1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তৈরি পোশাক খাতে আরো ক্ষতির আশঙ্কা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে চলতি বছরেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব থাকবে বলে মনে করছেন শিল্প মালিকরা৷ তাদের আশঙ্কা, ২০২১ সালেও পোশাক খাত অন্তত শতকরা ২০ ভাগ ক্ষতির মুখে থাকবে৷

বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানা
বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানাছবি: Mortuza Rashed/DW

তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ করোনায় পোশাক খাতে একটি ক্ষতির হিসাব করেছে৷ তারা বলছে, গত বছর করোনা শুরুর পর মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৩.৮১ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার স্থগিত হয়৷ কিন্তু পরবর্তীতে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত হওয়া অর্ডারের শতকরা ৯০ ভাগ ফিরে আসে৷ ৫০ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার শেষ পর্যন্ত আর ফিরে আসেনি৷

গত বছরের অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং এই বছরের জানুয়ারি মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কম৷ অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসে শতকরা পাঁচ থেকে ১০ ভাগ রপ্তানি কমেছে৷ তবে এটাকে ক্ষতি বলছেন না পোশাক শিল্পের মালিকরা৷ তাদের মতে, নানা সময়ে রপ্তানি স্বাভাবিক নিয়মে বাড়ে-কমে৷

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অর্ডার তেমন স্থগিত হয়নি৷ তবে অর্ডার ও পোশাকের দাম কমেছে৷ অক্টোবর , নভেম্বর ও ডিসেম্বরে গড়ে দাম কমেছে শতকরা পাঁচ ভাগ৷ পোশাক রপ্তানি করে লাভ হয় গড়ে শতকরা দুই-তিন ভাগ৷ ফলে লাভ কমে গেছে বা লোকসান হয়েছে৷

এই বছরে বাংলাদেশ থেকে (ইউরোপের) পোশাক নেয়া ২০ ভাগ কমবে বলে আশঙ্কা করছি: আরশাদ জামাল দিপু

This browser does not support the audio element.

সাধারণভাবে কারাখানাগুলো একবারে অনেক উৎপাদন করে অভ্যস্ত৷ বড় আকারে অর্ডার আসে৷ উৎপাদনও হয় অনেক৷ কিন্তু এখনো ইউরোপ, অ্যামেরিকায় দোকানপাট পুরোপুরি খোলেনি৷ সেখানকার খুচরা ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন৷ তাই বায়াররাও সতর্ক৷ তারা আগে যদি একসাথে এক লাখ পিস অর্ডার করতো এখন পাঁচবারে অর্ডার করছে৷ এখানে কারখানাগুলো সাধারণত তিন মাস আগে অর্ডার পেতো৷ কিন্তু এখন সেই লিড টাইম পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফলে কারখানাগুলোকে সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন করতে হচ্ছে৷ 

বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট আরশাদ জামাল দিপু বলেন, ‘‘ইউরোপে পোশাকের স্তূপ জমে গেছে৷ তারা এখন চেষ্টা করছেন ওগুলো দ্রুত বিক্রি করতে৷ গত শীতে করোনার সময় তারা যে পোশাক নিয়েছে সেই পোশাক তারা এখন বিক্রি করছে৷ ফলে এই বছরে বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেয়া ২০ ভাগ কমবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি৷’’

তিনি বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে তারা যেটা দোকানে বিক্রি করবে তার অর্ডার দেবে এই বছরের জুন মাসে৷ গত আগস্টে ২.৫৮ ভাগ রপ্তানি বেড়েছিল, সেপ্টেম্বরে ৩.০৯ ভাগ বেড়েছিল৷ কিন্তু অক্টোবরে ও নভেম্বরে ৭ ভাগ এবং ডিসেম্বরে ৯ ভাগ রপ্তানি কমে গেছে৷ এর সঙ্গে দাম কমে গেছে৷ কারণ, তারা এখন আগের জমে থাকা পোশাক ডিসকাউন্টে বিক্রি করছে৷ কারণ, পোশাক জমিয়ে রাখলে তাদের লোকসান৷ দাম কমার সাথে মজুরি বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি৷ ফলে লাভ অনেক কমে গেছে৷

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তাদের এক গবেষণায় বলেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পোশাক শতকরা ২৩ ভাগ কম নিয়েছে আমদানিকারকরা৷ এই সময়ে শ্রমিকদের আয় কমেছে ৮ শতাংশ, আর তাদের ওপর চাপ বেড়েছে ৬০ শতাংশ৷

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এই গবেষণাটি করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘করোনায় প্রথম ওয়েভে পোশাক কারখানা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দ্বিতীয় ওয়েভে ততটা নয়৷ বড় পোশাক কারখানাগুলো ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে, যদিও মাঝারি ও ছোট কারখানাগুলো এখনো বিপাকে আছে৷ এখন ১১ শতাংশ  কারখানা অর্ডারের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে৷ তবে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে৷ তবে নিট গার্মেন্টসের তুলনায় ওভেন উন্নতি করতে পারছে কম৷’’

ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে: ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র তথ্য অনুযায়ী গত জুলাই-ডিসেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ কম হয়েছে৷ আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে ৪.১২ শতাংশ৷

এই ছয় মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে৷ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৯০ শতাংশ। কিন্তু ওভেনে ১০. ২২ শতাংশ কমেছে৷ তারপরও জুলাই-ডিসেম্বরে মোট রপ্তানি আয়ের ৮০.৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে৷ আর গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল সব মিলিয়ে মাত্র ৫২ কোটি ডলার৷ পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩৬ কোটি ডলার৷

পোশাক শিল্প মালিকরা আবার প্রণোদনা প্যাকেজ দাবি করলেও তা  এখনো সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে৷ তবে আগে নেয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরো ছয় মাস বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, সরকার যে এক হাজার কোটি টাকার কারিগরি সহায়তা প্রকল্প নিয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য, সেখান থেকে যেসব ছোট এবং মাঝারি পোশাক কারখানা সংকটে আছে তাদের সহায়তা করা যেতে পারে৷

তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন৷ তাদের জন্যও সরকারের কোনো কর্মসূচি হাতে নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