তৃণমূলের জিতেন্দ্র তিওয়ারি কি বিজেপিতে যোগ দেবেন? তাঁর বিজেপি-তে আসা রুখতে বাবুল সুপ্রিয়র কার্যত বিদ্রোহ।
বিজ্ঞাপন
একদিকে দল ভাঙছে তৃণমূলের, অন্য দিকে রাজ্য বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে আদি-নব্য বিতর্ক। যে বিতর্কে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছেন বিজেপির সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। আলোচনার কেন্দ্রে আসানসোলে তৃণমূলের সাবেক বাহুবলী নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। আদি মানে বিজেপি-র যে নেতারা আগে থেকে ছিলেন, নব্য মানে তৃমমূল বা অন্য দল থেকে আসা নেতারা।
বৃহস্পতিবারশুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি জিতেন্দ্রও তৃণমূল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। আসানসোলের এই প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়ের বিতর্ক বহুদিনের। এক সময় জিতেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করতেন আসানসোল-দুর্গাপুরের রাজনীতি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাবুল তৃণমূলের সেই খাস তালুকে থাবা বসান। তৃণমূলের দোলা সেনকে হারিয়ে বিজেপির টিকিটে জয় লাভ করেন। ২০১৯ সালেও মুনমুন সেনকে হারিয়ে তিনি দ্বিতীয়বার আসানসোলের সাংসদ হয়েছেন। আসানসোল-দুর্গাপুরে এখন বিজেপির দাপটও যথেষ্ট। অর্থাৎ, জিতেন্দ্র খানিকটা হলেও জমি হারিয়েছেন। বিজেপির অভিযোগ, জিতেন্দ্রের নেতৃত্বে আসানসোলে লাগাতার বিজেপি কর্মীদের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। বহু নেতা জেলে। সবই জিতেন্দ্রের কারণে। সেই জিতেন্দ্র তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শনি এবং রোববার অমিত শাহের পশ্চিমবঙ্গ সফর চলাকালীন তিনি যোগ দিতে পারেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা। বাবুলের আপত্তিও ঠিক সেখানেই।
ভারতে পরিবারের ভেতর রাজনৈতিক লড়াই!
পারিবারিক রাজনীতি বরাবরই ভারতের অন্যতম চিত্র৷ কিন্তু অনেক রাজনীতিক পরিবার এমনও রয়েছে, যার সদস্যরা একে অন্যের বিপক্ষ আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাসী৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: AP
দুই বউ দুই দলে
কংগ্রেসের রাশ প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নেহরু-গান্ধী পরিবারের হাতে৷ জওহরলাল, ইন্দিরা, রাজীবের পর ভার গেছে রাজীব-পত্নী সোনিয়ার কাছে৷ কিন্তু ইন্দিরার আরেক পুত্র সঞ্জয়ের অকাল প্রয়াণে রাজনৈতিক আলোয় এসে পড়েন তাঁর স্ত্রী মানেকা৷ শ্বশুরবাড়ির মানুষের সাথে বনিবনা না হওয়ায় মানেকা প্রতিষ্ঠা করেন ‘সঞ্জয় বিচার মঞ্চ’ নামের একটি কংগ্রেস-বিরোধী দল৷ বর্তমানে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য এবং নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ
সোনিয়া, মানেকা গান্ধী পরিবারের দুই বউ৷ তাঁরা দুজনেই দুজনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী৷ উত্তরাধিকার মেনে নিয়ে সোনিয়া-পুত্র রাহুল বর্তমানে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ৷ মানেকা-পুত্র বরুণ গান্ধীও ভারতীয় জনতা পার্টি, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ৷ ছবিতে বরুণ, তাঁর মা মানেকা ও স্ত্রী যামিনী৷
ছবি: DW
মহারাষ্ট্রেও একই চিত্র
মারাঠি জাতীয়তাবাদী আদর্শে গঠিত শিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে৷ তাঁর পর কে পাবেন দলের দায়িত্ব, এই নিয়ে যখন পুত্র উদ্ধব ও ভাইপো রাজের মধ্যে বচসা বাধে, দলের ভার পান উদ্ধব ঠাকরে৷ রাজ ঠাকরে শিব সেনা ছেড়ে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আরেকটি সম-আদর্শের দল ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা’৷ দুই দলের মধ্যে আদর্শিক কোনো দ্বন্দ্ব সেভাবে না থাকলেও, মহারাষ্ট্রের নেতৃত্ব নিয়ে রাজ-উদ্ধব দ্বন্দ্ব আলোচিত৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
