থানায় নিয়ে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে বাংলাদেশে তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ সাড়ে ছয় বছর আগের ঘটনার এই মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়েছে বুধবার৷
বিজ্ঞাপন
নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে কোনো মামলায় দেশে এটাই প্রথম রায়৷ তিন পুলিশ সদস্যকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তা এই আইনে সর্বোচ্চ সাজা৷
২০১৪ সালের সাত ফেব্রুয়ারি গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন জনিকে থানায় নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ সাত অগাস্ট জনির ভাই রকি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ‘নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে’ এই মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্য হলেন পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান খান, এএসআই রাশেদুল ইসলাম, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু৷ তাদেরকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডও দেয়া হয়েছে৷ অর্থদণ্ডের টাকা দিতে না পারলে আরও ছয় মাস জেল খাটতে হবে তাদের৷ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ বুধবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
অর্থদণ্ড ছাড়াও আসামীদের প্রত্যেককে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নিহতের পরিবারকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে । এর বিরুদ্ধে কোন আপিল করা যাবে না।
মামলার বাকি দুই আসামি পুলিশের ‘সোর্স’ রাশেদ ও সুমনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ সেই সঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও দিতে হবে তাদেরকে৷
কী ঘটেছিল
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, সাত ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুর-১১ নম্বর সেক্টরে ইরানি ক্যাম্পে বিল্লাল নামে এক ব্যক্তির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান গিয়েছিলেন জনি ও তার ভাই রকি৷
পুলিশের সোর্স সুমন মাতাল অবস্থায় অনুষ্ঠানে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করলে জনি তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন৷ ঝগড়ার এক পর্যায়ে জনি সুমনকে চড় মারেন৷ এর আধা ঘণ্টা পর এসআই জাহিদসহ কয়েকজন পুলিশ অনুষ্ঠান থেকে জনিকে ধরে থানায় নিয়ে যান৷
অভিযোগে বলা হয়, ‘‘জনিকে পল্লবী থানার হাজতে নিয়ে এসআই জাহিদসহ অন্য আসামিরা হকিস্টিক, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে এবং জনির বুকের ওপর উঠে লাফায়৷ জনি পানি চাইলে জাহিদ তার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেন৷’’
নির্যাতনে জনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা গেছেন বলে জানান চিকিৎসকরা৷
ঢাকার মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলার প্রতিবেদন জমা দেন। তাতে তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই সোর্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়৷
এফএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
গত জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানিতে পুলিশ কেন, কখন গুলি করে
জার্মানিতে পুলিশে গুলি করার প্রবণতা বাড়ছে৷ তাতে আহত এবং নিহত হওয়ার ঘটনাও বাড়ছে৷কেন বাড়ছে? পুলিশ কোন কোন পরিস্থিতিতে গুলি করতে পারে? বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/F. Bensch
পুলিশের গুলি করার প্রবণতা বাড়ছে
জার্মানির বিল্ড পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে পুলিশের মাঝে গুলি করার প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে সারা দেশে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল মোট ৫৬টি ঘটনায়, ২০১৯ সালে এমন ঘটনা ৬৭টিতে গিয়ে ঠেকে৷ ওই ৬৭টি ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়৷ পাঁচ বছর আগের তুলনায় ২০১৯ সালে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Scholz
সম্প্রতি ব্রেমেনে যা ঘটেছে
গত ৩ জুলাই জার্মানির ব্রেমেন শহরে পুলিশের গুলিতে এক ব্যক্তি আহত হন৷ হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়৷ বলা হচ্ছে, ছুরি হাতে ওই ব্যক্তি এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালালে বাধ্য হয়েই তাকে গুলি করা হয়৷ ঘটনার তদন্ত চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
গেলজেনকির্শেনের ঘটনা
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গেলজেনকির্শনেও পুলিশের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়৷ পুলিশের ভাষ্য, ৩৭ বছর বয়সি ওই ব্যক্তির সম্ভবত মানসিক সমস্যা ছিল, ছুরি হাতে তিনিও পুলিশের ওপর হামলা চালাতে উদ্যত হলে তাকে চারবার গুলি করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/IDA NewsMedia/R. Werner
পুলিশের অস্ত্র
স্বাভাবিক অবস্থায় দায়িত্ব পালনের সময় সব পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পিস্তল থাকে৷ তবে কখনো কখনো রিভলভার এবং রাইফেলও সঙ্গে নিতে পারেন তারা৷ এছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে লাঠি এবং পিপার স্প্রে, এমনকি কোনো কোনো রাজ্যে সঙ্গে স্টানগানও রাখতে পারেন৷ তবে সব পরিস্থিতিতে যখন-তখন গুলি করা আইনসম্মত নয়৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
কখন গুলি করতে পারে পুলিশ?
সন্দেহভাজনকে বাগে আনার বা শান্ত করার বাকি সব চেষ্ট ব্যর্থ হলেই কেবল গুলি করতে পারে পুলিশ৷ ভিড়ের মধ্যে গুলি করার আগে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হয়৷ কোনো ব্যক্তির গায়ে সরাসরি গুলি চালানোর আগে তাকে সতর্ক করতে অন্য কোনো বস্তুর ওপর গুলি চালানোর নিয়মও আছে কোনো কোনো রাজ্যে৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
বিশেষ প্রশিক্ষণ
আইন অনুযায়ী কখন গুলি করা যাবে তা বোঝাতে পুলিশকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ কোনো পুলিশ গুলি চালালে ঘটনার পর তার মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখা হয়৷ অনেক সময় গুলি চালানো পুলিশ কর্মকর্তা অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করে৷ গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি নিহত না হলেও এমন হয়ে থাকে৷ এমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে মনরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়৷