তৃণমূলে বিধায়কের ইস্তফা, কুণালকে শো কজ
৪ মার্চ ২০২৪তাপস রায় উত্তর কলকাতার একজন বিশিষ্ট নেতা। কংগ্রেস ছেড়ে দীর্ঘদিন তিনি মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের দলে ছিলেন। মোট পাঁচবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রীও ছিলেন। দক্ষ সংগঠক হিসাবে তার নাম আছে।
এহেন তাপস রায় বিধানসভায় গিয়ে স্পিকারের হাতে তার পদত্যাগপত্র তুলে দিয়েছেন। মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কেও ইস্তফার কথা জানিয়ে এসেছেন। তিনি বলেছেন, গত ১ মার্চ তিনি দলের সব পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন।
রোববার থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল, তৃণমূলের উপর প্রবল ক্ষুব্ধ তাপস রায় বিধায়ক পদ ছাড়তে পারেন। আজ সকালে তাপস রায়ের বাড়িতে যান মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং কুণাল ঘোষ। তারা গিয়েছিলেন, তাপস যাতে পদত্যাগ না করেন, সেটা বোঝাতে।
পরে তাপস সাংবাদিকদের জানান, ''আমার সঙ্গে কথা বলার সময়ই কুণালের ফোনে মেসেজ আসে, তাকে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী শো কজ করেছেন। এই তো দলের অবস্থা।''
কুণালকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে শো কজ করা হয়েছে। তবে তার সঙ্গে তাপসের সঙ্গে দেখা করার সম্পর্ক নেই। তণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গুরুতর অভিযোগ করার জন্য তাকে শো কজ করা হয়েছে।
তাপসের বক্তব্য
তাপস বলেছেন, ''সিদ্ধান্ত নেয়ার পিছনে কারণ থাকে। একে তো প্রতিদিন দুর্নীতির খবর আসছে, তার উপর সন্দেশখালি-কাণ্ড। ঘরে বাইরে এত অপমান, অসম্মান, উপেক্ষা, এত অবহেলা আমাকে খুবই নাড়িয়ে দিয়েছে। আমার শুভাকাঙ্খীরা বারবার এই কথা বলেছেন, আমিও অনুভব করেছি। ৯২ থেকে আমি বিধায়ক, এবারই প্রথম বাজেট অধিবেশনে সক্রিয় থাকতে পারিনি।''
তিনি জানিয়েছেন, ''২৩-২৪ বছর তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক। যখন যা বলেছে তা করেছি। নিজের থেকেও করেছি। কিন্তু ১২ জানুয়ারি আমার বাড়িতে একটা ঘটে য়ায়, সেটাও একটা বিষয়। ইডি আমার বাড়িতে অভিযান করে। আজ ৫২ দিন দল আমার পাশে দাঁড়ায়নি। ফোন করে কেউ স্ত্রী, মেয়ের সঙ্গে কথা বলেনি। আমাকেও ডাকেনি। ৪০-৫০ জন মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদরা বলেছেন, এর পিছনে দলেরই কেউ আছেন।''
তাপস বলেছেন, ''ব্রাত্য, কুণাল এসেছিল। ওরা আমাকে ভালোবাসে। ছোট ভাই। এই দলে যাদের সাসপেনশন হওয়া উচিত, শো কজ হওয়া উচিত, বহিষ্কার করা উচিত, তারা বহাল তবিয়তে থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বললেন, শেখ শাহজাহানকে ইডি টার্গেট করেছে, অথচ আমার বাড়িতে ইডি হামলার কথা বললেন না।''
তাপস পরে জানিয়েছেন, ''গত ১ মার্চ আমি দলের সব পদ ছেড়েছি। আজ বিদায়ক পদ থেকেও দিয়ে দিলাম। আমার মনে হচ্ছিল না, এই দলে আমার কোনো প্রয়োজন আছে। আর প্রতিদিন দুর্নীতি ও সন্দেশখালির ঘটনা আমাকে না়ড়া দিয়েছে।''
তাপস জানিয়েছেন, আমি কী করব না করব তা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেব। আমি এখন মুক্ত মানুষ।
কেন গোলমাল?
তাপস রায়ের প্রধান অভিযোগ ছিল লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সুদীপ উত্তর কলকাতার সাংসদ।
দিন কয়েক আগে তিনি সুদীপ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ''আমি জানি না আমার উপর রাগ কেন। সেটা প্রকাশ্যেই বলে দিক না। রাজনৈতিকভাবে আমাকে ভয় পায়, আবার কী। কোনও কাজ করে না, ভোটের আগে ৩ মাস দেখা যায়। শুধু ফায়দা নিয়ে যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেও ভোটে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে কোনও কাজ করব না।''
কুণালকে কেন শো কজ?
দুই দিন আগে কুণাল একটা টুইট করেন। সেটা ট্যাগ করেন ইডি ও সিবিআইকে। সেখানে তিনি বলেন, ভুবনেশ্বরের অ্যাপোলো হাসপাতাল সুদীপের হয়ে কে টাকা দিয়েছিলেন, তা তদন্ত করে দেখা হোক। সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ব্য়াংক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখা হোক। দেখা হোক, তিনি যখন জেলে ছিলেন, তখন কী কেউ তার হয়ে হাসপাতালের খরচ জুগিয়েছিল, এর সঙ্গে কয়লা কেলেঙ্কারির যোগ থাকতে পারে। পরবর্তী তদন্তের জন্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করা উচিত। যদি তদন্তকারী সংস্থাগুলি এটাকে অবহেলা করে, তাহলে আমি আদালতে যাব।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আরেকটি টুইটে কুণাল লেখেন, নেতা অযোগ্য গ্রুপবাজ স্বার্থপর। সারাবছর ছ্যাঁচড়ামি করবে আর ভোটের মুখে দিদি, অভিষেক, দলের প্রতি কর্মীদের আবেগের উপর ভর করে জিতে যাবে, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে, সেটা বারবার হতে পারে না।
এরপর কুণাল টুইট করেই জানিয়ে দেন, ''আমি তৃণূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র পদে থাকতে চাইছি না। সিস্টেমে আমি মিসফিট। আমার পক্ষে কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আমি দলের সৈনিক হিসেবেই থাকব। দয়া করে দলবদলের রটনা বরদাস্ত করবেন না।''
পরে মুখপাত্র হিসাবে তার ইস্তফা দল গ্রহণ করে। এরপর তাকে সোমবার শো কজ করা হলো।
'বিজেপি-র সুবিধা হবে'
প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''ঘটনাচক্রে তাপস রায় এবং কুণাল ঘোষ দুজনেই অভিষেক বন্দোপাধ্যায় শিবিরের নেতা বলে শোনা যায়। আর উত্তর কলকাতায় তাপসের প্রভাব আছে। দীর্ঘদিনের নেতা। ফলে তাপসের বিদ্রোহে ও কুণালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে বিজেপি-রই সুবিধা হবে। কুণালের মতো তৃণমূলকে সমর্থন করে বিবৃতি দেয়ার ক্ষমতা আর কোনো নেতার নেই বা তারা এই কাজটা করতে পারেন না। ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগে এরকম অনেক ঘটনাই ঘটবে।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, আনন্দবাজার)