আমাদের রান্নাঘরে মাইক্রোওয়েভ ও মিক্সির মতো যন্ত্র আগেই ঢুকে পড়েছে৷ কিন্তু রান্নার কাজটা এখনো নিজেকেই করতে হয়৷ ভবিষ্যতে থ্রিডি প্রিন্টার কিন্তু সেই কাজ অনেকটাই সেরে ফেলবে৷ মানুষের কাজ যাবে কমে৷
বিজ্ঞাপন
রান্নার কাজে থ্রিডি প্রিন্টার
03:46
খাবিয়ের আর স্যার্খিও টোরেস যাকে বলে ‘স্টার শেফ'৷ বার্সেলোনা শহরে নিজেদের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় যমজ দুই ভাই নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন৷ তাজা উপকরণ ও আধুনিক প্রযুক্তিই তাঁদের সাফল্যের রহস্য৷ তাঁদের রান্নাঘরে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি রাখা থাকে৷
পোকামাকড় দিয়ে করুন সকালের নাস্তা!
পোকামাকড়ে অনেক আমিষ রয়েছে এবং এগুলো চাষ করাও সহজ৷ ফলে ভবিষ্যতে খাবারের চাহিদা মেটাতে এই পোকামাকড়ের কাছেই যেতে হতে পারে, বলছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খেতে সুস্বাদু
পোকামাকড় খেতে সুস্বাদু৷ গরু, ছাগল, ভেড়ার চেয়ে এগুলো পালতে খরচ যেমন কম পড়ে, তেমনি পরিশ্রমও হয় কম৷ এছাড়া এরা গ্রিনহাউস গ্যাসও কম উৎপাদন করে৷ তাহলে আমরা বেশি করে পোকামাকড় খাই না কেন?
ছবি: picture-alliance
পুষ্টিমানেও সেরা!
বিয়ারের সঙ্গে ভাজা তেলোপোকা আর বিচ্ছু৷ আর কি চাই! এশিয়ার অনেক দেশের মানুষের প্রিয় খাবার এটি৷ সেই সঙ্গে এই খাবার স্বাস্থ্যকরও৷ পোকো, বিশেষ করে লার্ভা বা শূককীটগুলো, একেকটি যেন আমিষের স্বর্গ! যেমন একশো গ্রাম উইপোকায় রয়েছে ৬১০ ক্যালরি – যা একটি চকলেটের চেয়ে বেশি৷ এছাড়াও এতে আছে ৩৮ গ্রাম আমিষ ও ৪৬ গ্রাম চর্বি৷
ছবি: picture-alliance/Christoph Mohr
আরও গুণ
শুধু আমিষ নয়, পোকামাকড়ে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন ও খনিজ, জানিয়েছে স্বয়ং বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, এফএও৷ সংস্থাটি সারা বিশ্বে খাবার হিসেবে পোকার জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাইছে৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়
পোকার কদর সারা বিশ্বেই৷ তবে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ অ্যামেরিকার মানুষের কাছে একটু যেন বেশিই প্রিয়৷ ছবিতে শুঁয়াপোকার একটি মেনু দেখা যাচ্ছে৷ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার এটি৷
ছবি: picture-alliance/africamediaon
জার্মানিতেও রেস্টুরেন্টে পোকার আগমন
ছবিটি মেক্সিকোর একটি রেস্তরাঁর৷ পোকার এই স্ন্যাকটি সবার খুব পছন্দের৷ তবে জার্মানিতেও নতুন চালু হওয়া অনেক রেস্তরাঁয় ঘাসফড়িং, শুঁয়াপোকা ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে৷
ছবি: AP
পোকা ভাজা
কড়া করে ভাজা গুবরে পোকা, শূককীট ও পঙ্গপালের এই মেনুটি কলম্বিয়ায় একটি জনপ্রিয় খাবার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফড়িংয়ের গ্রিল
ফ্রান্সের একটি নামকরা খাবার কোম্পানি গ্রিল করা ফড়িংয়ের এই মেনুটি অনলাইনে বিক্রি করছে৷ প্রতি ৩০-গ্রামের একটি বোতলের দাম নয় ইউরো বা ৯০০ টাকা!
