তেলখেকো ব্যাকটেরিয়ার নাম শুনেছেন? তেল দূষণের খোঁজ পেলেই তারা সেখানে গিয়ে জড়ো হয়৷ এই ধরনের ব্যাকটেরিয়াদের তেল খাওয়ার ক্ষমতা ও খিদে বাড়ানোর জন্য গ্রিসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গবেষণা প্রকল্প চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
সাগর নিজেই নিজেকে পরিষ্কার করে ও পরিষ্কার রাখে৷ পানিতে অতি ক্ষুদ্র মাইক্রোঅরগ্যানিজম যাবতীয় দূষিত পদার্থকে শেষমেষ অন্যান্য উপাদানে পরিণত করে বটে, কিন্তু তাতে বড় বেশি সময় লাগে৷
ধরুন একটি তেলের ট্যাংকার পাথরে ধাক্কা লেগে ডুবে গেছে, তেল ছড়িয়ে পড়েছে৷ তেল দূষণের মোকাবিলা করার জন্য কর্তৃপক্ষ সাধারণত ভাসমান বেড়া বসিয়ে বোট থেকে বেড়ার ভিতর ভাসন্ত তেল কেঁকে বা ছেঁকে নেওয়ার চেষ্টা করেন৷ যদিও সমাধানটা খুব কার্যকরি নয়৷
সমুদ্রবিজ্ঞানী ভাসিলিওস মামালুকাস-ফ্রাগুলিস জানালেন, ‘‘এই প্রযুক্তির কতোগুলো বাধা আছে৷ প্রধান প্রতিবন্ধক হল, ভাসন্ত বেড়া বসানো সত্ত্বেও কিছু তেল ঠিকই চুঁইয়ে বেরিয়ে পড়ে৷ এছাড়া যান্ত্রিক উপায়ে সবটা তেল কেঁকে বা ছেঁকে নেওয়া সম্ভব নয়; কাজেই তেলের একটা পাতলা স্তর থেকেই যায়৷''
যে ব্যাকটেরিয়া তেল খেয়ে উপকার করে...
03:57
পরিষ্কার করা কঠিন, বিশেষ করে যখন সাগরের পানিতে থাকা মাইক্রোঅরগ্যানিজম বা অণুবীজগুলির তেল হজম করতে অনেক সময় লেগে যায়৷ কিন্তু ধরুন যদি এমন একটা ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা অনেক তাড়াতাড়ি তেল হজম করে ফেলতে পারে? তাই নিয়ে গ্রিসে একটি ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্প চলেছে৷
ব্যাকটেরিয়ার ‘খিদে'
বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক নিকোলাস কালোগেরাকিস বললেন, ‘‘আমাদের গবেষণা প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল, সাগরের পানিতে অণুজীবদের বায়ো-ডিগ্রেডেশন বা জৈবিক পদ্ধতিতে রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি করা৷ আমরা অণুজীবগুলির তেল হজম করার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকি৷''
পরিবেশ বান্ধব হাইব্রিড গাড়ি
গাড়ি তৈরির প্রযুক্তি এখন দু’টি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে৷ প্রথমত, কত কম জ্বালানি খরচ করবে, দ্বিতীয়ত, এ গাড়ি কতটা পরিবেশবান্ধব৷ হাইব্রিড গাড়ি পরিবেশ বান্ধব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাইব্রিড গাড়ির পাশে ম্যার্কেল
দু বছর আগে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ফ্রাঙ্কফুর্টে গিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই গাড়ি প্রদর্শনীতে জার্মানির গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি ডাইমলার-এর সিইও ডিটার সেচে-র সঙ্গে দেখা যাচ্ছে তাঁকে৷ তাঁরা দাঁড়িয়েছেন কিন্তু মার্সিডিজের এফ ১২৫ মডেলের হাইব্রিড গাড়ির সামনে৷
ছবি: Patrik Stollarz/AFP/Getty Images
বিএমডব্লিউ-র নতুন উপহার
জার্মানির আরেক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএমডব্লিউ৷ গত মাসে হয়ে গেল ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রদর্শনীর ৬৫তম আয়োজন৷ সেখানে বিএমডব্লিউ-র হাইব্রিড গাড়ির নবতম সংযোজন ইড্রাইভ এক্সফাইভ মডেলটিও ছিল৷
ছবি: JOHANNES EISELE/AFP/Getty Images
পর্শে-র গর্বিত সিইও
ভালো কিছু উপহার দিতে পারলে কে না খুশি হয়! মাটিয়াস ম্যুলারও খুব খুশি৷ এবারের ফ্রাঙ্কফুট প্রদর্শনীর আকর্ষণ বাড়িয়েছে পর্শে ৯১৮ স্পাইডার হাইব্রিড গাড়ি৷ পর্শে কোম্পানির সিইও মাটিয়াস ম্যুলার-কে তাই দেখা গেল নতুন মডেলের পরিবেশবান্ধব গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে ছবি তুলতে৷
ছবি: Reuters
ফলক্সভাগেনের হাইব্রিড
জেনেভার গাড়ি প্রদর্শনীতে নিজেদের সেরা হাইব্রিড গাড়িটি পাঠাতে চায় বলে গত মার্চে ছোট আঙ্গিকের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল জার্মানির ফলক্সভাগেন৷ সেখানে এভাবেই হাজির করা হয় এক্সএলওয়ান মডেলের হাইব্রিড গাড়িটি৷
ছবি: Fabrice Coffrini/AFP/Getty Images
হোটেলে হাইব্রিড গাড়ি
টোকিওর হোটেলেও দেখা গেল হাইব্রিড গাড়ি৷ নতুন গাড়ি খদ্দেরদের দেখাতে ফাইভ স্টার হোটেলে নিয়ে হাজির করা অবশ্য নতুন কিছু নয়৷ জাপানের হন্ডা কোম্পানি টোকিওর এক হোটেলে এই গাড়িটি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শাংহাইয়ের প্রদর্শনীতে...
