মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের এই ঘটনা ঘটেছে। একটি বগি থেকে এক শিশুসহ চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছালে অন্যরা কয়েকটি বগিতে আগুন দেখতে পান। তবে ট্রেনটি থামতে থামতে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ট্রেনের চাকায় আগুন লেগে গেলেও ট্রেনের বাইরে কোনো আগুন লাগেনি।
'আগুন শুধুমাত্র ট্রেনের বগির ভিতরে ছিল, তাই আমরা সন্দেহ করছি যে এটি ভিতর থেকেই লেগে থাকতে পারে, বলেন তিনি।
কমলাপুরে ঘটনাস্থল থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট আলামত সংগ্রহ করেছে। প্রাথমিক তদন্তে বলা হচ্ছে, পেট্রোল ব্যবহার না করলে এত দ্রুত আগুন ছড়ানো সম্ভব নয়।
প্রাথমিক তদন্ত শেষে এই ঘটনায় নাশকতার আলামত পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই।
পিবিআই পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, "আমরা সন্দেহ করছি যে তিন ব্যক্তি বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনের তিনটি বগিতে উঠেছিলেন তারা পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিতে পারেন।"
তিনি জানান, বিমানবন্দর স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ এবং কারা সেখান থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন এবং তেজগাঁও স্টেশন থেকে কারা নেমেছেন তা জানার চেষ্টা করছে।
বিএনপির নিন্দা, শোক ও সন্দেহ
এ ঘটনায় উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বিবৃতিতে এই ঘটনার অন্য কোনো দিক আছে কিনা, এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, "মহল বিশেষের প্রশ্রয় ছাড়া এ ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ সম্ভব নয়। মূলত চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এটি কুটচাল কি না তা নিয়ে জনগণের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। এটি সুপরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা।"
এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বানও জানানো হয়েছে বিএনপির বিবৃতিতে।
এক নজরে বাংলাদেশের রেল
ন্যারোগেজ রেলপথ অনেক আগেই বাংলাদেশ থেকে উঠে গেছে, এখন মেট্রোরেল উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ঢাকাবাসী৷ বাংলাদেশের রেল যোগাযোগের আদ্যোপান্ত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. Rahman
ব্রিটিশ আমলে শুরু
বাংলাদেশে রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে৷ ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা-জগতি রেললাইন স্থাপনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় রেল যুগের৷
ছবি: DW/M. Rahman
এখন যা আছে
বাংলাদেশ রেলওয়ের ২৭৮টি লোকোমোটিভ, এক হাজার ৬৫৬টি মিটারগেজ ও ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ এবং আট হাজার ৬৮০টি পণ্যবাহী ওয়াগন আছে৷ তবে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় অধিকাংশের অবস্থাই জরাজীর্ন৷
ছবি: DW/M. Rahman
দুই ধরনের পথ
বাংলাদেশে বর্তমানে ‘ব্রডগেজ’ এবং ‘মিটারগেজ’ এই দুই ধরনের রেলপথ চালু রয়েছে৷ দেশের পূর্বাঞ্চলে রয়েছে মিটার ও ব্রডগেজ রেলপথ৷ পূর্বাঞ্চলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ রয়েছে৷ আগে ন্যারোগেজ রেলপথ চালু থাকলেও এখন আর তার ব্যবহার নেই৷
ছবি: DW/M. Rahman
রেলপথ
বাংলাদেশে দুই হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথ আছে৷ তবে অনেকটাই ব্যবহারের উপযোগী নয়৷ দেশের ৪৪ টি জেলার সঙ্গে রেললাইন নেটওয়ার্ক সংযুক্ত৷
ছবি: Samdani Haque Najum
বোর্ড
১৯৮২ সালের ২ জুন পর্যন্ত একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য নিয়ে রেলওয়ে বোর্ডের মাধ্যমে রেলপথের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো৷
ছবি: DW/M. Rahman
রেলওয়ে বিভাগ
