দেশে সহিংসতা চলছে তো চলছেই৷ কবে থামবে? কবে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে বাংলাদেশের মানুষ? এক ব্লগার এই ‘পৈশাচিকতা’ বন্ধ করতে বলেছেন খালেদা জিয়া ও তাঁর জোটসঙ্গীদের৷ আরেকজন লিখেছেন, ‘‘শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেই সব শান্ত হবে৷’’
বিজ্ঞাপন
মাহবুবুল আলম লিখেছেন, ‘‘থামাও তোমার মানুষ পুড়িয়ে হত্যার পৈশাচিকতা৷''
শুরুতেই কুমিল্লার এক বর্বরোচিত হামলার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে প্রাণ হারালো আরও সাতজন নিরীহ সাধারণ মানুষ৷ পুড়ে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আরো বেশ ক'জন হতভাগ্য বাসযাত্রী৷ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, গতকাল ৪ঠা ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় আইকন পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি নৈশকোচে পেট্রো বোমা হামলায় সাত যাত্রী নিহত হয়েছে৷ এতে দগ্ধ ও আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন৷ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি নৈশ কোচ (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪০৮০) মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজারসংলগ্ন জগমোহনপুর নামকস্থানে পৌঁছালে বিএনপি-জামায়াতের মানুষখেকো পিশাচরা বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে৷ এতে বাসটির ভেতরে-বাইরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে৷ এ সময় বাসে ঘুমিয়ে থাকা যাত্রীরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যায়৷ নিহতরা হচ্ছে, যশোরের গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার জেলা সদরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা (বাসা- ৩৫, গোলাপ সেন্টার), হাজী রুকনুজ্জামানের পুত্র নুরুজ্জামান পপলু (৫০), তাঁর একমাত্র মেয়ে যশোর পুলিশ লাইন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা নাঈমা তাসনিন (১৫), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আবু তাহের (৩৮) ও আবু ইউসুফ (৪৫), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আসমা আক্তার (৩৮) ও তার ছেলে শান্ত (৬) এবং শরিয়তপুর জেলার ঘোষেরহাট উপজেলার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের ওয়াসিম৷ নিহতদের দেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে৷ দগ্ধদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছয়জন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন৷''
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
তাঁর মতে, ‘‘বিএনপি-জামায়াত তথা ২০ দলীয় জোটের ডাকে কথিত অবরোধ ও হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার যে পৈশাচিকতা চলছে, কোনো সভ্য মানুষ তাকে রাজনৈতিক অধিকার বলে মেনে নিতে পারে না৷ কেন না, গত ২৮ দিনের বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ ও হরতালের নামে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে৷ আর ও শত শত দগ্ধ, পুড়ে কয়লা হওয়া মানুষের চিৎকার ও তাদের স্বজনদের আহাজারিতে বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিং হোমের পরিবেশ শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে৷ এ সব নৃশংস পৈশাচিকতা দেখে দেশের সাধারণ মানুষ শোকে মুহ্যমান হয়ে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে৷ দেশব্যাপী শুরু হয়েছে বিএনপি-জামায়াত তথা ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ৷ তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমা হামলাকারী ও নাশকতাকারীদের যেখানেই ধরতে পারছে, সেখানেই গণধোলাই দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোদর্প করছে৷ এভাবেই সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠছে প্রতিরোধ৷ এর বাইরে তো প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করে যাচ্ছে৷ সারা দেশ আজ এক পাগলা হাতির পায়ের তলায় পিষ্ট হচ্ছে৷ কিন্তু তবুও থামছেনা ওদের উন্মত্ততা৷ বিএনপি নেত্রী তার বড় ছেলে তারেক রহমান, জামায়াত ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর পরামর্শ ও নির্দেশে অবরোধের পাশাপাশি একের পর এক হরতাল দিয়ে নাশকতা ও মানুষ পুড়িয়ে মারার এক নৃশংস খেলায় মেতে ওঠেছে৷''
পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে মানবতা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য বিরোধীদলের কর্মসূচিতে পুড়ছে যানবাহন, ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, মরছে মানুষ৷ হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো অনেকে এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সারি সারি পোড়া মানুষ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট এখন হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো জীবিকার তাগিদ কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষে ভরে গেছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
শিশুর কষ্ট বোঝেনা তারা!
