থাইল্যান্ডের সামরিক জান্তা, অর্থাৎ সামরিক প্রশাসনের বিরোধীরাই এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, বলে মনে করা হচ্ছে; আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে এর কোনো সংযোগ নেই, এমনকি দক্ষিণ থাইল্যান্ডের ইসলামি বিদ্রোহীদের সঙ্গেও এর কোনো সংযোগ নেই, এই হল সরকারের ধারণা৷
গত সপ্তাহান্তে সামরিক জান্তা সফলভাবে একটি সংবিধান সংক্রান্ত গণভোটের আয়োজন করে৷ ঐ সংবিধান মিলিটারির ক্ষমতা বহু বছর ধরে কায়েম করবে, বলে সমালোচকদের অভিমত৷ হুয়া হিন বা ফুকেট-এর পাটং সৈকতের মতো এলাকায় বোমাবাজির উদ্দেশ্য হলো দেশের পর্যটন শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করা৷ এই শুক্রবার আবার রানি সিরিকিট-এর জন্মদিন, ওদিকে সামরিক জান্তা বার বার বলেছে, রাজতন্ত্র রক্ষা তাদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে৷ তার সঙ্গেও এই বোমাবাজির সংযোগ থাকতে পারে৷
সবচেয়ে মারাত্মক বিস্ফোরণগুলি ঘটেছে সমুদ্রতীরের হুয়া হিন শহরটিতে৷ রাস্তাটি বার ও রেস্টুরেন্টে ভরা৷ বিস্ফোরণে একজন থাই মহিলা নিহত ও আরো বিশজন আহত হয়েছেন, আহতদের অর্ধেক বিদেশি, যদিও তারা কোন দেশের নাগরিক, তা এখনও জানা নেই৷
হুয়া হিন-এর বোমাগুলো ফুলের টবে লুকনো ছিল৷ রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সেগুলো আধ ঘণ্টা অন্তর অন্তর ফাটানো হয়৷ তার মধ্যে অন্তত একটি বোমা একটি স্যামসাং সেল ফোন ব্যবহার করে ফাটানো হয়৷ সেল ফোনটি খুঁজে পাওয়া গেছে৷ বিস্ফোরণে দু'টি ফোন বুথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও কাছের একটি স্টারবাক্স কাফে-র কাচ ভেঙে গেছে৷
শুক্রবার সকালে আবার হুয়া হিন-এ একটি বিস্ফোরণ ঘটে, এবার ক্লক টাওয়ারের কাছে: এই বিস্ফোরণে একজন মানুষ নিহত ও আরো চারজন আহত হন৷ হুয়া হিন ও ফুকেট ছাড়া দক্ষিণ থাইল্যান্ডের সুরাট থানি-র দু'টি পুলিশ ফাঁড়ির সামনে আরো দু'টি বোমা ফাটে: এখানে একজন ব্যক্তি নিহত ও আরো তিনজন আহত হন৷ এছাড়া ফাং না শহরের বাজার এলাকায় দু'টি বোমা ফেটে দু'টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ বৃহস্পতিবার দক্ষিণের ট্রাং প্রদেশে একটি বোমা ফেটে একজন নিহত ও ছ'জন আহত হন৷
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স, এএফপি)
থাইল্যান্ডে যাঁরা বেড়াতে যান, তাঁদের অবশ্যদ্রষ্টব্যের তালিকায় পড়ে ব্যাংককের কেন্দ্রস্থলে বিরাট জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রাসাদটি৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থাপত্যরীতিরও এ এক চমৎকার নিদর্শন, যা সত্যিই প্রশংসা আর সমীহের দাবিদার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayপ্রথম দেখাতেই তাক লাগিয়ে দেয় প্রাচীন সিয়াম, বর্তমান থাইল্যান্ডের রাজ পরিবারের এই প্রাসাদ, যা ১৯২৫ সাল পর্যন্ত বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে৷ অনবদ্য স্থাপত্যশৈলী এবং অসাধারণ কারুকাজমণ্ডিত এই প্রাসাদ এখন বিশেষ সরকারি অনুষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayঐতিহ্যবাহী থাই শিল্পরীতির সুষমা এই প্রাসাদের সর্বত্র৷ দৃশ্যশোভন ইমারতের পাশাপাশি নজর কাড়ে আপাদমস্তক সেরামিকের কারুকাজ করা অতিকায় দ্বাররক্ষীমূর্তি, যা আধুনিক থাইল্যান্ডেরও অন্যতম প্রতীক৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayশুধু পর্যটকেরা নন, অনেক স্থানীয় মানুষও আসেন এই প্রাসাদ ঘুরে দেখতে৷ স্মৃতি হিসেবে নিয়ে যান সপরিবারে তোলা সেলফি ছবি৷ এই সেলফি তোলার অভ্যাস, বলা বাহুল্য ভিনদেশী পর্যটকদেরও৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayবিশালাকার ইমারত, আর উচ্চতায় তাদের থেকেও বড় বৌদ্ধ স্তূপ৷ দর্শকরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন সেই উচ্চতার দিকে, অপরূপ সৌন্দর্যে অভিভূত হন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayরঙিন কাচ, বহুবর্ণের চিনেমাটির টুকরো দিয়ে কী চমৎকার অলঙ্করণ হতে পারে প্রাসাদের দেওয়াল এবং অন্যান্য অংশে, না দেখলে বিশ্বাস হওয়া কঠিন৷ একটু দূর থেকে এই অলঙ্করণ রত্নখচিত বলে ভুল হতে পারে, এমনই তার ঔজ্জ্বল্য৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayপ্রাসাদের অনেক অংশে, বিশেষত স্তূপের গায়ে দেখা যায় এরকম মূর্তি, যা আসলে ভারবহনকারী স্তম্ভ৷ দর্শনার্থীদের বিপুল উৎসাহ সেই সব মূর্তির ভঙ্গিমা নকল করে ছবি তুলতে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayথাই সংস্কৃতির সঙ্গে খুব গভীরভাবে সংযুক্ত ভারতীয় হিন্দু পুরাণ৷ তারই প্রতিফলন প্রাসাদের অন্দরমহলে দেওয়ালচিত্রে থাই শৈলীতে আঁকা রামায়ণের ছবি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayবুদ্ধদেবের মন্দির আছে রাজপ্রসাদের মধ্যেই৷ সেখানে অন্তরের শ্রদ্ধা জানাবার সুযোগ পান দর্শনার্থীরা৷ সুগন্ধি ধূপ, দীপকাঠি এবং পদ্মফুল রাখা থাকে সেজন্য৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayমূল রাজপ্রাসাদ থেকে আলাদা, কিন্তু একই চত্বরে আছে ইওরোপীয় স্থাপত্যরীতির প্রশাসনিক ভবন, যা এখনও সামরিক দপ্তর হিসেবে সক্রিয়৷ এগুলি পর্যটকদের আওতার বাইরে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayরাজশাসন সে অর্থে আর নেই থাইল্যান্ডে, কিন্তু রাজকীয়তা আর আভিজাত্য থেকে গেছে রাজপ্রাসাদের প্রতিটি কোণে৷ নিজেদের ঐতিহ্যের এতটুকু অযত্ন করেন না থাই নাগরিকরা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay