ভারতীয় সংসদ তোলপাড়
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন বিল, দিল্লিতে পড়তে আসা অরুণাচল প্রদেশের ছাত্র নিডো টানিয়ামের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ইস্যু, সাম্প্রদায়িক হিংসা দমন, অগুস্তাওয়েস্টল্যান্ড হেলিকপ্টার চুক্তি, দুর্নীতি দমন বিল ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ একগুচ্ছ বিল এবং অন্তর্বর্তী সাধারণ বাজেট ও রেল বাজেট পাস করাতে সরকার পক্ষ যখন মরিয়া, বিরোধীপক্ষ তখন কোমর বেঁধেছে প্রতি পদে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে৷ এতে নিষ্ফল হয় সংসদ চলতে দেবার প্রধানমন্ত্রীর আবেদন নিবেদন৷ ফলে যা হবার তাই হয়েছে৷ হৈ হট্টগোল, বাক-বিতণ্ডায় যথারীতি সংসদের উভয়কক্ষের অধিবেশন মুলতুবি রাখতে বাধ্য হন স্পিকার মীরা কুমার এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান৷
স্বাধীনতার পর থেকে যদি দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে পঞ্চদশ সংসদে সব থেকে কম, মাত্র ১৬৫টি বিল পাস হয়েছে৷ ঝুলে আছে এখনও ১২৫টি বিল৷ এই অধিবেশনে তেলেঙ্গানা বিল পাশ না হলে তা নিয়ে অর্ডন্যান্স জারি সম্ভব নয়৷ তাই তেলেঙ্গানা বিলকে দেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার৷ আর্থিক ও অর্থলগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাস করানো জরুরি সেবি সংক্রান্ত্র বিল৷ তবে সরকারের সবথেকে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে বিতর্কিত তেলেঙ্গানা ইস্যু৷ অন্ধ্র প্রদেশের কংগ্রেস নেতা-বিধায়করা অখণ্ড অন্ধ্রপ্রদেশের সমর্থক৷ বিধানসভাতেও অন্ধ্রপ্রদেশ বিভাজনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে, যার নেতৃত্ব দেন অন্ধ্রের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী কিরণ রেড্ডি৷ সংসদে তেলেঙ্গানা বিল পাস হলে অন্ধ্রের অনেক কংগ্রেস নেতাকর্মী কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে যাবে সন্দেহ নেই৷ অন্যদিকে, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির নেতৃত্বে তেলেঙ্গানা সমর্থকরা পৃথক তেলেঙ্গানার দাবি থেকে এক চুলও সরতে রাজি নয়৷ পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হলে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যাবে এমনটাই মনে করা হচ্ছে৷ দিল্লির অন্ধ্রভবনের সামনে এই নিয়ে দুই শিবিরের মধ্যে হয় একপ্রস্ত খণ্ডযুদ্ধ৷ পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশ বিভাজনকে নীতিগতভাবে সমর্থন করেছে বিজেপি৷
দিল্লিতে পড়তে আসা অরুণাচল প্রদেশের ছাত্র নিডা টানিয়ামের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেন দলমত নির্বিশেষে সব দলের সাংসদরা৷ বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বারাজ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, দেশের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির পড়ুয়ারা দিল্লিতে পড়তে আসলে কেন তাঁদের হেনস্থা হতে হয়? কেন সরকার নীরব দর্শক? কেন এর প্রতিকার হয় না? কেন দিল্লি ও কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ?
অরুণাচলের এক সাংসদ মনে করেন, ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সংস্কৃতি, ভাষা, জীবনশৈলি এবং দৈহিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উত্তর ভারতের মানুষের অজ্ঞতাই এই বর্ণবিদ্বেষী ঘৃণার নেপথ্যে কাজ করছে ৷ এই ধরণের ঘটনা এই প্রথম নয়, আগেও ঘটেছে৷ তাই ভারতের বহুত্ববাদের নিরিখে বিভিন্ন রাজ্যের পাঠ্য পুস্তকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে একটা পৃথক অধ্যায় সংযোজিত হওয়া জরুরি৷
সুশীল সমাজের বক্তব্য, দিনের পর দিন এইভাবে যদি সংসদের অচলাবস্থা চলতে থাকে, তাহলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিরোধী পক্ষের সাংসদরা বেশিরভাগ দায়ী থাকবেন৷ আইন সংশোধনের জন্য তাঁদের সংসদে পাঠানো হয়৷ ভুল-ত্রুটি থাকলে সরকারকে চেপে ধরবেন৷ কিন্ত সংসদ অচল কোরে রাখলে সেটা হবে তাঁদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়৷ এতে গোটা সংসদীয় ব্যবস্থা হয়ে পড়বে দুর্বল৷