থানায় যুবকের মৃত্যু, ফুটেজ সংরক্ষণের নির্দেশ হাইকোর্টের
১৭ নভেম্বর ২০২৩
আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় এক যুবকের মৃত্যু নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট জানালো, থানার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
ওই যুবক অশোক সাউয়ের বিরুদ্ধে অভিোযোগ- তিনি চুরি করা মোবাইল কিনেছেন। পুলিশ তাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। সেসময় তার মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, পুলিশেরমারে তার মৃত্যু হয়েছে।
মৃতের ভাইপো বিজয় জানিয়েছেন, অশোকের স্ত্রী বিকেলে থানায় গিয়ে স্বামীর দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। তারপর তিনি থানা থেকেই ফেসবুক লাইভ করেন। এ নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। কলেজ স্ট্রিটের ব্যবসায়ীরা পথ অবরোধ শুরু করেন। অশোকের দোকান কলেজ স্ট্রিটে। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ এ নিয়ে কোনো বয়ান দেয়নি।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই যুবকের ব্রেন হেমারেজ হয়ে মৃত্যু হয়েছে।
বিজেপি নেত্রী ও আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল এই মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। শুক্রবার তার শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে, অশোক সাউয়ের মৃতদেহ পুলিশের মর্গ থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে। সেটা এমনভাবে রাখতে হবে, হাইকোর্ট চেয়ে পাঠালেই যেন তা কোর্টে পেশ করা যায়। ফুটেজে কোনোরকম বদল করা চলবে না।
অশোক সাউয়ের পরিবারও এই মামলায় শামিল হতে চেয়েছে। তারা আবার অশোকের দেহের নতুন করে ময়নাতদন্ত করার দাবি তুলেছে। অশোকের স্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি থানায় গিয়ে অশোকের দেহে মারের চিহ্ন দেখেছিলেন।
গভীর রাতে উর্দি পরা চারজন আমতার সারদা দক্ষিণ খান পাড়ায় ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে গিয়ে তিনতলা থেকে ফেলে তাকে হত্যা করে৷ অভিযোগটা পুলিশের বিরুদ্ধেই৷ আনিসের পরিবারের দাবি-নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নিহত আনিসের শোকাচ্ছন্ন বাড়ি
খাঁ খাঁ করছে বাড়ি৷ সব থেকেও যেন কিছু নেই৷ ২৮ বছর বয়সি প্রতিবাদী তরুণ আনিস খানের হত্যার বিচারের দাবিতে সরব তার পরিবার৷ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি ৷ তবে দোষীরা এখনও অধরা৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
আনিসকে হারানো পরিবার
আনিসকে হারিয়ে দিশেহারা তার পরিবার৷ অনেকদিন ধরে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছিল৷ বিষয়টি ২৩ মে চিঠি লিখে জানানো হয়েছিল পুলিশকে৷ তারপর বারবার নিরাপত্তা চেয়েছেন, কিন্তু পুলিশের কোনো সাড়া পাননি আনিস৷ তাকে হারানোর ব্যথা অপরাধীদের বিচার হলে কিছুটা লাঘব হবে বলে মনে করে তার পরিবার৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিচারের দাবিতে সোচ্চার, অনড় সালেম খান
আমতার সারদা দক্ষিণ খান পাড়ায় আনিসের বাড়ি৷ আনিসের বাবা সালেম খানের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে উর্দি পরা এক পুলিশ অফিসার তার বুকে বন্দুকের নল ধরেন এবং অন্য তিনজন সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যান৷ তারপরই তিনতলা থেকে হত্যা করা হয় আনিসকে৷ ঘটনার পর অনেকবার ফোন করেছেন পুলিশকে৷ পুলিশ এসেছে ছয় ঘণ্টা পরে৷ সন্তানহারা সালেম খান এখন চান শুধু সিবিআই তদন্ত এবং হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এই সেই ঘটনাস্থল
তিনতলার এই ঘর থেকে আনিসকে নীচে ফেলে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের৷ এখনও কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না পরোপকারী, প্রতিবাদী ছেলেটি আর নেই৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সুবিচারের দাবিতে লড়াই
‘সিট’ সদস্যরা মঙ্গলবার দু’বার আনিসের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন৷ তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুলিশের তদন্ত নয়, তারা চান সিবিআই তদন্ত৷ কারণ, পুলিশের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই৷ তদন্তকারী দলের সদস্যরা আনিসের মোবাইল ফোনটি চাইলে সালেম খান জানান, তিনি শুধু আদালত বা সিবিআই-এর মোবাইলটা দিতে চান, অন্য কারো কাছে নয়৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাড়ির সামনে পুলিশি নিরাপত্তা
২০২১ সালের মে মাস থেকে নিরাপত্তা চেয়ে অনেকবার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন আনিস৷ জানিয়েছিলেন, তার বাড়িতে হামলা হয়েছে, হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ আনিসের মৃত্যুর পর বাড়িতে অবশেষে পুলিশ এসেছে৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সাসপেন্ড তিন পুলিশ
সেই রাতে এলাকায় টহলের দায়িত্বে থাকা তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ তবে আমতা থানার কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ অথচ আনিস থানার কাছেই নিরাপত্তা চেয়েছিলেন, হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা সালেম খানও আমতা থানার কর্মকর্তাদের সহায়তাই চেয়েছিলেন বারবার৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রতিবাদ দফায় দফায়
ছাত্রনেতা আনিস খানের হত্যআকারীদের বিচার চেয়ে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা৷ রাস্তায় নেমেছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’
সোমবার ভাষা দিবসের দিনও হত্যার বিচার চেয়ে পথে নেমেছিলেন প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর-সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা৷ তাদের অনেকের প্রশ্ন- ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হলে, বিরোধী রাজনীতি করলে কি বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও থাকবে না?
