প্রাচীন শিল্পকলা ও প্রযুক্তি আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা এক বড় চ্যালেঞ্জ৷ সেই কাজ আবার অনেককে ব্যক্তিগত রোমাঞ্চ ও আনন্দও দেয়৷ অত্যন্ত নিপুণভাবে তাঁরা রেস্টোরেশনের কাজ করে চলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/akg-images
বিজ্ঞাপন
হাই টেক বিশ্লেষণের ফলাফল কাজে লাগিয়ে তৈলচিত্র থেকে মলিন রং দূর করা সম্ভব৷ শুধু সবচেয়ে ওপরের এই স্তর সরিয়ে নতুন করে তা বসানোর অনুমতি রয়েছে৷ তাই একমাত্র সঠিক তথ্য ও তার ভিত্তিতে তৈরি সলিউশন দামি এই শিল্পকর্মের ক্ষতি এড়াতে পারে৷
ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলি মেরামত করতে কনজারভেটররা অতি সূক্ষ্মভাবে রং লাগান৷ হুবহু মূল রঙের নকল করতে হয়৷ কোনো ভুল করলে চলবে না৷ রঙের তুলিও কেঁপে গেলে চলবে না৷ তৈলচিত্র রেস্টোরেশন প্রকল্পের প্রধান প্রো. মারলিস গিবে বলেন, ‘‘আমরা মূল চিত্রগুলি থেকে প্রায় একেবারেই বিচ্যুত হই না৷ এই উচ্চমানের শিল্পসংগ্রহ আগামী প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখার কাজ আমাদের দেওয়া হয়েছে৷ প্রতিটি ছবির প্রেক্ষাপট, রহস্য আমরা সরাসরি টের পাই৷ এভাবে নতুন জগতের উন্মোচন হয়৷''
কনজারভেটরদের দলের জন্য এটা একেবারে নতুন চ্যালেঞ্জ৷ ষোড়শ শতাব্দীর এই প্ল্যানেটারি ঘড়ি আসলে এক অপূর্ব সৃষ্টি৷ সূক্ষ্ণ কাজের এক নিদর্শন, যা গ্রহগুলির একেবারে সঠিক কক্ষপথ দেখাতে পারে৷ এই ঘড়ি সংরক্ষণ ও পরিষ্কার করতে বিশেষজ্ঞরা তার প্রায় ২,০০০ অংশ আলাদা করেছেন৷ কনজারভেটর লোটার হাসেলমায়ার বলেন, ‘‘এই ঘড়ি অত্যন্ত জটিল ও নিখুঁত এক যন্ত্র, যা গ্রহগুলির মুভমেন্ট দেখাতে পারে৷ এমন অসাধারণ যান্ত্রিক কাঠামো হাতে ধরার, কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া অভিনব এক অভিজ্ঞতা৷ এমন কাজ করতে পরে আমরা বড়ই আনন্দিত৷''
বার্লিন প্রাচীরকে ঘিরে শিল্পকর্ম
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে গেলে বার্লিন প্রাচীর নিয়ে অনেক শিল্পকর্ম চোখে পড়বে৷ তার কয়েকটি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Frederike Müller
‘ইস্ট সাইড গ্যালারি’
বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর ১৯৯০ সালে ২১ দেশের ১১৮ জন শিল্পীর উদ্যোগে এই গ্যালারির সৃষ্টি হয়৷ অরিজিনাল বা মূল বার্লিন প্রাচীরের প্রায় ১.৩ কিলোমিটার অংশজুড়ে থাকা এই গ্যালারিতে অনেক চিত্রকর্মের দেখা পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/Frederike Müller
রাজনৈতিক ও অবৈধ
মূল বার্লিন প্রাচীরের এই অংশটির নাম ‘হিন্টারলান্ডমাওয়ার’৷ এখানে কয়েকদিন পরপর নতুন দেয়ালচিত্র অঙ্কন করা হয়, যার বিষয় কখনও কখনও রাজনৈতিক হয়ে থাকে৷ তবে এই দেয়ালে আঁকার কাজটা কিন্তু অবৈধ৷ তাই শিল্পীদের মাঝেমধ্যে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হতে হয়৷
ছবি: DW/Frederike Müller
আশ্চর্য শিল্পকর্ম
