ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবেষ্টিত রাজ্য ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বাণিজ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে সেটা ত্রিপুরার জন্য বয়ে আনবে এক আশীর্বাদ৷
বিজ্ঞাপন
ত্রিপুরার আগরতলা থেকে কলকাতার দূরত্ব ১,৭০০ কিলোমিটার৷ কিন্তু ঢাকা ও চট্টগ্রামের দূরত্ব মাত্র ১৪০ কিলোমিটার৷ স্থল কাস্টমস স্টেশনের মধ্য দিয়ে ঐ দুটি শহর থেকে ত্রিপুরায় মালপত্র আনা অনেক সুবিধাজনক তো বটেই, লাভজনকও৷ এই ভৌগলিক নৈকট্যকে কাজে লাগিয়ে পরিবহণ খরচ কমিয়ে লাভজনক ব্যবসা করা সম্ভব বলে জানান ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি প্রশান্ত ভট্টাচার্য৷
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম
বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম খুবই বিখ্যাত আর স্বাদে-গন্ধেও অতুলনীয়৷ এখানে প্রায় ২,৪০০ হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ লাখেরও বেশি আম গাছ আছে৷বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ আমের বাজারে দেশের সব জায়গা থেকে পাইকারি ক্রেতারা আসেন আম কিনতে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সবচেয়ে বড় আমের বাজার
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ‘কানসাট’ আমের বাজার৷ দেশের সব জায়গা থেকে পাইকারি ক্রেতারা আম কিনতে আসেন এখানে৷ সবচেয়ে বেশি আমের চাষও হয় এই জেলায়৷ কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের প্রায় ২৪০০ হাজার হেক্টর জমিতে আঠারো লাখেরও বেশি আম গাছ আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাজারে আমের বিক্রি-বাট্টা
কানসাট আম বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়৷ বাংলাদেশের আমের মোট চাহিদার অর্ধেকেরও বেশির জোগান আসে এই এলাকা থেকেই৷ এ বাজারে প্রতি কেজি আম বিক্রি হয় ২৫-৫৫ টাকায়৷ পরিবহন খরচসহ নানাবিধ খরচ শেষে ঢাকার খুচরা বাজারে সে আম বিক্রি হয় ৯০-১৫০ টাকায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাগানে লাঠি দিয়ে আম পাড়া
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার একটি বাগানে গাছ থেকে আম পাড়ায় ব্যস্ত কৃষক৷ সাধারণত লম্বা লাঠির মাথায় বাধা জালের মাধ্যমে যত্নের সঙ্গে কৃষকরা গাছ থেকে আম পেড়ে থাকেন৷ কারণ পাড়ার সময় মাটিতে পড়ে গেলে সে আমের বাজার মূল্য কমে যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুস্বাদু আম
সবার প্রিয় এই সুস্বাদু আম গাছ থেকে পাড়ার পর যত্নের সঙ্গে ঝুড়িতে ভরা হয় বাজারে নেয়ার জন্য৷ সাধারণত বাঁশের তৈরি ঝুড়ির ভেতরে খড় এবং পুরনো পত্রিকা দিয়ে দেয়া হয়, যাতে আমের সঙ্গে চাপ না লাগে৷
ছবি: Suhail Waheed
এক সাইকেল বোঝাই আম
শিবগঞ্জের চামা বাজার এলাকা থেকে সাইকেলে বোঝাই আম নিয়ে কানসাট বাজারে যাচ্ছেন শ্রমিকরা৷ এ এলাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা আম কিনে কানসাট বাজারের আড়তে এনে তার পরিমাপ করার পর, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তা প্রেরণ করেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
একটি সাইকেলে প্রায় পাঁচ মন আম
শিবগঞ্জ থানার শাহবাজপুর ইউনিয়ন থেকে সাইকেলে আম নিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা৷ এ জায়গা থেকে কানসাট আম বাজারের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার৷ একটি সাইকেলে প্রায় পাঁচ মন (স্থানিয় হিসাবে ২২৫ কেজি) আম বহন করে একজন শ্রমিক৷ এ জন্য তিনি পান ৩০০ টাকা৷
ছবি: DW/M. Mamun
রাতের বেলায় থাকে কড়া পাহারা
আমের মৌসুমে বাগানে পাহারা চৌকি বসানো হয়৷ বাগানের মধ্যে ছোট ঘর তুলে দিনে রাতে পালা করে পাহাড়ায় থাকেন কৃষকরা৷ এ এলাকার গাছগুলোতে এতই নীচে ফল ধরে যে, চুরি ছাড়াও গবাদি পশুর ফল নষ্ট করার ভয় থাকে৷
ছবি: Abdus Salam
মাটির আম, তোমার-আমার!