ছবি: Satyajit Shaw/DW
‘আমার নাম আনিস খান’
১৫ বছর আগের রিজওয়ানুর রহমানের স্মৃতি যেন ফিরে এলো৷ কোনো রাজনৈতিক দলের পতাকা ছাড়াও দেখা গেল ‘নাগরিক মিছিল’৷ তাদের হাতের পোস্টারে লেখা, ‘আমার নাম আনিস খান৷’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশের বাধা
কলকাতার রাজপথে দফায় দফায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে আনিস হত্যার বিচার চেয়ে৷ ছাত্র সংগঠনগুলোর বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় আন্দোলনকারীদের৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রতিবাদ তীব্রতর
বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ৷ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু তার পরেও প্রতিবাদের ঝড় অব্যাহত৷ কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
12 ছবি1 | 12
হাইকোর্ট জানিয়েছে, অশোকের পরিবার এই মামলায় শামিল হতে পারবেন। তার জন্য তাদের দ্রুত প্রয়োজনীয় হলফনামা করতে হবে। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার আবার শুনানি হবে। তখন বিচারপতিরা পরিবারের বক্তব্য শুনে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।
সরকারি আইনজীবীর যুক্তি
রাজ্য সরকারের আইনজীবী আদালতে বলেন, অভিযুক্তকে চুরির ফোন থানায় জমা দিতে বলা হয়েছিল। তাতে তিনি সম্ভবত খুবই নার্ভাস হয়ে পড়েন।
তিনি দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের বিরোধিতা করে আরো দাবি করেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। ব্রেন হেমারেজ হয়ে অশোক সাউয়ের মৃত্যু হয়েছে। এরপর দ্বিতীয়বার মনাতদন্তের প্রয়োজন নেই।
মামলাকারীর বক্তব্য
মামলাকারী আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ''পোস্ট মর্টেমে বলা হয়েছে, মারপিটের কোনো চিহ্ন নেই। কাউকে একটা চড় মারলেও সে পড়ে মরে যেতে পারে। চড় মারার চিহ্নও থাকে না। আর কোনো মানুষ নার্ভাস হলে একটা ধাক্কায় পড়েই মারা যেতে পারে। ব্রেন হেমারেজও হতে পারে। সেটা তো স্বাভাবিক মৃত্যু হলো না।''
প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, ''সেজন্য আমরা বলেছি, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট মেনে নিচ্ছি। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ রাখতে হবে। আজ সরকারি উকিল নাকি বলছেন, ফুটেজে অডিও নেই। সেটাও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের বিরোধী। অডিও ও ভিডিও দুইটিই থাকতে হবে।''
প্রিয়াঙ্কা বলেন, 'অডিও 'কেন নেই, ওরা সেটা জানান। ফুটেজ হার্ড ডিস্কে প্রিজার্ভ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সংস্থা সিএফএসে যাচাই করতে হবে। না হলে বুঝতে পারব না, পুলিশ চড় মেরেছিল নাকি ধাক্কা মেরেছিল? বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি হবে। সেদিন আমরা বলবো, কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তদন্তের ভার দেয়া হোক। তারা দেখবে, হর্ড ডিস্ক থেকে কিছু ডিলিট করা হয়েছে কি না।''
পুলিশ হেফাজতে অনেত মৃত্যু
পশ্চিমবঙ্গে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। গত সেপ্টেম্বরে হাওড়ায় পুলিশি হেফাজতে একজনের মৃত্যু হয়। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের মারে তার মৃত্যু হয়।
সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যু ও তীব্র বিতর্ক
সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু বগটুইকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের। তারপর সিবিআই, পুলিশ, পরিবার মিলিয়ে সরগরম রাজ্য।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বগটুইকাণ্ড
গত ২১ মার্চ বীরভূমের বগটুইতে ঘটেছিল নৃশংস ঘটনা। একাধিক বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। বাড়ি বাইরে থেকে আটকে দেয়া হয়। পুড়ে মারা যান অনেকে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বা সিবিআই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
লালন শেখের মৃত্যু
গত সোমবার সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যু হয়। তার দেহ বাথরুমের শাওয়ার থেকে ঝুলতে দেখা যায়। সিবিআই বলছে, গলায় গামছা জড়িয়ে লালন আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তার পরিবারের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআই অফিসে নিরাপত্তার প্রশ্ন
সিবিআই অফিসে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফ। অভিযোগ, লালনের মৃত্যু যখন হয়েছে, তখন সেখানে মাত্র একজন সিআইএসএফ জওয়ান ছিল। মঙ্গলবার লালনকে আদালতে তোলার কথা ছিল। দুই সিবিআই কর্মকর্তা গিয়েছিলেন আদালতে। প্রশ্ন উঠছে, এত ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন ছিল?
