শুধু তোতাপাখির জন্য কি নতুন করে কেউ জঙ্গল তৈরি করে? কেন নয়? তবে শুধু তোতাপাখি যে জঙ্গলের উপকার পাবে তা নয়৷ যেভাবে জঙ্গল উজাড় হচ্ছে তাতে এই পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা৷ সেই শঙ্কা কাটাবেও জঙ্গল৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গলে এখনো হাজার বছরের বেশি বয়সের বৃক্ষের সন্ধান পাওয়া যাবে৷ এরকম গাছে আগে আসলে সেখানকার জঙ্গল ভর্তি ছিল৷ এখন তারা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে৷ তাদের সঙ্গে হারাচ্ছে ফলও৷
আসলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হলুদ কাঠের চাহিদা বাড়ছে৷ গত ৩৫০ বছর ধরেই চাহিদা বাড়তির দিকে৷ কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. স্টিভ বয়েস এই বিষয়ে বলেন, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকার শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল ইয়েলোউডস৷ রেলওয়ে স্লিপার এবং খনির কাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এরকম লাখ লাখ গাছ কাটা হয়েছে৷ আর এখন সুন্দর রংয়ের জন্য ইয়েলোউড বিশ্বের অন্যতম দামি কাঠ৷ অনেক জায়গায় কিউবিক মিটারপ্রতি এই গাছের মূল্য তিন হাজার ইউরো৷''
২০১৫ সালের বাছাই প্রাণীরা
জার্মানিতে যে সব প্রাণীর বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন, প্রতিবছর বিভিন্ন সংগঠন তাদের মধ্যে কয়েকটিকে নির্বাচন করে ‘‘২০১৫ সালের জীবজন্তু’’ হিসেবে তাদের নাম প্রকাশ করেছে৷ দেখা যাক কারা এবার এই সম্মান পেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schmitt
হলুদরঙা গঙ্গাফড়িং
ইংরিজিতে বলে ‘ইয়েলো উয়িংড ডার্টার’, যাকে ‘‘২০১৫ সালের ফড়িং’’ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে৷ জীবটি আজ সর্বাধিক বিপন্ন প্রজাতিগুলির রেড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত৷ এর কারণ হল, জার্মানি থেকে জলাভূমি প্রায় লোপ পেয়েছে৷ ফড়িংটিকে চেনা যায় তার পাখার ডগায় হলদে দাগ দেখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. J. Los
বুনো খরগোশ
‘জার্মান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সমিতি’ বুনো বাদামি খরগোশকে ‘২০১৫ সালের বন্যপ্রাণী’ বলে ঘোষণা করেছে৷ কৃষিকাজ বাড়ায় বুনো খরগোশের বাসস্থান ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে৷ চাষের জমির পাশে আলের জমি কিংবা ঝোপঝাড় কমে এসেছে৷ কাজেই জার্মানদের চিরপরিচিত বুনো খরগোশ আজ এ দেশে বিপন্ন প্রজাতির লাল তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
ড্যানিউব নদীর স্যালমন মাছ
জার্মানিতে এই সুস্বাদু মাছটি শুধু ড্যানিউব নদীর অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ৷ কিন্তু ড্যানিউব নদীতে বহু স্লুইস গেট বা জলকপাট বসানোর ফলে স্যালমন মাছগুলোর চলাফেরা ও ডিম পাড়ায় বাধা পড়েছে৷ নদীর বহু অংশ থেকে ড্যানিউব স্যালমন উধাও হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/A. Hartl
প্রজাপতিও পতঙ্গ
তাই জার্মানির ‘স্পেকট্যাকল পি’ব্লু’ বা রুপোলি-সবুজ নীলরঙা প্রজাপতি ২০১৫ সালের পতঙ্গ নির্বাচিত হয়েছে৷ ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে, সে হল পুরুষ; এ জাতের স্ত্রী প্রজাপতি সাদামাটা, কিছুটা বাদামি, ওপরে ফুটকি৷ এই জাতের প্রজাপতি পিঁপড়েদের সঙ্গে ‘সিমবায়োসিস’, মানে পারস্পরিক সুবিধা দিয়ে এবং নিয়ে বাঁচে৷ প্রজাপতির শূককীট থেকে যে মিষ্ট রস নির্গত হয়, তা পিপীলিকাদের প্রিয়; তাই পিঁপড়েরা শূককীটদের রক্ষা করে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schmitt
