রোজভ্যালি চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে দলের দুই সাংসদ পরপর সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিক্ষোভে উত্তাল তৃণমূল৷ কিন্তু তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সারা দেশেই৷
বিজ্ঞাপন
সাংসদ সুদীপ ব্যানার্জিকে সিবিআই গ্রেপ্তার করার পর তৃণমূল কংগ্রেসের বাকি সাংসদরা যেদিন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারি বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে গ্রেপ্তার হলেন, সেই খবর জানিয়ে প্রথম টুইট করল সংবাদসংস্থা পিটিআই৷ তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এক অবাঙালি নাগরিক যে টুইট করলেন, তার ভাবার্থ এই রকম— ‘‘এদের ন্যুনতম লজ্জাবোধ নেই! হাওড়া এক্সপ্রেসের টিকিট কাটিয়ে এদের ফেরত পাঠানো হোক!’’
মন্তব্যের ধরনেই স্পষ্ট, ‘এদের’ বলতে ওই নাগরিক সার্বিকভাবে বাঙালি রাজনীতিকদের কথা বলেছেন, যাদের সর্বভারতীয় রাজনীতিতে আসার যোগ্যতা নেই বলে তিনি ইঙ্গিত করেছেন৷ সেই কারণেই ট্রেনে চাপিয়ে হাওড়া স্টেশনে পাঠিয়ে দেওয়ার কটাক্ষ৷
পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত ‘জয়নগরের মোয়া’
শীত আসছে৷ তাই আবার উচ্চারিত হচ্ছে ‘জয়নগরের মোয়া’র নাম৷ ছবিঘরে ঢুকে জেনে নিন মজাদার এই মোয়া তৈরির বৃত্তান্ত৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
কণকচূড় ধানের খই
জয়নগরের মোয়ার অন্যতম প্রধান উপাদান কণকচূড় ধানের খই, যা এখনও প্রথাগত পদ্ধতিতেই ঝাড়াই-বাছাই করা হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
খেজুরের রসে মোয়া
মোয়ার দ্বিতীয় উপাদান হলো ‘নলেন গুড়’, যা অত্যন্ত যত্ন নিয়ে খেজুরের রস জাল দিয়ে তৈরি করতে হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
‘শিউলি’
খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন যাঁরা, তাঁদের চলতি কথায় বলা হয় ‘শিউলি’ - এঁরা গাছ বাইতে ওস্তাদ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
‘নলেন গুড়’
খেজুর গাছের মাথার দিকে, গুঁড়ির গায়ে চিরে দিয়ে, তার তলায় বাঁধা হয় মাটির হাঁড়ি - সরু নল দিয়ে রস এসে জমা হয় হাঁড়িতে৷ এই নলের কারণেই নাম ‘নলেন গুড়’৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
গাছের গায়ের দাগ
খেজুর গাছের গায়ে কাটার দাগ পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায় - যে গাছের গায়ে যত বেশি দাগ, ধরে নিতে হবে, সেই গাছের রস তত বেশি মিষ্টি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
জ্বালানি কাঠের ঢিমে আঁচের মোয়া
গুড় জাল দেওয়ার জন্য দরকার হয় কাঠের ঢিমে আঁচ - সেই জ্বালানি কাঠ শীতকাল শুরু হওয়ার আগেই মজুত রাখতে হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
মোয়ার মণ্ড
নলেন গুড়ের সঙ্গে কণকচূড় ধানের খই মিশিয়ে, ঘন করে পাক দিয়ে তৈরি হয় জয়নগরের মোয়ার মণ্ড৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ঘি মেখে তৈরি মোয়া
গাওয়া ঘি দু হাতে মেখে, গোল গোল করে পাকিয়ে তৈরি করা হয় মোয়া৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ক্ষীরের মোয়া
স্বাদ বাড়ানোর জন্য তার সঙ্গে যুক্ত হয় খোয়া ক্ষীর, কাজুবাদাম, কিশমিশ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সর্বত্র পাওয়া যায় এই মোয়া
কখনও হাঁড়িতে, কখনও রঙচঙে প্যাকেটে ভরে জয়নগরের মোয়া চলে যায় রাজ্যের সর্বত্র৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
10 ছবি1 | 10
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তৃণমূল নেতৃত্ব নির্বিকার এবং তাপস পাল, সুদীপ ব্যানার্জির গ্রেপ্তারিকে নোট বাতিলবিরোধী আন্দোলনের পাল্টা রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া৷ এবং সে ব্যাপারে যে কোনও বিরুদ্ধমতকে রাজনৈতিক চক্রান্ত হিসেবে দেখছে তারা৷ সে মতামত যদি খোদ রাজ্যপালও জানান, তা হলেও৷ সুদীপ ব্যানার্জি গ্রেপ্তার হওয়ার দিনই কলকাতা এবং অন্যত্র বিজেপি’র কার্যালয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা হামলা করেছে, সংঘর্ষে জখম হয়েছেন বিজেপি কর্মীরা৷ সেই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি অভিযোগ জানিয়ে আসে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কাছে৷ পাল্টা অভিযোগ জানায় তৃণমূলও৷ যার প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল ত্রিপাঠি বলেন, ‘‘রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারেরই৷ রাজনৈতিক পার্থক্য ভুলেই সেটা করতে হবে৷’’
সরকারকে তার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ায় রাজ্যপালের ওপর ক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস৷ দলের প্রথম সারির নেতা, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ‘‘সাংবিধানিক পদে বসে রাজ্যপালের গলায় এ ধরনের রাজনৈতিক সুর বরদাস্ত করা হবে না!’’ অন্যদিকে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় সরাসরি হুমকি দিয়েছেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি ও তাঁর সঙ্গীরা যদি নিজেদের না শুধরান, তাহলে সমস্যায় পড়বেন৷ বিজেপি কর্মীরা যদি ঠিক করেন যে ওঁদের রাস্তা আটকাবেন, তা হলে কী করে মমতা সারা দেশে ঘুরে বেড়াবেন, আর কী করেই বা তৃণমূল সাংসদরা দিল্লিতে ঢুকবেন!’’
