বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সমর্থক আর্জেন্টিনার৷ সাফল্য না পেলেও সমর্থক সংখ্যা বেড়েছে৷ কেন ভালেবাসি, এর যুক্তিগ্রাহ্য কোনো ব্যাখ্যা হয়তো আসলে থাকেই না৷ ভালোবাসা অকারণ!
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/V. R. Caivano
বিজ্ঞাপন
আপনি আর্জেন্টিনা ফুটবলের পাগল সমর্থক? তাহলে আগে ক্রিকেটকে বলুন ধন্যবাদ!
ভাবছেন ফুটবল ভানতে ক্রিকেটের গীত কেন গাইছি? মশাই, আর্জেন্টিনায় ফুটবল এসেইছিল ক্রিকেটের হাত ধরে৷ আর্জেন্টিনার ইতিহাসে প্রথম ফুটবল ম্যাচটা হয়েছিল ক্রিকেট মাঠে৷ আর্জেন্টিনা আগে ক্রিকেট শিখেছিল, তারপর ফুটবল৷ বললে কেমন দেখাবে জানি না, ভারতে প্রথম আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট ম্যাচের ৩০ বছর আগে আর্জেন্টিনার মাটিতে প্রথম কোনো ক্রিকেট ম্যাচ হওয়ার রেকর্ড আছে!
ভাগ্যিস ক্রিকেটের জ্বরটা তাদের পেয়ে বসেনি! প্যাড-হেলমেট পরে লিওনেল মেসি ব্যাট করতে নামছেন, সার্জিও আগুয়েরা করছেন স্পিন, আর পেস বোলিং করতে গিয়ে গঞ্জালো হিগুয়েইন একের পর এক ওয়াইড দিচ্ছেন (কেন, বুঝছেন তো!)...ভাবতেই কেমন জানি লাগছে৷
ব্রিটিশরা যেখানেই গেছে, সঙ্গে করে নিয়ে গেছে ফুটবল আর ক্রিকেট৷ এক সময় আর্জেন্টিনায় ঢল নেমেছিল ব্রিটিশদের৷ আর্জেন্টিনার বাণিজ্য সম্ভাবনা হাতছানি দিয়ে ডাকছিল সেই সুদূর দক্ষিণ আমেরিকায়, জাহাজে করে যেখানে যেতে লেগে যেত কয়েক মাস৷ ১৮৩০-এর দিকে বাকি সব কমনওয়েলথ রাষ্ট্রের চেয়ে আর্জেন্টিনায় ব্রিটিশদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি৷ আর্জেন্টিনার কাছ থেকে তারা ট্যাঙ্গো শিখেছেন৷ আর আর্জেন্টিনাকে শিখিয়েছেন ক্রিকেট-ফুটবলের কায়দা-কানুন৷
বিশ্বকাপ রাশিয়ায় না বাংলাদেশে?
বিশ্বকাপে মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা? হতে পারে, না-ও হতে পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশে তারা মুখোমুখি৷ পুরো বাংলাদেশ যেভাবে মেতেছে ফুটবল উন্মাদনায়, তাতে চট করে মনে হতে পারে, বিশ্বকাপ যেন শুরু হলো বাংলাদেশে৷
ছবি: Noman Mohammad
পল্টন ময়দানে মুখোমুখি তারা
ঢাকার পল্টন ময়দানে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের ম্যাচ৷ নাইন স্টার যুব সংঘ নামের একটি ক্লাব এই প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে৷ এর আগেও দু’বার তারা এমন ম্যাচের আয়োজন করেছিল৷
ছবি: Noman Mohammad
গুলিস্তান যেন বিশ্বকাপের বাজার
নানান দেশের পতাকা আর বিশ্বকাপের জার্সির বাজার হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান৷ ক্রেতারাও যেন লাইন ধরেছেন৷ আগেভাগেই কিনতে শুরু করেছেন প্রিয় দলের পতাকা বা জার্সি৷
ছবি: Bdnews24.com
ক্রিকেটার তারেক আজিকের দোকানে
ক্রিকেটার তারেক আজিজ তাঁর স্পোর্টস সামগ্রীর দোকানে বিশ্বকাপের নানান জার্সির পসরা সাজিয়ে বসেছেন৷ বিক্রিও হচ্ছে খুব৷
ছবি: Noman Mohammad
ব্রাজিল, না আর্জেন্টিনা?
