বহু প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্য়াহার করে নিচ্ছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনের আগে সংঘবদ্ধ হচ্ছে বিরোধী শক্তি।
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সে প্রথম পর্বের নির্বাচনে ৩১ দশমিক চার শতাংশ ভোট পেয়ে শক্তিশালী জায়গায় অতি দক্ষিণপন্থি দল এনআর। এই পরিস্থিতিতে রোববার সেখানে দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত পর্বের ভোট। এই ভোটই নিশ্চিত করবে পার্লামেন্টে কারা ক্ষমতায় আসবে। এই পরিস্থিতিতে অতি দক্ষিণপন্ধিদের হারাতে জোটবদ্ধ হচ্ছে ফ্রান্সের বিরোধী শক্তি। বামপন্থি এবং মধ্যপন্থি দলগুলি একত্রিত হয়ে একটি রিপাবলিকান জোট তৈরি করেছে অঘোষিতভাবে। সেই জোটকে শক্তিশালী করতে এবং ভোট সংঘবদ্ধ করতে প্রায় ২০০ জন প্রার্থী নিজেদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তারা চান, দক্ষিণপন্থি বিরোধী ভোট একই জায়গায় যাক।
প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর মধ্য়পন্থি দল এবং বামপন্থিরা একত্রিত ভাবে ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে প্রথম পর্বে। তাদের আশা দ্বিতীয় পর্বে এর চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে তারা পার্লামেন্টে নিম্নকক্ষের ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে পারবে।
ফ্রান্সে উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের প্রতিবাদ
ফরাসি সংসদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ব়্যালির জয়ের প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী৷ তারা নতুন বামপন্থি জোটের উপর আস্থা রাখতে চাচ্ছেন৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
রাজপথে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী
ফ্রান্সে রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচনের আংশিক ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন শহরে উগ্রডানপন্থি ন্যাশনাল ব়্যালির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ৷ প্যারিসের রাস্তায় এই নারী এক ‘ঘৃণাপূর্ণ যুগের’ বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন৷ পপুলিস্ট দলটি নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৩৩ শতাংশের মতো ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছে৷
ছবি: ARNAUD FINISTRE/AFP/Getty Images
আতশবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ
বামপন্থি জোট ‘নিউ পপুলার ফ্রন্টের’ আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক মানুষ প্যারিসের ‘প্ল্যা দ্যুঁ লা রিপাবলিকে’ জড়ো হন৷ নির্বাচনে ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে এই জোট৷ কিছু বিক্ষোভকারী সেখানকার স্মৃতিস্তম্ভে উঠে ব্যানার উড়িয়ে এবং আতশবাতি জ্বালিয়ে উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ বামদলের শীর্ষ নেতারাও সেই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন৷
ভোটাভুটির প্রথম দফায় ন্যাশনাল ব়্যালি জিতেছে৷ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি শিবির ২১ শতাংশের কম ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে৷ ইউরোপের দেশটিতে ল্য পেনের ডানপন্থি পপুলিস্টদের বিরুদ্ধে লড়ছে বামপন্থি এবং মধ্যপন্থি দলগুলো৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
‘বিতৃষ্ণা, দুঃখ এবং ভয়’
ন্যাশনাল ব়্যালির জয় দেখে অনেক ফরাসি ভোটার হতাশ হয়েছেন৷ ৩৩ বছর বয়সি নাজিয়া খালদি প্যারিসে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আমি বিক্ষোভে অভ্যস্ত নই৷’’ তারপরও তিনি তার ‘বিতৃষ্ণা, দুঃখ এবং ভয়ের’ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন৷
ছবি: ARNAUD FINISTRE/AFP/Getty Images
পরিষ্কার বার্তা
