তেলের খনিতে হারাতে বসেছে মরুর সবুজ
১৯ আগস্ট ২০১০সেই ১৯৭০ সাল থেকে বসরায় নিজের জমিতে চাষ করে আসছিলেন জলিল জাবের আল পারতুসি৷ তার জমি ভাসছে তেলের খনির ওপর৷ সেটাই হয়েছে তার কাল৷ দেশের সমৃদ্ধির জন্য এখন জমি ছাড়তে হচ্ছে তাকে৷ এই অবস্থা এখন অনেক কৃষকের৷ যত পারা যায়, তেল তুলতে হবে৷ মাটির নিচে ফেলে রাখা যাবে না৷ আর তাতেই হারিয়ে যেতে বসেছে ওপরের সবুজ৷ আর অন্ধকার করে তুলছে জলিলদের জীবন৷
খনি এলাকার জমি অধিগ্রহণ করে তা তেল কোম্পানিগুলোর কাছে তুলে দিচ্ছে সরকার৷ এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা জলিলের কথায়ই স্পষ্ট৷ ‘‘৪০ বছর ধরে এখানে আছি, বেড়ে উঠেছি এখানে৷ চাষবাস, ঘরবাড়ি মিলিয়ে এটাই আমার জীবন৷ এখন তা যদি নিয়ে যায়, তাহলে আর কিছুই আমার থাকবে না'', বললেন জলিল৷ সরকার অবশ্য বলছে, খনি এলাকার সব জমির মালিক রাষ্ট্র৷ সুতরাং সরকার চাইলে এই সব এলাকার জমি অধিগ্রহণ করতে পারে৷ তবে ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে৷ এ কথা জানালেন ইরাকের তেলসম্পদ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আসিম জিহাদ৷ তাঁর কথা হল- ‘‘নিচে তেল থাকলে তার ওপরের কৃষিভূমিই থাক, কিংবা বসত বাড়ি- তা রাষ্ট্রের৷'' জলিল তার জমিতে চাষ করেছিলেন টমেটো আর শসা৷ তা জমি থেকে ঘরে উঠবে কি না, তা এখন অনিশ্চিত৷
স্থানীয় জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে মরুর বুক সবুজ করে আসছিল ফসল ফলিয়ে৷ তবে তেলের খনি আবিষ্কারের পর থেকে কৃষিজমি হারিয়ে তাঁরা কোনঠাসা হয়ে পড়তে থাকে৷ যুদ্ধ শুরুর আগে সাদ্দাম হোসেনের সময় থেকেই এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে৷ কৃষিজমি হারানোর ক্ষতিপূরণ চেয়ে এক স্থানীয় নেতা মামলাও করেছিলেন৷ তবে সাদ্দামের সময় খনি এলাকায় জমিতে কৃষিকাজের অনুমতি দেওয়া হত৷ এখন তা আর দেওয়া হচ্ছে না৷ কারণ উৎপাদন বাড়াতে বাড়ছে তেলকূপের সংখ্যাও৷
বসরারই আরেকটি এলাকার ওয়াসিম ফাহাদ আল মেইয়াত অভিযোগ করলেন, তাদের গ্রাম থেকে উঠিয়ে দিতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে তেল কোম্পানিগুলো৷ তবে এত সহজে উঠতে নারাজ তারা৷ এবরা নামে ওই গ্রামের বাসিন্দারা পণ করেছেন, ক্ষতিপূরণ না নিয়ে তারা জমি ছাড়বেন না৷ এখন দেখা যাক কী হয়৷
তেলের মজুদের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ ইরাক৷ যুদ্ধের পর অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে এখন সরকারের নজর তেল উত্তোলন বাড়ানোর দিকে৷ তেলকে তেল হিসেবে ফেলে রাখলে চলবে না, ডলারে রূপ দিতে হবে৷ সরকারের এই আশা একরাশ হতাশা বয়ে আনছে কৃষিজীবনে৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন