আন্তিচা সাংচাই নিজের দুঃখ ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও ভাগাভাগি করতে পারেননি৷ ততদিনে তার এক সন্তানও হয়েছে৷ অন্যদের এমন দুর্দশা থেকে বাঁচাতে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি নারী ফুটবল ক্লাব৷
বিজ্ঞাপন
থাইল্যান্ডের অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল দক্ষিণাঞ্চলের পাত্তানি শহরে নিজের বইয়ের দোকান দেন আন্তিচা৷ সেখানেই প্রথমে শুরু হয় লিঙ্গ এবং যৌনতার নানা ধরন নিয়ে আলোচনা৷ তখন আন্তিচা বুঝতে পারেন, তার মতো অনেকেই আছেন যাদের কোথাও যাওয়ার নেই৷
এমন মানুষদের পাশে দাঁড়ানো এবং কিছু করে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার আগ্রহ থেকেই জন্ম হয় বুকু ফুটবল ক্লাবের৷ মালয় ভাষায় বুকু অর্থ বই৷ আন্তিচার এই ক্লাবে সমকামী, উভকামী নারীরাও সহজেই একাত্ম হতে পারেন৷
অক্টোবরে বুকু ক্লাব আয়োজন করে তাদের প্রথম এলজবিটি ফুটসাল টুর্নামেন্ট৷ এই খেলা ফুটবলের মতো নিয়ম হলেও শক্ত কংক্রিটের মেঝেতে খেলা হয়, মাঠের আকার থাকে ছোট এবং দুই পক্ষে খেলোয়াড় থাকেন পাঁচ জন করে৷
দক্ষিণাঞ্চলের তিন প্রদেশ থেকে মোট ছয়টি দল অংশ নেয় এই টুর্নামেন্টে৷ এর মধ্যে অনেক খেলোয়াড়ই পরে এসেছেন হিজাব৷ তাদের পরিবারের সদস্যরাও খেলা দেখতে এসেছেন, কেউ ভালো খেললে চিৎকার করে উৎসাহও দিয়েছেন৷
আন্তিচা যখন ছোট ছিলেন, তখন এমন পরিস্থিতি ছিল অকল্পনীয়৷
জার্মানির রাজনীতিতে সমকামিতা
জার্মানিতে সমকামীদের অধিকারের লড়াই দীর্ঘদিনের৷ এখন তাদের অনেক অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে৷ তবে এখনো তাদের নানা ধরনের বৈষম্য ও বিদ্বেষের শিকার হতে হয়৷ কিন্তু সমকামিতা জার্মান রাজনীতিকে ধীরে ধীরে পালটে দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. von Erichsen
বৈধতা, বিয়ের অধিকার
প্রুশিয়ান সাম্রাজ্য এবং পরে নাৎসি জার্মানিতে সমকামীরা ব্যাপক নির্যাতনের স্বীকার হতেন৷ সমকামিতার অভিযোগে ছিল কারাদণ্ডের বিধান৷ এমনকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক জার্মানি স্থাপিত হওয়ার পরও সমকামীদের অধিকার নিশ্চিত হয়নি৷ তবে কয়েক দশকে সে অবস্থানের দ্রুতই পরিবর্তন হয়েছে৷ ১৯৬৯ সালে সমকামীদের শাস্তি দেয়ার বিধান বাতিল হলেও ২০১৭ সালে এসে তারা বিয়ের অধিকার পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. von Erichsen
পার্লামেন্টে জয়
জার্মান পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে সমকামীদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ান রাজনীতিবিদরা৷ কিন্তু তখনো অনেক পার্লামেন্ট সদস্য এর বিরুদ্ধে ছিলেন৷ ক্ষমতায় থাকা দল সিডিইউ-র ৩০৯ সদস্যের মধ্যে ২২৫ জনই এর বিরুদ্ধে ভোট দেন৷ খোদ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ছিলেন বিরোধিতাকারীদের একজন৷ তবে পরবর্তী ভোটে রাজনীতিবিদরা যাতে দলের মতাদর্শ মেনে ভোট না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে ভোট দেন, সে আহ্বান জানিয়েছিলেন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/O. Messinger
প্রকাশ্যে সমকামী রাজনীতিবিদ
