1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ত্রাণের মহড়া ছড়াবে করোনা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ এপ্রিল ২০২০

করোনায় ত্রাণ বিতরণের ‘মহড়া’ আতঙ্ক ছাড়াচ্ছে৷ প্রশ্ন উঠেছে ত্রাণ বিতরণের পদ্ধতি নিয়ে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বের নীতি৷

Bangladesh Opfer der Corona-Krise erhalten Unterstützung in Dhaka
ছবি: Privat

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ত্রাণ বিতরণের সময় ফটো সেশন৷ এমনও দেখা গেছে যারা ত্রাণ নিচ্ছেন তারা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না৷ কিন্তু যারা দিচ্ছেন তারা গাদাগাদি করে দাঁড়ান৷ ত্রাণ দেয়ার সময় ছবি তুলতে গিয়ে আরো ঘনিষ্ঠ হন ত্রাণ প্রার্থীদের৷ সব মিলিয়ে ত্রাণই এখন যেন নতুন এক বিপদের নাম৷

ত্রাণ বিতরণের বাংলাদেশ স্টাইল
মঙ্গলবার দুপুরে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ত্রাণ বিতরণ করে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ নামের একটি সংগঠন৷ তারা একটি মাইক্রোবাসে করে তারা প্যাকেট করে দুপরের খাবার নিয়ে আসেন৷ আর তখন সেই খাবার নিতে জড়ো হন ওই এলাকার কয়েকশ' গরীব মানুষ৷  সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা তারা রীতিমত ধাক্কাধাক্কি কাড়াকাড়ি শুরু করে দেন৷ এক পর্যায়ে পুলিশও তাদের সামলাতে ব্যর্থ হলে ত্রাণদাতা সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ওই এলাকা থেকে দ্রুত সটকে পড়তে বাধ্য হন৷

ডা. লেলিন চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

এর কিছুক্ষণ পর গোলাপ শাহ মাজারের কাছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি পিকআপ ভ্যানে করা চাল-ডালসহ ত্রাণসমগ্রী নিয়ে আসা হয় ভাসমান মনুষকে দেয়ার জন্য৷ কিন্তু পিকআপ ভ্যান থেকে তাদের আর বিতরণ করতে হয়নি৷ ভাসমান গরীব মানুষরা নিজেরাই কাড়াকাড়ি করে ত্রাণের প্যাকেটগুলো নিয়ে যান৷ যারা ত্রাণ বিতরণ করতে আসেন তারা অসহায়ের মত তাকিয়ে দেখেন৷  এরকম দৃশ্য ঢাকার রাস্তায় এখন প্রায়ই চোখে পড়ে৷ এমনকি  অনেকে নিজ বাড়িতে  বসে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা মানছেন না৷ আর বাড়ির সামনে শত মানুষের ভিড় জমে যায়৷ পুলিশ থাকলেও তারা কোনো ভূমিকা নেন না৷ পরিস্থিতি খারাপ দেখলে চলে যান৷ গত সপ্তাহে ধানমন্ডির একটি বাড়ির সামনে গেট আটকে দেয়ার পর রীতিমত যুদ্ধ শুরু হয় ত্রাণের জন্য৷ আর তখন পুলিশও দ্রুত সেখান থেকে চলে যান৷ 

শাহবাগ ও প্রেসক্লাবের সামনে কিছু সামাজিক ওর রাজনৈতিক সংগঠন রীতিমত ব্যানার টানিয়ে ফটোসেশন করে ত্রাণ বিতরণ করছে৷ ঢাকার বাইরেও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কমীরা একইভাবে সামাজিক দূরত্ব না মেনে ফটোসেশন করে ত্রাণ বিতরণ করছেন৷

ঢাকায় আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বের হন৷ অভাবী মানুষের জটলা দেখলেই সেখানে নেমে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেন৷ আর এই কারণেই এখন বিভিন্ন রাস্তার পাশে একসঙ্গে বসে থাকেন ত্রাণপ্রার্থীরা৷ 

আছে ব্যতিক্রম
তবে এর ব্যতিক্রমও আছে৷ যেমন বাকেরগঞ্জের কলসকাঠির সামাজিক সংগঠন ‘সম্ভাবনার কলসকাঠি’ আগে তালিকা করে রাতে বাসার সামনে গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী রেখে ফোন করে তাদের নিয়ে যেতে বলেন৷ তারা পুরোপুরি সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য নিরপত্তা মেনে এই কাজ করেন বলে জানান সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কামরুল হাসান সোহাগ৷

ঢাকার ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল ও তার বন্ধুরা ‘চাল,ডাল, আলু- বাঁচার জন্য' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ত্রাণ কাজ চালান৷ তারাও তালিকা করেন ত্রাণ দেন৷ তবে তারা তালিকা ধরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তা বিতরণ করেন৷ যাতে লোক জমতে না পারে তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই কাজটি করেন তারা৷ উজ্জ্বল বলেন, ‘‘ঢাকায় অনেকে আছেন ভাসমান ৷ আবার বস্তিতে গেলে লোক জমে যায়৷ তাই আমরা এই পদ্ধতিতে কাজ করি৷’’

উজ্জ্বল বলেন, ‘‘ঢাকা শহরে গরীব মানুষ খুঁজতে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয়না৷ যার যার এলাকায়ই গরীব মানুষ আছেন৷’’ 

ঢাকার রাস্তায় ত্রাণের অপেক্ষায় নিম্নবিত্ত মানুষ

01:52

This browser does not support the video element.