ছবি: Ynsect
আহারযোগ্য এক হাজার পোকা
বিশ্বে প্রায় এক হাজার রকমের পোকা রয়েছে যেগুলো আহারযোগ্য৷ এর বেশিরভাগই যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর৷ তাই পোকা কিভাবে আরও বেশি পরিমাণে খাওয়ার যোগ্য করা যায় সে চিন্তা করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
স্যার্খিও এই প্রথমবার খাবারের থ্রিডি প্রিন্টার পরীক্ষা করে দেখছেন৷ তাতে পায়েস ‘প্রিন্ট' হচ্ছে৷ এই উদ্ভাবন রন্ধন শিল্পের ভবিষ্যতকে কতটা বদলে দেবে, স্যার্খিও এখনই সেটা বলতে পারছেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, অনেক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে যাচ্ছে৷ বিষয়টা দেখেশুনে, এক্সপেরিমেন্ট করে, বিশ্লেষণ করতে হবে৷''
উপকরণ হতে হবে মাখামাখা৷ যেমন বিস্কিট তৈরির মালমশলা৷ ক্যাপসুলে ভরে ফেললেই হলো৷ তারপর বিস্কিট প্রিন্ট হবে৷ এবার শুধু ওভেনে বেক করতে হবে৷ প্রিন্ট করা পিৎসার উপরেও পছন্দমতো টপিং দিতে হয় ও তা ওভেনে ঢোকাতে হয়৷
স্পেনের এক স্টার্টআপ কোম্পানি ‘ফুডিনি' নামের খাবার তৈরির এই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার উদ্ভাবন করেছে৷ থ্রিডি প্রিন্টার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন লিনেট কুচমা৷ তিনি বলেন, ‘‘এটাকে আসলে অ্যাসেমব্লি ডিভাইস হিসেবে ভাবাটাই সহজ৷ ইটালিয়ান রাভিওলি-র কথাই ধরুন৷ বাজারে এত পাস্তা তৈরির মেশিন থাকা সত্ত্বেও বাসায় কে আর সেটা তৈরি করে! অর্থাৎ যারা তাজা খাবার পছন্দ করে, তাদের জন্যই এটা বিক্রি হয়৷ কিন্তু রেস্তোরাঁর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খাবারের ডিজাইনের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি৷''
খাবার গ্রহণে অ্যালার্জি
লোভনীয় সব খাবার দেখলে কারই বা খেতে ইচ্ছে না করে? তবে সেসব খাবার খেতে মন চাইলেও অনেকের শরীর তা গ্রহণ করে না বা সেসব খাবারে তাদের অ্যালার্জি হয়৷ এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খাওয়া কি শুধু জীবন ধারণের জন্য?
খাওয়া ছাড়া যেমন কোনোভাবেই মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি মানুষ যে শুধু বেঁচে থাকার জন্য খায় সেটাও নয়৷ জীবন ধারণ করা ছাড়াও নানারকম মজার মজার খাবার মানুষ উপভোগ করতে চায়৷ কিন্তু সেটা যে সবার পক্ষে সম্ভব নয়৷ কারণ অনেক মানুষেরই রয়েছে বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি৷
ছবি: imago
বাদাম, ফল এবং ল্যাকটোজ
চকলেট, আপেল কিংবা দই, যাই হোক না কেন শতকরা ১৭ জন জার্মান এসব খাবার উপভোগ করতে পারে না৷ অর্থাৎ এসব খাবারের অন্তত একটিতে হলেও তাদের অ্যালার্জি আছে৷ এক সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷ জার্মানির স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানি টেকনিকার জানিয়েছে, যাদের খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের মধ্যে শতকরা ২০ জন বাদাম, ২৯ জন বিভিন্ন ফল এবং ২৫ জন ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারে না৷
ছবি: Fotolia/ChristArt
শিক্ষিতদেরই বেশি অ্যালার্জি
একটি ব্যাপার লক্ষ্যণীয় যে, শিক্ষার হার যত বেশি, অ্যালার্জি রোগীর সংখ্যাও তত বেশি! না, অবাক হবেন না৷ কথাটার মানে হলো, শিক্ষিত ও সচেতন মানুষরাই ডাক্তারের কাছে যেয়ে বুঝিয়ে বলতে পারেন এবং এসব বিষয়ে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন তাদের অ্যালার্জি থাকার কথা, বলেন জার্মানির পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নিকল বাটেনফেল্ড৷ কম শিক্ষিত মানুষ বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না বা ডাক্তারের কাছে যায় না৷
ছবি: Fotolia/W. Heiber Fotostudio
অ্যালার্জি টেস্ট