ব্রাজিল, না আর্জেন্টিনা? তর্কের শেষ নেই৷ মেসি, না নেইমার, কে ভালো, কত ভালো তার বিশ্লেষণ চলছে৷ দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে চলছে চাপা দ্বন্দ্ব, ফোঁসফাঁস৷ দোকানে সাজিয়ে রাখা বিপুল পরিমাণ জার্সির একটি বড় অংশই উঠবে এ দুই দলের সমর্থকদের গায়ে৷
দেয়ালে দেয়ালে এমন ছবিও চোখে পড়ছে শহরের অলিগলিতে৷ ব্রাজিলের তারকা নেইমারের অনেকগুলো ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে৷
ছবি: Noman Mohammad
জার্মান সমর্থক
ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থক বেশি হলেও বাংলাদেশে জার্মান সমর্থকও খুব কম নয়৷ আর সমর্থক না হলেও ভালোবাসেন জার্মান জার্সিকে৷
ছবি: Noman Mohammad
দরদাম
বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে ঢাকার গুলিস্তানে পতাকা কিনেছেন এই সমর্থকরা৷ চলছে বিক্রেতার সাথে দরদাম৷
ছবি: Bdnews24.com
পোস্টার ও ক্যালেন্ডারেও তারা
প্রিয় দলের খেলোয়াড়রা জায়গা পেয়েছে পোস্টার ও ক্যালেন্ডারেও৷
ছবি: Noman Mohammad
রাস্তার ওপর
রাজউকের সামনে রাস্তার ওপরও পতাকা উড়তে দেখা গেছে৷
ছবি: Noman Mohammad
বাড়ির ছাদে
পতাকা উড়ছে বাড়ির ছাদে ছাদে৷ এ সময়টায় এ চিত্র দেখা যায় সারা দেশে৷ তবে সম্প্রতি একটি রিটের কারণে অন্য দেশের পতাকা উত্তোলন নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পতাকার ফেরিওয়ালা
একমাত্র বিশ্বকাপ এলেই পতাকার ফেরিওয়ালার বাঁশে আশ্রয় নেয় এমন রঙ-বেরঙের নানা দেশের পতাকা৷ অন্য সময় বাংলাদেশেরই বিভিন্ন সাইজের পতাকা থাকে সেখানে৷
ছবি: Bdnews24.com
ঈদেও জার্সি
সামনে রোজার ঈদ৷ অনেকেই গ্রামের বাড়ি যাবেন৷ তাই গ্রামের বাড়িতে থাকা স্বজনদের জন্যও কেউ কেউ নিয়ে যাবেন জার্সি৷ ঈদের আনন্দের সাথে ভাগাভাগি হবে খেলার আনন্দ৷
ছবি: Bdnews24.com
13 ছবি1 | 13
বুয়েনস আইরেসে চাকরি করতেন এমন কিছু সাহেব-সুবো ক্রিকেট শুরু করে দেন, সেটা ১৮০০ সালের শুরুর দিকের কথা৷ তার কিছুকাল পরে শুরু হয় ফুটবল৷ আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে ক্রিকেটকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ কারণ, ব্রিটিশরা যখন প্রথম ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের উদ্যোগ নিলো, দেখা গেল, খেলার মতো মাঠই নেই৷ ক্রিকেট সংস্থাকে অনুরোধ করা হলো, তারা কি খেলা স্থগিত রেখে ফুটবলকে এক দিনের জন্য মাঠটা ছেড়ে দেবে? ক্রিকেট সানন্দে রাজি হলো৷ তখন কি আর ক্রিকেট জানতো, এই এক দিনের জন্য ছেড়ে দেওয়া মাঠটি আসলে চিরদিনের জন্যই আর্জেন্টিনায় ফুটবল উন্মাদনা গ্রাস করবে প্রলয়-বেগে!
শুধু আর্জেন্টিনা নয়, ফুটবল নামের এক চর্ম গোলকের এই খেলা পরে সারা পৃথিবীতেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ আর এর পেছনে দক্ষিণ অ্যামেরিকা মহাদেশটির অবদান অনেক৷ ফুটবল ইউরোপে জন্মেছে, বেড়ে উঠেছে দক্ষিণ অ্যামেরিকায়৷ আর আর্জেন্টিনা গর্ব করতে পারে, দক্ষিণ অ্যামেরিকায় ফুটবলটা শুরু হয়েছিল তাঁদের দেশেই৷
আপনার ব্রাজিল সমর্থক বন্ধুরা সব সময় হলুদ জার্সির ইতিহাস আর ঐতিহ্য নিয়ে খোঁচায়? চুপি চুপি আপনাকে কিছু দারুণ তথ্যের অস্ত্র দিয়ে রাখি৷ ব্রাজিলে প্রথম ফুটবল ম্যাচ হয়েছিল ১৮৯৪ সালে, আর আর্জেন্টিনায় ১৮৬৭ সালে৷ ১৮৯১ সালেই আর্জেন্টিনায় ফুটবল লিগ শুরু হয়ে যায়৷ সারা বিশ্বেই এর আগে মাত্র চারটি ফুটবল লিগ ছিল, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড আর হল্যান্ডে৷ ব্রাজিলে প্রথম ফুটবল ম্যাচ হওয়ার এক বছর আগেই আর্জেন্টিনায় ফুটবল সংস্থা (এএফএ) প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়৷ বয়সের দিক দিয়ে এএফএ ইতিহাসে অষ্টম৷
মারাদোনার খেলা দেখে পানির উপর মাঠ তৈরি!
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে পানির উপর ভাসমান ফুটবল মাঠ তৈরি করেছিল একদল থাই কিশোর৷ পরের ইতিহাস জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Youtube/TMBbrand
জেলেদের গ্রাম
ছবিতে চারদিক পানি দিয়ে ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম দেখতে পাচ্ছেন৷ থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পানইয়ে দ্বীপের এই গ্রামের বাসিন্দাদের আয়ের উৎস একসময় ছিল মাছ ধরা৷ এখন তাতে যোগ হয়েছে পর্যটন৷
ছবি: Youtube/TMBbrand
পানির উপর মাঠ!
