মেক্সিকোর অনেক মাদক পাচারকারী গোষ্ঠী এখন গরিব ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছে৷ করোনার কারণে মাদক পাচার বন্ধ থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ এক অন্য কৌশল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
বিজ্ঞাপন
মেক্সিকোর অন্যতম মাদক পাচারকারী গোষ্ঠী সিনালোয়ার প্রধান হোয়াকিন ‘এল চাপো' গুজম্যান এখন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দি রয়েছেন৷ তার মেয়ে আলেহান্দ্রিনা গুজম্যানের নেতৃত্বে বয়স্ক ও গরিব মানুষদের মধ্যে চাল ও টয়লেট পেপার বিতরণ করা হয়েছে৷ যে প্যাকেটে করে এসব ত্রাণ দেয়া হয়েছে তার গায়ে ‘এল চাপো ৭০১' ফ্যাশন ব্র্যান্ডের লোগো রয়েছে৷ গুজম্যান এই ব্র্যান্ডের মালিক৷ মেক্সিকোর হালিস্কো প্রদেশে এর নিবন্ধন রয়েছে৷
দুই দশকে নতুন যত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
গোটা বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাস বিরুদ্ধে লড়ছে, যার শুরুটা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে৷ গত প্রায় দুই দশকে ছড়িয়ে পড়া নতুন কয়েকটি ভাইরাস নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Center for Disease Control
বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১)
১৯৯৭ সালে হংকংয়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তারপর ২০০৩, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়৷ ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৩০ জন বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ৩৭৫ জন মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিপাহ ভাইরাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার পাংকর দ্বীপের ছোট্ট শহর কামপুং তেলুক নিপাহতে নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়৷ পরের বছর ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ৷ এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা ৫৪ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাস সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়৷ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে অন্তত ১০ জন মারা যান৷
ছবি: Getty Images/AFP
সার্স
সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় চীনে৷ ২০০২ ও ২০০৪ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে সার্স ভাইরাস মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে৷ আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন, মারা যান প্রায় ৭৭৪ জন৷ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হয়৷ তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের খবর আর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালে প্রথম বিশ্বজুড়ে এইচ১এন১ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়৷ শূকরের ফ্লুর সঙ্গে লক্ষণ মিল থাকায় একে সোয়াইন ফ্লু নাম দেওয়া হয়৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১ থেকে ২১ শতাংশ মানুষ এ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন৷ দেড় লাখ থেকে প্রায় ছয়লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ঢাকায় নতুন বছরে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা গেলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: AP
মার্স (মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
এটি সার্স ভাইরাস গোত্রেরই একটি ভাইরাস৷ ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়৷ দেশটিতে মার্সে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মারা যান৷ উট থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়৷ হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে গত ডিসেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস প্রকোপ শুরু হয়৷ পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বৈশ্বিক মহামারি
২০২০ সালের শুরু থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বিভিন্ন দেশে৷ এক পর্যায়ে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এশিয়া থেকে ইউরোপ হয়ে এখন অ্যামেরিকা রয়েছে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর শীর্ষে৷ সারা বিশ্বে এরিমধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে রহস্যময় ভাইরাসটি৷
ছবি: Getty Images/L. DeCicca
প্রতিষেধক নেই
এখনও করোনার কোন প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি৷ তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ৷ কয়েকটি উদ্যোগ বেশ খানিকটা এগিয়েছে৷ মানব শরীরে কিছু সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা নিরীক্ষাও শুরু হয়েছে৷ তবে সেগুলো কার্যকারিতা নিশ্চিত হতে আরো বছর খানেক সময় লাগতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Yonhap
8 ছবি1 | 8
গুজম্যানের মেয়ে ছাড়াও আরো অনেক মাদক পাচারকারী গোষ্ঠী ত্রাণ বিতরণ করছে৷ যেমন, সান লুইস পস্তোসি শহরে ত্রাণ দিয়েছে নুয়েভা হেনেরাসিয়ন গোষ্ঠী৷ অস্ত্রহীন সাধারণ নাগরিকদের ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেয়ার আইনগত কোনো উপায় না থাকায় শহরের মেয়রের পক্ষে নুয়েভা হেনেরাসিয়নর কাজ বন্ধ রাখা সম্ভব হয়নি৷
করোনার কারণে মাদক পাচারের রুটগুলো এখন বন্ধ রয়েছে৷ লাতিন অ্যামেরিকা থেকে কোকেন আসতে পারছে না৷ সিনথেটিক ড্রাগ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কেমিক্যালও চীন থেকে আসতে পারছে না৷
এই অবস্থায় মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীগুলোর ত্রাণ কার্যক্রমকে তাদের ‘উপস্থিতি জানান দেয়ার একটি প্রোপাগান্ডা কৌশল' হিসেবে দেখছেন সাংবাদিক হোসে রেভেলেস৷ তিনি বলেন, সহিংসতা ও দয়াশীলতা, দুটোই একই উদ্দেশ্য পূরণ করে৷ আর সেটা হচ্ছে, গোষ্ঠীগুলো যে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সেখানে প্রভাব বিস্তার করা৷
এদিকে, ক্রাইসিস গ্রুপ সংস্থার কর্মকর্তা ফালকো এয়ার্নস্ট ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেক্সিকোতে এখন মারাত্মক মানবিক সংকট চলছে৷ এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীগুলো তাদের সামাজিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে চাইছে৷'' এক্ষেত্রে খাবার বিতরণ একটি কার্যকর উপায় বলে মনে করেন তিনি৷
এয়ার্নস্ট বলেন, মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীগুলো মেক্সিকোর সমাজকল্যাণ কর্মসূচির দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে৷
প্রায় দেড় যুগ ধরে মেক্সিকোতে মাদক যুদ্ধ চলছে৷ গত মার্চ মাসে দুই হাজার ৫৮৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন- যা এক মাসে সর্বোচ্চ৷