কোন খাবারে কার কতটুকু অ্যালার্জি আছে সেসব পরীক্ষা করারও রয়েছে নানা নিয়মকানুন৷ কোন খাবারে কতটা অ্যালার্জি সেটার ওপর নির্ভর করে রোগীর শারীরিক সুস্থতা৷ অনেকের বেলায় দেখা যায় শারীরিকভাবে একজন মানুষ যতটা অসুস্থ, সে পছন্দের খাবার না খেতে পেয়ে মানসিকভাবে তার চেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুধের অ্যালার্জি
ফলমূল বা দুধে ছোটবড় অনেকেরই অ্যালার্জি দেখা দেয়৷ কেউ হয়ত শুধু দুধ খেতে পারে না, কিন্তু দুধে তৈরি বা রান্না করা খাবার ঠিকই খেতে পারে৷ নিকল বাটেনফেল্ড বলেন, যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের অবশ্যই বুঝেশুনে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়া উচিত৷ তাছাড়া ল্যাকটোজ ফ্রি খাবারও পাওয়া যায়৷
ছবি: Colourbox/E. Atamanenko
ফল বা সবজি
ফল বা সবজির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, কারণ কেউ হয়তো কাঁচা ফল খেলে অসুস্থ বোধ করেন৷ কিন্তু একই ফল সেদ্ধ বা অন্য কিছুর সাথে মিশিয়ে খেলে হয়ত অসুবিধা হয় না৷
ছবি: picture alliance/chromorange
ডাক্তারের পরামর্শ
কারো অ্যালার্জি আছে কিনা সবসময়ই তা অ্যালার্জি টেস্টে ধরা পড়বে তেমন নয়, বিশেষ করে খাবারের ব্যাপারে৷ খাওয়ার পর অনেকের শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, আবার কারো বেলায় ওপর দিয়ে কিছুই বোঝা যায় না৷ আর সেটাই ভয়ের কারণ৷ তাই, যদি কেউ কিছু খাওয়ার পর ভালো বোধ না করে বা একেবারে সহ্য না হয় তাহলে তার সেটা না খাওয়াই উচিত৷ কারণ সেক্ষেত্রে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে৷ বিষয়টাকে মোটেই হালকাভবে নেওয়া ঠিক নয়৷
ছবি: Fotolia/ lassedesignen
তৈরি বা রেডিমেড খাবার
তৈরি খাবার বা ফাস্টফুড-এ ব্যবহার করা হয় প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষক, যা অনেকের শরীরেই সহ্য হয় না বা অ্যালার্জি হয়৷ ফাস্টফুড খেতে তরুণ প্রজন্ম খুবই আগ্রহী৷ তাই এদিকেও নজর দেওয়া উচিত৷ তৈরি খাবার শুধু ওজনই বাড়ায় না শরীরে অন্যান্য সমস্যাও দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
চলতি বছরেই এই যন্ত্র বাজারে আসছে৷ দাম ধরা হয়েছে ১,০০০ ইউরো৷ রাঁধুনি নিজে কম্পিউটারে খাবারের ডিজাইন স্থির করবেন৷ এ ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার প্রায় কোনো সীমাই নেই৷ প্রিন্টার দিয়ে হোক, বা প্রিন্টার ছাড়া হোক – খাবারের স্বাদ রাঁধুনির গুণের উপরই নির্ভর করে৷ যেমন প্রিন্টার এই কেকের স্বাদে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না৷ মাস্টার শেফ স্যার্খিও টোরেস বলেন, ‘‘ভাগ্য ভালো, আমাদের হাত লাগাতেই হবে৷ যন্ত্র স্বাদ বাড়াতে পারে না, কারো জন্য রান্নাও করে না৷ আমরাই রাঁধুনি হিসেবে থাকবো৷ প্রিন্টার শুধু খাবারের চেহারা সুন্দর করতে ও কঠিন ডিজাইন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা খালি হাতে করা কঠিন৷''
টোরেস ভাইদের রেস্তোরাঁর মেনু-কার্ডে রয়েছে এই পদটি৷ থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে এটিকে আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা চলছে৷ স্যার্খিও বলেন, ‘‘আমরা সবজিটাকে ঘোরাতে পারি, তাতে কিছু আঁকতেও পারি৷ অথবা ঝোল দিয়ে তার উপর ডিজাইন করতে পারি৷ প্র্যাকটিস করতে আমরা একটা প্রোটোটাইপ অর্ডার করেছিলাম৷ সেটা কাজে লাগানোর অনেক আইডিয়াও আমাদের রয়েছে৷ হাতেনাতে কিছু তৈরি করে দেখতে চাই, ঠিকমতো হচ্ছে কিনা৷ সফল হলে তাজ্জব বনে যেতে হবে৷''
সবজির পেস্ট দিয়ে তৈরি রেস্তোরাঁর নাম – সবে প্রিন্ট করা হয়েছে৷ একদিন এমন খাবার টেবিলে আসবে৷ প্রথম থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়েছে৷
বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে৷