পানইয়ে দ্বীপে পর্যটকদের আগমনের পেছনে আছে দারুণ এক কাহিনি৷ ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে দ্বীপের একদল কিশোরের মনে ফুটবল খেলার ইচ্ছে জাগে৷ কিন্তু কোথায় খেলবে? তাদের আশেপাশে শুধু পানি আর পানি৷ অবশেষে সেই পানির উপরই মাঠ তৈরির পরিকল্পনা করে তারা৷
ছবি: Youtube/TMBbrand
বয়স্করা পাত্তা দেননি
ঐ কিশোররা যখন পানির উপর মাঠ বানানোর পরিকল্পনার কথা বড়দের জানায়, তখন শুরুতে সেটি অলীক কল্পনা বলে উড়িয়ে দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু তাতে দমে যায়নি অল্পবয়সি ঐ তরুণেরা৷ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে পুরনো কাঠ আর পেরেক জোগাড় করে নিজেরাই একটি মাঠ তৈরি করেছিল ঐ কিশোররা৷ ছবিতে ঐ মাঠ তৈরিতে ব্যবহৃত আসল কাঠ, পেরেক আর হাতুড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: FIFA Museum
মাঠের সমস্যা
কিশোরদের তৈরি করা ঐ মাঠের বিভিন্ন জায়গায় পেরেক থাকায় সাবধানে দৌঁড়াতে হতো৷ তবে সবচেয়ে বেশি সাবধানে থাকতে হতো বল নিয়ে, খুব নজর রাখতে হতো যেন বল পানিতে না পড়ে৷ কিন্তু তা কী আর হয়৷ চারদিকে পানি থাকায় প্রায়ই বল সেখানে চলে যেতো৷ ফলে বারবার পানি থেকে বল উঠিয়ে এনে খেলা শুরু করতে হতো৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Archambault
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ
একদিন ঐ কিশোরদের একজন স্থানীয় এক ফুটবল প্রতিযোগিতার খবর নিয়ে আসে৷ তারা সেখানে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ এই খবরে গ্রামের বয়স্করা তাদের উৎসাহ দিতে এগিয়ে আসে৷ তাদের জন্য জার্সি আর অন্যান্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Archambault
সাফল্য
একদিনের ঐ প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে উঠেছিল পানইয়ে দ্বীপের কিশোররা৷ কর্দমাক্ত মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় সেমিফাইনালের প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে গিয়েছিল তারা৷ পরে হাফটাইমের পর বুট ছাড়াই মাঠে নামে তারা৷ ঐ অবস্থায় খেলে দুই গোল শোধও করেছিল কিশোররা৷ কিন্তু শেষ মিনিটের গোলে হেরে যায়৷ তবে সেমিফাইনালে ওঠায় ঐ কিশোররা তো বটেই, পানইয়ে গ্রামের সব মানুষই খুব খুশি হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Archambault
ফুটবল ক্লাব
প্রতিযোগিতায় সাফল্যের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি৷ গ্রামবাসীর সহায়তা নিয়ে সেখানে আরেকটি মাঠ গড়ে তোলা হয়েছিল৷ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ঐ মাঠটি ছিল মসৃণ৷ বর্তমানে পানইয়ে ক্লাব দক্ষিণ থাইল্যান্ডের অন্যতম সেরা একটি ক্লাব৷ দলের কয়েকজন খেলোয়াড় প্রফেশনাল ফুটবলারও হয়ে উঠেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Archambault
অন্যের জন্য অনুপ্রেরণা
টিএমবি নামে থাইল্যান্ডের একটি ব্যাংক তার কর্মীদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক একটি গল্প খুঁজছিল৷ সেই সময় তারা পানইয়ে ক্লাবের সন্ধান পায়৷ পরে সেই গল্প নিয়ে একটি শর্টফিল্মও নির্মাণ করে টিএমবি ব্যাংক৷ এটি বিভিন্ন জায়গায় পুরস্কারও পায়৷ এই শর্টফিল্মের কারণে পানইয়ে দ্বীপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে৷ পর্যটকরা এখন সেখানে যাচ্ছেন৷ শর্টফিল্মটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Archambault
ফিফার নজর
পানইয়ে ক্লাবের গল্প ফিফা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে৷ তাইতো সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থিত ফিফা জাদুঘরে (ছবি) দর্শণার্থীদের সেই গল্প শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: FIFA Museum
9 ছবি1 | 9
দ্রুত আর্জেন্টিনা জাতীয় দলও গড়ে ওঠে৷ ১৯০১ সালের ১৬ মে আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে৷ প্রতিপক্ষ ছিল উরুগুয়ে, যে নামটির সঙ্গে আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাস এর পরের কয়েক বছরেও হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে৷ ১৯১৬ সালে চালু হয় কোপা অ্যামেরিকা৷ আন্তর্জাতিক ফুটবলের সবচেয়ে প্রাচীন টুর্নামেন্ট৷ আর্জেন্টিনার স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল এই টুর্নামেন্ট৷ কিন্তু স্বাগতিক আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় উরুগুয়ে৷ এই দুই দেশের ফুটবলীয় সম্পর্ক রীতিমতো শত্রুতায় রূপ নিতে থাকে তখন থেকেই৷ অথচ তখনো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথ সেভাবে জমেই ওঠেনি৷