১৯৮২ সালের ৩ জুন রেলওয়ে বোর্ড বিলুপ্ত করে এর কার্যক্রম যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের রেলওয়ে বিভাগের আওতায় নেয়া হয়৷ তখন থেকে এই বিভাগের সচিব রেলওয়ের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করতেন৷ পরে রেলওয়েকে পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে ভাগ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Rahman
মহাপরিচালকের হাতে রেল
১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট রেলপথের দৈনন্দিন কার্যক্রম যোগাোযাগ মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে মহাপরিচালকের হাতে ন্যস্ত করা হয়৷ তবে নীতি নির্ধারণের জন্য যোগাযোগমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় নয় সদস্যের বাংলাদেশ রেলওয়ে অথরিটি৷
ছবি: DW/M. Rahman
রেলপথ মন্ত্রণালয়
২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করে আদেশ জারি করে৷ বর্তমানে সচিবালয় সংলগ্ন রেলভবনে এই মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir
দীর্ঘ রুট
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় স্টেশন পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব প্রায় ৫০৫ কিলোমিটার, এটিই দেশের সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ রেলরুট৷ এই রুটে ‘দ্রুতযান’ ও ‘একতা এক্সপ্রেস’ চলাচল করে৷
ছবি: bdnews24.com
ই-টিকেটিং
বাংলাদেশ রেলওয়ে কয়ক বছর আগে ই-টিকেটিং চালু করেছে৷ যাত্রীরা অনলাইনে তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন৷
ছবি: Sony World Photography Awards/Md Enamul Kabir
সেরা পথ
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের রেলপথকে সব থেকে সুন্দর রেললাইন হিসেবে অভিহিত করেছে টেলিগ্রাফ৷ শ্রীমঙ্গলের সবুজে ঘেরা পথটুকু আসলেই দৃষ্টিনন্দন৷
ছবি: bdnews24.com/Mustafiz Mamun
জনবল
বাংলাদেশ রেলওয়েতে ২৫ হাজার ৮৩ জন নিয়মিত কর্মচারী রয়েছে৷ এর বাইরে বিভিন্ন কারিগরি পদে চুক্তিতে কয়েক হাজার মানুষ কাজ করেন৷
ছবি: Samdani Haque Najum
মেট্রোরেল
মেট্রেরেল চালুর জন্য কয়েক বছর আগে কাজ শুরু হলেও ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রথমবারের মতো এই রেল সার্ভিস চালু হতে পারে৷ মেট্রেরেল চালু করতে রেলপথ স্থাপনের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে৷
ছবি: Samdani Haque Najum
লোকসান
রেলে ভ্রমণকারীর সংখ্যা বাড়লেও এর সেবার মানে উন্নতি না হওয়ায় লোকসানের মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রেলওয়ে৷ ২০১৭ সালের থেকে ২০১৮ সালে রেলের যাত্রী বেড়েছে এক কোটিরও বেশি, কিন্তু ২০১৭ সালে রেলে এক হাজার ২০০ কোটি এবং ২০১৮ সালে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে৷
ছবি: Samdani Haque Najum
১০ খাতে দুর্নীতি
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিকিট বিক্রিতে কালোবাজারি, যাত্রীবাহী ট্রেন ইজারা দেয়া এবং ট্রেনে নিম্নমানের খাবার পরিবেশনসহ বাংলাদেশের রেলখাতের ১০টি দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে প্রতিবেদন দিয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
15 ছবি1 | 15
আরো কয়েক জায়গায় বাসে আগুন
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে গুলিস্তানের জিপিও এলাকায় মালঞ্চ পরিবহণের একটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
দমকলবাহিনী দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে বাসে এ সময় কোনো যাত্রী না থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রামের চন্দনাইশেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের বাদামতল এলাকায় একটি থেমে থাকা বাসে আগুন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দ্য ডেইলি স্টার।
বাসটি বিজিটি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা, এবং তখন পার্ক করা ছিল। ফলে এই ঘটনাতেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এই দুই ঘটনাতেই জড়িতদের ব্যাপারে জানতে পারেনি পুলিশ। তবে জানানো হয়েছে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।