1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

থানা-লুটের অস্ত্রে নিরাপত্তাঝুঁকিতে জনজীবন

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৯ আগস্ট ২০২৪

পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে দামদর করার সময় ধরা পড়েছে তরুণ৷ থানা-লুটের অস্ত্র নিয়ে টিকটক করতে গিয়ে প্রাণ গেছে যুবকের৷

ঢাকার একটি থানার সামনে ভাঙচুর হওয়া পুলিশের গাড়ি পাশে দুইজন নিরাপত্তাকর্মী
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চার শতাধিক থানা থেকে লুট হয়েছে কয়েক হাজার অস্ত্র ও গোলাবারুবদ৷ ছবি: Fatima Tuj Johora/REUTERS

এমন পরিস্থিতিকে জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ আরো বলছেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু এখন সময়ের দাবি৷

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির দিন গত ৫ আগস্ট নিরাপত্তা দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়৷ সারা দেশের চার শতাধিক থানা থেকে লুট হয় পুলিশের কয়েক হাজার অস্ত্র ও গোলাবারুবদ৷ শুধু পুলিশের অস্ত্র নয়, থানায় জমা থাকা সাধারণ মানুষের অস্ত্রও খোয়া গেছে৷ কিছু ফেরত পাওয়া গেলেও অধিকাংশই উদ্ধার হয়নি৷

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, সোমবার বিকেল পর্যন্ত লুন্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে ৮২৬টি ফেরত পাওয়া গেছেথ৷ এর বাইরে ২০ হাজার ৭৭৮ রাউন্ড গুলি, ১ হাজার ৪৮২টি টিয়ারসেল ও ৭১টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে কী পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ খোয়া গেছে, তার কোনো পরিসংখ্যান এখনো করতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর৷ খুব শিগগিরই এই তালিকা করা সম্ভব হবে বলে ডয়চে ভেলের কাছে আশা প্রকাশ করেছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর৷ তিনি বলেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত সারা দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের ৮২৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে৷ উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে৷ নিকটস্থ থানায় অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি আমরা৷’’

ঢাকার ৮০ ভাগ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে: মাইনুল হাসান

This browser does not support the audio element.

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-ও পুলিশের লুট হওয়া ৯৭টি অ স্ত্র, ৬ হাজার ৫৮৫ রাউন্ড গোলাবারুদ ও ২৮টি ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে৷ অপরাধ বিশেষজ্ঞদের দাবি, শিগগির অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু করা প্রয়োজন৷ এ ক্ষেত্রে যৌথ অভিযান শুরু করতে পারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ অন্যথায় দেশে খুন, ডাকাতি, অপহরণ, চুরি ও ধর্ষণের মতো বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যেতে পারে৷ এরই মধ্যে লুট হওয়া অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা সামনে এসেছে৷

গত ১২ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের তখনকার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ৭ দিনের মধ্যে লুট হওয়া অস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘আগামী সোমবারের (১৯ আগস্ট) মধ্যে অস্ত্র জমা না দিলে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরু হবে৷ তখন অস্ত্র পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ যদি জমা না দেন, তাহলে দুটি অপরাধ গণ্য হবে৷ একটি অবৈধ অস্ত্র, আরেকটি সরকারি নিষিদ্ধ অস্ত্র আপনাদের হাতে৷ আন্তর্জাতিক আদালতেও যাওয়া যেতে পারে৷ এই অস্ত্র তারা কোথায় পেলো৷ যদি ভালো চান, তাহলে এই অস্ত্রগুলো ফেরত দিন, না হলে আমরা হান্টিং (খোঁজা) শুরু করবো৷’’

অর্থাৎ, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার ছিল অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন৷ যারা অস্ত্র জমা দেয়নি, তাদের গ্রেপ্তারে কি এখনই পুলিশ অভিযান শুরু করবে? ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমশিনার মাইনুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা মেট্টোপলিটন এলাকার ৮০ ভাগ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে৷ অনেকেই সেনাবাহিনীর কাছে, র‌্যাবের কাছে, আমাদের থানাগুলোতে, এমনকি ফায়ার সার্ভিসের কাছেও অস্ত্র জমা দিয়ে গেছেন৷ এখন আমাদের একটি তালিকা করতে হবে৷ এরপর উদ্ধার অভিযানের বিষয়৷ তবে এখনই আমরা অভিযানের কথা ভাবছি না৷ অভিযান শুরু করতে হলে আমাদের কিছু প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে৷’’

গ্রাফিতিতে ঐক্যের বাংলাদেশ

02:22

This browser does not support the video element.