সমকামীদের অধিকারের আন্দোলন যত জনপ্রিয় হতে থাকে, জার্মান রাজনীতিতেও পড়ে এর প্রভাব৷ অনেক রাজনীতিবিদ নিজেদের সমকামিতার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে থাকেন৷ ২০০১ সালের সিটি নির্বাচনে বার্লিনের এসপিডির মেয়র প্রার্থী ক্লাউস ভোভেরাইট দলের সম্মেলনে তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে, ‘‘আমি সমকামী এবং এটা খারাপ কিছু নয়৷’’ পরবর্তীতে ভোভেরাইট মেয়র নির্বাচিত হন এবং টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন৷
ছবি: Imago/W. Wagner
রক্ষণশীল দলে সমকামী নেতা
সমকামিতা সাধারণ মানুষের চোখে ধীরে ধীরে সহনীয় করে তোলায় বড় ভূমিকা রেখেছেন রাজনীতিবিদরা৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক সফরে তার পার্টনার মিখায়েল ম্রোনৎসকে নিয়ে যেতেন৷ এখন এমনকি সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলে এমন কট্টর ডানপন্থি দল এএফডির এক নেত্রী অ্যালিস ভাইডেলও এক নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
সরকারে সমকামী মন্ত্রী
জার্মানির বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান নিজেকে সমকামী ঘোষণা দেয়া প্রথম মন্ত্রী ৷ দলের অন্যতম উদীয়মান রাজনীতিবিদ বলে বিবেচনা করা হয় স্পানকে৷ করোনা মহামারিতে নিজের দেশকে দারুণভাবে সামাল দেয়ায় দল ও দেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি৷ ম্যার্কেলের পর সিডিইউয়ের প্রধান হওয়ার লড়াইয়েও অনেক এগিয়ে আছেন স্পান৷ জিতে গেলে তিনি হতে পারেন প্রথম সমকামী জার্মান চ্যান্সেলর৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
এখনো রয়েছে বৈষম্য
রাজনীতিবিদ তো বটেই, জার্মান জনগণের মধ্যেও ধীরে ধীরে সমকামীভীতি দূর হচ্ছে৷ কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বৈষম্যের স্বীকার হন তারা৷ সম্প্রতি জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক রিসার্চ এবং বিলেফেল্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিজেদের এলজিবিটিকিউ ঘোষণা দেয়া ৩০ শতাংশ কর্মীই কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন৷ জরিপে অংশ নেয়া এক তৃতীয়াংশই জানিয়েছেন, তারা সহকর্মীদের এ বিষয়ে জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA/O. Messinger
6 ছবি1 | 6
এখন আন্তিচার বয়স ৪৩ বছর৷ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশে বৌদ্ধ পরিবারে বেড়ে উঠেছেন তিনি৷ আন্তিচা বলছিলেন, ‘‘ফুটবল থাইল্যান্ডে খুব জনপ্রিয় হলেও, খুব বেশি মেয়ে তা খেলে না৷ বিশেষ করে মুসলিম মেয়েদের অনেক বেশি বাধার মুখে পড়তে হয়, কারণ তাদের পরিবারের অনেকে এটিকে পাপ বলে মনে করেন৷’’
বুকু ক্লাবের একটি খেলা দেখতে দেখতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আন্তিচা বলছিলেন, ‘‘ফুটবল খেলা তাদেরকে স্বাধীনতার স্বাদ দেয়৷ একইসঙ্গে হয়রানি ও বৈষম্য মোকাবিলা করতে এই খেলাই তাদের শক্তি যোগায়৷’’
থাইল্যান্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠ রক্ষণশীল বৌদ্ধ সমাজের হলেও ধীরে ধীরে সমকামিতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী কিছুটা হলেও পালটেছে৷ ১৯৫৬ সালেই সমকামিতাকে অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়৷