পশ্চিম বার্লিনের সাবেক বাসিন্দা ও পূর্ব জার্মানির নাগরিকদের মধ্যে যাঁদের ভিসা বা বিশেষ ‘পাস’ ছিল, তাঁরা এই সেতু দিয়ে জার্মানির অভ্যন্তরীণ সীমানাটা পার হতেন৷ শিল্পী গাব্রিয়েল বাশ এই সেতুতে ‘গোল্ডেন ওয়েস্ট’ নামের একটি চিত্রকর্ম সৃষ্টি করেছেন, যেখানে সে সময়ে সীমান্ত পার হওয়া নাগরিকদের আশা প্রতিফলিত হয়েছে৷
ছবি: DW/Frederike Müller
মাঝখানে প্রাচীর
বর্তমানের যে বার্লিন শহর, তার একেবারে মাঝখান দিয়ে বার্লিন প্রাচীর চলে গিয়েছিল৷ ১৯৯০ সালে সেখানে ‘পার্লামেন্ট অফ ট্রিস’ নামের একটি চিত্রকর্ম তৈরি করা হয়৷ মূল প্রাচীরের এই অংশে নিয়ন্ত্রণ, সংঘাত ও মুক্তি বিষয়ক নানা ছবি স্থান পেয়েছে৷
ছবি: Lars Wendt
১৫ মিটার উঁচু চিত্রকর্ম
গত শতকের আশির দশকে বার্লিন-ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকায় বাস করতেন শিল্পী ইয়াদেগার আসিসি৷ সে সময় বার্লিনের ছবি কেমন ছিল সেটা দেখা যাচ্ছে ১৫ মিটার উঁচু এই চিত্রকর্মে৷ এর দেখা পাওয়া যাবে বার্লিনের বিখ্যাত ‘চেকপয়েন্ট চার্লি’ এলাকায়৷
ছবি: Tom Schulze
এক টুকরো বার্লিন প্রাচীর কেনা
চেকপয়েন্ট চার্লি এলাকার ‘ফ্রিডম পার্ক’ নামক স্থানে গেলে আপনি টুকরো টুকরো বার্লিন প্রাচীর দেখতে পাবেন যেগুলোর গায়ে অনেক শিল্পকর্ম রয়েছে৷ চাইলে সেগুলো কেনাও যাবে!
ছবি: DW/Frederike Müller
মানুষের অস্তিত্ব
জোনাথন বোরোফস্কি-র ‘মলিকিউল ম্যান’ নামক এই শিল্পকর্মটি স্প্রে নদীর মাঝে অবস্থিত৷ পূর্ব আর পশ্চিম জার্মানিকে আলাদা করেছিল এই নদী৷ ফলে স্প্রে নদীর মাঝে স্থাপিত ৩০ মিটার উঁচু ও ৪৫ টন ওজনের এই শিল্পকর্মটি (যেখানে তিনটি মানবদেহ পরষ্পরকে ধরে আছে) বিশেষ একটা অর্থ বহন করছে৷
ছবি: DW/Frederike Müller
7 ছবি1 | 7
এক থ্রিডি অ্যানিমেশনের মাধ্যমে এই ঘড়ির জটিল কার্যপ্রণালী তুলে ধরা হবে৷ তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় কনজারভেটররা এই ঘড়ির পরিমাপ করছেন৷ ফলে এবার জটিল মেকানিকাল প্রক্রিয়া স্পষ্ট চেনা যাচ্ছে৷ এই ঘড়ি এতটাই নিখুঁতভাবে চলে, যে প্রতি ৩১ বছরে মাত্র এক ঘণ্টার বিচ্যুতি ঘটে৷
প্রত্যেকটি অংশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়৷ কনজারভেটররা তার মধ্যে একটি ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পেয়েছেন৷ বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন এক এইচডি মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে তাঁরা জানতে চান, ক্ষতির মাত্রা ধাতুর কতটা গভীর পর্যন্ত ছড়িয়েছে৷ দেখা গেল, শুধু সারফেসই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ফলে নির্দিষ্ট সলিউশন দিয়ে ত্রুটি দূর করা সম্ভব৷ লোটার হাসেলমায়ার বলেন, ‘‘রেস্টোরেশনের কাজে বড়ই আনন্দ পাওয়া যায়, কারণ বার বার অভিনব সব শিল্পকর্ম হাতে আসে৷ সেগুলি কাছ থেকে দেখা এবং সেগুলি নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাই৷ স্রষ্টা কীভাবে, কত কষ্ট করে সেগুলি তৈরি করেছিলেন, তা দেখতে পাই৷ বার বার এমন নতুন অভিজ্ঞতা একমাত্র কনজারভেটর হিসেবেই পাওয়া যেতে পারে৷''
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিল্পকর্ম বাঁচিয়ে রাখতে হলে চাই গভীর জ্ঞান এবং অক্লান্ত পরিশ্রম৷ দীর্ঘমেয়াদি এই কাজের ফলাফল দর্শকদের দিনের পর দিন ধরে মুগ্ধ করে৷
