ৩০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লক ডাউনের কথা ঘোষণা করেছে। আংশিক লক ডাউনের ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা ও লক্ষদ্বীপ। সিকিম ও মিজোরাম এখনও এই ধরনের কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও মঙ্গলবার উত্তরপূর্ব ভারতে প্রথম করোনার সংক্রমণ ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছেন একজন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। একজন পশ্চিমবঙ্গে, অন্যজন হিমাচলে। আক্রান্ত হয়েছেন আরও অনেকে। সব মিলিয়ে ভারতে করোনায় মৃত্যু হল নয় জনের এবং আক্রান্ত ৪৯২ জন। সারা বিশ্বে যে ভাবে করোনা ছড়িয়েছে, তা দেখে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি আর কোনও ঝুঁকি নেয়নি। আগে থেকেই লকডাউন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

এই অবস্থায় কাশ্মীরের নেতা ওমর আবদুল্লাকে মঙ্গলবার মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আট মাস পরে তিনি মুক্তি পেলেন।  আর এই করোনা আতঙ্কের মধ্য়েই সোমবার রাতে চতুর্থবারের জন্য মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন শিবরাজ সিং চৌহান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার রাত আটটায় আবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

করোনায় যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের দেহ সৎকার করার ক্ষেত্রেও অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। কলকাতায় যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁর দেহ সৎকারের জন্য প্রথমে পরিবারের হাতে দেওয়া হলেও পরে তা ফিরিয়ে নেওয়া হয়। কারণ পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার গাড়ি পাননি। কেউ করোনাআক্রান্তের মৃতদেহ নিয়ে যেতে রাজি হয়নি কেউ। এরপরেই প্রশাসন দেহের দায়িত্ব নেয়। বিধাননগর পুরসভা থেকে গাড়ি আনা হয়। কিন্তু নিমতলা শ্মশানে দেহ নিয়ে যাওয়া হলে প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা মৃতদেহ ঢুকতে দেননি। পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের লক্ষ্য করে তারা ইটও ছোড়েন। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে দিল্লিতেও করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ সংস্কার করতে অসুবিধা হয়েছিল।

ভারত যে ভাবে করোনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(ডাব্লিউএইচও)। সংস্থার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাইকেল জে রায়ান বলেছেন, ''বিশ্ব থেকে গুটি বসন্ত ও পোলিওর মতো দুই মহামারি নির্মূল করার ক্ষেত্রে ভারত নেতৃত্ব দিয়েছে। মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা ভারতের আছে। ভারতের মতো জনবহুল দেশ করোনা রুখতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার ওপরই এই মহামারির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। করোনা রোধের কোনও সহজ পথ নেই। আমরা চাই., ভারত আবার পথ দেখাক।'' তবে তাঁর মতে, যেখানে করোনা প্রবল হচ্ছে, সেখানে আরও বেশি করে টেস্টিং ল্যাব তৈরি করতে হবে। ভরত অবশ্য করোনা ছড়াতেই লক ডাউনের কথা ঘোষণা করেছে। বিশ্বের অনেক দেশই এই ব্যবস্থা নিতে অযথা দেরি করেছে।

দিল্লির মঙ্গলবারের ছবি সোমবারের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। রাজধানী কার্যত ঘরবন্দি। সোমবার কিছু বেপরোয়া মানুষ গাড়ি, মোটর সাইকেল, অটো নিয়ে বেরিয়েছিলেন, কিন্তু দুপুরের পর থেকে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে শুরু করায় সংখ্যাটা কমে যায়। মঙ্গলবার তা একেবারেই কমে গিয়েছে। এরই মধ্যে বিদেশ থেকে যারা ফিরেছেন, তাঁদের বাড়িতে পুরসভার তরফে কোয়ারান্টিনের নোটিস লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিত্তরঞ্জন পার্কের দু'টি বাড়িতে এরকম নোটিস লাগানোর পর চাঞ্চল্য দেখা দেয়। তারপর পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওখানে কারও করোনা হয়নি, শুধু সতর্কতার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