থাইল্যান্ডে এখন ক্ষমতায় সামরিক শাসক৷ ছয়মাস আগে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জেনারেল প্রায়ুথ চান-ওচা৷ তারপর থেকে দেশটির মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বলে মনে করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ৷
বিজ্ঞাপন
এক বিবৃতিতে সংস্থাটির এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘সামরিক শাসনের অধীনে থাইল্যান্ডে মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে৷ অভ্যুত্থানের ছয়মাস পর এখন সে দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, গণমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে এবং বিরোধীদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে৷''
সামরিক শাসনের বিরোধিতা করতে থাইল্যান্ডের জনগণ ‘দ্য হাঙ্গার গেমস' চলচ্চিত্রতে দেখানো তিন আঙুলের ‘স্যালুট' চিহ্ন ব্যবহার করেন কিংবা জনসম্মুখে মুখের ওপর হাত রাখেন৷ অনেকে এভাবে ছবি তুলে ফেসবুকেও প্রকাশ করেন৷ তবে সামরিক শাসনের কারণে এরকম প্রতিবাদকারীদের দুবছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে৷
ব্যাংকক: দুটি প্রতিবাদ আন্দোলনের গল্প
তিন বছর আগে রাজপথের আন্দোলনে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইংলাক সিনাওয়াত্রা৷ ব্যাংককের রাজপথ আবার বিক্ষোভে উত্তাল৷ এবার ইংলাকের অপসারণের দাবিতেই চলছে উত্তুঙ্গ আন্দোলন৷ ছবিঘরে থাকছে দুটি আন্দোলনের মিল-অমিল৷
ছবি: DW/C. Johnson
‘দাস সেনা’ থেকে ‘সেলফি আর্মি’
শাসকের অত্যাচার ক্রীতদাসের মতো মেনে না নিয়ে থাইল্যান্ডের মানুষ আন্দোলনে নেমেছিল ২০১০ সালে৷ প্রতিবাদের ভাষা প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে দিতে ব্যবহার করেছিলেন মুঠোফোন৷ ২০১৪ সালে ব্যাংকক আবার উত্তাল৷ ‘টেক স্যাভি’ তরুণ সমাজ এবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাজপথ থেকে তুলে দিচ্ছে ছবি৷এখানে ব্যাংককের এমবিকে শপিং সেন্টারের সামনে থেকে ছবি তুলে ফেসবুক-টুইটারে দেয়ায় ব্যস্ত ইংলাক-বিরোধী আন্দোলনকারীরা৷
ছবি: DW/C. Johnson
বাড়ি যখন দূরে, বাড়ি যখন কাছে
২০১০ সালের আন্দোলনে দূর দূরান্তের গ্রাম থেকেও ইংলাকের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলে এসেছিলেন ব্যাংককে৷ লাল জামা পরে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল এক ‘লাল জামা পরিবার’৷ ফুটপাতে রাত কাটাতে হয়েছে তাঁদের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আগুনে গরমে৷ এবার একটু ভিন্ন৷ বেশিরভাগ আন্দোলনকারীই থাকেন ব্যাংকক বা ব্যাংককের আশেপাশে৷ রাতে তাঁরা ফিরে যেতে পারেন নিজের ঘরে, ২০১০ সালের মতো এমন দৃশ্য এখন তেমন একটা দেখা যায় না৷
ছবি: DW/C. Johnson
আরেকটি অন্ধকার দিন?
বোমা বিস্ফোরণ কিংবা গুলি বর্ষণের ঘটনা সত্ত্বেও সব দলের সব নেতাই এবার সামরিক অভিযান কিংবা দোকান, বিপণিবিতান, থিয়েটার বা এটিএম বুথ পোড়ানো এবং লুটপাট রুখতে সদা তৎপর৷ ২০১০ সালের মতো এমন কিছু এখনও হয়নি৷ প্রশ্ন হলো, জনতার এমন আপাত ধৈর্যশীলতা কতদিন বজায় থাকবে?
