বাড়িঘর, সেতু থেকে শুরু করে যে কোনো নির্মাণ কাজই জটিলতায় ভরা৷ ভবিষ্যতে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি হয়ত এই সব কাজ আরও সহজে ও দ্রুত সেরে ফেলতে পারবে৷ একাধিক সংস্থা এখনই তার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
থ্রিডি প্রিন্টারে আস্ত সেতু
04:07
এ যেন বাতাসে তুলি চালানো! শুধু তুলির জায়গায় অত্যন্ত শক্ত ইস্পাত৷ নেদারল্যান্ডস-এর স্টার্ট আপ কোম্পানি এমএক্সথ্রিডি থ্রিডি প্রিন্টিং-এর বাজারে বিপ্লব এনে দিচ্ছে৷ তাদের প্রযুক্তির সাহায্যে ধাতু দিয়ে জটিল কাঠামো তৈরি সম্ভব হচ্ছে৷ কোম্পানির প্রতিনিধি টিম খোয়ের্টইয়েন্স বলেন, ‘‘আমরা যেভাবে রোবট ব্যবহার করি, কেউ তা করে না৷ গাড়ি বা অন্যান্য শিল্পে ইঞ্জিনিয়াররা একই কাজের পুনরাবৃত্তির জন্য রোবটদের প্রোগ্রামিং-এর পেছনে অনেক সময় ব্যয় করেন৷ আমরা অন্য পথ বেছে নিয়েছি৷ অর্থাৎ রোবটকে সর্বদা নতুন তথ্য দিয়ে চলেছি৷ ফলে রোবট প্রিন্টিং-এর প্রতিটি তথ্য তার আগেরগুলি থেকে ভিন্ন৷''
সেতুবন্ধন
এবার বড়দিনে চীনা মোটরচালকরা একটি নতুন সেতু দিয়ে কিংশুই নদী পার হতে পারবেন, যার ফলে তাদের প্রচুর সময় বাঁচবে৷ তবে বিশ্বে নামকরা সেতুর কোনো অভাব নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Xinhua/Wu Dongjun
বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম সেতু
কিংশুই ঝোলানো ব্রিজের উচ্চতা হবে ১,৩৩২ ফুট বা ৪০৬ মিটার; দৈর্ঘ্য হলো ৩,৭১০ ফুট বা ১,১৩০ মিটার৷ সারা দুনিয়ায় এর চেয়ে উঁচু ব্রিজ আছে একমাত্র ঐ চীনেই: হুবাই প্রদেশে সিদু নদীর উপরের ব্রিজ, যার উচ্চতা ১,৬৭২ ফুট বা ৪৯৬ মিটার৷ কিংশুই ব্রিজ হবার ফলে গুইইয়াং জেলা থেকে ওয়েংগান জেলা যাওয়ার পথ ১০০ মাইল থেকে কমে ২৩ মাইলে দাঁড়াবে৷
ছবি: Imago/Xinhua
পরগণা পরগণা
কিংশুই ব্রিজ তৈরি করতে খরচ পড়বে প্রায় ২৪ কোটি ডলার বা ২২ কোটি ইউরো৷ সময় লাগবে দু’বছর৷ ব্রিজ তৈরি হওয়ার ফলে জেলা সদরগুলির সাথে প্রাদেশিক রাজধানী গুইইয়াং-এর সংযোগ আরো ঘনিষ্ঠ হবে৷
ছবি: Imago/Xinhua
ওয়রেসুন্ড সেতু
আরেকটি দর্শনীয় সেতু, ইউরোপের দীর্ঘতম রেল ও রোড ব্রিজ; ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহাগেনকে সুইডেনের মালম্যো শহরের সঙ্গে যুক্ত করছে৷ ওয়রেসুন্ড ব্রিজটি সুইডেনের উপকূল থেকে প্রায় চার কিলোমিটার গিয়ে ডেনমার্কের পেবারহোম নামধারী কৃত্রিম দ্বীপটিতে গিয়ে পড়েছে৷
