বাংলাদেশে সয়াবিন তেল মজুদের বিরুদ্ধে অভিযানে খুচরা বিক্রেতা এবং পাইকারি বিক্রেতারা ধরা পড়ছেন। কিন্তু সরবরাহ বিঘ্নিত করার মূল অভিযোগ যে আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
বরং উল্টো তারা তেলের দাম আরো বাড়বে বলে ডিলারদের জানাচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রতিদিন সয়াবিন তেলের চাহিদা কম বেশি সাড়ে ছয় লাখ লিটার। অভিযানে সোমবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে এক লাখ লিটার। উদ্ধার করা তেল মাত্র এক দিনের চাহিদার ছয় ভাগের এক ভাগেরও কম। তাই এটা দেখে সিদ্ধান্তে আসার কোনো উপায় নেই যে খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারি বিক্রেতারাই তেল মজুত করে রেখেছে। এর পেছনে মূল খোলোয়াড় হলো আমদানিকারকেরা। ভোক্তা অধিদপ্তর সেকথা স্বীকারও করেছে ডয়চে ভেলের কাছে। কিন্তু তারা আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ার পিছনে সরবরাহ ব্যবস্থা আরো বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছে।
তেলের নানা তেলেসমাতি
গত ২০ মার্চ সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই দামে কখনোই বাজারে তেল পাওয়া যায়নি। যেটুকু পাওয়া গেছে তা ১৫ দিন পর। আর তখন থেকেই বাজারে তেলের সংকট শুরু হয়। এখন লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করার পরও বাজার স্বাভাবিক হয়নি। তবে বাজারে দ্রুত তেল আসছে। আবার বাজারে পুরনো বোতলে নতুন বিক্রয়মূল্য লিখে কেউ কেউ বিক্রি করছেন যা বেআইনি।
আমদানিকারকেরা তেল সরবরাহ করতে শুরু করেছেন। তবে এটা আগে আমদানি করা তেল যা তারা মজুত করে রেখেছিলেন সেই তেল বলে জানায় ভোক্তা অধিদপ্তর। বাজারে নতুন আমদানি করা তেল আসতে আরো সময় লাগবে। বাজারে এখনো নতুন দামেও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ২২০ টাকা দামেই প্রতি লিটার কিনতে হচেছ। কলাবাগানের দোকানদার মিন্টু মিয়া বলেন,"আমরা তো এখনো তেল পাচ্ছি না। সরবরাহ নাই। যাদের কাছে পুরনো তেল আছে তারা ২২০ টাকার নিচে প্রতি লিটার বিক্রি করছেন না।”
কারওয়ানবাজারের পাইকারি বিক্রেতা রহমান ট্রেডার্সের মালিক আবদুস সামাদ বলেন,"আমরা এখনো তেল পাইনি। বলা হচ্ছে দ্রুতই সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। আমাদের কাছে এখন সয়াবিন তেল নাই।”
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান
তিনি বলেন,"১৫ রোজা থেকে আমরা কোনো তেল পাইনি। মিল থেকে কোনো তেল দেয়া হয়নি।”
এখন যে সয়াবিন তেল উদ্ধার হচ্ছে সেব্যাপারে তিনি বলেন,"তেলের দাম বাড়বে এটা শুনে কেউ কেউ তেল ধরে রেখেছিলো। সেটাই উদ্ধার হচ্ছে।”
আসল খেলোয়াড় যারা
কনজ্যুমারস অ্যাসেসিয়েশন অব বালাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এস নাজের হোসাইন বলেন, "এখন অভিযানে যে তেল উদ্ধার হচ্ছে তা মজুত করা তেলের খুবই সামান্য অংশ। আর যারা ধরা পড়ছেন তারা খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা বা আঞ্চলিক সাব ডিলার। কিন্তু মূল ডিলার বা ডিষ্ট্রিবিউটর এবং আমাদানিকারকরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কারণ তারা ক্ষমতাধর এবং সরকার তাদের ধরতে চায় না। আর বাণিজ্যমন্ত্রী তার দায়িত্ব পালন না করে আবেগি কথা বলছেন। তিনিও ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই কাজ করেন।”
তিনি অভিযোগ করেন,"আমদানিকারকেরা দুইভাবে তেল মজুত করে সংকট তৈরি করে। প্রথমত তারা নিজেরাই মিলে তেল রেখে দেয়। আরেকটি হলো তাদের সিন্ডিকেটে সহায়তাকারী ডিলারদের গুদামে রেখে দেয়। সেই সব গুদাম বা মিলে অভিযান হচ্ছে না।”