বর্ম থাকলেও বিপন্ন
ইউরোপিয়ান পন্ড টার্টল বা পুকুরের কচ্ছপ ‘‘২০১৫ সালের সরীসৃপ’’ নির্বাচিত হয়েছে৷ হলদে ফুটকি দেওয়া কাছিমটি আজ শুধুমাত্র ব্রান্ডেনবুর্গে পাওয়া যায়৷ কচ্ছপ ধরা ও কেনাবেচা ছাড়াও, মধ্য ইউরোপের বেশ কয়েক প্রজাতির কচ্ছপের জন্য যেমন সূর্যকিরণ, তেমনই জলাভূমি আবশ্যক৷ কেননা জলের নীচেই কাছিমরা তাদের খাদ্য খুঁজে পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Robert Schlesinger
যে প্রজাপতি গাছ ভালোবাসে
‘রেড আন্ডারউয়িং’ হল ২০১৫ সালের প্রজাপতি৷ পিছনের লালরঙা পাখাগুলো আসলে শত্রুকে ভয় দেখানোর জন্য: এগুলো অন্য রংয়ের নীচে লুকনো থাকে; একমাত্র বিপদ দেখলেই প্রজাপতি তার পাখা মেলে ধরে শত্রুকে ভয় দেখায়৷ তবে এই জাতের প্রজাপতির শূককীট পপলার আর উইলো গাছের পাতা খেতে ভালোবাসে - এবং সে ধরনের গাছ কমে আসার ফলে ‘রেড আন্ডারউয়িং’ শীঘ্রই লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BUND
লাজুক বিজয়ী
২০১৫ সালের পাখি হল ‘গস’হক’ নামের একটি শিকরে বাজ৷ পাখিটিকে স্বল্পই দেখা যায়: হয় সে শিকার করছে কিংবা আকাশে চক্কর কাটছে৷ তাকে ২০১৫’র পাখি হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে কেননা তার মতো বহু শিকারী পাখি আজও মানুষের গুলিতে প্রাণ হারায় - যদিও গসহক শিকার সত্তরের দশক থেকেই নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jens Wolf
ভাঁড়ারের শামুক
ইংরিজি নাম ‘কেলার স্নেল’৷ এমনিতে খুব বেশি চোখে পড়ে না৷ দেখতে পাওয়া যাবে পাহাড়ের গুহায়, খনিগর্ভের সুড়ঙ্গে, মাটির তলার ভাঁড়ারঘরে৷ ঠাণ্ডা আর বরফের হাত থেকে বাঁচার জন্য যে সব জীব মাটির তলায় আশ্রয় খোঁজে, তাদেরই প্রতিনিধি এই ভাঁড়ারের শামুক৷ তাই সে যে ২০১৫ সালের ‘গুহাবাসী প্রাণী’ নির্বাচিত হয়েছে, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷
ছবি: K. Bogon
8 ছবি1 | 8
সরকার উইলোউড গাছ কাটার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে৷ উদ্দেশ্য এসব গাছের ব্যাপক নিধন ঠেকানো৷ তাসত্ত্বেও অবৈধভাবে এগুলো এখনো কাটা হচ্ছে৷ ড. স্টিভ বলেন, ‘‘এভাবে চলতে থাকলে একসময় পুরনো সব ইয়েলোউড হারিয়ে যাবে৷''
তোতাপাখির খাবার
ইয়েলোউড ফলে থাকা ‘অ্যান্টি ভাইরাল এজেন্ট' সম্ভবত কেপ তোতাপাখির জন্য আদর্শ৷ কিন্তু এই ফলের অভাবের কারণে পাখিগুলো একর্ণ এবং একরকম বাদাম খাচ্ছে৷ সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়৷ তাছাড়া ইয়েলোউড ফল না থাকায় এখন বছরে দু'মাস তাদের কার্যত অভূক্ত থাকতে হয়৷
তবে পরিস্থিতি সম্ভবত পুরোপুরি হতাশাজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি৷ বংশবৃদ্ধির জন্য কেপ তোতাপাখির বিশেষ ঘরের দরকার হয়৷ ‘কেপ প্যারোট' প্রকল্প তাই জঙ্গলের গাছে শতাধিক ঘর ঝুলিয়ে দিয়েছে৷
পাশাপাশি এই প্রকল্পের অধিনে নতুন করে বনায়ন কর্মসূচিও নেয়া হয়েছে, যেখানে অনেক ইয়েলোউড গাছ লাগানো হবে৷ তখন তোতারাও সারাবছর তাদের উপযুক্ত খাবার পাবে৷ কেপ প্যারোট প্রকল্প এজন্য গ্রামবাসীদের টাকা দিচ্ছে৷ গাছপ্রতি এক ইউরো৷ আর এগুলো পরবর্তীতে দেখাশোনার জন্য আরো টাকা পাবেন তারা৷ দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল এটি৷ তাই এই অফার সাদরে গ্রহণ করেছে স্থানীয়রা৷
