মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন সব ‘শিটহোল' বা খাটা পায়খানার মতো দেশ থেকে অভিবাসনের সুযোগ দিচ্ছে – ওভাল অফিসে দু'জন সেনেটরের সঙ্গে আলোচনার সময় এই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবারের ঐ ব্রিফিংয়ে ট্রাম্পকে একটি উভয়দলীয় অভিবাসন পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছিল, যে পরিকল্পনার ফলে, বিশেষ করে আফ্রিকা, হাইতি ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার কিছু দেশ থেকে আগত অভিবাসীরা প্রভাবিত হবেন৷
‘‘আমরা কেন এইসব শিট হোলের মতো দেশ থেকে মানুষদের এখানে আসতে দিচ্ছি?'' ওভাল অফিসে উপস্থিত বিধায়কদের কাছে প্রশ্ন রাখেন ট্রাম্প৷ তার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নরওয়ের মতো দেশ থেকে আরো বেশি অভিবাসী নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ ওয়াশিংটন পোস্ট এ খবর জানিয়েছে৷ এর আগের দিনই ট্রাম্প নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এর্না সলবার্গের সঙ্গে মিলিত হন৷
Trump pushes bipartisan immigration deal
00:32
রিপাবলিকান সেনেটর লিন্ডসে গ্র্যাহাম ও ডেমোক্র্যাট সেনেটর ডিক ডার্বিনের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সাক্ষাতে অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও বিধায়করাও উপস্থিত ছিলেন৷ আলোচ্য বিষয় ছিল, যেসব অপ্রাপ্তবয়স্ক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে পলায়নপর মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, তাদের জন্য একটি বাইপার্টিজান বা উভয়দলীয় অভিবাসন পরিকল্পনা৷ ছ'জন সেনেটরের একটি উভয়দলীয় গোষ্ঠী এই পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়া নিয়ে কাজ করছেন৷ মেক্সিকো সীমান্তে তাঁর পরিকল্পিত প্রাকারের প্রথম অংশ নির্মাণের জন্য ট্রাম্প যে ১৬০ কোটি ডলার অর্থ চেয়েছেন, তা-ও এই পরিকল্পনায় বিবেচিত হবার কথা৷ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প খসড়া প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন৷
বার্তা সংস্থা এপি'র বিবরণে হোয়াইট হাউসে বৃহস্পতিবারের সভা সম্পর্কে যাঁদের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সবাই পত্রিকাটির প্রতিবেদনের সত্যতা বা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন৷
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র রাজ শাহ-কে মন্তব্য করতে বলা হলে, তিনি ট্রাম্পের উক্তির কথা অস্বীকার না করে বলেন, ‘‘ওয়াশিংটনের কিছু রাজনীতিক বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করতে পছন্দ করেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিরকালই মার্কিন জনগণের জন্য সংগ্রাম করবেন৷''
মার্কিন কংগ্রেসের ব্ল্যাক ককাস বা কৃষ্ণাঙ্গ সদস্যদের গোষ্ঠীর সভাপতি সেড্রিক এল রিচমন্ড ট্রাম্পের উক্তি সম্পর্কে তাঁর টুইটে বলেন, ঐ উক্তি আবার প্রমাণ করে যে, ট্রাম্পের ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন' কর্মসূচি বস্তুত একটি ‘মেক অ্যামেরিকা হোয়াইট এগেইন' কর্মসূচি, অর্থাৎ মহান নয়, অ্যামেরিকাকে পুরোপুরি শ্বেতাঙ্গ করে তোলাই ট্রাম্পের উদ্দেশ্য৷
রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য মিয়া লাভ নিজে হাইতিয়ান বংশোদ্ভূত৷ তিনি ট্রাম্পের কাছে তাঁর ‘অগ্রহণযোগ্য' আচরণের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করেছেন৷
ইতিপূর্বে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করে যে, সাময়িক রেসিডেন্সি কর্মসূচির কল্যাণে যে প্রায় ৬০,০০০ হাইতিয়ান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, প্রশাসন সেই কর্মসূচির অবসান ঘটাতে চায়৷ এছাড়া হোয়াইট হাউস তথাকথিত ‘ড্রিমার'-দের ক্ষেত্রেও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে৷ ‘ড্রিমার' বলতে বোঝায় সেই সব শিশুকে, যাদের বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়েছে৷ এই শিশুদের বহিষ্কার করা যায় না, কারণ তথাকথিত ‘ডাকা' (ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল্স বা ডিএসিএ) আইন তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে৷
‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’: ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে একনজর
মার্কিন সাংবাদিক মাইকেল উলফের বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’ প্রকাশের আগেই ওয়াশিংটনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে৷ বইতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার রয়েছে৷ হোয়াইট হাউসের অন্য চিত্র ফুটে উঠেছে এতে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/D. Higgins
‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’
মার্কিন সাংবাদিক মাইকেল উলফের নতুন বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি: ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’৷ এই বইয়ের বিশেষ কিছু অংশ মার্কিন এবং ব্রিটিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ বইটিতে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসের এক অন্য ছবি উঠে এসেছে৷ ম্যাকডোনাল্ড বার্গারের প্রতি ভালোবাসা থেকে ইভানকা’র প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন এমন নানা বিষয় উঠে এসেছে এতে৷
ছবি: picture-alliance/AP/B. Camp
‘মেলানিয়ার চোখে জল’
‘‘নির্বাচনের রাতে, ৮টার একটু পরে, যখন মোটামুটি নিশ্চিত ট্রাম্প হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্প জুনিয়র তার বন্ধুকে বলেছিলেন, তার বাবাকে এমন দেখাচ্ছিল, যেন ভূত দেখেছেন৷ মেলানিয়ার চোখে ছিল জল, তবে তা আনন্দের নয়৷ এর এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে হতবাক ট্রাম্পকে এমন দেখাচ্ছিল যেন তিনি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাঁকে দ্বিধাগ্রস্ত আর ভীত দেখাচ্ছিল৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/V. Mayo
ইভানকা ট্রাম্প প্রথম ‘নারী প্রেসিডেন্ট’?
‘‘কোনো পুরস্কার পেতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে– জ্যারেড এবং ইভানকা এটা মেনে নিয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছেন, অন্যদের পরামর্শ মেনে কাজ করছেন৷ দু’জনের মধ্যে যেন এক অলিখিত চুক্তি: ভবিষ্যতে কখনো যদি সুযোগ আসে, ইভানকাই লড়বেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিলারি নন, হবেন ইভানকা৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/M. Sohn
ফাস্ট ফুড খেতে লাগে ভালো
‘‘অনেক আগে থেকে ট্রাম্পের মধ্যে একটি চিন্তা কাজ করে যে, কেউ তার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিবে– এই চিন্তা থেকেই ম্যাকডোনাল্ডসের খাবার বেছে নিয়েছেন তিনি৷ কেননা, ম্যাকডোনাল্ডসের খাবার আগে থেকেই তৈরি থাকে৷ তাই কেউ জানে না যে ট্রাম্প সেটা খাবেন৷’’
ছবি: Instagram
ব্যাননের তত্ত্ব
‘‘ব্যাননের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শত্রু হলো চীন৷ নতুন শীতল যুদ্ধের প্রথম ফ্রন্ট হলো চীন৷ চীনকে নিয়েই মাথা ঘামানো উচিত, আর কিছু নিয়ে নয়৷ চীনের সঙ্গে যদি সম্পর্ক ঠিক না থাকে, কোনো কিছুই ঠিক থাকবে না৷ পুরো ব্যাপারটা খুব সহজ৷ চীনের বর্তমানে যা অবস্থা, ১৯২৯ থেকে ১৯৩০ সালে জার্মানির নাৎসিদেরও এমন অবস্থাই ছিল৷ চীনারা, জার্মানদের মতোই ভীষণ বাস্তববাদী৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/B. Anderson
ব্যানন: ডোনাল্ড জুনিয়র ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’
‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, জ্যারেড কুশনার এবং নির্বাচনি প্রচারণার ব্যবস্থাপক পল ম্যানাফোর্ট মনে করেন, ট্রাম্প টাওয়ারের ২৬ তলায় সম্মেলন কক্ষে বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকটি একটি ভালো পরিকল্পনা ছিল৷ সেখানে কোনো আইনজীবী ছিল না৷ এখন যদি আপনার কাছে মনে হয় এটা রাষ্ট্রদ্রোহ না, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড নয়, তারপরও আমি বলবো, এটা রাষ্ট্রদ্রোহ৷ আমাদের ঠিক সেই মুহূর্তেই এফবিআইকে খবর দেয়া উচিত ছিল৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
‘হেরে গেলেও জিতে জেতেন’
‘‘ট্রাম্প যদি নির্বাচনে হেরেও যেতন, তাহলেও বিখ্যাত হতেন৷ তার মেয়ে ইভানকা এবং জামাই জ্যারেড আন্তর্জাতিক তারকা বনে যেতো৷ স্টিভ ব্যানন হতো টি-পার্টি আন্দোলনের ডি ফ্যাক্টো প্রধান৷ অর্থাৎ হেরে গেলেও তাদের অন্যরকম জয় হতো৷’’