ছবি: picture alliance / Tetzlaft/Helga Lade
ইউরোপ আর এশিয়ার মধ্যে সংযোগ
বসফরাস ব্রিজটি তুরস্কের ইস্তানবুল শহরে অবস্থিত৷ ১৬৫ মিটার উঁচু ব্রিজটি ইউরোপকে এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে৷ ঝোলানো ব্রিজটি তৈরির কাজ শেষ হয় ১৯৭৩ সালে৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
তেহরানের তাবিয়াত ব্রিজ
ইরানের বৃহত্তম পদাতিক সেতু৷ ২৭০ মিটার লম্বা ব্রিজটি রাজধানী তেহরানের উত্তরে শহিদ মোরাদেস হাইওয়ের ওপর দিয়ে গিয়ে দু’টি পাবলিক পার্ককে যুক্ত করেছে৷ ফার্সি ভাষায় তাবিয়াত শব্দটির অর্থ হলো প্রকৃতি৷ ব্রিজটি একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে৷
ছবি: MEHR
নিউ ইয়র্কের ভেরাজানো ব্রিজ
নিউ ইয়র্কের দু’টি বরো বা পৌর এলাকা, ব্রুকলিন ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ড মধ্যে যোগসূত্র হলো ভেরাজানো ন্যারোজ ব্রিজ৷ ব্রিজটির নামকরণ হয়েছে ইটালির ফ্লোরেন্স শহরের বাসিন্দা ও অভিযাত্রী জোভানি দা ভেরাজানোর নামে৷ ভেরাজানো প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ষোড়শ শতাব্দীর সূচনায় জাহাজে করে নিউ ইয়র্ক বে আর হাডসন নদী পর্যটন করেন৷
ছবি: Getty Images
স্যান ফ্র্যান্সিস্কো গোল্ডেন গেট
বিশ্বের সবচেয়ে ‘আইকনিক’ ব্রিজ হিসেবে পরিচিত৷ ১,২৮০ মিটার লম্বা, ২২৭ মিটার উঁচু৷ স্যান ফ্র্যান্সিস্কো বে-র উপর দিয়ে ম্যারিন কাউন্টিকে উত্তরের সঙ্গে যুক্ত করছে৷
ছবি: AP
7 ছবি1 | 7
গোটা ব্যবস্থার মূলে রয়েছে একটি রোবটিক হাত, যাতে ৬টি ভাঁজ রয়েছে৷ প্রিন্টহেড-টি অনেকটা ওয়েল্ডিং টর্চ-এর মতো কাজ করে৷ ১,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তাপ সহ্য করতে পারে সেটি৷ প্রায় যে কোনো সারফেসের উপর ধাতুর বস্তু তৈরি করা সম্ভব৷ উপর-নীচ অথবা পাশাপাশি সেই কাজ করা চলে৷ খোয়ের্টইয়েন্স বলেন, ‘‘শিল্পের নানা কাজে এটা ব্যবহার করা যায়৷ ইস্পাত দিয়ে যাই তৈরি করুন না কেন, আলাদা অংশ দিয়ে তা করলে অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে৷ প্রতিবার আলাদা করে ছাঁচ তৈরি করতে হয়৷ আমরা কিন্তু প্রায় যে কোনো আকার-আয়তন প্রিন্ট করতে পারি৷''