দু বছর আগের শাংহাইয়ের আন্তর্জাতিক গাড়ি শিল্প প্রদর্শনী৷ সেদিন ছিল ‘মিডিয়া ডে’৷ গণমাধ্যমের শত শত ক্যামেরা সামনে হাজির লেক্সাস ইএস২৪০ মডেলের হাইব্রিড গাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
পরীক্ষাগারে গবেষকরা একটি তেল দুর্ঘটনার নকল করে দেখছেন৷ প্রথমে তারা পানির উপর উদ্ভিদজাত তেলের একটি বিশেষ ধরনের স্প্রে ছড়ান, যার ফলে পেট্রোল আর পানি মিশে যায়৷
মাইক্রোবিয়াল বায়োটেকনোলজিস্ট রজার মার্চান্ট বললেন, ‘‘পানির উপর এই স্প্রে ছড়ালে তেল উবে যায় না৷ যা ঘটে তা হল এই যে, তেল ছোট ছোট বিন্দুতে ভেঙে যায় – পানিতে থাকা অণুজীবরা এই ছোট ছোট তেলের বিন্দুগুলোকে পুরোপুরি হজম করে ফেলতে পারে৷''
মেরিন বায়োলজিস্ট মিখাইল ইয়াকিমভ বললেন, ‘‘আমাদের পন্থা হল, সাগর থেকে দূষিত পানির নমুনা নিয়ে, পরীক্ষাগারে সেই নমুনা থেকে সংশ্লিষ্ট অণুজীবগুলি ‘কালচার' করা৷ পর্যাপ্ত পরিমাণ তেলখেকো ব্যাকটেরিয়া ‘চাষ' করার পর, আমরা সেই ব্যাকটেরিয়া সাগরে তেল দূষণের স্থানটির উপর স্প্রে করি৷ বলা যেতে পারে, আমরা শুধু সাগরের নিজেকে পরিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়াটিকে কিছুটা ত্বরান্বিত করছি৷''
ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু থেকে সাবধান!
খালি চোখে দেখা না গেলেও পরিষ্কার, ঝকঝকে বাড়িতেও কিন্তু বাস করে অসংখ্য রোগ-জীবাণু৷ বাড়ির কোথায়, কেন বেশি জীবাণু থাকে আর এ সব থেকে সতর্ক থাকার উপায়ই বা কী? জানাচ্ছেন একজন মাইক্রো বাইয়োলজিস্ট৷
ছবি: Fotolia/drubig-photo
জীবাণু যেভাবে ঘরে ঢোকে
জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া বাড়িতে আসে বাড়ির মানুষের সাথে৷ তাছাড়া খাদ্যদ্রব্য তো রয়েছেই৷ খাবার-দাবারের সাথে খুব সহজেই জীবাণু ঘরে ঢুকে পড়ে৷ মাইক্রো বাইয়োলজিস্ট ড. মার্কুস এগার্ট জানান, প্রতিটি মানুষের শরীরে বাস করে প্রায় দেড় কেজি পরিমাণ জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া৷
ছবি: picture-alliance/Offside/S. Stacpoole
মুরগির মাংস
বাড়িতে বেশিরভাগ জীবাণুর জন্ম হয় রান্নাঘরে, বিভিন্ন খাবার থেকে৷ বিশেষ করে, মুরগির কাঁচা মাংস থাকে জীবাণুতে ভরা৷ তাই এই মাংসের সংস্পর্শে যেসব জিনিস আসে, সেখানেও জন্মায় ব্যাকটেরিয়া, যা বিভিন্ন রোগের জন্ম দিতে পারে৷ জানান প্রফেসর এগার্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
রান্নাঘরের স্পঞ্জ নিয়মিত বদলাতে হবে
কিচেনে অবশ্য সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে বাসন ধোয়ার স্পঞ্জে৷ তাই প্রতিবার ব্যবহারের পর স্পঞ্জের পানি ভালো করে চিপে রাখুন৷ এবং প্রতি সপ্তাহে না হলে, দু’সপ্তাহ অন্তর অন্তর নতুন স্পঞ্জ ব্যবহার করুন৷
ছবি: Colourbox
গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে
স্পঞ্জের সাথে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার করার অন্যান্য ন্যাকড়া বা ব্রাশও নিয়মিত বদলাতে হবে এবং এগুলি যতদিন ব্যবহার করবেন, ততদিন ব্যবহারের পর তা সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে৷ সম্ভব হলে ফুটন্ত পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে সব রকম ন্যাকড়া, স্পঞ্জ ও ব্রাশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাথরুম, টয়লেট
বাথরুম বা টয়লেটে রান্নাঘরের মতো অত বেশি জীবাণু না থালেও সেখানেও থাকে যথেষ্ট ব্যাকটেরিয়া৷ তবে মনে রাখবেন টয়লেট ব্যবহারের পর ফ্লাশ করার সময় অবশ্যই ঢাকনাটি বন্ধ করে দেবেন৷ তা না হলে জীবাণুগুলো চোখে, মুখে বা অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
হাত ধোয়া খুবই জরুরি
বাইরে গেলে আমাদের হাতে কত কিছুই না লাগে৷ পরে সেই হাতের জীবাণুই আবার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে যায়৷ তাই বাড়িতে ঢুকেই প্রথম কাজ যেন হয়, সাবান দিয়ে ভালো করে হাত দু’টো ধোয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Klose
কাপড় ধোয়া
সম্ভব হলে কাপড়-চোপড় গরম পানি দিয়ে ধোয়া উচিত৷ কাপড় ধোয়ার পানি যত গরম হবে ব্যাকটেরিয়া মরবে তত তাড়াতাড়ি৷
ছবি: Dron/Fotolia
আন্ডার গার্মেন্টস
গায়ের সাথে যেসব কাপড় লেগে থাকে, অর্থাৎ আান্ডার গার্মেন্টস বা অন্তর্বাস অবশ্যই গরম পানি দিয়ে ধোয়া উচিত৷ মেশিনে ধোয়ার সময়, এ সব কাপড়ের গায়ে কম তাপে ধোয়ার কথা লেখা থাকলেও গরম পানি দিয়ে ধোয়াই স্রেয়, জানান ড. এগার্ট৷ কারণ এক্ষেত্রে শুধু কাপড়ের সৌন্দর্য দেখলে চলবে না!
ছবি: Fotolia/Ammentorp
মনে রাখতে হবে
তবে সব জীবাণু বিপজ্জনক নয়৷ তাই বেশি ভয় পাওয়া বা বাড়াবাড়ির কিছু নেই বলেও জানান প্রফেসর মার্কুস এগার্ট৷ তাঁর মতে, জীবাণু সম্পর্কে সকলেরই ‘সচেতন’ থাকা প্রয়োজন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Steuer
9 ছবি1 | 9
সবশেষে, ব্যাকটেরিয়ার তেলের খিদে বাড়ানোর জন্য গবেষকরা মিশ্রণটিতে ফসফরাস ও নাইট্রোজেন যোগ করেন৷ তাদের উদ্ভাবিত এক ধরনের নতুন, ‘চতুর' কণিকা ব্যাকটেরিয়াদের পক্ষে পুষ্টিকর এই পদার্থগুলিকে যেখানে তেল দূষণ ঘটেছে, ঠিক সেখানে পৌঁছে দেয়৷
পরিবেশ সংক্রান্ত মাইক্রোবায়োলজিস্ট ফিলিপ কর্ভিনি যোগ করলেন, ‘‘ব্যাকটেরিয়া একবার সাগরে গিয়ে পড়লে, তাদের খাদ্যের প্রয়োজন হয়; যেমন ফসফরাস ও নাইট্রোজেন৷''
বায়োকেমিস্ট প্যাট্রিক শাহগালদিয়ান সমাপ্ত করলেন, ‘‘কাজেই আমরা সেই খাদ্য সরাসরি ব্যাকটেরিয়ার কাছে পৌঁছে দিই, যাতে তারা আরো ভালোভাবে তেল হজম করতে পারে৷''
ব্যাকটেরিয়া খায় তেল; ব্যাকটেরিয়াকে খায় প্ল্যাঙ্কটন – আর এভাবেই সাগরের ‘ফুড চেন' চলতে থাকে৷ তেল দূষণ শুষে নেওয়ার এই প্রাকৃতিক পদ্ধতি শীঘ্রই আরো অনেক ব্যাপক হারে প্রয়োগ করা হবে, যাতে বড় বড় পরিবেশগত বিপর্যয়ের মোকাবিলা করা সম্ভব হয়৷