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সব আম বাগানের আম গাছই ফলের ভারে মাটি ছুঁই ছুঁই করে৷ অথচ দুরন্ত শিশুদেরও এই সব গাছের আমে হাত দেবার সুযোগ নেই৷ কেউ এমনটা করলে তাকে ভয়ানক শাস্তি দেয়া হয়৷ অবশ্য গাছ থেকে পড়ে যাওয়া আম ধরতে মানা নেই কারো৷
ছবি: Anu Anand
পুরোনো বাড়িতে নতুন আম
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার একটি শত বছরের পুরনো বাগানের গাছের আম৷ আম যাতে মাটি ছুঁতে না পারে, সেজন্য বাঁশ দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে গাছের ডাল৷
ছবি: DW/M. Mamun
মতিবাজারের চাষী কবির মিয়া
আম পেকে গেলেও বাজার মন্দার কারণে গাছে হাত দিতে সাহস করছেন না কবির মিয়া৷ ফরমালিন ইস্যুতে হয়রানির ভয়ে অনেক ব্যবসায়ীই আম কিনতে সাহস করছেন না৷ ফল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সঠিক পদ্ধতিতে ফরমালিন শনাক্ত না করে অযথা তাঁদের মূল্যবান ফল নষ্ট করছে পুলিশ
ছবি: DW/M. Mamun
বিভিন্ন প্রজাতির আম
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন প্রজাতির আমের চাষ হয়৷ আড়াইশরও বেশি আমের প্রজাতি থাকলেও, এ অঞ্চলে বেশি চাষ হয় খিরশাপাত, লখনা, হিমসাগর, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, গুটি, মোহনভোগ, দুধসর, ফজলি ইত্যাদি প্রজাতির আম৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা বাণিজ্য ভারতের অনুকূলে হলেও ত্রিপুরা-বাংলাদেশের বাণিজ্যের ছবিটা ঠিক তার বিপরীত৷ কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ত্রিপুরায় রপ্তানি করে ৩৪২ কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী আর সেক্ষেত্রে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে যায় মাত্র ০.৪১ কোটি টাকার সামগ্রী৷ কারণ ত্রিপুরা থেকে যেসব মালপত্র যায়, তার ওপর বাংলাদেশ ৪০ শতাংশ শুল্ক বসানোর ফলে ১০০ টাকার পণ্য বাংলাদেশের বাজারে দাম পড়ে ১৪০ টাকা৷
ত্রিপুরা-বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতি বিরাট হওয়া সত্ত্বেও ত্রিপুরাবাসীরা উপকৃত হতে পারে যদি বাংলাদেশি পণ্য সুলভ হয়৷ এই বাণিজ্য আরো ফুলে ফেঁপে উঠবে আগামী ২০১৫ সালে, আগরতলা-আখাউড়ার মধ্যে ১৫ কিলোমিটার রেলপথ চালু হলে এবং চারটি সীমান্ত হাট খুললে, বলেন ত্রিপুরা বণিক সঙ্ঘের প্রাক্তন সভাপতি প্রশান্ত ভট্টাচার্য৷
ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের সাবেক চেয়ারম্যান পবিত্র কর বলেন, দেশভাগের আগে এইসব এলাকা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত৷ ঘনিষ্ট ছিল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ৷ কাছাকাছি হবার কারণে এবং ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ব্যবধান কার্যত না থাকার দরুণ স্থানীয় স্তরে ব্যবসা বাণিজ্য ছিল অবাধ৷ সরকার এখন চাইছে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ব্যবসা বাণিজ্যকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে যাতে সরকার রাজস্ব আদায় করতে পারে৷ এর এক বিকল্প হলো সীমান্ত হাট৷
পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত ‘জয়নগরের মোয়া’
শীত আসছে৷ তাই আবার উচ্চারিত হচ্ছে ‘জয়নগরের মোয়া’র নাম৷ ছবিঘরে ঢুকে জেনে নিন মজাদার এই মোয়া তৈরির বৃত্তান্ত৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
কণকচূড় ধানের খই
জয়নগরের মোয়ার অন্যতম প্রধান উপাদান কণকচূড় ধানের খই, যা এখনও প্রথাগত পদ্ধতিতেই ঝাড়াই-বাছাই করা হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
খেজুরের রসে মোয়া