এর মধ্যেই এই প্রযুক্তির প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে৷ যেমন স্টেনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি পথচারীদের সেতু৷ কোম্পানির সদর দপ্তর আমস্টারডাম শহরের কেন্দ্রস্থলে এটি বসানো হবে৷ শহরের প্রায় ২০০টি খালের উপর ১,২০০-রও বেশি সেতু রয়েছে৷ নতুন সেতুটি একেবারে খালপাড়েই থ্রিডি প্রিন্টিং পদ্ধতিতে তৈরি হবে৷ টিম খোয়ের্টইয়েন্স বলেন, ‘‘আমাদের আর কোনো জ্যামিতিক বাধ্যবাধকতা মানতে হয় না৷ রোবট ব্যবহারের ফলে আমরা তৈরি কাঠামো থেকেই প্রিন্ট করতে পারি৷''
এমন ত্রিমাত্রিক স্থাপত্য প্রিন্ট করার বিষয়টি সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও গুরুত্ব পাচ্ছে৷ সেখানে অবশ্য আরও হালকা বস্তু নিয়ে কাজ চলছে৷ কৃত্রিম স্যান্ডস্টোন দিয়ে কম্পিউটার জটিল ডিজাইন তৈরি করছে৷ বিশেষ অ্যালগোরিদমের সাহায্যে প্রতিটি অংশ আলাদা করে মাপা হচ্ছে৷ ‘ডিজিটাল গ্রোটেস্ক' ওয়েবসাইটের মিশায়েল হান্সমায়ার বলেন, ‘‘আধুনিক যুগের আগেও এমন জটিল স্থাপত্য ছিল৷ গির্জার বিভিন্ন শৈলিতেই তা দেখা যায়৷ তবে তখন নির্মাণকাজের জন্য অনেক সময় লাগতো৷ অনেক বছরের পরিশ্রমের পর পাথর কেটে এমন অংশ তৈরি করা যেত৷''
জার্মানির কিছু আকর্ষণীয় সেতু
আকর্ষণীয়, মজার, ঐতিহাসিক – জার্মানিতে রয়েছে এমনই কিছু ব্রিজ৷ ছবিঘরে থাকছে সে সবের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে প্রাচীন
জার্মানির সবচেয়ে প্রাচীন এই সেতুটি ট্রিয়ার শহরে মোজেল নদীর উপর অবস্থিত৷ শুরুতে এটা কাঠের তৈরি ছিল৷ এরপর রোমানরা সেটাতে পাথর আর শিলার ব্যবহার করে৷ ছবিতে যে পাথরের পিলারগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো প্রায় ১,৯০০ বছর আগের! আর উপরের অংশটায় প্রথম সংস্কার করা হয় আটশো বছর আগে আর দ্বিতীয়বার প্রায় দুশো বছর আগে৷
ছবি: imago/ARCO IMAGES
সেতুর নীচে বিস্ফোরক!
এই ব্রিজটি জার্মানির মূল ভূখণ্ডকে বাল্টিক সাগরে অবস্থিত ফেমান দ্বীপের সঙ্গে যুক্ত করেছে৷ ১৯৬৩ সালে শীতল যুদ্ধের সময় সেতুটি নির্মাণ করা হয়৷ সে সময় সম্ভাব্য আক্রমণের কথা মাথায় রেখে ব্রিজের নীচে বিস্ফোরক জমা করে রাখা হয়েছিল৷
ছবি: Fotolia/Pascal Walz
ব্রিজের সড়কের দুপাশে দোকান
এয়ারফুর্ট-এর পায়ে হাঁটা এই সেতুর দুপাশে রয়েছে গ্যালারি আর বিভিন্ন শিল্পকর্ম বিক্রির দোকান৷ প্রতিটি দোকানের অর্ধেক অংশ কাঠের তৈরি৷ প্রায় আটশো বছর আগে যখন ব্রিজটি তৈরি হয় তখন সেখানে মুদি দোকানিরা পণ্য বিক্রি করতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেতুর সড়কে ছাদ!
