1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যএশিয়া

তেল, এলপিজির মূল্যবৃদ্ধি, আরো ভোগান্তিতে মানুষ

৫ নভেম্বর ২০২১

দাম বাড়ার পাগলা ঘোড়ায় পিষ্ট হচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ আয় বাড়ছে না৷ আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে ব্যয় করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যও কেনা বাদ দিতে হচ্ছে অনেককে৷ মাথাপিছু আয় বাড়ার বিপরীতে বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা৷

Symbolbild - Erdöl - Tanken
ছবি: Getty Images/P. Walter

শিলু হোসেন একজন একজন বেসরকারি চাকরিজীবী৷ বেতন পান ২০ হাজার টাকা৷ তিন বছর আগে এই কাজে ১২ হাজার টাকা বেতনে যোগ দিয়েছিলেন৷ বিয়ে করেননি, ঢাকায় একটি মেসে থাকেন৷ বাড়িতে বাবা-মা, ভাই-বোন থাকেন তাদের দেখতে হয়, টাকা পাঠাতে হয়৷ এই তিন বছরে তার বেতন আট হাজার টাকা বাড়লেও তিনি ভালো নেই৷ তার কথা, ‘‘যা বেতন বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তারা চেয়ে অনেক বেশি৷” এএখন তার বেশ কিছু খরচ কমিয়ে দিয়েছেন৷ তারপরও প্রতি মাসে বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, "এখন আমি ঋণের বোঝায় ডুবে যাচ্ছি৷ বিয়ের কথাও চিন্তা করতে পারছি না৷”

নাজমুল হক তপনও চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে৷ বেতন পান ৫০ হাজার টাকা৷ এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিন সদস্যের পরিবার তার৷ তিনি মাসে বাসা ভাড়া দেন ১৬ হাজার টাকা৷ খাবার খরচ ২০ হাজার টাকা৷ মেয়ের স্কুলের বেতন দুই হাজার টাকা৷ ইন্টারনেট, ডিস বিল ও বিদ্যুৎ বিল চার হাজার টাকা৷ তারপর অফিসে যাওয়া-আসার খরচ৷ পোশাক, ওষুধ, আত্মীয়-স্বজন এলে তো আরো খরচ৷ তিনি হিসাব মেলাতে পারছেন না৷ তিনি বলেন, "দুই বছর আগে এই টাকায় আমার দিব্যি চলে যেতো৷ এখন খরচ বেড়েছে, কিন্তু বেতন বাড়েনি৷ তাই নানাভাবে ওই টাকায় চলার চেষ্টা করছি৷ আগে গরুর মাংস কিনতাম মাসে পাঁচ কেজি, এখন কিনি দুই কেজি৷ গরুর মাংস কম কিনে মুরগির মাংস বেশি কিনতাম ৷ এখন মুরগির মাংসের দামও বেড়ে গেছে৷ দুধ কিনতাম ১০ লিটার, এখন কিনি তিন লিটার৷ শাক-সবজি যে খাবো তার দামও অনেক৷ চাহিদা আর কত কমানো যায়!”

নাজমুল হক তপন পরিবার নিয়ে বছরে দুইবার গ্রামের বাড়ি যেতেন৷ করোনার কারণে গত দুই বছর যাননি৷ এবার যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা বাদ দিয়েছেন৷ কারণ, হাতে টাকা নেই৷ বাড়তি খরচ মেটাতে পারবেন না৷ তিনি বলেন," আমার মেয়েটা দশম শ্রেণিতে পড়ে৷ আমি নিজেই ওকে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান পড়াই৷ যদি প্রাইভেট টিউটর দিতে হতো তাহলে যে কী হতো ভাবতেই পারছি না৷”
এই গল্প এখন বাংলাদেশের প্রতিটি মধ্যবিত্ত , নিম্ন মধ্যবিত্ত,  নিম্নবিত্ত পরিবারের৷ সবাইকেই এখন ‘বাজেট কাট' করতে হচ্ছে৷ অনেক জিনিস কমিয়ে কিনতে হচ্ছে, অথবা কেনা বাদ দিতে হচ্ছে৷

সাধারণ মানুষ এখন এটা আর নিতে পারছে না: মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ, আটা-ময়দা ২৯ শতাংশ, সয়াবিন-পাম অয়লের দাম ৫৪ শতাংশ,  মসুর ডাল ১৭ শতাাংশ, মুরগির দাম ২৪ শতাংশ, চিনির দাম ২৬ শতাংশ বেড়েছে৷ এভাবে ভোগ্যপণ্যসহ প্রতিটি পণ্যের দামই কম-বেশি বেড়েছে৷ শিশুখাদ্যের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে৷

