সবচেয়ে কম বয়সি থাই প্রধানমন্ত্রী প্যাটংটার্ন সিনাওয়াত্রা
১৬ আগস্ট ২০২৪
বাবার দেখানো পথ অনুসরণ করে প্যাটংটার্ন সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন৷ ২০২৩ সালে থাইল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলে একটি প্রচারণায় তিনি রাজনীতিতে আগমনের বার্তা দিয়েছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার কন্যা প্যাটংটার্ন সিনাওয়াত্রা থাই রাজনীতিতে পারিবারিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন৷ প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনকে বরখাস্ত করার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর শুক্রবার (১৬ আগস্ট) আদালতের আদেশে প্যাটংটার্ন সিনাওয়াত্রা তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংসদীয় সমর্থন অর্জন করেন৷
এই জয়ের মাধ্যমে, প্যাটংটার্ন সিনাওয়াত্রা সর্বকনিষ্ঠ থাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন৷ ইংলাক সিনাওয়াত্রার পর তিনি হতে যাচ্ছেন থাইল্যান্ডের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী৷ এর আগে থাকসিন সিনাওয়াত্রা ও ইংলাক সিনাওয়াত্রার নেতৃত্বাধীন সরকার যথাক্রমে ২০০৬ ও ২০১৪ সালে সামরিক বাহিনী দ্বারা উৎখাত হয়েছিল৷
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাজনৈতিক দল ফিউ থাইয়ের মনোনয়ন জেতার পর প্যাটংটার্ন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দেশকে এগিয়ে যেতে হবে৷ আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, একসঙ্গে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব৷''
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সাড়ে ৬ কোটি মানুষের দেশে আধিপত্যের জন্য লড়াই করা পপুলিস্ট রাজনৈতিক দল ফিউ থাই ও রক্ষণশীল-রাজতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে জোট করার বিষয়টি কল্পনাতীত ছিল৷
ব্যাংকক: দুটি প্রতিবাদ আন্দোলনের গল্প
তিন বছর আগে রাজপথের আন্দোলনে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইংলাক সিনাওয়াত্রা৷ ব্যাংককের রাজপথ আবার বিক্ষোভে উত্তাল৷ এবার ইংলাকের অপসারণের দাবিতেই চলছে উত্তুঙ্গ আন্দোলন৷ ছবিঘরে থাকছে দুটি আন্দোলনের মিল-অমিল৷
ছবি: DW/C. Johnson
‘দাস সেনা’ থেকে ‘সেলফি আর্মি’
শাসকের অত্যাচার ক্রীতদাসের মতো মেনে না নিয়ে থাইল্যান্ডের মানুষ আন্দোলনে নেমেছিল ২০১০ সালে৷ প্রতিবাদের ভাষা প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে দিতে ব্যবহার করেছিলেন মুঠোফোন৷ ২০১৪ সালে ব্যাংকক আবার উত্তাল৷ ‘টেক স্যাভি’ তরুণ সমাজ এবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাজপথ থেকে তুলে দিচ্ছে ছবি৷এখানে ব্যাংককের এমবিকে শপিং সেন্টারের সামনে থেকে ছবি তুলে ফেসবুক-টুইটারে দেয়ায় ব্যস্ত ইংলাক-বিরোধী আন্দোলনকারীরা৷
ছবি: DW/C. Johnson
বাড়ি যখন দূরে, বাড়ি যখন কাছে
২০১০ সালের আন্দোলনে দূর দূরান্তের গ্রাম থেকেও ইংলাকের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলে এসেছিলেন ব্যাংককে৷ লাল জামা পরে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল এক ‘লাল জামা পরিবার’৷ ফুটপাতে রাত কাটাতে হয়েছে তাঁদের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আগুনে গরমে৷ এবার একটু ভিন্ন৷ বেশিরভাগ আন্দোলনকারীই থাকেন ব্যাংকক বা ব্যাংককের আশেপাশে৷ রাতে তাঁরা ফিরে যেতে পারেন নিজের ঘরে, ২০১০ সালের মতো এমন দৃশ্য এখন তেমন একটা দেখা যায় না৷
ছবি: DW/C. Johnson
আরেকটি অন্ধকার দিন?
বোমা বিস্ফোরণ কিংবা গুলি বর্ষণের ঘটনা সত্ত্বেও সব দলের সব নেতাই এবার সামরিক অভিযান কিংবা দোকান, বিপণিবিতান, থিয়েটার বা এটিএম বুথ পোড়ানো এবং লুটপাট রুখতে সদা তৎপর৷ ২০১০ সালের মতো এমন কিছু এখনও হয়নি৷ প্রশ্ন হলো, জনতার এমন আপাত ধৈর্যশীলতা কতদিন বজায় থাকবে?