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ১২৭২ সালে তৈরি এই কাঠের ব্রিজটিতে ছাদ রয়েছে৷ সে সময় নির্মিত অনেক কাঠের সেতুতেই নিরাপত্তাজনিত কারণে এমনটা করা হতো৷ মজার ব্যাপার হলো এই সেতু পাড়ি দিয়ে আপনি জার্মানি থেকে সুইজারল্যান্ডে চলে যেতে পারবেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বের সবচেয়ে বড়
স্যাক্সনি ও বাভারিয়া রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত এই ব্রিজটি ইট দিয়ে তৈরি৷ এখনো পর্যন্ত ইটের তৈরি এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেতু৷ ১৮৫১ সালে নির্মিত হওয়ার সময় ব্রিজটি বিশ্বের সবচেয়ে লম্বাও ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রকৃতির মাঝে সেতু
ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই ব্রিজের অবস্থানটা কোথায়৷ ১৮৫১ সালে তৈরি হওয়া এই সেতুর কারণে পর্যটকরা এমন সব পাহাড়ি এলাকায় যেতে পারছেন না যেটা এমনিতে সম্ভব হত না৷
ছবি: Fotolia/Seewald
উপরে ট্রেন, নীচে গাড়ি
১৯৬১ সালে যখন বার্লিন প্রাচীর তৈরি হয়েছিল তখন এই ঐতিহাসিক ওবারবাউম ব্রিজটি শহরকে পূর্ব আর পশ্চিমে বিভক্ত করা সীমান্তের একটা অংশে পরিণত হয়েছিল৷ এই ব্রিজে দুটো রাস্তা রয়েছে৷ উপর দিয়ে চলে ট্রেন আর নীচ দিয়ে গাড়ি৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
পানি ব্রিজ!
ফেসবুকের কল্যাণে অনেকের কাছেই পরিচিত এই ছবিটি৷ এটি মাগডেবুর্গ ওয়াটার ব্রিজ৷ পানির ওপর স্থাপিত এই সেতুর রাস্তাও পানির! অর্থাৎ এই সেতু দিয়ে চলে জাহাজ৷ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০০৩ সালে৷ মূলত পণ্যবাহী জাহাজের রুট সংক্ষিপ্ত করতে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে৷
ছবি: AP
সেতু এক, দেশ তিন!
নাম ‘থ্রি কান্ট্রিস ব্রিজ’৷ বুঝতেই পারছেন তিন দেশে এই সেতুর অবস্থান৷ জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড৷ ২৪৮ মিটার দীর্ঘ এই ব্রিজটি শুধু পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল চালিয়ে পার হওয়া যায়৷ কোনো ধরনের গাড়ির প্রবেশ নেই সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
জুরিখের থ্রিডি প্রিন্টার দুই দিনেই সূক্ষ্ম বালু দিয়ে একের পর এক স্তর তৈরি করে৷ বিশেষ ধরনের আঠা সেই স্তরকে কৃত্রিম পাথরে পরিণত করে৷ প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি ডিজাইন আলাদা করে স্থির করা সম্ভব৷
এক্ষেত্রে বিশেষ আধারের মধ্যেই প্রিন্টিং-এর কাজ চলে৷ তবে আমস্টারডামের রোবটদের সেই বাধ্যবাধকতা নেই৷ আরও জায়গার খাতিরে কোম্পানি শহরের উপকণ্ঠে এক গুদামঘরে চলে যাচ্ছে৷ এমএক্সথ্রিডি কোম্পানির টিম খোয়ের্টইয়েন্স বলেন, ‘‘আমরা সেতু দিয়ে কাজ শুরু করছি৷ প্রথমে ছোট সেতু, কারণ আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে৷ পরে দেখতে হবে, আর কী করা যায়৷ হয়ত নতুন ও আরও বড় সেতু৷ নির্মাণের অন্যান্য কাজও হবে৷ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে হয়তো একদিন গোটা বাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে৷''
২০১৭ সালের শুরুতে আমস্টারডাম শহরের কেন্দ্রস্থলে সেতু প্রিন্টিং শুরু হওয়ার কথা৷ প্রয়োজনীয় সব অনুমতি জোগাড় করতে ততদিন সময় লাগবে৷ কোম্পানির রোবটরা এই সময়কালে অনুশীলনের সুযোগ পাবে৷