ভেনিসে ধরা পড়লো ‘সারা বিশ্বের ভবিষ্যৎ’
৯ই মে সাড়ম্বরে দ্বার খুললো ৫৬তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চিত্রকলা প্রদর্শনী বিয়েনালে৷ চলবে ২২শে নভেম্বর পর্যন্ত৷ বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্মের প্রদর্শনী এই বিয়েনালে, যার এ বছরের শিরোনাম ‘সারা বিশ্বের ভবিষ্যৎ’৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/F. Hörhager
‘অকুপেশন/ডিসকাভারিস’
দেখে মনে হতে পারে ভাঙা দেয়াল, কিন্তু আসলে এটি একটি ‘ইনস্টলেশন আর্ট’৷ বাংলায় অনুবাদ করলে ব্রাজিলীয় শিল্পী আন্টোনিয়ো মানুয়েলের এই ইনস্টলেশন শিল্পের নাম ‘জীবিকা/আবিষ্কার’৷ ক্যামেরা হাতে এক দর্শনার্থী সেই শিল্পবস্তুটির মধ্যেই প্রবেশ করছেন৷ তবে শুধু মানুয়েল নন, এবারের ভেনিস বিয়েনালেতে ৮৯টি দেশের অসংখ্য শিল্পী উপস্থিত তাঁদের নানা ধরনের কাজ নিয়ে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই এবারের প্রদর্শনীতে রয়েছে আগামীর ছোঁয়া৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/A. Merola
‘দ্য কি ইন দ্য হ্যান্ড’
প্রাচীন কিন্তু উত্তম৷ এই আইডিয়া থেকেই ইটালির ভেনিসে শিল্পকলার প্রদর্শনী বিয়েনালের যাত্রা শুরু ১৮৯৫ সালের ৩০শে এপ্রিল৷ আর আজ সেই ভেনিস বিয়েনালের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে৷ এ বছর ‘চাবিগুচ্ছ’ – এই শিল্পকর্মটি নিয়ে জাপানি প্যাভিলিয়নে রয়েছেন জাপানি শিল্পী চিহারু শিওতা৷ ওসাকায় জন্মগ্রহণ করলেও আজকাল তিনি বার্লিনে থাকেন৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/F. Hörhager
হলুদ সাগর
দূর থেকে দেখলে ভুট্টার ক্ষেত মনে হতে পারে, অথবা শরীর পরিষ্কার করার ছোবড়া দিয়ে তৈরি একটা কার্পেট৷ ইটালির শিল্পী মারসিয়া মিলিওরার সৃষ্টি এটি৷ নাম – ‘সি অফ ইয়েলো’৷ শোনা যায় এই শিল্পকর্মটি নাকি ভেনিস আন্তর্জাতিক চিত্রকলা প্রদর্শনী বিয়েনালের এ বছরের ‘কিউরেটর’ নাইজেরিয়ার প্রখ্যাত লেখক এবং শিল্প সমালোচক ওকুয়ি এনভেসরের খুব প্রিয়৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/A. Merola
সাদা-কালো
ভেনিস বিয়েনালেতে আর এক ইটালীয় শিল্পীর শিল্পকর্ম আবারো সবার নজর কেড়েছে৷ শিল্পবস্তুটির নাম ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’৷ আর শিল্পীর – মিমো পালাদিনো৷ তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ভেনিস বিয়েনালেতে অংশগ্রহণ করছেন৷ ‘বিয়েনালে’ কথাটির অর্থ প্রতি দু’বছর৷ অর্থাৎ প্রতি দু’বছর অন্তর অন্তর স্থপতি ও চিত্রকর মিমোর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/A. Merola
ভেনিসে জার্মান শিল্প
ভেনিসে জার্মানির জন্যও একটি আলাদা প্যাভিলিয়ন আছে৷ আর সেই প্যাভিলয়নে এবার নজর কেড়েছে হিটো স্টায়ার্ল৷ তাঁর ‘ইনস্টলেশন আর্ট’ বা শিল্পবস্তুর নাম ‘ফ্যাক্টরি ইন দ্য সান, ২০১৫’ বা সূর্যের কারখানা৷ বার্লিনের শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এই প্রফেসারের জন্ম মিউনিখ শহরে৷ তিনি আদতে অবশ্য একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা৷