ব্রাজিল যে পরে ফুটবল শুরু করেও আর্জেন্টিনাকে টপকে যেতে শুরু করেছে, এ ব্যাপারে প্রথম আঁচ আর্জেন্টাইনরা পায় ১৯১৯ কোপা আমেরিকায়৷ তত দিনে দু'টি কোপা আমেরিকার আসর হয়েছে৷ দুবারই আর্জেন্টিনাকে রানার্স আপ বানিয়েছে উরুগুয়ে৷ আর আর্জেন্টিনার বুকে প্রতিশোধের লাভা জমেছে বিষ্ফোরিত হবে বলে৷ কিন্তু কোপার তৃতীয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় ব্রাজিল৷ চতুর্থ আসরে আবার উরুগুয়ে৷ অবশেষে ১৯২১ সালে আর্জেন্টিনা প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফির স্বাদ পায়৷ কিন্তু ১৯২২ সালে ব্রাজিল আর ১৯২৩ সালে উরুগুয়ে আবার কোপা অ্যামেরিকার ট্রফি জিতে নেয়৷
শুধু দক্ষিণ অ্যামেরিকা নয়; উরুগুয়ে যে সারা বিশ্বের ফুটবল পরাশক্তি হয়ে উঠেছে, সেটা দেখানোর সুযোগ তাদের সামনে ছিল না৷ তখন আন্তর্জাতিক ফুটবল তো আর এত সহজ ছিল না! উরুগুয়ে বাকি পৃথিবীকে নিজেদের ফুটবল জাদু দেখানোর সুযোগ পেলো ১৯২৪ অলিম্পিকে, ১৯২৩ কোপা অ্যামেরিকার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে৷ আর প্রথমার অংশ নিয়েই সোনা জিতলো উরুগুয়ে৷ সোনা জিতলো ১৯২৮ অলিম্পিকেও৷
এবার আর্জেন্টিনার দুঃখ হয়ে এলো উরুগুয়ে৷ এই অলিম্পিকে সুযোগ পেয়ে আর্জেন্টিনা উঠে গিয়েছিল ফাইনালে৷ এবার সুযোগ সোনা জেতার৷ কোপা অ্যামেরিকার চেয়েও বড় গর্বের হয়ে থাকবে এই সোনার মেডেল৷ কিন্তু কোথায় কী! প্রথম ম্যাচটা ১-১ ড্র হওয়ায় তিন দিন পর ফিরতি ম্যাচ হলো৷ সেখানে আর্জেন্টিনা হেরে গেল ২-১ গোলে৷ আর্জেন্টিনা কি তখনো ভেবেছিল, এর চেয়েও বড় দুঃখ তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে!
বিশ্বকাপের কোন গ্রুপে কে ফেবারিট
বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই টানটান উত্তেজনা৷ গ্রুপ পর্ব থেকেই উত্তেজনার পারদ যেন তুঙ্গে৷ এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপগুলো নিয়েও চলছে হিসেব-নিকেষ৷ চলুন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নিই গ্রুপগুলোর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ATP/Mexsport/O. Aguilar
গ্রুপ এ
গ্রুপ এ-তে আছে স্বাগতিক রাশিয়া, ল্যাটিন পরাশক্তি উরুগুয়ে, আফ্রিকার দেশ মিশর ও এশিয়ার সৌদি আরব৷ এর মধ্যে সুয়ারেজ, কাভানির উরুগুয়েকেই ফেবারিট মানছেন সবাই৷ তবে সবার চোখ থাকবে লিভারপুল তারকা মোহামেদ সালাহ’র দিকে৷ তাঁর উপর ভর করে স্বাগতিক রাশিয়া ও সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে মিশর যেতে পারবে বলে অনেকেরই মত৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tallis
গ্রুপ বি
টিকিটাকা কৌশলের স্পেন ও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের সঙ্গে বি গ্রুপে আছে মরক্কো ও ইরান৷ বলাই বাহুল্য, কোনো অঘটন না ঘটলে স্পেন ও পর্তুগালই দেখবে দ্বিতীয় রাউন্ডের মুখ৷ এই বিশ্বকাপটি রোনাল্ডোর চতুর্থ বিশ্বকাপ৷ এবারো ফর্মের তুঙ্গে থাকা রোনাল্ডো দলের জন্য কতটা কী করতে পারেন তা দেখার অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা৷ তারকাখচিত স্পেনও এবার শিরোপার জন্য উন্মুখ৷
ছবি: Reuters/D. Staples
গ্রুপ সি
ফ্রান্স, ডেনমার্ক, পেরু ও অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গ্রুপ সি৷ শক্তিমত্তায় ফ্রান্স যে এবারের শিরোপার লড়াইয়ে প্রথম সারিতে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে স্পেন, হল্যান্ড ও চিলির মাঝখানে চ্যাপ্টা হওয়া সকারুদের জন্য এবার দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করার সুযোগ আছে৷ ডেনমার্কেও আছেন কয়েকজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়৷ আর ১৯৮২ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয়া পেরু না হয়ে ওঠে ডার্কহর্স৷
ছবি: Reuters/F. Lancelot
গ্রুপ ডি
