তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, বাংলাদেশে গভীর নিম্নচাপের আশঙ্কা
২৩ অক্টোবর ২০২৩
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ। এই নিম্নচাপ সোমবার বিকেল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়েছে হামুন।
বিজ্ঞাপন
আগামী বুধবার তা আছড়ে পড়তে পারে বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে চট্টগ্রামের মধ্যে। ভারতের আবহাওয়া দপ্তর এই পূর্বাভাস দিয়েছে। ।
আবহাওয়া অফিসের শেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, 'আগামী ছয় ঘণ্টার মধ্যে এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। সোমবার সকাল সাড়ে আটটার সময় এই নিম্নচাপ পারাদ্বীপ থেকে ৩৬০ কিলোমিটার, দীঘা থেকে ৫১০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দূরে আছে।'
বুলেটিনে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়য়ার পর তা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে যাবে। ২৫ তারিখ সন্ধ্যায় তা খেপুপাড়া ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে। তবে তা শক্তি হারিয়ে ডিপ ডিপ্রেশনে পরিণত হবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
ইয়াসে বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়েছিল বুধবার সকালে। সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে তা ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে তাণ্ডব চালায়।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাঞ্চলের প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ''সুন্দরবনকে নিয়ে আমরা চিন্তিত। ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এবার ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের দিকে সরে যাচ্ছে। তাছাড়া সমুদ্রের উপরই ঝড় সম্ভবত তার শক্তি হারিয়ে ফেলবে। তাই খুব বড় দুর্যোগের আশঙ্কা পশ্চিমবঙ্গের নেই।''
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, যেহেতু সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পড়ার কথা, তাই সেখানে গভীর নিম্নচাপের বৃষ্টি ও ঝড় হতে পারে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক কমলেশ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''এই ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পড়ায় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ডিপ ডিপ্রেশন হতে পারে। আসলে সমুদ্রের জল গরম থাকলে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বাড়ে। বঙ্গোপসাগরের জলের তাপমাত্রা বেশি আছে। তার ফলে শক্তি বাড়বে। কিন্তু উপকূলের শুকনো বাতাস হামুনের শক্তিকে ভেঙে দিতে পারবে। সেকারণেই ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পড়বে।''
সিত্রাংয়ে ভেসেছে উপকূল
এক রাতের সিত্রাংয়ে ঘর ভেসেছে বহু মানুষের। মৃত নয়। বিদ্যুৎহীন বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
ছবি: Mohibbullah Mohib
অমাবস্যার ঝড়
অন্য ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে সিত্রাংয়ের গতিবেগ অনেকটাই কম ছিল। স্থলভাগে এই সাইক্লোন প্রবেশ করেছে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে। কিন্তু অমাবস্যার কটাল থাকায় উপকূলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ভালোই।
ছবি: Mohibbullah Mohib
তছনছ বাড়ি
দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন হাত দিয়ে ভাঁজ করে দিয়েছে এই কাঁচা বাড়িটি। সিত্রাংয়ের প্রভাবে এভাবেই নষ্ট হয়েছে উপকূলের বহু কাঁচা বাড়ি। এই ছবিটি চট্টগ্রাম উপকূলবর্তী অঞ্চলের।
ছবি: Mohibbullah Mohib
ভাঙা টিউবওয়েল
ঝড়ের দাপটে টিউবওয়েলের হাতল খুলে গেছে। উড়ে গেছে বহু বাড়ির চাল।
ছবি: Mohibbullah Mohib
ঘরের ভিতর জল
উপকূলবর্তী বহু বাড়িতেই জল ঢুকেছে। তেজকটালে জায়গায় জায়গায় জোয়ারের জল ছয়-সাত ফুট পর্যন্ত ফুলেছে। যার জেরে ভেসে গেছে সংলগ্ন জনপদ।
ছবি: Mohibbullah Mohib
ক্ষয়ক্ষতির হিসেব
ক্ষয়ক্ষতির হিসেব এখনো সম্পূর্ণ মেলেনি। এখনো বহু অঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই। গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ। তবে সকাল হতেই স্থানীয় মানুষ এলাকা দেখতে গেছেন।
ছবি: Mohibbullah Mohib
রোদ উঠছে
সারা রাত ঝোড়ো হাওয়ার পর ভোরের দিকে চট্টগ্রাম উপকূলে রোদও উঠেছে। তবে জল জমে আছে প্রায় সর্বত্র।
ছবি: Mohibbullah Mohib
ত্রাণশিবিরের অবস্থা
গোটা উপকূলবর্তী অঞ্চলে সাত হাজার ত্রাণশিবির খোলা হয়েছিল। সেখানে ছয়লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ঝড় চলে গেছে, কিন্তু ত্রাণশিবির থেকে সকলে বাড়ি ফিরতে পারবেন কবে, কেউ জানে না। অনেকরই বাড়ি তছনছ হয়ে গেছে।
ছবি: Mohibbullah Mohib
আতঙ্কের রাত
সারা রাত আতঙ্কে কেটেছে সকলের। ঘুম আসেনি। ভোরে অনেকেই ফিরে গেছেন গ্রামে, ঘরবাড়ির অবস্থা দেখতে।
ছবি: Mohibbullah Mohib
8 ছবি1 | 8
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ২৪ তারিখে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান ও কলকাতায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। ২৫ তারিখেও এই জেলাগুলোয় হালকা বা মাঝারি বৃষ্টি পড়তে পারে। তবে ২৬ তারিখ থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা কমে যাবে। উত্তরবঙ্গ মূলত শুকনো থাকবে। মালদহে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। ফলে পুজো বা বিসর্জন মাটি হওয়ার ভয় এখনও নেই।
সুন্দরবনের উপর এই ঝড়ের প্রভাব কতটা পড়বে? এবিষয়ে ডয়চে ভেলে কথা বলেছিল পরিবেশ বিজ্ঞানী দীপায়ন দে-র সঙ্গে। দীপায়ন জানিয়েছেন, '''এখনো পর্যন্ত নিম্নচাপের যে খবর পাওয়া গেছে, তাতে সুন্দরবনের উপর এর প্রভাব খুব বেশি পড়ার কথা নয়। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় নিম্নচাপের অভিমুখের দিকে লক্ষ্য লাখা প্রয়োজন।'''