সর্বশেষ ডিজেল- কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার বেড়েছে এলপিজির দাম৷ গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত এলপিজির দাম সিলিন্ডার এক হাজার ২৫৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩১৩ টাকা আর গাড়িতে ব্যবহার করার গ্যাস প্রতি লিটারের দাম ৫৮ টাকা ৬৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬১ টাকা ১৮ পয়সা করা হয়েছে৷

ডিজেল ও কোরোসিনের দাম এক লাফে প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা করা হয়েছে এবং বুধবার রাত থেকে কার্যকর হয়েছে৷ চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়েছে শতকরা পাঁচ ভাগ৷ ঢাকা ওয়াসাও বাড়াবে৷

ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে বাংলাদশে সব ধরনের পরিবহনে ধর্মঘট শুরু হয়েছে৷ তারা দাম কমানো অথবা ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন৷ নিত্যপণ্যের বাজারে শুক্রবার এর তেমন কোনো নতুন প্রভাব দেখা যায়নি৷ তবে বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন দুই-একদিনের মধ্যেই এর প্রভাব শুরু হবে৷ পণ্য পরিবহণ বন্ধ থাকায় কাঁচাবাজারে সবার আগে প্রভাব পড়বে৷

সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এর চেইন রিআ্যাকশন আছে৷ ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় কৃষি উৎপাদন ও সব ধরনের পণ্য পরিবহণ ব্যয় বেড়ে যাবে৷ যার প্রভাব ভোগ্যণ্যসহ সব ধরনের পণ্যে পড়বে৷

তিনি বলেন, "সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে এই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে৷ কিন্তু এর মধ্যে ফাঁকি আছে৷ যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে, তখন কিন্তু বিপিসি কমায় না৷ ভারতে ডিজেলের দাম কম, কারণ. তারা যখন বাড়ে তখন বাড়ায়৷ আবার যখন কমে তখন কমায়৷ গত অর্থ বছরে বিপিসি পাঁচ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে৷ তখন কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম ছিল৷ কিন্তু দাম না কমিয়ে তারা লাভ করেছে৷”

সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না: নাজের

This browser does not support the audio element.

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং পিপিআরসি বৃহস্পতিবার তাদের এক গবেষণায় বলেছে, তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন৷ গত মার্চে সংখ্যাটা ছিল দুই কোটি ৪৫ লাখ৷ গত ছয় মাসে ৭৯ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছেন৷ খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেম বলেন, "জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে এবং তেলের দাম বাড়ানোর কারণে আরো বাড়বে৷ সাধারণ মানুষ এখন এটা আর নিতে পারছে না৷ তাদের আয় বাড়ছে না৷ আর কিছু বাড়লেও তার চেয়ে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি৷ এখন ছয় ভাগের মতো৷ ফলে মানুষ অসহনীয় অবস্থার মধ্যে আছে৷''

 কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর হিসেবে গত বছর, মানে ২০২০ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ, ২০১৯ সালে বেড়েছে ৬.৫০ শতাংশ আর ২০১৮ সালে বেড়েছে ৬ শতাংশ৷ ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এই সময়ে৷  ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসেন বলেন, "সেতুর টোলও বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার৷ সব কিছুর দামই বাড়ছে৷ কিন্তু কিছু লোক ছাড়া সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না৷ সরকারি কর্মকর্তাদের আয় বেড়েছে৷ কিন্তু তারা তো ২০ লাখ৷ দেশের মানুষ আরো গরিব হচ্ছে৷ এই বছর জীবনযাত্রার ব্যয় আরো অনেক বেড়ে যাবে৷ ফলে মানুষ চরম সংকটে পড়ছে৷ জিসিপত্রের দাম ছাড়াও পরিবহন খরচ বেড়েছে৷ মানুষের এখন জীবনযাপনই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷”

বাংলাদেশের মানুষের মাথা পিছু আয় বেড়ে এখন দুই হাজার ৫৫৪ ডলার হয়েছে৷ আয় বাড়ার পরও মানুষ কেন অসহনীয় অবস্থায় আছে জানতে চাইলে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, "এটা গড় হিসাব৷ কিছু মানুষের, যারা ধনী তাদের আয় হয়ত অনেক বেড়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের বাড়েনি৷ অনেকের কমেছে৷ অনেকে এই করোনায় কাজ হারিয়েছেন৷”

তার মতে, সাধারণ মানুষকে এখন ভোগ্যপণ্যসহ আরো অনেক পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দিতে হচ্ছে৷ যারা প্রতিদিন দুধ-ডিম খেতেন তারা এখন প্রদিদিন খেতে পারেন না৷ অনেকে ভাড়া বাঁচাতে ছোট বাসা খুঁজছেন৷ যে যেভাবে পারছেন টিকে থাকতে প্রয়োজনীয় খরচও কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