হুমকির মুখে পশুরাজ ও অন্যান্য প্রাণী
জীববৈচিত্র্যকে হুমকির হাত থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা৷ কেননা হুমকির মুখে রয়েছে হাঙর, বরফ চিতা, আফ্রিকার সিংহ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হুমকির মুখে পশুরাজ
আফ্রিকার সিংহ হিসেবে পরিচিত হলেও বলকান এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে একসময় তারা রাজত্ব করে বেড়িয়েছে৷ এদের সংখ্যা বর্তমানে এতই কমে গেছে যে কেবল ভারতের কিছু অঞ্চল এবং সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে এদের দেখা মেলে৷
ছবি: picture alliance/dpa-Zentralbild
রাশিয়ার বৃদ্ধ মানুষ
সায়গা নামে হরিণের মতো দেখতে এই প্রাণীটি কিন্তু বরফ যুগের প্রাণী৷ এই প্রাণীদের এখন কেবল রাশিয়ায় পাওয়া যায়৷ পাচারের কারণে দিন দিন কমছে এদের সংখ্যা৷ প্রাণীগুলো শুধু যে দিনে ১২০ মাইল হাঁটতেই পারে তাই না, সাঁতরাতেও পারে এরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
পাখনার কারণে হাঙর শিকার
হাঙরের পাখনা জাপান ও চীনে খুবই জনপ্রিয়৷ এ কারণে জেলেরা জীবন্ত হাঙরের বাচ্চা ধরে এদের পাখনা কেটে আবার তাদের সমুদ্রে ফেলে দেয়৷ ফল এদের মৃত্যু৷ এছাড়া হাঙরের মাংসও ঐসব অঞ্চলে খাওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লম্বা করাত
লম্বা করাতের হাঙর এখন বিলুপ্তির পথে৷ প্রায় আট মিটার লম্বা হয় এই করাত৷ আর করাতের কারণেই খুব সহজে জেলেদের জালে ধরা পড়ে এরা৷
ছবি: TORSTEN BLACKWOOD/AFP/Getty Images
বিষের শিকার শিকারীরা
ডাইক্লোফেনাক শিকারী পাখিদের জন্য শত্রু৷ দক্ষিণ এশিয়া, স্পেন ও ইটালিতে গরু, শুকর আর ঘোড়াদের এই বেদনানাশক দেয়া হয়৷ আর এদের মৃত্যু হলে যেসব শিকারি পাখি এদের খায় খায় তারা কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণে মারা যায়৷
ছবি: Vulture Conservation Foundation
চিড়িয়াখানার শরণার্থী
এশিয়ার বন্য গাধাদের এখন নতুন উপনাম হচ্ছে চিড়িয়াখানার শরণার্থী৷ গত ১৫ বছরে এদের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/D. & M. Sheldon
সিল মাছ
এদের চামড়া খুব মূল্যবান৷ এ কারণে শিকারীদের চোখ থাকে এদের উপর৷ তবে গত কয়েক বছর ধরে প্রাণী অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলোর উদ্যোগে এদের রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে৷ এমনকি সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্লাস্টিক যখন কচ্ছপের খাবার
সাড়ে ২২ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে বসবাস করছে কচ্ছপরা৷ কারণ বিবর্তনের সাথে অভিযোজন করার দারুণ ক্ষমতা রয়েছে এদের৷ তবে মানুষ প্রায়ই এদের ডিম চুরি করে এবং সমুদ্রে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য বাড়ার কারণে মৃত্যুর মুখে পড়ে এসব কচ্ছপ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেরু ভাল্লুক
মেরু ভাল্লুকের অবস্থান তখনই শক্ত হয়, যখন পায়ের নীচে কঠিন বরফ থাকে৷ কেবল আর্কটিকে এদের পাওয়া যায়৷ সেখানে শক্ত বরফখণ্ডের নীচে এরা ভেসে বেড়ায়৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে যাওয়ায় এদের লুকিয়ে থাকা কঠিন হচ্ছে৷ ফলে সহজেই শিকারীদের হাতে ধরা পড়ছে এরা৷ কমে যাচ্ছে এদের সংখ্যা৷
ছবি: picture alliance/dpa
স্টিং রে মাছের কাটা
এ ধরনের স্টিং রে মাছদের যে কাটা থাকে তা খুব সহজেই জালে ধরা পড়ে৷