ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গে জনগণ কি আদৌ নিরাপদ? কারণ এবার পাড়ুই হত্যাকাণ্ড মামলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন করেছেন স্বয়ং বিচারপতি!
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলকে আদালতে জরুরি তলব করা হলো৷ তাঁকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে দাঁড়িয়ে সর্বসমক্ষে জানাতে হবে, পাড়ুই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত, তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডলকে কেন এখনও গ্রেপ্তার করতে পারল না পুলিশ! এই জবাবদিহি করতে হবে প্রকাশ্য শুনানিতে, মানে বহিরাগত দর্শক এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও আদালতে হাজির থেকে শুনতে পারবেন ডিজি-র সাফাই৷
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্য প্রশাসনকে তিরস্কারের যেটুকু বাকি ছিল হাইকোর্টে, তা এদিন আগেই হয়ে যায়৷ প্রায় এক ঘণ্টার শুনানিতে বিচারপতি বারবার বিরূপ মন্তব্য করেন পুলিশি ব্যর্থতা এবং পাড়ুই হত্যা মামলায় শাসকদলের রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো নিয়ে৷ আগের দিনই তৃণমূলের এক নির্বাচনি প্রচার সভায় দলীয় নেত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পাশে পাশে নির্ভয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে অনুব্রত মন্ডলকে৷ সেই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সাড়া পড়ে যাওয়ায়, বিশেষ করে সভায় উপস্থিত টিভি চ্যানেলগুলো বার বার সেই ছবি দেখাতে থাকায় মুখ্যমন্ত্রী অনুব্রত মন্ডলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘কেউ কি তোর কাছে কিছু চেয়েছিল, যেটা তুই দিসনি? সেইজন্যে ওরা তোর পিছনে পড়ে গেছে? যাক গে, ওদের কিছু দিয়ে দিস৷ ঘরে মুড়ি-নারকেল যা থাকে দিয়ে দিস!''
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের এই ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ স্বাভাবিকভাবেই বৃহস্পতিবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে৷ সেদিকে ইঙ্গিত করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এদিন সরকারি আইনজীবীকে বলেন, সকালের কাগজ দেখেছেন? আপনার কী মনে হয়, এই রাজ্যে আমরা কি নিরাপদ? বিচারপতি দত্ত আরও বলেন, অভিযুক্ত যদি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, আপনাদের ডিজি-র কি সাধ্য হবে, তাকে ধরার? শুক্রবার আদালতে সর্বসমক্ষে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে এই প্রশ্নের জবাবই দিতে হবে৷
উল্লেখ্য, বীরভূম জেলার পাড়ুই থানা এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন সাগর ঘোষ নামে এক দলত্যাগী তৃণমূল কর্মীর ছেলে হৃদয় ঘোষ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল ভোটের প্রচারে গিয়ে ওই এলাকায় বলে আসেন, কোনো নির্দল প্রার্থী ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দিলে তার বাড়িতে বোমা মারুন, বাড়ি জ্বালিয়ে দিন! যদি পুলিশ বাধা দিতে আসে, পুলিশকে বোমা মারুন! এই উত্তেজক ভাষণের চারদিনের মাথায় সাগর ঘোষকে তাঁর বাড়িতে গুলি করে মারা হয়৷ কিন্তু প্ররোচনা দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত হয়েও পুলিশের হাতে অধরা থেকে যান অনুব্রত মন্ডল৷ বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে দরাজ গলায় তাঁকে সার্টিফিকেট দেন, অনুব্রত খুব ভালো ছেলে৷ ও মাঝে মাঝে ওরকম বলে ফেলে!
এদিকে তৃণমূল কর্মীরা এদিন ফের বিরোধে জড়ালেন নির্বাচন কমিশনের এক প্রতিনিধির সঙ্গে৷ এবারের নির্বাচনে মোটরবাইক মিছিল নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন৷ মালদহের মানিকচকে সেই বিধি অগ্রাহ্য করে মোটরবাইক মিছিল হচ্ছিল, যার ছবি তুলে রাখছিলেন নির্বাচন কমিশনের এক কর্মী৷ সেই দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই কর্মীর উপর চড়াও হন তৃণমূল কর্মীরা৷ তাঁকে মারধর করা হয়, ভেঙে দেওয়া হয় তাঁর ক্যামেরাটি৷ মানিকচকের তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনের সামনেই এই ঘটনা ঘটে৷