ঈদের আগে ভোক্তা অধিদপ্তর মিল পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে অনিয়ম পায়। তারা তখন ওই অনিয়ম নিয়ে তেল আমদানিকারকদের ডাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধিতে বিভিন্ন দেশের উদ্যোগ
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে বিভিন্ন দেশে খাবারের দাম বেড়ে গেছে৷ ফলে গরিবরা তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও বিপদে পড়েছেন৷ এই অবস্থায় নাগরিকদের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে এসেছে কিছু দেশ৷
ছবি: REUTERS
অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক রাশিয়া, ইউক্রেন
বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ২৫ শতাংশ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন৷ সূর্যমুখী তেল রপ্তানিতেও শীর্ষ দেশ ইউক্রেন৷ এছাড়া বার্লি ও ভুট্টা রপ্তানিতে বিশ্ব বাণিজ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইউক্রেন৷ এদিকে রাশিয়ার গ্যাস, তেল ও সারের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল ইউরোপ৷
ছবি: Olena Mykhaylova/Zoonar/picture alliance
ক্ষুধা পরিস্থিতিতে ‘বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা
জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডাব্লিউএফপির মোট খাদ্য সহায়তার প্রায় ৫০ শতাংশ আসে ইউক্রেন থেকে৷ যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে শস্য চাষে প্রতিকূলতা তৈরি হওয়ায় বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা পরিস্থিতিতে ‘বিপর্যয়’ নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি৷ যুদ্ধ শুরুর আগে ৩৮টি দেশের প্রায় চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে পড়ার আশঙ্কায় ছিল বলে জানিয়েছিল ডাব্লিউএফপি৷
ছবি: Valentin Sprinchak/dpa/TASS/picture alliance
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়তে ইইউ সদস্য দেশগুলোর কৃষকদের চার হাজার ৭২৫ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ ইইউর কৃষকরা রাশিয়ার সারের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল৷ যুদ্ধের আগেই সারের দাম বেড়ে গিয়েছিল৷ এছাড়া শূকর শিল্পসহ কৃষি ও মৎস খাতেও সহায়তার প্রস্তাব করেছে ইইউ৷ আরো বেশি জমিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ফসল চাষেরও অনুমতি দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Jelena Djukic Pejic/DW
জার্মানি
৯০ দিনের জন্য বেশ কিছু ভর্তুকি ও ছাড়ের ঘোষণা করা হয়েছে৷ যেমন পেট্রোলের ক্ষেত্রে লিটার-প্রতি ৩০ সেন্ট এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে লিটার-প্রতি ১৪ সেন্ট কম গুনতে হবে৷ সেই সঙ্গে তিন মাস ধরে মাসে মাত্র নয় ইউরো মূল্যে বাস-ট্রাম ব্যবহার করা যাবে৷ এছাড়া আয়করদাতারা এককালীন ৩০০ ইউরো পর্যন্ত হাতে পাবেন৷ সন্তানপ্রতি ১০০ ইউরো বাড়তি ভাতাও দেওয়া হবে৷ স্বল্প আয়ের পরিবারগুলির জন্যও ভর্তুকির ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার৷
ছবি: Sabine Kinkartz/DW
ফ্রান্স
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের বাড়তি মূল্যের ক্ষতি পোষাতে গরিবদের বিশেষ চেক দেয়ার কথা ভাবছেন তিনি৷
ছবি: John Thys/AFP/Getty Images
মিশর
মিশরে কয়েক দশক ধরে ভর্তুকি মূল্যে রুটি বিক্রি হচ্ছে৷ ফুড কার্ড থাকা ব্যক্তিরা এই দামে রুটি কিনতে পারেন৷ মোট জনসংখ্যার (প্রায় দশ কোটি ২০ লাখ) প্রায় ৬০ ভাগ এই সুযোগ নিয়ে থাকে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রুটির দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভর্তুকি ছাড়া যে রুটি বিক্রি হয় তার দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ এছাড়া মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে সুদের হারও বাড়িয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture alliance/dpa
