পরিস্থিতি অনেকটা কয়েক মাস আগের বাংলাদেশের মতো৷ থাইল্যান্ডেও সরকার বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে নির্বিচার হামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ এমনকি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না৷ এ পর্যন্ত মারা গেছে কমপক্ষে তিনটি শিশু৷
বিজ্ঞাপন
তায়াকম ইয়োস উবন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘সবার কাছে আমি হাত জোড় করে বলছি, এসব বন্ধ করুন, আমার সন্তানই যেন হয় এমন নিষ্ঠুর ঘটনার শেষ দৃষ্টান্ত, থাইল্যান্ডের মাটিতে এমন যেন আর না ঘটে৷'' ৩৩ বছর বয়সি তায়াকমের দুটি সন্তান মারা গেছে গ্রেনেড হামলায়৷ ৪ আর ৫ বছরের দুটি শিশু৷ প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে অংশ নিতে যায়নি, সরকার সমর্থকদের মিছিলেও ছিল না তারা৷ খালার সঙ্গে ব্যাংককের একটি মলে গিয়েছিল খাওয়া-দাওয়া করতে৷ কেএফসিতে খেয়ে তিন চাকার অটোরিক্সা ‘টুকটুক-' এ করে ফেরার পথেই গ্রেনেড হামলা৷ হামলায় আহত শিশু দুটো আর বাঁচতে পারেনি!
তায়াকমের সন্তান দুটোকে নিয়ে টুকটুক তখন সরকারবিরোধীদের এক সমাবেশস্থলের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল৷ আগের দিন, অর্থাৎ শনিবারও সরকারবিরোধীদের এক মিছিলে হামলা হলে কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচ বছর বয়সি এক শিশু মারা যায়৷ থাইল্যান্ডে সরকারপন্থি এবং বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ একেবারে নতুন কিছু নয়৷ চলমান আন্দোলনে এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত এবং ৭০০-র মতো মানুষ আহত হয়েছে৷ কিন্তু হামলায় শিশু নিহত হবার মতো ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি৷
বিভিন্ন দেশের শিশুদের লেখা শেখার কৌশল
বিভিন্ন দেশে শিশুদের শেখার ধরণ ভিন্ন ভিন্ন৷ জার্মানিতে এই হেমন্তেই শিশুদের লেখা শেখার একটি নতুন নিয়ম চালু হয়েছে৷ কোন দেশের শিশুদের কীভাবে লেখায় হাতে-খড়ি হয়, চলুন সে বিষয়ে জানা যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চীন: যত তাড়াতাড়ি লেখা শেখা যায়, তত ভালো
চীনে তিন বছর বয়স হলে বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেনে পাঠানো হয় অক্ষরজ্ঞান শেখার জন্য৷ তবে শিশুরা ঠিকমতো লেখা শিখতে শুরু করে ছয় বছর বয়সে৷ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাচ্চাদের দশ হাজার অক্ষর শিখে ফেলতে হয়, যা বেশ কঠিন৷ পরে যা শিখতে হয় তার তেমন কোনো নির্ধারিত নিয়ম নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাপান: স্কুল ফাইনাল শেষ হওয়া পর্যন্ত
ক্লাস ওয়ান শেষ হওয়া মানেই কিন্তু লেখা শেখা শেষ নয় জাপানে৷ সেখানে ক্লাস নাইন পর্যন্ত সিলেবাসেই থাকে নির্ধারিত কিছু অক্ষর শেখার নিয়মকানুন৷ জাপানে লিখতে পারার জন্য একজনকে মোটামুটি ২১০০ অক্ষর জানতে হবে৷ জাপানে লেখা জানার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়, তা না হলে কোনো না কোনো অক্ষর খুব সহজেই ভুলে যেতে পারে যে কেউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিশর: একটি ‘নতুন’ ভাষা
মিশরের বাচ্চাদের লেখা শেখার সাথে সাথে একটি নতুন ভাষাও শিখতে হয়৷ কারণ সেখানে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে৷ যার ফলে, সেখান থেকে শুদ্ধ আরবি ভাষাকে আলাদা করা বেশ অসুবিধা৷ এছাড়া, সেখানকার কোনো স্কুলে ক্লাসে প্রতি ৮০ জন করে ছাত্র থাকে৷ ফলত লেখাপড়ার মান নীচু হয়৷ এর জন্য অনেক ছাত্র কখনোই ঠিকমতো লিখতে বা পড়তে পারে না৷
ছবি: Fotolia/Ivan Montero
মরক্কো: শুধু আরবি ভাষা নয়
বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন মরক্কোর স্কুলে বাচ্চারা শুধু আরবি ভাষা শিখতো৷ তবে ২০০৪ সাল থেকে এর পরিবর্তন হয়েছে৷ তখন থেকেই ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাদেরও হিব্রু ভাষার পাশাপাশি তামাসিখট ভাষাও শিখতে হয়৷ গ্রামাঞ্চলে অক্ষরজ্ঞান নেই এবং শুধু হিব্রু ভাষায় কথা বলে, এ রকম মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ ২০১১ সাল থেকে তামাসিখট ভাষাকে সেখানকার স্বীকৃত ভাষা হিসেবে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
ছবি: picture alliance/Ronald Wittek
পোল্যান্ড: শূন্য থেকে শুরু
পোল্যান্ডে স্কুল শুরু হয় ক্লাস ওয়ান থেকে নয়, শূন্য থেকে৷ স্কুলে যাবার আগেই প্রতিটি শিশুর শূন্য ক্লাসে বা কিন্ডারগার্টেনে যাওয়া বাধ্যতামূলক এবং তখন খেলার ছলে বাচ্চাদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়া হয়৷ অবশ্য ঠিকমতো লেখা শেখা শুরু হয় ক্লাস ওয়ান থেকেই৷ তবে কোনো কোনো অক্ষর খুব ভালো করে শিখতে বা মনে রাখতে হয়, কারণ সেগুলোর উচ্চারণ প্রায় একই রকম৷ এক্ষেত্রে বাংলার ‘ন’ এবং ‘ণ’ অক্ষরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/PAP
সার্বিয়া: ভাষা এক, লেখা দু’রকম
সার্বীয় ভাষা সিরিলিক এবং ল্যাটিন অক্ষরে লেখা হয়, তাই বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই একসাথে দু’রকম লেখা শিখতে হয়৷ ক্লাস ওয়ানে শিখতে হয় সিরিলিক অক্ষর, তারপর ল্যাটিন৷ কয়েক বছর পর ছাত্ররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা কোন ভাষাকে প্রাধান্য দিতে চায়৷
ছবি: DW/D. Gruhonjic
জার্মানি: শুনে শেখা
২০ বছর আগে থেকেই এই সিস্টেম বা মাধ্যমে বহু স্কুলে লেখা শেখানো হয়ে থাকে৷ শেখার সুবিধার জন্য বোর্ডে একটি জানালার ছবির পাশে শুধু ‘জ’ বা ঘড়ির পাশে ‘ঘ’ লেখা হয়৷ বাকিটা শিখতে হয় শুনে শুনে৷ সমালোচকদের অভিযোগ, এভাবে অনেক বাচ্চার পক্ষেই ঠিকমতো লেখা শেখা সম্ভব নয়৷ তবে এই নিয়মে পড়া শেখার ব্যাপারে কিন্তু তাড়াতাড়ি সাফল্য এসেছে৷
ছবি: Grundschule Harmonie
7 ছবি1 | 7
রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় ইংলাক সিনাওয়াত্রাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ সরকার এবং বিরোধীদলের মধ্যে আলোচনা হওয়াটা জরুরি – এই মত প্রকাশ করে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখনই আমাদের আলোচনার উদ্যোগ নেয়া উচিত৷ দু'পক্ষকে অবশ্যই পরস্পরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বন্ধ করতে হবে৷''
কিন্তু ইংলাকের পদত্যাগ ছাড়া সংকট নিরসন সম্ভব বলে আপাতত মনে হচ্ছেনা৷ আট বছর আগে তাঁর বড় ভাই থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যূত করে সেনাবাহিনী৷ ২০১০ সালে শুরু হয় গণআন্দোলন৷ থাকসিন সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসায় প্রায় দু'মাস অচল ছিল ব্যংককের জনজীবন৷ তখন সহিংসতায় কমপক্ষে ৯০ জন মারা যায়৷
তিন বছর আগের সেই আন্দোলনের কারণেই নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসতে পেরেছেন ইংলাক৷ কিন্তু ক্ষমত্যাচ্যূত হবার পর দেশান্তরী হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন আর ফিরতে পারেননি৷ দেশে ফেরানোর জন্য তাঁকে সব অভিযোগ থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল ইংলাক সরকার৷ এর প্রতিবাদেই কয়েকমাস ধরে চলছে সরকার বিরোধী আন্দোলন৷
বিরোধীদের দাবি, ইংলাকের পদত্যাগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন৷ দু'পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় সহিংসতা বেড়েই চলেছে৷ এ পরিস্থিতিতে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মনেই উঁকি দিচ্ছিল সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা৷ তবে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল প্রায়ুথ চান-ওচা জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনী দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না৷ সংকট নিরসনের জন্য দু'পক্ষের আলোচনার ওপরই জোর দিয়েছেন তিনি৷