পশ্চিমবঙ্গের গরুর দৌড়
প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে গরুর দৌড় হয়৷ সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গরুর দৌড় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ কিন্তু লোকজন যেভাবে গরুর দৌড় নিয়ে উৎসাহিত তাতে কি এটা আদৌ বন্ধ করা যাবে?
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বর্ষার আগমনি উদযাপন
প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে গরুর দৌড় হয়৷ বর্ষার আগমন উদযাপন করতে চালু হয়েছিল এই প্রথা, যেহেতু বর্ষা কৃষিকাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ইতিহাস
যদিও গ্রামের বয়স্করা বলেন, প্রখর গ্রীষ্মে শুকিয়ে যাওয়া জমির উপরিভাগ একটু ভেঙে নিলে বৃষ্টির জল ভিতরে ঢুকতে পারবে এবং পরে লাঙল দিতে সুবিধে হবে - সেই তাগিদ থেকেই শুরু হয়েছিল গরুর দৌড়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
এখন শুধুই বিনোদন
কিন্তু এখন চাষের কাজে যন্ত্রচালিত লাঙলই ব্যবহার হয়৷ গরুর দৌড় তাই থেকে গিয়েছে একটা ক্রীড়া এবং বিনোদন হিসেবে৷ আর গবাদি পশুর মালিকদের কাছে এটা এখন একটা সম্মানের লড়াই৷ অন্যদিকে দৌড়বাজ গরুর উপর বাজি ধরেন সাধারণ দর্শক৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
মনোযোগি দর্শক
কাজেই কিছু দর্শকের নিবিষ্ট চাহনি দেখেই বোঝা যায়, দৌড়ের কোনও অংশ তাদের নজর এড়িয়ে যায় না৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সবার প্রিয়
গ্রামের কিশোর, তরুণরাও সকাল থেকে ভিড় জমায় রেসের মাঠে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
নিরাপদ দূরত্ব
গ্রামের কিশোরী, তরুণী এবং মহিলারা আর প্রবীণরা একটু নিরাপদ দূরত্বে থেকেই মজা দেখেন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
মাদকের প্রভাব
এই নিরাপদ দূরত্ব রাখাটা জরুরি, কারণ গরুগুলো দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটে৷ সম্ভবত ওরা কোনও মাদকের প্রভাবে উত্তেজিত থাকে৷ মাদকের মধ্যে সবথেকে সহজলভ্য কোল্ড ড্রিঙ্ক আর ব্যথা কমানোর ওষুধের মিশ্রন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
গরুকে ঠান্ডা করা
যে কারণে একেকটা দৌড় যেই শেষ হয়, রাখালেরা গিয়ে একেকজন একেকটা গরুকে সামলাবার দায়িত্ব নিয়ে নেয়৷ জোর করে ওদের নিয়ে যায় সামান্য গভীর জলে, যাতে গরুগুলো একটু ঠান্ডা হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
নিষিদ্ধের রায়
তবে পশু অধিকার সুরক্ষা সংগঠনগুলোর অভিযোগ পেয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গরুর দৌড় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কারণ গরু দৌড়োবার উপযুক্ত প্রাণি নয় এবং তাদের নিয়ে প্রতিযোগিতার কারণে নানাভাবে তাদের কষ্ট দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বন্ধ হবে কি?
কিন্তু লোকে যেভাবে গরুর দৌড় নিয়ে উৎসাহিত, অদূর ভবিষ্যতে এই দৌড় বন্ধ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, সে আদালত বা পশুপ্রেমীরা যা-ই বলুন না কেন!
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
10 ছবি1 | 10
যদিও বৃহস্পতিবারও দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা৷ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি আগাম ঘোষিত ছিল৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার একেবারে গেরিলা কায়দায় পুলিশের অবরোধ টপকে দিল্লির হাই সিকিওরিটি জোন সাউথ ব্লকের ভেতরে ঢুকে পড়েন সাংসদরা, সোজা পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সামনে৷ যদিও পুলিশ তাঁদেরকে আটকে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার করে, পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ হাতাহাতিও হয় তাঁদের৷ কিন্তু এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে ভিভিআইপি এলাকার সার্বিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই৷ যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সময় দপ্তরে ছিলেন না, ছিলেন পাটনায়৷ কিন্তু তিনি হাঙ্গামার খবর শুনে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং দিল্লি ফিরেই তিনি কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে৷
পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী বামফ্রন্ট এদিকে তাপস পাল, সুদীপ ব্যানার্জির গ্রেপ্তারির সূত্র ধরে রাজ্যে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি আরও জোরদার করেছে৷ বুধবার এই নিয়ে কলকাতায় একটি মিছিল করে বামেরা৷ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘কেবল তাপস, সুদীপ নয়, চিটফান্ড কেলেঙ্কারির নাটের গুরুদের গ্রেপ্তার করতে হবে৷ রোজভ্যালি চিটফান্ডের মালিক গৌতম কুন্ডু কালিম্পংয়ের ডেলো পাহাড়ে যাঁর সঙ্গে বৈঠক করতেন, তাঁকেও গ্রেপ্তার করতে হবে!’’ সুজন চক্রবর্তীর ইঙ্গিত স্পষ্টতই তৃণমূল নেত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দিকে৷