কোলের শিশুও বাঁচতে পারছেন না জ্বালাও-পোড়াওয়ে হাত থেকে৷ প্রতিপক্ষের আদর্শকে ভুল প্রমাণ করে শ্রেয়তর আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নয়, প্রতিপক্ষকে আঘাত করে, হত্যা করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা অনেক দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ স্বাধীন দেশে নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে পোড়ানোও দেখতে হচ্ছে৷ ৩ নভেম্বর আট বছরের সুমি দাদীর সঙ্গে নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসছিল৷ জয়দেবপুর চৌরাস্তায় তাদের বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বোবা কান্না...
নির্মমতার আরেকটি ছবি হয়ে আছে মজিবরের পোড়া শরীর৷ মজিবর বাকপ্রতিবন্ধী৷ কুমিল্লার দেবিদ্বারের এক ট্রাকের হেলপার৷ পিকেটারদের বোমা হামলায় বাসের সঙ্গে তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ সবাই শুনে বুঝবে এমনভাবে কথা তিনি বলতে পারেন না, বোবা কান্নায় শুধু পারেন অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে, আর্তনাদ করতে আর এ অন্যায়ের প্রতিকার আশা করতে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মেয়েকে দেখতে গিয়ে মা হাসপাতালে
জাহানারা বেগম৷ বয়স ৫২৷ পেশা – ফেরি করে কাপড় বিক্রি করা৷ হরতাল-অবরোধ থাকলে বিক্রি কমে যায় বলেই হয়তো সেদিন কাপড় নিয়ে বাড়ি বাড়ি না ঘুরে জাহানারা গিয়েছিলেন শ্যামপুরে৷ সেখানে তাঁর মেয়ের বাড়ি৷ মেয়েকে দেখে অটো রিক্সায় ফেরার সময়েই বিপদ৷ বিরোধী দলের কিছু সমর্থক সেই অটোরিক্সাতেও ছুড়ে মারে পেট্রোল বোমা৷ সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহের মূল্য আগুনে পুড়ে চুকাচ্ছেন জাহানারা বেগম!
ছবি: Mustafiz Mamun
তালহার অসহায়ত্ব
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা৷ শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় আবু তালহা সেই থেকে ১ নম্বর বার্ন ইউনিটে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
রাজমিস্ত্রী
রাজমিস্ত্রী ও ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদের শরীর পুড়েছে গত ১২ নভেম্বর৷ সেদিন ঢাকার রায়েরবাগেও একটি চলন্ত বাসে ছোড়া হয় পেট্রোল বোমা৷ সেই থেকে তাঁরও ঠিকানা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বাসচালক
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহবাগে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো সেই বাসটি চালাচ্ছিলেন মাহবুব৷ যাত্রীদের মতো তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যু্দ্ধের সময়, অর্থাৎ ১৯৭১ সালেই জন্ম মাহবুবের৷ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশ পুড়ছে, তিনিও পুড়েছেন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ঘুমের মাঝেই আগুন...
৭ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া ফেরিঘাটে বাসে ঘুমাচ্ছিলেন হেলপার আলমগীর৷ থামানো বাসেই দেয়া হয় আগুন৷ পোড়া দেহ নিয়ে এখন তিনি হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
লেগুনার যাত্রী
১০ নভেম্বর ঢাকার লক্ষীবাজারে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো হয় একটি লেগুনা৷ লেগুনা পুড়ে শেষ, লেগুনার যাত্রী কামাল হোসেন ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন৷ তবে শরীরের ৩৫ ভাগেরও বেশি অংশ পুড়ে গেছে৷ ৩৬ বছরের এ তরুণ লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে৷ চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং সুস্থ মানসিকতার প্রতিটি মানুষের শুভকামনায় তিনি শিগগিরই হয়তো ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ কিন্তু এই দুর্ভোগ, এই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো কি কোনোদিন ভুলতে পারবেন?