ছবি: DW/C. Johnson
দৃশ্যমান পরিবর্তন
২০১০ সালের আন্দোলনে ব্যাংককের রাজপথ যেন হয়ে উঠেছিল পল্লীমেলার উৎসব৷ এবার দেখা যাচ্ছে আধুনিক শহুরে জীবনের সংস্কৃতি, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার৷ ঝলমলে আলোকসজ্জা, রক সংগীতে থাইল্যান্ডের কিংবদন্তি ব়্যাং রকেস্ট্রা, কিংবা জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ফ্লাই’-এর নেড়ে-মাথা ভোকালের গান – কী নেই সেখানে! রাজপথের আন্দোলন, আন্দোলনকে ঘিরে জমে ওঠা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – সবই সরাসরি দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে৷
ছবি: DW/C. Johnson
ধ্বংসের চিত্র
২০১০ সালের ছবি৷ তখন সামরিক অভিযান চলছে৷ অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক আন্দোলনকারী৷ এদিক-ওদিক থেকে আসছে স্নাইপারের গুলি, জেন শপিং সেন্টার পুড়ছে, ধোঁয়ায় ঢাকা চারপাশ – ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতেও অকুতোভয় এক আন্দোলনকারী হেঁটে চলেছেন৷ চার বছর পর তাঁর প্রতিপক্ষরাই নিয়েছেন রাজপথের দখল৷ লাল জামা সরকারের পতন চান তাঁরা৷
ছবি: DW/C. Johnson
কৃষক বনাম সেলিব্রিটি
২০১০ সালের আন্দোলনে ব্যাংককের রাজপথ ছিল মূলত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা কৃষকদের দখলে৷ ইংলাকবিরোধী আন্দোলনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডিজে-রা৷ দেশ বরেণ্য অনেক সেলিব্রিটিই রাজপথে সময় কাটাচ্ছেন জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে, কিংবা নানাভাবে রাজা ভূমিপলের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ এবং ইংলাক সরকারের বিদায় কামনা করে৷
ছবি: DW/C. Johnson
সরকার থেকে বিরোধী
ইংলাক সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রধান নেতা সুথেপ থাউংসুবান৷ চার বছর আগে তিনি ছিলেন ইংলাকের পাশে৷ ইংলাক সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন তিনি৷
ছবি: DW/C. Johnson
যানচলাচল বন্ধ
একটি বিষয়ে দুটি আন্দোলনেই খুব মিল৷ ২০১০ সালের মতো এবারের আন্দোলনকারীরাও বিক্ষোভ জানাতে নেমে এসেছেন রাজপথে৷ ফলে ব্যাংককের বড় একটা অংশে যানচলাচল প্রায় বন্ধ৷ তবে এরই মাঝে ফুটপাতে দেখা যাচ্ছে জীবনের নানা রং৷ আন্দোলনকারীদের জন্য টি-শার্ট, টুপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্রের পশরা নিয়ে বসেছেন খুদে ব্যবসায়ীরা৷ আশোপাশের দোকানপাটও খোলা৷
ছবি: DW/C. Johnson
8 ছবি1 | 8
বাবারছায়ায়মেয়ে
বাবার রাজনীতির সুবাদে প্যাটংটার্ন তার শৈশবের শুরু থেকেই থাইল্যান্ড এর অস্থির সময়ের রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহ প্রত্যক্ষ করতে থাকেন৷ মার্চ মাসে এক ভাষণে প্যাটংটার্ন বলেন, ‘‘আমার বয়স যখন আট বছর, তখন আমার বাবা রাজনীতিতে আসেন৷ সেই দিন থেকেই আমার জীবনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে৷''
থাকসিন ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ও সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং কৃষি ভর্তুকিতে ব্যয় বৃদ্ধি করেন৷ তার এই নীতি ‘থাকসিনমিক্স' নামে বেশ পরিচিতি লাভ করে৷ ক্ষমতা গ্রহণের ৫ বছর পর ২০০৬ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি৷
প্যাটংটার্ন মার্চ মাসে দেয়া ভাষণে বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে আমি দেয়ালে ঝোলানো আমার বাবার ছবিতে ক্রস করা ও আঁকা দেখতে পেতাম৷ ২০ বছর বয়সে ঘৃণায় ভরা চারিদিক থেকে বের হয়ে আসা খুব কঠিন ছিল৷''
২০২৩ এর অক্টোবরে ফিউ থাই সরকার গঠনের জন্য তাকে দলের নেতা হিসাবে নির্বাচিত করে৷ সেসময় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ফিউ থাই মানুষের জীবিকা যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে৷''
প্যাটংটার্ন গত বছর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘‘আমি ছোটবেলা থেকেই আমার বাবার সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয় বা কাজের সমস্ত বিষয়ে পরামর্শ করি৷ তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনও এর ব্যতিক্রম হয়নি৷''