দর্শক ফেবারিট আর্জেন্টিনার গ্রুপ এটি৷ আরো আছে ক্রোয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও আইসল্যান্ড৷ মেসিনির্ভর আর্জেন্টিনা যে গ্রুপ পর্ব সহজেই পেরিয়ে যাবে সে বিষয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই৷ তবে ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়া আইসল্যান্ডের ওপর বাজি রাখতে পারেন৷ তারা কিছু একটা দেখাবে নিশ্চিত৷ অন্যদিকে, ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া দুই দলই নির্ভর করছে তাদের বর্ষীয়ান খেলোয়াড়দের ওপর৷
ছবি: Behrouz Mehri/AFP/Getty Images
গ্রুপ ই
ব্রাজিল এমন একটি দল যারা সবসময়ই শিরোপার দাবিদার৷ তবে ২০০২ সালের পর আর শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের৷ এবার সে সম্ভবনা কতদূর, তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে৷ ই গ্রুপে আর যারা আছে, তাদের মধ্যে সুইজারল্যান্ডকে এগিয়ে রাখছেন অনেকেই৷ এছাড়া আছে সার্বিয়া ও কোস্টারিকা৷
ছবি: Vanderlei Almeida/AFP/Getty Images
গ্রুপ এফ
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি আছে এই গ্রুপে৷ জার্মানরাও এবারো শিরোপার দাবিদার৷ ধরে নেয়া যায়, গ্রুপ পর্বে খুব একটা বাধা পাবে না দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেনের কাছ থেকে৷ তবে হাভিয়ের হার্নান্দেজের মেক্সিকোর সঙ্গে গ্রুপ পর্বে লড়াইটা জমবে বলে মনে হচ্ছে৷ এই গ্রুপে এই দুই দলই ফেবারিট৷
ছবি: imago/ActionPictures
গ্রুপ জি
ইংলিশরা আছে এই গ্রুপে৷ আছে শক্তিশালী বেলজিয়ামও৷ আর আছে পানামা ও টিউনিসিয়া৷ শেষ দুই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বই পেরুতে পারেনি থ্রি লায়ন্সরা৷ তবে এবার সে সম্ভাবনা আছে তাদের সামনে৷ বেলজিয়ামও গ্রুপের ফেবারিট৷ তবে পানামা ও টিউনিসিয়া অঘটন ঘটাতে উদগ্রীব৷ দুই দলই ভালো খেলেছে বাছাই পর্বে৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
গ্রুপ এইচ
হামেস রডরিগেজের কলম্বিয়া গতবার যে চমক দেখিয়েছে তা এবার কতটা ধরে রাখতে পারবে বোঝা যাবে গ্রুপ পর্বেই৷ কারণ, গ্রুপে আছে শক্তিশালী পোল্যান্ড৷ আছে পরিশ্রমী সেনেগাল ও জাপান৷ পোলিশরা ফেবারিট হলেও কোন দু’টি দল শেষ ষোল নিশ্চিত করবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷ মনে করা যেতে পারে, এটিই গ্রুপ অফ ডেথ৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
8 ছবি1 | 8
১৯৩২ অলিম্পিকে ফুটবল বাদ দেওয়া হলো৷ আর খেপে গিয়ে ফিফা ঠিক করলো, দরকার নেই অলিম্পিকের৷ আমরা নিজেরাই সারা বিশ্ব থেকে দল নিয়ে আয়োজন করবো টুর্নামেন্ট৷ এভাবেই জন্ম নিলো বিশ্বকাপ, ১৯৩০ সালে৷ আর তখনকার টানা দুবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ছিল বলে আয়োজক দেশ হওয়ার মর্যাদা পেলো উরুগুয়ে৷
ফাইনালে মুখোমুখি হলো সেই উরুগুয়ে আর আর্জেন্টিনাই৷ দুই দেশের ফুটবল-সম্পর্ক ততদিনে সাপে-নেউলে চেহারা নিয়েছে৷ ফাইনালে কোন দলের বল নিয়ে খেলা হবে, এ নিয়ে শুরু হয়ে গেল ঝগড়া৷ আর্জেন্টিনা উরুগুয়ের দেওয়া বল দিয়ে খেলতে রাজি নয়৷ নিজের দেশে বিশ্বকাপ হচ্ছে, আর উরুগুয়ে খেলবে আর্জেন্টিনার বল দিয়ে? আপোশ হলো৷ দুই অর্ধে খেলা হবে দুই দলের বল দিয়ে৷
প্রথম অর্ধে খেলা হয়েছিল আর্জেন্টিনার বল দিয়ে৷ প্রথমার্ধ শেষে আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে এগিয়েও ছিল৷ কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তিনটা গোল হজম করে বসে তারা৷ বলটা যে উরুগুয়ের ছিল!
আর্জেন্টিনার এই যে বিশ্বকাপ দুঃখ শুরু হলো, তা ঘোচেনি ১৯৭৮ সালের আগ পর্যন্ত৷ তত দিনে ব্রাজিল তিনবার আর উরুগুয়ে দু'বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসে আছে! মজার ব্যাপার হলো, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার ৪৪ বছর আগেই বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গিয়েছিল ‘আর্জেন্টিনার’৷ ১৯৩৪ বিশ্বকাপ জয়ী ইতালি দলের চারজন খেলোয়াড় ছিল আর্জেন্টিনার৷ এর মধ্যে লুইস মন্টি ছিলেন ফুটবল বিশ্বের প্রথম দিকের তারকাদের একজন৷
যে ৩২টি দল থাকছে ২০১৮ বিশ্বকাপে
ইটালি, নেদারল্যান্ডস, চিলি, যুক্তরাষ্ট্র, ঘানার মতো দেশ বাছাইপর্ব পেরোতে না পারলেও ৩২টি দেশ কিন্তু ঠিকই পেয়ে গেছে ২০১৮ বিশ্বকাপের টিকিট৷ চলুন দেখে নেয়া যাক, কোন ৩২টি দেশ থাকছে রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপে...