মোয়ার দ্বিতীয় উপাদান হলো ‘নলেন গুড়’, যা অত্যন্ত যত্ন নিয়ে খেজুরের রস জাল দিয়ে তৈরি করতে হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
‘শিউলি’
খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন যাঁরা, তাঁদের চলতি কথায় বলা হয় ‘শিউলি’ - এঁরা গাছ বাইতে ওস্তাদ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
‘নলেন গুড়’
খেজুর গাছের মাথার দিকে, গুঁড়ির গায়ে চিরে দিয়ে, তার তলায় বাঁধা হয় মাটির হাঁড়ি - সরু নল দিয়ে রস এসে জমা হয় হাঁড়িতে৷ এই নলের কারণেই নাম ‘নলেন গুড়’৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
গাছের গায়ের দাগ
খেজুর গাছের গায়ে কাটার দাগ পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায় - যে গাছের গায়ে যত বেশি দাগ, ধরে নিতে হবে, সেই গাছের রস তত বেশি মিষ্টি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
জ্বালানি কাঠের ঢিমে আঁচের মোয়া
গুড় জাল দেওয়ার জন্য দরকার হয় কাঠের ঢিমে আঁচ - সেই জ্বালানি কাঠ শীতকাল শুরু হওয়ার আগেই মজুত রাখতে হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
মোয়ার মণ্ড
নলেন গুড়ের সঙ্গে কণকচূড় ধানের খই মিশিয়ে, ঘন করে পাক দিয়ে তৈরি হয় জয়নগরের মোয়ার মণ্ড৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ঘি মেখে তৈরি মোয়া
গাওয়া ঘি দু হাতে মেখে, গোল গোল করে পাকিয়ে তৈরি করা হয় মোয়া৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ক্ষীরের মোয়া
স্বাদ বাড়ানোর জন্য তার সঙ্গে যুক্ত হয় খোয়া ক্ষীর, কাজুবাদাম, কিশমিশ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সর্বত্র পাওয়া যায় এই মোয়া
কখনও হাঁড়িতে, কখনও রঙচঙে প্যাকেটে ভরে জয়নগরের মোয়া চলে যায় রাজ্যের সর্বত্র৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
10 ছবি1 | 10
ত্রিপুরা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়ন বিভাগের এক কর্মকর্তা স্বপন মিত্র ডয়চে ভেলেকে জানান, প্রস্তাব ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য আটটি সীমান্ত হাটের৷ কিন্তু প্রথম পর্যায়ে চারটি সীমান্ত হাট খোলার জন্য কাজ চলছে৷ তবে প্রথমে চালু হবে মাত্র দুটি৷ সীমান্ত হাটের সুবিধা পাবে দুপারের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মানুষ৷ বেচাকেনার পরিমাণ ১০০ ডলার বা ছয় হাজার টাকার বেশি হতে পারবে না৷ বেচাকেনা হবে প্রধানত শাকসবজি, ফলফলাদি ইত্যাদি৷ তবে লেনদেন হতে পারে ভারত ও বাংলাদেশের নিজস্ব মুদ্রায়৷
ত্রিপুরার বাণিজ্যমন্ত্রী জিতেন চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বাড়াতে ত্রিপুরাকে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে দুদেশের সরকার৷ তারজন্য ফেনী নদীর ওপর ব্রিজ তৈরি হচ্ছে৷ এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ত্রিপুরা শুধু বাংলাদেশের সঙ্গেই নয় গোটা দক্ষিণ এশিয়ার প্রবেশ দ্বার হবে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান ত্রিপুরার বাণিজ্যমন্ত্রী জিতেন চৌধুরি৷
ত্রিপুরা চেম্বার অফ কমার্সের সচিব এম. এল দেবনাথ বলেন, শুধু সীমান্ত বাণিজ্যই নয়, কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে৷ ত্রিপুরা তিন দিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলবেষ্টিত৷ রাজ্যের মোট ভৌগলিক আয়তনের ৮৫ ভাগ বাংলাদেশ লাগোয়া৷ বর্তমানে সাতটি ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন আছে৷ আগরতলা, সোনামুড়া, খোয়াইঘাট, কৈলাসর, ধরমনগর, বেলোনিয়া এবং সাব্রুম৷ সীমান্ত বাণিজ্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে৷