রাজপরিবারের ভেতরেও দ্বন্দ্ব
গোয়ালিয়রের রাজপরিবারের মধ্যে রয়েছে রাজনীতিতে আসার ঝোঁক৷ কিন্তু সদস্যদের মধ্যে নেই মতের মিল৷ কংগ্রেস-সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাধবরাও-এর মা বিজয়রাজে সিন্দিয়া ছিলেন গোয়ালিয়রের শেষ রাজা জিবাজিরাও-এর স্ত্রী৷ প্রথম দিকে বিজয়রাজে সিন্দিয়া কংগ্রেস-বিরোধী স্বতন্ত্র পার্টিতে যোগ দিলেও পরে ভারতীয় জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন৷ ওপরের ছবিতে মাধবরাও-এর বোন বসুন্ধরা, যিনি মায়ের মতোই কংগ্রেস-বিরোধী৷
ছবি: DW/J. Sehgal
নতুন প্রজন্মও দুই দলে বিভক্ত
মাধবরাও সিন্দিয়ার পথ ধরে তাঁর পুত্র জ্যোতিরাদিত্য সিন্দিয়াও কংগ্রেসে যোগদান করেন৷ বর্তমানে তিনি দলের অন্যতম জনপ্রিয় যুবনেতা৷ অন্যদিকে তাঁর বাবার দুই বোন, যশোধারা ও বসুন্ধরা যথাক্রমে মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানে ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ৷ শুধু তাই নয়, পিসি-ভাইপো’র মধ্যে রাজনৈতিক বিবাদের জের এসে পড়েছে পারিবারিক সম্পর্কেও৷ সংসদেও একে অন্যের বিপক্ষে লড়তে দেখা যায় বসুন্ধরা ও জ্যোতিরাদিত্যকে৷
ছবি: AP
বাবার বিরোধী ছেলে
বাবা মুকুল রায় ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য যখন ২০১৭ সালের নভেম্বরে দল বদলে বিজেপি’তে যোগদান করেন, প্রশ্ন ওঠে, কী হবে তৃণমূল সাংসদ মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু’র রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ? অবশেষে ২০১৯ সালের মে মাসে এসে তিনিও যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে৷
ছবি: Ians
বলিউড পরিবারেও হলো যা...
বিখ্যাত অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির সাথে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগ দেন কংগ্রেসে৷ তাঁর স্ত্রী পুনম সিনহা যখন এ বছর রাজনীতির ময়দানে আসার ঘোষণা দেন, সবার মনেই ছিল প্রশ্ন– কোন দলে যাবেন তিনি? বিজেপি বা কংগ্রেস, দুই দলে না গিয়েই পুনম যোগ দিলেন সমাজবাদী পার্টিতে৷ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই দলের হয়েই তিনি লড়বেন বিজেপি’র রাজনাথ সিংয়ের বিরুদ্ধে৷
ছবি: AP
7 ছবি1 | 7
বৃহস্পতিবার রাতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বাবুল লিখেছেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় এতদিন যারা বিজেপি কর্মীদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে, তারাই এখন বিজেপিতে যোগ দেবে বলে শুনছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বস-রা নেবেন। কিন্তু আমি আমার আপত্তির কথা জানাবো।'
শুধু লেখা নয়, একটি ভিডিও মেসেজও আপলোড করেছেন বাবুল। সেখানে সরাসরি জিতেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, যাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনিই যদি এখন বিজেপিতে যোগ দেন, তা হলে তা তাঁর পক্ষে এবং দলের কর্মীদের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন।
জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে ডয়চে ভেলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি এখনো পর্যন্ত কিছু জানাননি। তৃণমূল নেতা সৌগত রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''বিজেপির এই দল ভাঙানোর খেলা কাউন্টার প্রোডাক্টিভ হবে।'' অন্য দিকে রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''জিতেন্দ্র নিজে দলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানাননি। ফলে এ বিষয়ে আলাদা করে মন্তব্য করার অর্থ হয় না। তবে নির্বাচনের আগেই তৃণমূল ভেঙে পড়বে বলে মনে হচ্ছে।''