ফ্রান্সের পশ্চিমের শহর ন্যঁতে ডানপন্থিদের উত্থানের প্রতিবাদে এক পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা৷ তাদের হাতে থাকা একটি ব্যানারে লেখা: ‘আমরা ব্যালট বাক্স থেকে যা পাবো না, রাস্তায় তা পাবো৷’ অন্য ব্যানারে লেখা: ‘দিনে পাঁচটি পুলিশ এবং নাৎসি খান’৷
ছবি: SEBASTIEN SALOM-GOMIS/AFP/Getty Images
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
ন্যঁৎ শহরে কিছু প্রতিবাদকারী মুখোশ পরা ছিলেন৷ তাদের বিক্ষোভ ভেঙে পড়লে কয়েকজন প্রতিবাদকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হন৷ পুলিশ তাদের থামাতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে৷
ছবি: SEBASTIEN SALOM-GOMIS/AFP/Getty Images
ব্যারিকেড, বোতল এবং আতশবাজি
দ্যিঁজ, লিল এবং মার্সেই শহরেও অনেক প্রতিবাদকারীকে রাজপথে দেখা গেছে৷ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ফ্রান্সের তৃতীয় বৃহত্তম শহর লিওঁতেও পুলিশ এবং বিক্ষোভাকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে বিক্ষোভকারীদের রুখতে চেয়েছে৷ আর বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে বোতল এবং আতশবাজি ছুঁড়ে মেরেছে৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন শেষ না হওয়া অবধি ফ্রান্সের জাতীয় সংসদের ৫৭৭টি আসন কীভাবে বিন্যস্ত করা হবে তা জানা যাবে না৷ এই ছবিতে যে প্রতিবাদকারীদের দেখা যাচ্ছে তারা বামপন্থি ‘নিউ পপুলার ফ্রন্টের’ উপর আশা রাখছেন৷ তবে ভোটের ফলাফলের যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে ন্যাশনাল ব়্যালি আবারো জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷ তবে দলটি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
8 ছবি1 | 8
এখনো পর্যন্ত ২১০ জন মাক্রোঁপন্থি এবং বামপন্থি প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ভোট সংঘবদ্ধ করার জন্য়ই এই কৌশল তারা নিয়েছেন। ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে আসন সংখ্যা ৫৭৭। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য় প্রয়োজন ২৮৯টি আসন। প্রথম পর্বের ভোটের পর বুথ ফেরত সমীক্ষা দেখিয়েছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তার ধারেকাছে আছে দক্ষিণপন্থি এনআর। তারাও ছোট ছোট দলগুলির সঙ্গে জোট তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।
এর আগে এনআর-এর ঝুলিতে ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ ভোট। রাতারাতি সেই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ফেলেছে তারা। প্রথম রাউন্ডের নির্বাচনে ৭৬ জন প্রার্থী ইতিমধ্যেই নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এদের অধিকাংশই অতি দক্ষিণপন্থি বা অতি বামপন্থি। বাকি ৫০১টি আসনের ভাগ্য নির্ধারিত হবে রোববার। সেখানে একেকটি আসনে তিন বা চারজন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ভোট ভাগাভাগি কমাতে ওই আসনগুলি থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন ২১০ জন প্রার্থী। তারা চাইছেন, তাদের ভোটও দক্ষিণপন্থি বিরোধী শিবিরে যাক।
বুথ ফেরত সমীক্ষায় দক্ষিণপন্থিরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তার খুব কাছাকাছি থাকছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের নেতা লা পেন জনগণের কাছে আরো বেশি সমর্থনের আর্জি জানিয়েছেন। যদি কোনোভাবে দক্ষিণপন্থিরা ক্ষমতায় চলে আসেন, তাহলে এক আশ্চর্য পরিস্থিতি তৈরি হবে ফ্রান্সে। মধ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর সঙ্গে সমঝোতা করে সরকার চালাতে হবে তাদের। কারণ, মাক্রোঁর সময় শেষ হবে ২০২৭ সালে।
বুথ ফেরত সমীক্ষার ফালফল সামনে আসার পর ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাস্তায় নেমে দক্ষিণপন্থিদের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন প্রতিবাদীরা। তাদের বক্তব্য, দক্ষিণপন্থিরা জিতে গেলে ফ্রান্সের মূল স্পিরিটটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।