কিন্তু তারপরও এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষ নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হন৷ মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, রাজধানী ব্যাংককের বাইরে অনেক পরিবারই তাদের মেনে নিতে চায় না৷
তিন বছর ধরে বুকু ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলছেন সাফিয়া আওয়েয়া৷ তার বাবা একজন ইমাম৷ সাফিয়ার বাবা তার সমকামী হওয়া এবং ফুটবল খেলা মেনে নেননি৷ ফলে একসময় সাফিয়া বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন এবং চুল ছোট করে কেটে ফেলেন৷ এখন নিজের কর্মক্ষেত্রে এবং নানা অনুষ্ঠানে গেলে তিনি হিজাব পরেন৷
রয়টার্সকে সাফিয়া বলছিলেন, ‘‘আমি আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে আমার সমকামী হওয়া এবং ফুটবল খেলার কোনো বিরোধ খুঁজে পাই না৷ তারপরও যারা আমার বিশ্বাস নিয়েই প্রশ্ন তোলে, আমি তাদের এড়িয়ে চলি৷ কারণ তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করা সম্ভব না৷’’
এই বছরের শুরুতে থাই মন্ত্রিসভা সমলিঙ্গের মানুষের সম্পর্ককে দাম্পত্য জীবনের প্রায় সমান মর্যাদা দিয়ে সিভিল পার্টনারশিপ বিল অনুমোদন দিয়েছে৷
এই বিল পার্লামেন্টে পাস হয়ে আইনে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে৷ এই আইন হলে তাইওয়ানের পর থাইল্যান্ডই হবে সমলিঙ্গের মানুষের দাম্পত্য নিবন্ধনের অনুমতি দেয়া এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ৷ এই আইনের ফলে সন্তান দত্তক নেয়া এবং উত্তরাধিকার, সম্পত্তির অধিকারের মতো অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে সমকামী অধিকারকর্মীদের আশা৷
চলচ্চিত্রে সমকামিতার শত বছর
হলিউডের চলচ্চিত্রে সমকামী চরিত্রে অভিনয় এখন খুব সাধারণ ঘটনা৷ শত বছর আগে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে রুপালি পর্দায় সমকামিতা নিয়ে আসেন নির্মাতারা৷ অভিনয়ে সাহস দেখান শিল্পীরা৷ ১৯১৯ সালে প্রথমবার চলচ্চিত্রে বিষয় হয়ে আসে সমকামিতা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/DCM/David Bornfri
ডিফারেন্ট ফ্রম দ্য আদার্স (১৯১৯)
সমকামিতা নিয়ে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ডিফারেন্ট ফ্রম দ্য আদারস৷’ জার্মানির আইনে সমকামিতা ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ ১৯১৯ সালে পরিচালক রিচার্ড অসওয়াল্ড এই ছবি দিয়েই আইনটি প্রত্যাহারের দাবি জানান৷ ওই বছর বার্লিন মুভি থিয়েটারে ছবিটির প্রিমিয়ারের পর হৈ চৈ পড়ে যায়৷ প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন অনেকে৷ তখন সেন্সর বোর্ড না থাকায় ছবিটি নিষিদ্ধ করা যায়নি৷ তবে ছবি মুক্তির কয়েক দশক পর, ১৯৯৪ সালে আইনটি বাতিল করা হয়৷
ছবি: Edition Filmmuseum/film & kunst GmbH
দ্য চিলড্রেন’স আওয়ার (১৯৬১)
