রাশিয়া বলেছে, পশ্চিমা মিসাইল দিয়ে ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে হামলা করতে দেওয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্ব আগুন নিয়ে খেলছে৷ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুধু ইউরোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বলেও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া৷
বিজ্ঞাপন
৬ আগস্ট রাশিয়ার পশ্চিমের কুরস্ক অঞ্চলে হামলা করে কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় ইউক্রেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই রাশিয়ার উপর বাইরের শক্তির সবচেয়ে বড় হামলা৷ এই হামলার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ব্রিটিশ ট্যাঙ্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের রকেট সিস্টেম ব্যবহার করে কুরস্কে হামলা হয়েছে বলে রাশিয়া অভিযোগ করেছে৷ কিয়েভও নিশ্চিত করেছে, কুরস্কে সেতু ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্রের হাইমার্স মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে৷
তবে ওয়াশিংটন বলছে, কুরস্কে হামলার বিষয়ে ইউক্রেনের পরিকল্পনা তাদের আগে জানানো হয়নি৷ হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে৷
তবে পুটিনের বিদেশি গোয়েন্দা প্রধান সের্গেই নারিশকিন বলেছেন, কুরস্কে হামলার সঙ্গে পশ্চিমের সংশ্লিষ্ট না থাকার দাবি মস্কো বিশ্বাস করে না৷ রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা ‘একটি সুস্পষ্ট সত্য'৷
এদিকে, নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কুরস্কে হামলার পর ইউক্রেনকে স্যাটেলাইট ছবি ও অন্যান্য তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন৷ ঐ এলাকায় রুশদের আগমন সম্পর্কে তথ্য পেতে সহায়তা করতে এসব তথ্য দেওয়া হয় বলে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়৷
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
ছবি: Anatoliy Zhdanov/REUTERS
9 ছবি1 | 9
লাভরভের বক্তব্য
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মঙ্গলবার মস্কোতে সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়াতে চাইছে পশ্চিমা বিশ্ব৷
ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার সময় কিছু শর্ত দিয়েছিল পশ্চিমা বিশ্ব৷ সেই শর্ত সহজ করতে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন৷ সেই অনুরোধ বিবেচনার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্ব ‘সমস্যা ডেকে আনছে' বলেও মন্তব্য করেন লাভরভ৷
‘‘আমরা আবার নিশ্চিত করছি, পশ্চিমা দেশগুলোতে যে প্রাপ্তবয়স্ক চাচা ও চাচীদের পরমাণু অস্ত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের জন্য আগুন নিয়ে খেলা খুব বিপজ্জনক৷ মনে হচ্ছে, তারা ম্যাচ নিয়ে খেলা ছোট বাচ্চা,'' বলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ৷ ‘‘মার্কিনিরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে এমন কথা বলে যেন, ঈশ্বর না করুক, যদি (বিশ্বযুদ্ধ) শুরু হয়ে যায়, তাহলে সেটা শুধু ইউরোপকে প্রভাবিত করবে,'' বলেন তিনি৷
লাভরভ বলেন, নিউক্লিয়ার ডকট্রিন আরো ‘স্পষ্ট করছে' রাশিয়া৷ দেশটির ২০২০ সালের নিউক্লিয়ার ডকট্রিনে প্রেসিডেন্ট কোন বিবেচনায় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাববেন, তা বলা আছে৷ এতে বলা হয়, পরমাণু বা অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র বা প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে হামলার শিকার হওয়ার পর ‘দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে' প্রেসিডেন্ট পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাবতে পারেন৷