বাংলাদেশ
গত রোববার থেকে এক কোটি পরিবারের জন্য কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে৷ একটি পরিবারকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত দুইবার করে দুই লিটার সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল দুই কেজি এবং পেঁয়াজ সর্বনিম্ন দুই কেজি কেনার সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ তাদের কাছে সয়াবিন তেল ১১০ টাকা লিটার, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে৷ উপরের ছবিটি নারায়ণগঞ্জ থেকে তোলা৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
কিউবা
রুটি থেকে শুরু করে টুথপেস্ট - অনেক কিছু কম দামে কেনার জন্যই কিউবানদের লাইনে দাঁড়াতে হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এবার কিউবানদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে জ্বালানি তেল কিনতে দেখা গেছে৷ উপরের ছবিটি সোমবার তোলা৷
ছবি: REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র
ওয়াশিংটন পোস্টের সোমবারের এক প্রতিবেদন বলছে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় ফুড ব্যাংকগুলোতে মার্কিনিদের ভিড় বাড়ছে৷ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটে সহায়তা হিসেবে ২.৬৫ বিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে সেই পরিমাণ আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা৷
ছবি: Tayfun Coskun/AA/picture alliance
9 ছবি1 | 9
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিক্তি সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন,"আমরা আমাদের তদন্তের প্রতিটি পর্যায়েই সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব পেয়েছি। খুচরা, পাইকারি, ডিলার এবং আমদানিকারক সবখানেই সিন্ডিকেট কাজ করে। আমদানিকারক বা মিল পর্যায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য তিন ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়। এসও ( সেল অর্ডার) ধরে রাখা, এসওতে বিক্রয় মূল না লেখা এবং পরিশোধন ( রিফাইন) কমিয়ে দেয়া।”
ডিলাররা আমদানিকারকদের কাছ থেকে এসও নিয়ে মিল থেকে তেলের সরবরাহ নেয়। ১৫ দিনের মধ্যে তাদের তেল পাওয়ার কথা থাকলেও তাদের অনেক দেরি করে তেল দেয়া হয়। এসওতে দাম লেখা না থাকায় ইচ্ছে মত দাম নেয়া যায়। আর উৎপাদন কমিয়ে তেল ধরে রাখা হয়।
তিনি বলেন,"আমদানিকারকেরা সব ডিলারকে তেল না দিয়ে তাদের সিন্ডিকেটের সদস্য ডিলারদের সরবরাহ করে তেল তাদের মাধ্যমে মজুত করে রাখে বলে যে অভিযোগ আছে সেটাও সত্য।
এই কর্মকর্তা বলেন,"আমাদের ক্ষমতা আছে , আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কিন্তু অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তেল আমদানি করায় আমাদের অশঙ্কা ছিলো আইনগত ব্যবস্থা নিলে সরবরাহ ব্যবস্থা আরো বিপর্যন্ত হতে পারে। তাই আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি।”
আমদানিকারকেরা যা বলেন
বাংলাদেশে প্রতিমাসে সয়াবিন তেলের চাহিদা দুই লাখ টন। তেলের কোনো ঘাটতি নেই। এখন যে তেল আছে তা কয়েক মাস আগে আমদানি করা। ফলে মজুত করেই সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।
কিন্তু টিকে গ্রুপের পরিচালক ও ভোজ্য তেল মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তফা হায়দার মিল পর্যায়ে তেল মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,"এখন যে তেল উদ্ধার হচ্ছে ডিলার বা পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে তার দায় কিছুটা হলেও আমাদের আছে। আমাদের ডিলারেরা ঠিকমত বাজারে তেল দিচ্ছে কী না সেটা দেখাও আমাদের দায়িত্ব। তারা আমাদের কাছ থেকে তেল নিয়ে কী করে তা আমাদের দেখা উচিত।”
বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের মুদি বাজার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদি বাজারের মধ্যে তুলনা করা কঠিন৷ মার্কিন এক কোম্পানি সীমিত আকারে সেই চেষ্টা করেছে৷ তাদের দেয়া তথ্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: David McNew/Getty Images
গ্রোসারি সূচক ২০২১
ব্যক্তিগত লোন দেয়ার মার্কিন অনলাইন কোম্পানি ‘নেটক্রেডিট’ গতবছর ৯ নভেম্বর ২০২১ সালের গ্রোসারি সূচক প্রকাশ করে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুপারমার্কেটের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়৷ প্রথমে, বাজারের একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলোর দাম কোন দেশে কেমন, তা জানার চেষ্টা করা হয়৷ সূচকটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: David McNew/Getty Images
১০টি পণ্যের তথ্য
সূচক তৈরিতে যে ১০টি পণ্যের তথ্য নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো সকালের নাস্তার জন্য সিরিয়াল, ১২টি ডিম, ৫০০ গ্রাম হাড় ছাড়া মুরগীর বুকের মাংস, ৫০০ গ্রাম মাখন, ১ লিটার বোতলজাত ভেজিটেবল তেল, ৫০০ গ্রাম সাদা পাউরুটি, ১ লিটার দুধ, ১ কেজি আলু, ১ কেজি টমেটো, ১ কেজি কলা, ১৪০ গ্রাম ক্যানড টুনা ও বোতলজাত দেড় লিটার পানি৷
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
বাংলাদেশে খরচ
উপরের পণ্যগুলো কিনতে বাংলাদেশে ১৯৯০ টাকা খরচ হতো বলে জানিয়েছে নেটক্রেডিট৷ বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে নেটক্রেডিট দেখেছে, এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের দৈনিক গড় বেতনের ৩৪০ শতাংশ৷
ছবি: DW
সবচেয়ে বেশি সুইজারল্যান্ডে, কম জিবুতিতে
এই ১০টি পণ্য কিনতে সুইজারল্যান্ডে খরচ পড়তো প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা৷ আর জিবুতিতে মাত্র ৬০০ টাকা৷
ছবি: ZDF
বাংলাদেশ চার নম্বরে
পণ্য কেনার খরচ বের করার পর নেটক্রেডিট বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে প্রতিটি দেশের মানুষের গড় দৈনিক আয় জানার চেষ্টা করেছে৷ এরপর এই দুই তথ্য দিয়ে ‘অ্যাফোরডিবিলিটি পার্সেন্টেজ’ বা সক্ষমতার হার বের করেছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের সক্ষমতার হার ৩৪০ শতাংশ৷ অর্থাৎ ঐ ১০ পণ্য কিনতে খরচ হওয়া ১৯৯০ টাকা একজনের দৈনিক গড় বেতনের ৩৪০ শতাংশ৷ তালিকায় বাংলাদেশের উপরে আছে কম্বোডিয়া, কেনিয়া ও নিকারাগুয়া৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সবচেয়ে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে ঐ ১০ পণ্য কিনতে খরচ পড়তো ২,২১২ টাকা, যা দেশটির দৈনিক গড় বেতনের মাত্র ১২ শতাংশ৷ এরপর আছে নেদারল্যান্ডস (খরচ ২১১৫ টাকা, সক্ষমতা ১৫ শতাংশ), লুক্সেমবার্গ (খরচ ২৯৩০ টাকা, সক্ষমতা ১৫ শতাংশ), ফিনল্যান্ড (খরচ ২১৪৬ টাকা, সক্ষমতা ১৬ শতাংশ), সিঙ্গাপুর (খরচ ২৯৩৩ টাকা, সক্ষমতা ১৮ শতাংশ) ও যুক্তরাজ্য (খরচ ২২২২ টাকা, সক্ষমতা ১৯ শতাংশ)৷
ছবি: Photoshot/picture alliance
তথ্য নেই
গ্রোসারি সূচকে ভারত, পাকিস্তান, জার্মানিসহ অনেক দেশের তথ্য দেয়া হয়নি৷
ছবি: Martin Wagner/imago images
চালের দাম
৯ মার্চ, ২০২২ সালে সার্বিয়ার ক্রাউড-সোর্সড ভিত্তিক বৈশ্বিক ডাটাবেজ কোম্পানি ‘নাম্বেও’র ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায় বাংলাদেশে এক কেজি চালের (সাদা) দাম ৬০ টাকা৷ জাপানে দাম সবচেয়ে বেশি ৩৬৯ টাকা৷ এছাড়া যু্ক্তরাষ্ট্রে ৩৪০, সুইজারল্যান্ডে ২৫১, জার্মানিতে ১৮১, যুক্তরাজ্যে ১২৫, পাকিস্তানে ৭৬, ভারতে ৫৯, নেপালে ৬০ ও শ্রীলঙ্কায় ৫১ টাকা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
পেঁয়াজের দাম
১০ মার্চ নাম্বেওর ওয়েবসাইটে দেখা যায় বাংলাদেশে এক কেজি পেঁয়াজের দাম সাড়ে ৫৩ টাকা৷ ভারতে ৪০ টাকা, পাকিস্তানে ২৫ টাকা, শ্রীলঙ্কায় ৬৬ টাকা, নেপালে ৪৯ টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ২২০ টাকা, যুক্তরাজ্যে ১০৮ টাকা ও জার্মানিতে ১২১ টাকা৷
ছবি: Reuters/L. Niesner
নাম্বেওর গ্রোসারি সূচক
নিউইয়র্ক শহরের বাজারের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারমূল্যের তুলনা করে তালিকা প্রকাশ করে নাম্বেও৷ এতে দেখা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে যে গ্রোসারির দাম ১০০ টাকা৷ বাংলাদেশে সেটা ৩০ টাকায় পাওয়া যায়৷ জার্মানিতে পাওয়া যায় ৫২ টাকায়, যুক্তরাজ্যে ৫৬ টাকা, ভারতে ২৬ টাকা, পাকিস্তানে ১৭ টাকা ও নেপালে ২৬ টাকায়৷ সূচকটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: imago/Levine-Roberts
নাম্বেওর তথ্য বিশ্বাসযোগ্য?
বিশ্বের যে কেউ নাম্বেওর ডাটাবেজে তথ্য ঢোকাতে পারে৷ তাই কেউ চাইলে ইচ্ছেমতো তথ্য দিতে পারে৷ সে কারণে নাম্বেওর তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ এরপরও নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ইকোনমিস্ট, টাইম ম্যাগাজিনের মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নাম্বেওর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ নাম্বেও বলছে, গত ১২ মাসে ঢাকার বিভিন্ন জিনিসের দাম নিয়ে মোট ৩,১৩২ বার তথ্য যুক্ত করেছেন ২৭৪ জন নাম্বেও ব্যবহারকারী৷
ছবি: Frank Hoermann/SvenSimon/picture alliance
11 ছবি1 | 11
তেল আমদানির পর কতদিনের মধ্যে রিফাইন করতে হবে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"সেটাতো আমাদের বিষয়। এখানে কোনো সময় বেধে দেয়া যায়না। কারণ ঝুঁকিটা এককভাবে আমরা নিই।” আর ১৫ দিনের মধ্যে এসওর তেল তারা সরবরাহ করেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন,"এসও বিক্রি করে আবার ডিলারদের মাধ্যমে তেল জমিয়ে রেখে সেখান থেকে প্রফিট গেইন আসলে কেউ করে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী তো ঈদের আগেই বলেছেন দাম সমন্বয় করবেন। এখন প্রতি লিটারে ৩৮ টাকা যদি বেশি দাম হয় এই লোভে কোনো কোনো বিক্রেতা তেল ধরে রাখবে এটা তো ধরেই নেয়া যায়।”
এই আমদানিকারক জানান,"আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিনই তেলের দাম বাড়ছে। তাই আবারও তেলের দাম বাড়তে পারে এই কথা অমূলক নয়। তবে আমাদের এখানে সমস্যা দাম সমন্বয়ে এক মাসের মত টাইম গ্যাপ হয় । ফলে ভোক্তাদের মধ্যে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়। তারা বলেন বিশ্ববাজারে যখন বাড়ে তখন দাম বাড়ে যখন কমে তখন কমে না। কিন্তু এটা নিশ্চিত করতে হবে যে বোতলের গায়ে যে দাম লেখা থাকবে যখনই বিক্রি করুক সেই দামই নিতে হবে। এটা আইন।”
অভিযান চলছে
এদিকে তেল মজুতের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত আরো দুই লাখ লিটার তেল উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। উদ্ধারের পর এই সব তেল গায়ে লেখা দামে ( আগের দামে) বিক্রি করে দেয়া হয়। তাই মজুতদারেরা এখন বোতলের তেল ঢেলে খোলা হিসেবে বিক্রির কৌশল নিচ্ছে বলে জানা গেছে।