ছবি: Mustafiz Mamun
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুভও ছিলেন রায়েরবাগের সেই বাসে৷ তাই ১২ নভেম্বর থেকে তিনিও পোড়া শরীর নিয়ে পড়ে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান এবং কয়েকজন বিএনপি নেতাকেই প্রধানত দায়ী মনে করেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কতৃক পেট্রোল বোমার মাধ্যমে মানুষ পুড়িয়ে মারার নির্দেশ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তাদের আন্দোলনের সাথে জনসাধারণ দূরে থাক দলের নেতাকর্মীরাই যোগ দিচ্ছে না৷ এতে দিনে দিনে বাড়ছে বিএনপির প্রতি মানুষের ঘৃণা ও ক্ষোভ৷ আর বিএনপির নেত্রীর পুত্র তারেক রহমান আইএসআই-এর পরামর্শে নাশকতা সৃষ্টির জন্য লন্ডন থেকে ফোনে যে সব আদেশ নির্দেশ দিচ্ছে, সেসব ফোনকলের রেকর্ড রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে৷ শুধু তাই নয়, রিমান্ডে যাওয়া দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারও একই কথা কথা বলছেন গোয়েন্দাদের কাছে৷ লন্ডন প্রবাসী পুত্র তারেক রহমানের কথা ছাড়া আর কারও কোনো কথা শুনেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়৷ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে এই ধরনের কথা বলেছেন রিমান্ডে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু, শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ-বিএনপির এই চার নেতা৷ লন্ডন প্রবাসী তাদের নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডে কথোপকথন রেকর্ড পরীক্ষা করেও এর সত্যতা পেয়েছেন গোয়েন্দারা৷''
লেখার শেষে তিনি লিখেছেন, ‘‘এত মানুষ পুড়িয়ে মেরেও যেন গলছে না পাষাণীর মন৷ তাই আজ আমাদের সেচ্চার প্রতিবাদের স্লোগান হোক ‘থামাও তোমার মানুষ পুড়িয়ে মারার পৈশাচিকতা'৷''
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে হারুন উর রশিদ সাগর লিখেছেন, ‘‘এ সব কিছুর কিছুই হতো না যদি হাসিনা পদত্যগ করতো৷ অবশ্য এখন পদত্যগ করলেও দেশ অনেক সহিংসতা থেকে মুক্তি পাবে৷''
বাংলাদেশে দশম সংসদীয় নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ ৫ই জানুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতার কয়েকটি ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
অবরুদ্ধ খালেদা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, তবে সোমবার তিনি বাইরে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁর গেটে তালা লাগিয়ে দেয়৷ ফলে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গেটের মধ্যেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
অবরোধ ঘোষণা
অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন৷ গুলশানের কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল৷ সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই৷ পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে৷’’
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
খালেদার কার্যালয় ঘিরে পুলিশ
প্রসঙ্গত, গত দু’দিন ধরে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷ ছবিতে পুলিশে একটি গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এভাবে আরো কয়েকটি বালু এবং ইটভর্তি ট্রাকও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Landov
গাড়িতে আগুন
রবিবার থেকেই ঢাকায় সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপিসহ বিশ দল৷ ঢাকায় একটি সিএনজি এবং মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ছবি এটি৷ বিএনপি সমর্থকরা এটা করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
পার্ক করা গাড়িতে আগুন
পার্ক করে রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিচ্ছে বিএনপির সমর্থকরা৷ ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
রাজপথে সরব আওয়ামী লীগ
পুলিশ সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন৷ বিষয়টি সমালোচনা করে ফেসবুকে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘‘...নিষেধাজ্ঞা কি শুধু বিএনপির জন্য? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো দেখি শহরজুড়ে মিছিল করছে, উল্লাস করছে, গান শুনছে, গান গাইছে৷’’ ছবিতে ঢাকায় বিএনপির এক সমর্থককে পেটাচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
‘শান্তির পথে আসুন’
এদিকে সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বিএনপি নেত্রীকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবিতে বিএনপিসহ বিশদল আন্দোলন করেছে, সেই দাবির প্রতি কোন নমনীয়তা দেখাননি তিনি৷ হাসিনা মনে করেন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়াটা বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘একতরফা’ নির্বাচন
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোন ভোটাভুটি হয়নি৷ বাকি আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটিকে ‘একতরফা’ নির্বাচন আখ্যা দিয়েছে৷