স্কুল শিক্ষকের ভূমিকায় দেখা যায় অড্রে হেপবার্নকে ৷ তার প্রেমে পড়েন সহকর্মী শার্লি ম্যাকলেইন৷ মার্থা চরিত্র নিয়ে শার্লি অভিনয় করেন সমকামী নারীর ভূমিকায়৷ নির্মাতা উইলিয়াম ওয়াইলারের সমকামিতা নিয়ে কাজের দ্বিতীয় কিস্তি ছিল এই ছবি৷ লিলিয়ান হেলম্যানের গল্প ‘দিজ থ্রি’ অবলম্বনে বানানো ছবির প্রথম কিস্তিতে দেখানো হয় মধুর সমাপ্তি৷ তবে দ্বিতীয় দফায় এসে পরিচালক দেখান মার্থার আত্মহত্যা৷
ছবি: Imago Images/United Archives
ডেথ ইন ভেনিস (১৯৭১)
থমাস মানের উপন্যাস থেকেই ছবিটি নির্মাণ করেন লুকিনো ভিস্কোন্তি৷ ছবিতে দেখানো হয়, সমুদ্র পাড়ের এক হোটেলে অবসর যাপন করছেন ৫০ বছর বয়সি নাট্যকার গোস্তব ফন আসেনবাখ৷ সৈকতে এক তরুণকে দেখে প্রেমে পড়ে যান তিনি৷ ওই তরুণও উঠেছেন একই হোটেলে৷ আর এমন প্রেম ওই সময় তো বটেই, এখনও কোথাও কোথাও ট্যাবু৷
ছবি: picture-alliance/kpa
ইট ইজ নট দ্য হোমোসেক্সুয়াল হু ইজ পারভার্স, বাট দ্য সোসাইটি ইন হুইচ হি লিভস (১৯৭১)
পরিচালক রোজা ফন প্রাউনহেইম জানতেন, একজন সমকামী নিজের সঙ্গে কিভাবে যুদ্ধ করেন আর সামাজিক বাস্তবতায় কতটা গ্লানিতে ভোগেন৷ সেখানেই আলো ফেলেছেন তিনি৷ তুলে ধরেছেন একজন সমকামীর লাইফস্টাইল৷ সাধারণ বিয়ে-সংসার, পোশাকের আড়ালে ভিন্ন মানুষ আর সমকামীদের সঙ্গে মিশে আরেক ভূবন- এসবই চিত্রিত হয়েছে এই ছবিতে৷
ছবি: EuroVideo
মাই বিউটিফুল লনড্রেট (১৯৮৫)
ড্যানি ইন স্টিফেন ফিয়ার‘স নামের কমেডি ধাঁচের নাটক ঘিরে নির্মাণ করা হয় এই ছবি, যার মধ্য দিয়ে নজর কাড়েন অভিনেতা ড্যানিয়েল ডে লুইস৷ লন্ডনে ৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা৷ একটা লন্ড্রি চালানোর দায়িত্ব পান দুই বন্ধু৷ একজনের নাম ওমর, যার বাড়ি পাকিস্তান৷ তারা জড়িয়ে পড়েন রোমান্টিক সম্পর্কে৷
ছবি: Imago/United Archives
মরিস (১৯৮৭)
১৯১০ সালে ব্রিটেনের এক অসুখি দম্পতিকে নিয়ে ছবিটি তৈরি করেন জেমস আইভরি৷ কলেজ পডুয়া মরিস ও ক্লাইভ একে অপরের প্রমে পড়েন৷ সমকামী পরিচয় সামনে এলে সমাজ-বিচ্যুত হতে পারেন- এমন শঙ্কা নিয়ে এক নারীকেই বিয়ে করেন ক্লাইভ৷ আর মরিসের জীবনে আসে নতুন প্রেম৷ ক্লাইভের গৃহপরিচারকের প্রেমে পড়েন মরিস৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
মাই ওন প্রাইভেট ইডাহো (১৯৯১)
দেহ বেচেই জীবিকা চলে মাইকের৷ তাই রাস্তার মোড়ে খদ্দের খুঁজতে হয় তাঁকে৷ একদিন মা-কে খুঁজছিলেন তিনি৷ এসময় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় স্কটের৷ দুজনের নিয়তি একইরকম৷ সেই থেকে বন্ধুত্ব, যা প্রণয়ে গড়ায়৷ কিন্তু বহুমাত্রিক যৌনতায় বিশ্বাসী ছিলেন স্কট৷ তাই সম্পর্কে আসে দূরত্ব৷ ৯০ দশকের শুরুতে এই ছবির মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমকামিতা নির্ভর ছবির নতুন যুগ৷
ছবি: Imago Images/Prod.DB
দ্য মোস্ট ডিজায়ার্ড ম্যান (১৯৯২)
১৯৯৪ সালে জার্মান কমেডি ‘মাকো মিটস ড্র্যাগ কুইন্স’-এর তুমুল ব্যবসার পর এই ছবিতে অভিনয় করেন টিল শোয়াইগার৷ তাঁর চরিত্রটা ছিল দুষ্টু লোকের, যার মাথার মধ্যে সারাক্ষণ নারী বাস করতো৷ শেষ পর্যন্ত ‘ছ্যাঁকা’ খেয়ে এক সমকামীর সঙ্গে জড়িয়ে যান তিনি৷ রালফ কনিগের কমেডির ছায়া থেকে বানানো জ্যোনকে বর্টমানের ছবিটি রূপ নেয় মিউজিক্যালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রোকব্যাক মাউন্টেন (২০০৫)