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত অভিযানের ব্যাপারে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি৷ কেবল তো সময় শেষ হলো৷ ফলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে৷ পাশাপাশি উর্ধ্বতনদের কাছ থেকে এখন নতুন কোনো নির্দেশনা আসেনি৷’’

গত ৯ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘‘সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন থানা ও কারাগার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটপাটের কিছু ঘটনা ঘটে৷ এক্ষেত্রে কারো কাছে রক্ষিত এ ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ, অথবা এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকলে দ্রুত নিকটস্থ সেনাক্যাম্পে জমা অথবা যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো৷’’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ৪টি বাদে সব থানাই কম-বেশি আক্রান্ত হয়েছে৷ হামলা ঠেকাতে ও নিজেদের জীবন বাঁচাতে থানায় অবস্থান করা পুলিশ সদস্যরা ছুঁড়েছেন নির্বিচারে গুলি৷ এতে হতাহতও বেড়েছে৷ এসব হামলায় পুলিশেরও ৪৪ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন৷ এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন ও যাত্রাবাড়ি থানায় ১৭ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন৷ অন্যরা সংঘর্ষের সময় প্রাণ হারিয়েছেন৷

সম্প্রতি ফেনী মডেল থানা থেকে লুট হওয়া একটি পিস্তল বিক্রির সময় ধরা পড়েন মো. রুবেল (২৯) নামে এক যুবক৷ ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘‘১৪ আগস্ট রাতে ফেনী শহরের শাহীন একাডেমি এলাকায় এক ক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষির সময় পিস্তলসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন রুবেল৷ শুধু একটি নাইন এমএম পিস্তল নয়, রুবেলের কাছ থেকে ১৪ রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিনও উদ্ধার করা হয়৷’’

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র জমা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা৷ লুট হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি গ্যাসগান, চায়না রাইফেল, সিগন্যাল লাইট ও শোল্ডার সিগন্যাল লাইট ছিল৷ সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বলেন, ‘‘ছাত্র আন্দোলনের সময় হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানায় আন্দোলনকারীরা আক্রমণ করে৷ ওই সময় কয়েকটি অস্ত্র লুটের ঘটনাও ঘটে৷ অস্ত্রগুলোর মধ্যে দুটি রাস্তায় ভেঙে ফেলেন তারা৷ সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে কয়েকজন হাটিকুমরুল ইউনিয়নের পাঁচলিয়া এলাকার ইউপি সদস্য শাহ আলীর কাছে জমা রাখেন৷ অস্ত্রগুলো ইউপি সদস্য ও আন্দোলনে যুক্ত কামরুল হাসান এবং নাজমুল হাসানসহ কয়েকজন ছাত্র সলঙ্গা থানায় এসে জমা দেন৷’’

অবৈধ অস্ত্র যে কারও কাছে থাকাই বিপদজ্জনক: নুরুল হুদা

This browser does not support the audio element.

এদিকে ফরিদপুরের সদরপুর থানা থেকে লুট করা অস্ত্র নিয়ে তিন বন্ধু টিকটক ভিডিও করতে গিয়ে ‘অসাবধানতাবশত' গুলিবিদ্ধ হয়ে পলাশ হোসেন (১৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়৷ গত ১২ আগস্ট ঢাকা নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পলাশ৷ গত ৬ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হন তিনি৷

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র সাধারণ মানুষ বা অপরাধীদের হাতে থাকা কতটা বিপজ্জনক জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অবৈধ অস্ত্র যে কারো কাছে থাকাই বিপজ্জনক৷ কারো কাছে অস্ত্র থাকলে তার মধ্যে এক ধরনের হিরোইজম কাজ করে৷ এতে মানুষের শরীর ও জান-মালের ঝুঁকি থেকে যায়৷ এখন একটা পরিস্থিতির মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে অস্ত্র চলে গেছে৷ সরকার-ঘোষিত সময়ের মধ্যে যদি কেউ অস্ত্র জমা দিয়ে যান, তাহলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা ঠিক হবে না৷ আর কেউ যদি জমা না দেন, তাহলে অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় শাস্তির ব্যবস্থার কথা বলা আছে৷ তখন একটা অভিযান চালিয়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে হবে৷ সেটা যত দ্রুত করা যায়, ততই ভালো৷’’

তবে পুলিশের আরেকজন সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বেসামরিক লোকের হাতে পুলিশের অস্ত্র থাকা তো ঠিক না৷ কিন্তু চাইলেই তো এখন অভিযান চালানো যাবে না৷ কারণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যে ঘটনাটি ঘটে গেছে, সেটা তো বিশ্বে আর কোথাও ঘটেনি৷ ফলে পুলিশ মানসিকভাবে এখনো স্বাভাবিক জায়গায় যেতে পারেনি৷ এর জন্য সময় লাগবে৷ আবার মুখে বললেই তো অভিযান হয় না, এর জন্য তথ্য-উপাত্ত লাগে৷ সেগুলোতো এখন পুলিশের কাছে নেই৷ ফলে অস্ত্র উদ্ধার যেমন জরুরি, তেমনি পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে এনে কাজগুলো করতে হবে৷ তড়িঘড়ি করে কোনো কাজ করা ঠিক হবে না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