ছবি: Subrata Goswami/DW
মৃত্যু নিয়ে এফআইআর
শেখের মৃত্যু নিয়ে পুলিশের এফআইআরে সিবিআইয়ের সাতজন অফিসারের নাম আছে। সিবিআইয়ের ডিআইজি, এসপি, গরুপাচার নিয়ে তদন্তকারী অফিসারদের নাম আছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে। সিবিআই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশ ও সিবিআই
লালন শেখের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ফরেনসিকের অফিসারেরা সিবিআই অফিসে গিয়ে বাথরুম দেখেছেন। শাওয়ার থেকে ঝুলে আত্মহত্যা সম্ভব কি না, সেটাও তারা খতিয়ে দেখেছেন। সিআইডি-র আইজি ও অন্য অফিসাররা সিবিআই দপ্তরে গিয়েছিলেন। তারা সিবিআইয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শৌচাগার দেখেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
লালনের স্ত্রীর অভিযোগ
লালনের স্ত্রী রেশমা শেখ জানিয়েছেন, সিবিআই বলতো, লালনকে মারধর করে বড় মাথার নাম বের করবে। লালনকে সোমবার বাড়িতে নিয়ে আসে সিবিআই। লালন তখন স্ত্রীকে জানায়, ''আমাকে শেষবার দেখে নাও।'' থানায় তার উপস্তিতিতে এফআইআর হয়েছিল বলে রেশমা জানিয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রাস্তায় বিক্ষোভ
সিবিআইয়ের হেফাজতে লালনের মৃত্যুর পর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। টায়ার পোড়ানো হয়েছে। প্রচুর নারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআই বনাম রাজ্য সরকার
সিবিআই আদালতে অভিযোগ করেছে, রাজ্য সরকার চাইছে না, তারা রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তদন্তের কাজ করক। তাই রাজ্যের মদতে তাদের সাতজন অফিসারের নামে এফআইআর করা হয়েছে। অন্যদিকে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, সিবিআইকে বিজেপি যখন ব্যবহার করে, তখন তো প্রশ্ন উঠবেই। বিজেপি বলছে, কাকে ধরে আনতে হবে, কবে ধরতে হবে। সিবিআই নয়, তদন্ত করছে বিজেপি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আদালতের প্রস্তাব
কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্ন, লালন শেখের হত্যার তদন্ত বর্তমান কোনো বিচারক বা বিচারপতির তত্ত্বাবধানে হলে সরকার বা সিবিআইয়ের আপত্তি আছে কি? সিবিআই বলেছে, তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু রাজ্য সরকার চায়, সিআইডি তার মতো তদন্ত করুক। আর সিবিআই যে সব মামলার তদন্ত করছে, তা যথারীতি করে যাক।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিতর্ক বাড়ছে
বগটুইকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা নিয়মিত বিবৃতি দিচ্ছেন। বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। এই ঘটনাকে সামনে এনে সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, এই মৃত্যুতে কার লাভ তা সহজেই অনুমান করা যায়। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু হলে প্রশ্ন উঠবেই। কংগ্রেসের দাবি, বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
গত আগস্টে মুর্শিদাবাদে পুলিশের হেফাজতে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।বলা হয়, সে এক পুলিশ কর্মীর বাড়িতে চুরি করেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবল বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি ছিল, পুলিশ তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
২০২২ সালের আগস্টে কলকাতার আজাদগড়ে একজন তরুণ দোকানদারকে পুলিশ থানায় পিটিয়ে মেরে ফেলে বলে অভিযোগ উঠেছিল। ২০২০ সালে পুলিশ হেফাজতে একজন ৫৩ বছর বয়সির মৃত্যুর পর তিনজন সাব ইন্সপেক্টরকে সাসপেন্ড করা হয়।
এছাড়া ছাত্রনেতা আনিস খানকে পুলিশ ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল বলে তার পরিবারের অভিযোগ। আনিসের মৃতদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল৷
কেন এমন ঘটনা?
প্রবীণ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারতেই পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সবসময় যে পুলিশ ইচ্ছে করে করে, তা নয়।''
আশিস মনে করেন, ''আমাদের সিস্টেমের মধ্যেই থার্ড ডিগ্রি বলে একটা বিষয় ঢুকে গেছে। স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য পুলিশ মারধর করে এই অভিযোগ অনেক পুরনো। কখনো কখনো মারের পরিমাণ বেশি হলে, বা কেউ অসুস্থ থাকলে তারা মারা যান।''
আশিস আরো বলেন, ''আমাদের দেশে পুলিশও প্রবল চাপের মধ্যে থাকে। রাজনৈতিক চাপ তো আছেই, তার উপর কাজের চাপ অত্যন্ত বেশি। ফলেও এই চাপেরও একটা প্রভাব থাকে।''