ছবি: Getty Images/AFP/M.Rojo
স্বাগতিক রাশিয়া
আসরের আয়োজক হওয়ার সুবাদে সরাসরিই চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছে রাশিয়া৷ এ নিয়ে একাদশ বার বিশ্বকাপে খেলছে রাশিয়া৷ স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা নিয়ে তারা এবার কতদূর যেতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Fadeichev
ব্রাজিল
ব্রাজিলের আসলে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব থেকে বাদ পড়ার কোনো নজিরই নেই৷ এ পর্যন্ত ২১ বার বাছাই পর্ব খেলেছে, প্রত্যেকবারই চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছে গেছে সাম্বা ফুটবলের দেশটি৷ সেই ইতিহাস এবারও অটুট৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকা অঞ্চলে নিজেদের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েই রাশিয়ার টিকিট কেটেছে নেইমারের দল৷ সবচেয়ে বেশি পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে একমাত্র ব্রাজিল৷ এবার তাদের সামনে ষষ্ঠ সাফল্যের সুযোগ৷
ছবি: Imago/Xinhua
স্পেন
২০১০ সালের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেন পরের আসরে কিন্তু বিদায় নিয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকেই৷ সেই হতাশা দূর করতে এবার এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বাছাইপর্ব পেরিয়েছে ২০০৮ এবং ২০১২ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নেরা৷
ছবি: Getty Images/D. Doyle
ফ্রান্স
জার্মানির কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের মতে, এবারের আসরের অন্যতম ফেবারিট ফ্রান্স৷ ২০০৮ সালের চ্যাম্পিয়নরা ‘গ্রুপ এ’ থেকে সহজেই উঠে এসেছে চূড়ান্ত পর্বে৷ গ্রুপটা কিন্তু সহজ ছিল না৷ মনে রাখতে হবে, এই গ্রুপ থেকেই বাছাই পর্ব পেরোতে ব্যর্থ হয়েছে নেদারল্যান্ডস!
ছবি: picture alliance/AP Photo/M. Euler
পর্তুগাল
বয়স ৩২৷ ফলে রাশিয়াতেই হয়ত নিজের বিশ্বকাপটি খেলতে যাচ্ছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ তাঁর নেতৃত্বে ২০১৬ সালে ইউরো জিতেছে পর্তুগাল৷ এবার কি বিশ্বকাপ...?
ছবি: imago/Photosport
আইসল্যান্ড
২০১৬ সালের ইউরো থেকে ইংল্যান্ডকে বিদায় করেছিল তারা৷ এবার বিশ্বকাপে এসে কোন অঘটন ঘটায় কে জানে!
ছবি: picture-alliance/AP/B. Gunnarsson
সার্বিয়া
২১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ডি-র শীর্ষে থেকেই বাছাইপর্ব শেষ করেছে তারা৷ ২০১০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেললেও পরের বাদ আবার বাদ পড়েছিল বাছাইপর্ব থেকেই৷ এবার তাদের সামনে প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখার সুযোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/D. Vojinovic
নাইজেরিয়া
গ্রুপ বি থেকে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছিল নাইজেরিয়া৷ পরে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও হয়েছে এর আগেও ছয়বার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা সুপার ঈগলরা৷
ছবি: picture alliance/empics/J. Walton
জাপান
এশিয়া অঞ্চলের বাছাইপর্বে গ্রুপ বি চ্যাম্পিয়ন হয়েই চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে জাপান৷ এটি তাদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ অভিযান৷
ছবি: Getty Images/Kaz Photography
জার্মানি
এই মুহূর্তে জার্মানি ফুটবল বিশ্বকে শাসন করছে বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না৷ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা সর্বশেষ কনফেডারেশনন্স কাপ জিতেছে, আরো জিতেছে অনূর্ধ ২১ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ৷ চারবারের বিশ্বকাপজয়ীরা এবারও কিন্তু ফেবারিট৷
ছবি: imago/ActionPictures
কোস্টারিকা
মধ্য অ্যামেরিকার দেশটি এবার বাছাইপর্ব পেরিয়েছে নাটকীয়ভাবে৷ রাশিয়ার আসরটি হবে তাদের পঞ্চম বিশ্বকাপ৷
ছবি: Imago/Agencia EFE/J. Arguedas
মেক্সিকো
এ নিয়ে মোট ১৬ বার চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেল মেক্সিকো৷ দাপটের সঙ্গেই এবার কনকাকাফ অঞ্চলের বাছাইপর্ব পেরিয়েছে তারা৷ দেখা যাক, ১৯৭০ এবং ১৯৮৬-র আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা মেক্সিকো এবার আরো উন্নতি দেখাতে পারে কিনা৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Cortez
ইরান
ইরান যখন এশিয়া অঞ্চলের গ্রুপ এ চ্যাম্পিয়ন হলো, তখন শুধু স্বাগতিক রাশিয়া আর ব্রাজিলেরই চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত হয়েছে৷ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করার পথে একটি রেকর্ডও গড়েছে তারা৷ বাছাই পর্বে টানা ১২ ম্যাচে কোনো গোল খায়নি তারা৷ শেষ ম্যাচে সিরিয়ার সঙ্গে ড্র (২-২) ম্যাচেই শুধু গোল খেয়েছে দলটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Jung Yeon-Je
ইংল্যান্ড
সেই ১৯৬৬ সালে একবার বিশ্বকাপ জিতেছিল তারা৷ তারপর থেকে একবারও ফাইনালেই উঠতে পারেনি৷ এবার কি ‘কাগুজে বাঘ’-এর দুর্নাম ঘোচাতে পারবে ইংল্যান্ড?
ছবি: picture alliance/empics/PA Wire/D. Klein
সৌদি আরব
জাপানকে ১-০ গোলে হারিয়ে এশিয়া অঞ্চল থেকে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করে সৌদি আরব৷ রাশিয়ার আসরটি হবে তাদের পঞ্চম বিশ্বকাপ৷
ছবি: Imago/Kyodo News
দক্ষিণ কোরিয়া
সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্বে খেলা একেবারে নিয়মিত ঘটনা৷ এবার সহজেই তারা দশমবারের মতো চূড়ান্তপর্ব নিশ্চিত করেছে৷ ২০০২ সালে স্বাগতিক হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল এশিয়ার এই ফুটবল পরাশক্তি৷
ছবি: picture-alliance/Yonhap
বেলজিয়াম
এডেন হ্যাজার্ড, রোমেলু লুকাকু, কেভিন ডি ব্রুয়েন এবং ড্রিস ম্যার্টেনসদের নৈপুন্যে ইউরো অঞ্চলের গ্রুপ জি থেকে দু’ম্যাচ হাতে রেখেই চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করে বেলজিয়াম৷ ২০১৪ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ‘রেড ডেভিলস’-দের কাছে থেকে এবারও আশাটা একটু বেশি৷
ছবি: Reuters/D. Ruvic
মিশর
আলেকজান্দ্রিয়ায় ম্যাচের শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে মো সালা গোল না করলে কঙ্গোর সঙ্গে ২-১-এ ম্যাচ জেতা হতো না, আর তাহলে হয়ত এবার বিশ্বকাপও খেলা হতো না মিশরের৷ ১৯৯০-এর পর এই প্রথম বিশ্বকাপ খেলবে মিশর৷
ছবি: Reuters/A.A. Dalsh
পোল্যান্ড
সবাই জানেন, বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে বুন্ডেসলিগা খেলেন পোল্যান্ডের রবার্ট লেভান্ডোস্কি৷ বায়ার্ন তারকা এবারের বিশ্বকাপেরও বড় তারকা৷ ভুলে গেলে চলবে না যে, তিনি ১৬ গোল করে ইউরোপীয় অঞ্চলের বাছাই পর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার কারণেই ১০ বছর পর আবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছে পোল্যান্ড৷
মেসির হ্যাট্ট্রিকের সুবাদে ইকুয়েডরকে হারিয়ে বাদ পড়তে পড়তেও বাছাইপর্ব পেরিয়েছে আর্জেন্টিনা৷ ম্যাচ জয়ের পর কোচ সাম্পাওলি জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি ছেলেদের বলেছিলাম, মেসির কাছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ পাওনা নয়, বরং ফুটবলের কাছেই বিশ্বকাপটা পাওনা মেসির৷’’ দেখা যাক, কোচের কথা স্মরণ করে মেসিবাহিনী দেশকে তৃতীয় বিশ্বকাপ উপহার দিতে পারে কিনা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Ruiz
পানামা
২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে অল্পের জন্য চূড়ান্ত পর্ব মিস করেছিল তারা৷ তবে এবার সেই যুক্তরাষ্ট্রকে বিদায় করেই প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপে উঠে এসেছে পানামা৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Arangua
কলম্বিয়া
২০১৪ বিশ্বকাপে নতুন তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা খামেস রডরিগেজকে আবার দেখা যাবে বিশ্বকাপে৷ পেরুর সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচটি থেকে এক পয়েন্ট ছিনিয়ে আনা গোলটি এসেছি তাঁর পা থেকেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Bouroncle
উরুগুয়ে
ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম আয়োজক এবং প্রথম চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দেশ৷ এবারের আসরটি তাদের ১৩তম বিশ্বকাপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Rojo
টিউনিসিয়া
নিজেদের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েই এবার পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করেছে টিউনিসিয়া৷
ছবি: Reuters/Z. Souissi
মরক্কো
বাছাইপর্বে এবার কোনো ম্যাচ হারেনি মরক্কো৷ গ্রুপ সেরা হয়ে চূড়ান্ত পর্বে ওঠা আফ্রিকার এই দেশটির লক্ষ্য হবে ১৯৮৬ সালের অর্জনকে ছাড়িয়ে যাওয়া৷ সেবার নকআউট পর্বে উঠেছিল তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Sanogo
সুইজারল্যান্ড
বাছাই পর্বটা সহজ ছিল না তাদের জন্য৷ প্লে অফ খেলতে হয়েছে তাদের৷ সেখানে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে একাদশবারের মতো চূড়ান্ত পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে সুইজারল্যান্ড৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Kefalas
ক্রোয়েশিয়া
তারাও বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে প্লে অফ খেলে৷ সেখানে অবশ্য গ্রিসকে ৪-১ অ্যাগ্রিগেটে হারিয়েছিল তারা৷
ছবি: Reuters/C. Baltas
সেনেগাল
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চূড়ান্ত পর্বে উঠলো সেনেগাল৷ প্রথমবার উঠেছিল ২০০২ সালে৷
ছবি: Reuters/S. Sibeko
সুইডেন
সুইডেন চূড়ান্ত পর্বে এসেছে ইটালিকে বিদায় করে৷ তাদের কারণেই ১৯৫৮-র পর এই প্রথম বিশ্বকাপের বাইরে ইটালি৷ সুইডেনের জন্য এটি দ্বাদশ বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্ব৷
ছবি: Reuters/M. Rossi
অস্ট্রেলিয়া
১৯৩০ থেকে ২০০২-এর মধ্যে যে দেশটি মাত্র একবার বিশ্বকাপ খেলেছিল, সেই অস্ট্রেলিয়া এবার টানা চতুর্থবারের মতো নিশ্চিত করেছে চূড়ান্ত পর্ব৷ প্লে অফে সিরিয়া এবং হন্ডুরাসকে হারিয়ে এই সম্মান অর্জন করেছে তারা৷
ছবি: Getty Images/M. King
ডেনমার্ক
১৯৮৬, ১৯৯৮, ২০০২ এবং ২০১০ সালের পর আবার চূড়ান্ত পর্বে ডেনমার্ক৷ তবে তাদেরও প্লে অফ খেলেই আসতে হয়েছে৷ সেখানে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম লেগ ০-০ ড্র হলেও, পরের লেগে পাত্তাই পায়নি আইরিশরা, তাদের ৫-১ গোলে উড়িয়ে চূড়ান্ত পর্বে উঠে এসেছে ডেনমার্ক৷
ছবি: picture-alliance/empics/B. Lawless
পেরু
৩৫ বছর পর আবার বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্বে পেরু৷ প্লে অফে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বাছাইপর্ব পেরিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP/R. Abd
32 ছবি1 | 32
১৯৭৮ বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল আরও একটি কারণে৷ সেবারই প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজক হয়েছিল দেশটি৷ আর এর দুই বছর আগে ক্ষমতায় আসা আর্জেন্টিনার স্বৈরশাসক বিশ্বকাপটিকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চেয়েছিল৷ পেরেওছিল কিছুটা৷ তবে ফুটবল ব্যাপারটা আর্জেন্টিনার মানুষের কাছে কতটা পাগলামীর, সেটা বিশ্ববাসী জানলো ৮ বছর পর৷
সামরিক শাসনের ক্ষত হিসেবে পুরো আর্জেন্টিনা তখন অস্থিতিশীল৷ চারদিকে ঠাসা নিদারুণ হতাশা৷ সেই সময় দিয়েগেো মারাদোনা হয়ে উঠেছিলেন শেষ আশ্রয়স্থল৷ সেই ক্ষতের একমাত্র প্রলেপ; মহামারির একমাত্র ওষুধ৷ ব্যাপারটাকে আরও বেশি রাজনীতিক মসলা মাখালেন মারাদোনা নিজেই৷ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হলো আর্জেন্টিনা৷ ফকল্যান্ড যুদ্ধের স্মৃতি তখনো টাটকা৷ টাটকা সেই যুদ্ধে আর্জেন্টিনার সেনাবাহিনীর নিদারুণ পরাজয়ের লজ্জামাখা স্মৃতি৷
খেলাধুলাকে যতই সম্প্রীতির হাতিয়ার ভাবা হোক, ফুটবল মাঠ কখনো কখনো যুদ্ধক্ষেত্রই৷ ফুটবলাররা যেন গ্ল্যাডিয়েটর৷ মারাদোনা নিজের ফুটবলের সর্বোচ্চ বিন্দু নির্মাণ করতে বেছে নিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটাই৷ প্রথমে হাত দিয়ে করলেন সেই গোল যেটিকে মারাদোনা বলেছিলেন ‘হ্যান্ড অব গড’৷ কিন্তু ম্যাচটা মারাদোনা তাঁর প্রতারণার জন্য স্মরণীয় করে রাখতে চাননি৷ এরপর করলেন প্রকৃত অর্থেই বিখ্যাত হওয়ার মতো গোল, গোল অব দ্য সেঞ্চুরি৷ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত দুটি গোলের জন্ম হলো মাত্র তিন মিনিটের ব্যবধানে! ম্যাচ শেষে মারাদোনা বললেন, ফকল্যান্ড যুদ্ধে নিহত আর্জেন্টিনার সন্তানদের হয়ে তিনি প্রতিশোধ নিলেন৷ আর এই প্রতিশোধে তাঁর পাশে ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর৷ হাত দিয়ে গোলটা তিনিই করিয়েছেন!
আর কিছু লাগে? মারাদোনা সারা আর্জেন্টিনায় চিরকালের জন্য হয়ে গেলেন মহানায়ক৷ অমর এক কিংবদন্তি, অক্ষয় এক রূপকথা৷ শুধু আর্জেন্টিনা? সারা বিশ্বেও৷ আর সেই ধাক্কা এসে লেগেছিল বাংলাদেশে৷
রাজীব হাসান, ক্রীড়া সাংবাদিকছবি: privat
এ এক অদ্ভুত ব্যাপার৷ প্রায় কুড়ি হাজার কিলোমিটার দূরের দুটো দেশ৷ দূরত্বের চেয়েও বেশি দূরত্ব দুই দেশের ভাষায়৷ সংস্কৃতিতে৷ কিন্তু মিল আছে একখানে৷ আবেগের উথলানো জোয়ারে৷ দুই দেশের মানুষই ভীষণ রকমের আবেগপ্রবণ৷
আর সেই আবেগটাই যেন নাড়ির বন্ধন হয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের কাছে৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার অনেক দূরের আর্জেন্টিনাকে এই দেশের মানুষ ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছে৷ ফুটবলের সূত্রে তো বটেই, তবে তার চেয়েও বড় যোগসূত্রের নাম মারাদোনা, সেই ফুটবলার, যিনি খেলাটাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন৷ ফুটবলের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিল একজন ফুটবলার৷
সেই ভালোবাসা আরও প্রবল হলো ১৯৯৪ সালে, ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে মারাদোনা যখন বহিষ্কৃত! এ ব্যাখ্যাতীত৷ এ-ও যেমন ব্যাখ্যাতীত, গত ২৫ বছরে আর্জেন্টিনা কোনো ট্রফিই জেতেনি৷ কোপা অ্যামেরিকা জিতেছিল সেই ১৯৯৩ সালে৷ সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে ৩২ বছর আগে৷
তবে ৩২ বছরের শিরোপা খরায় ভালোবাসা কমেনি, বরং আরও প্রবলতর হয়েছে৷ কেন? সেটা অনুমান করা যায়৷ কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা না করে ভালোবেসে যাওয়াই তো বিশুদ্ধতম ভালোবাসা৷ আর আর্জেন্টিনা সেই অহংকারী প্রেমিকা, প্রেমিককে যে অনবরত কাঁদায়৷ চোখের জল কখনো শুকোতে দেয় না৷