ত্রাণ বিতরণে করোনা ছাড়ানোর আশঙ্কা 

বাংলাদেশে এখন করোনার কমিউনিটি স্প্রেডিং শুরু হয়েছে৷ এ পর্যন্ত করোনায় ১৭ জন মারা গেছেন৷ মঙ্গলবার মারা গেছেন পাঁচ জন৷ সারাদেশে কার্যত লকডাউন চলছে৷ সেই অবস্থায় নিয়ম নীতি না মেনে এইভাবে ত্রাণ বিতরণে আশঙ্কায় রয়েছেন চিকিৎসকেরা৷

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘যেভাবে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে গাদগাদি করে, করোনার স্বাস্থ্য বিধি না মেনে তাতে আসলে করোনা আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে৷ অশ্লিল ফটোসেশন আর প্রচারের লোভে তারা কী ভয়ঙ্কর ক্ষতি করছেন তারা হয়তো নিজেরা তা বুঝতে পারছেন না৷’’

এটা বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সরকারি বেসরকারি সব পর্যায়ে ত্রাণ দেয়ায় শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন এখনই৷ সবচেয়ে ভালো হয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিধি মেনে তালিকা করে ত্রাণ বাসায় পৌঁছে দেওয়া৷ তবে বস্তি বা ভাসমান মানুষের জন্য নিরাপদ কোনো জাগায় তালিকা করে ত্রাণ বিতরণ করা যেতে পারে৷ সেখানে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে৷ মনে রাখতে হবে এটা করোনার সময়৷ আমরা যেন সেবা করতে গিয়ে ক্ষতি না করে ফেলি৷’’  

ডা. এনামুর রহমান

This browser does not support the audio element.

সরকারের অবস্থান
সরকার এরই মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি যেকোনো যেকোনো ত্রাণ বিতরণ বাড়িতে গিয়ে করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে৷ আর সেটা হতে হবে তালিকা করে ৷ বিতরণের সময় অপ্রয়োজনীয় লোকজন যেতে পারবেন না৷ সামাজিক দূরত্ব মেনে ত্রাণ দিতে হবে৷

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, ‘‘সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা হলো রাস্তায় বাইরে সারি করে ত্রাণ দেয়া যাবে না৷ তালিকা করে সামাজিক দূরত্ব মেনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ দিতে হবে৷ সরকারের বাইরে যারা ত্রাণ দিতে চান তারা জেলার ডিসিদের কাছে ত্রাণ জমা দেবেন৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকেই স্বাস্থ্য বিধি মেনে ত্রাণ পৌছে দেয়া হবে৷ এর ব্যতিক্রম হলে আমরা তাদের শাস্তির আওতায় আনবো৷’’

তিনি জানান, ঢাকার বাইরে এরই মধ্যে বাইরে লাইন ধরে ত্রাণ দেয়ার এই প্রবণতা কমেছে৷ কিন্তু ঢাকায় এখনো অব্যাহত আছে৷ আমরা মনিটরিং জোরদার করছি৷ 

কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বাড়বে
দেশে বিশেষ করে ঢাকা ও বড় শহরে অনেক মানুষ আছে যাদের কোনো সুনির্দিষ্ট থাকার জায়গা নেই, ভাসমান৷ তাদের কাছে কিভাবে ত্রাণ পৌছে দেয়া সম্ভব? তারাতো রাস্তার পাশে দল বেধে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকেন৷ আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে সেই ভাসমান মানুষের মধ্যেই ত্রাণ বিতরণ করেন৷ এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘কারোর যদি ঘর নাও থাকে তারপরও তার একটা ঠিকানা আছে৷ রাতে সে এক জায়গায় ঘুমায়৷ সেভাবেই তাদের চিহ্নিত করতে হবে৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ত্রাণ পৌঁছে দিতে হবে৷’’

তার মতে, ‘‘এটা না করা গেলে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বাড়বে৷ এটা আমরা হতে দিতে পারি না৷’’

চিহ্ন দিয়ে সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে সারি করিয়েও ত্রাণ দেয়া যাবেনা বলে জানান তিনি৷ কারণ শেষ পর্যন্ত ওই দূরত্ব থাকে না এবং হুড়োহুড়ি হয়৷

এদিকে ত্রাণ বিতরণের সময় পুলিশকে জানানো এবং তাদের সহায়তা নেয়ার জন্যও বলা হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