ব্রোকব্যাক মাউন্টেনের দুই কাউবয় জ্যাক আর এনিস৷ সবকিছু একসঙ্গে করেন তাঁরা৷ পানাহার কিংবা ঘুমানো- একসঙ্গেই হওয়া চাই৷ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করলেও দূরে থাকতে হয় দুজনকে৷ ট্যাবু ভাঙার সাহস আসে না৷ শেষ পর্যন্ত নারীতে আশ্রয় খোঁজেন দুজন৷ নিও-ওয়েস্টার্ন ধাঁচে থাই বংশোদ্ভূত মার্কিন পরিচালক আং লির এই ছবিকে বলা হয় ‘অবিস্মরণীয় মেলোড্রামা’৷ এই ছবির জন্য তিনটি অস্কার নিজের ঝোলায় নেন নির্মাতা৷
ছবি: Tobis Studio Canal
ক্যারল (২০১৫)
৫০-এর দশকে নিউ ইয়র্কের গল্প নিয়ে ’ক্যারল’৷ ক্যাট ব্লানচেট আর রুনি মারা অভিনয় করেছেন মূল ভূমিকায়৷ ভালোবেসে প্রকাশ করতে পারছিলেন না দুই প্রেমী৷ অবাধ যৌনতা, নারীর স্বাধীনতা কিংবা সমকামীদের অধিকার-কিছুই প্রতিষ্ঠা পায়নি৷ দুজনের চাপা আর্তনাদ নিয়েই এগিয়েছে ছবির গল্প৷ প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের উপন্যাস থেকে ছবিটি নির্মাণ করেছেন টড হাইনস৷ স্পর্শকাতর বিষয় বলে ১৯৫২ সালে বইটি প্রকাশ হলেও পরিচয় গোপন রাখেন লেখিকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W. Webb
10 ছবি1 | 10
থাইল্যান্ডে এলজিবিটি অধিকারকর্মীরা ধীরে ধীরে রাজনীতিতেও এগিয়ে আসছেন৷ গত বছরের নির্বাচনে দেশটিতে নতুন চার সমকামী আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী পদে লড়াই করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের এক সদস্য৷
বৈষম্যের প্রতিবাদে থাইল্যান্ডে সরকারবিরোধী যে আন্দোলন চলছে সেখানেআ সরব ভূমিকায় আছেন এলজিবিটি অধিকার কর্মীরা৷
আন্তিচা মনে করেন, এই আইন এলজিবিটিদের সমাজে গ্রহণযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখবে৷ তবে নারী-পুরুষের বিয়ের মতো সমকামী বিয়েরও সমান স্বীকৃতি চান তিনি৷
সরকার অবশ্য এখনই সে উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ এখনও সিভিল কোডে বিয়ে বলতে নারী ও পুরুষের দাম্পত্য বন্ধনকেই বোঝানো হয়৷
দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিভাগের পরিচালক নারেলুক পাইরচাইয়াপুম বলেন, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্য বিয়ের সমান স্বীকৃতি৷ কিন্তু আমরা অন্য সব দেশের মতোই এটা ধাপে ধাপে করতে চাই৷ থাই সমাজের জন্য এটা একটা বিশাল পরিবর্তন৷ ফলে মানুষের বিষয়টা বুঝতে ও গ্রহণ করতে কিছুটা সময় লাগবে৷ ধর্মীয় গ্রুপ এবং অন্যদের সঙ্গে আমাদের এ নিয়ে একটা সমঝোতাতেও পৌঁছাতে হবে৷’’
অবশ্য কবের মধ্যে সমান স্বীকৃতি দেয়ার কথা ভাবছে থাই সরকার, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট সময় জানাননি পাইরচাইয়াপুম৷
ক্লাব পরিচালনার পাশাপাশি পাত্তানি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ম ও দর্শন পড়ান আন্তিচা৷ নতুন আইন পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তার পার্টনারকে প্রকাশ্যেই বিয়ে করতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সমাজকে দেখাতে চাই, সবার নিজেদের মতো করে মুক্ত জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে৷’’