ছবি: DW/C. Johnson
দৃশ্যমান পরিবর্তন
২০১০ সালের আন্দোলনে ব্যাংককের রাজপথ যেন হয়ে উঠেছিল পল্লীমেলার উৎসব৷ এবার দেখা যাচ্ছে আধুনিক শহুরে জীবনের সংস্কৃতি, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার৷ ঝলমলে আলোকসজ্জা, রক সংগীতে থাইল্যান্ডের কিংবদন্তি ব়্যাং রকেস্ট্রা, কিংবা জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ফ্লাই’-এর নেড়ে-মাথা ভোকালের গান – কী নেই সেখানে! রাজপথের আন্দোলন, আন্দোলনকে ঘিরে জমে ওঠা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – সবই সরাসরি দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে৷
ছবি: DW/C. Johnson
ধ্বংসের চিত্র
২০১০ সালের ছবি৷ তখন সামরিক অভিযান চলছে৷ অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক আন্দোলনকারী৷ এদিক-ওদিক থেকে আসছে স্নাইপারের গুলি, জেন শপিং সেন্টার পুড়ছে, ধোঁয়ায় ঢাকা চারপাশ – ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতেও অকুতোভয় এক আন্দোলনকারী হেঁটে চলেছেন৷ চার বছর পর তাঁর প্রতিপক্ষরাই নিয়েছেন রাজপথের দখল৷ লাল জামা সরকারের পতন চান তাঁরা৷
ছবি: DW/C. Johnson
কৃষক বনাম সেলিব্রিটি
২০১০ সালের আন্দোলনে ব্যাংককের রাজপথ ছিল মূলত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা কৃষকদের দখলে৷ ইংলাকবিরোধী আন্দোলনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডিজে-রা৷ দেশ বরেণ্য অনেক সেলিব্রিটিই রাজপথে সময় কাটাচ্ছেন জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে, কিংবা নানাভাবে রাজা ভূমিপলের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ এবং ইংলাক সরকারের বিদায় কামনা করে৷
ছবি: DW/C. Johnson
সরকার থেকে বিরোধী
ইংলাক সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রধান নেতা সুথেপ থাউংসুবান৷ চার বছর আগে তিনি ছিলেন ইংলাকের পাশে৷ ইংলাক সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন তিনি৷
ছবি: DW/C. Johnson
যানচলাচল বন্ধ
একটি বিষয়ে দুটি আন্দোলনেই খুব মিল৷ ২০১০ সালের মতো এবারের আন্দোলনকারীরাও বিক্ষোভ জানাতে নেমে এসেছেন রাজপথে৷ ফলে ব্যাংককের বড় একটা অংশে যানচলাচল প্রায় বন্ধ৷ তবে এরই মাঝে ফুটপাতে দেখা যাচ্ছে জীবনের নানা রং৷ আন্দোলনকারীদের জন্য টি-শার্ট, টুপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্রের পশরা নিয়ে বসেছেন খুদে ব্যবসায়ীরা৷ আশোপাশের দোকানপাটও খোলা৷
ছবি: DW/C. Johnson
8 ছবি1 | 8
অভ্যুত্থানের নেতা ও বর্তমানে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারের সমালোচনা করা অগ্রহণযোগ্য৷ একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে গণতন্ত্র ও নির্বাচন চেও না৷ এটা ঠিক সময় নয়৷'' এরপর সামরিক শাসনের মেয়াদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যতদিন প্রয়োজন ততদিন বলবৎ থাকবে৷''
থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রকে কটাক্ষ করে কিছু বলা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ৷ দেশটির সামরিক সরকার বিরুদ্ধবাদীদের দমন করতে প্রায়ই এই আইন ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ এইচআরডাব্লিউ-র৷ এই আইন লঙ্ঘনের দায়ে সামরিক আইনে দু'জনের বিচার হয়েছে এবং সামরিক আদালত হওয়ার কারণে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাচ্ছে না৷
ক্ষমতায় গিয়ে সামরিক শাসক গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগও বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ এইচআরডাব্লিউ-র৷