উত্তর কোরিয়া একের পর এক ‘প্ররোচনামূলক' পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে বলে দক্ষিণ কোরিয়া ও অ্যামেরিকা মনে করে৷ ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার তোড়জোড় করে জোরালো তৎপরতা দেখাচ্ছে পিয়ং ইয়ং৷ এর জবাবে আপাতত আরও নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক চাপের মাধ্যমে জবাব দিতে চায় দুই দেশ৷ যেমন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জোরালো প্রস্তাব অনুমোদনের প্রস্তুতি চলছে৷
সেইসঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সমরসজ্জাও বাড়ানো হচ্ছে৷ তারই অঙ্গ হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা বসানোর কাজও এগিয়ে চলেছে৷ কয়েক দিনের মধ্যেই সেটি কার্যকর হয়ে যাবার কথা৷
মার্কিন রণতরি ও পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন প্রস্তুত রাখা হচ্ছে৷ ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা উত্তর কোরিয়াকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷
এই পরিস্থিতিতে চীনে অস্বস্তি বেড়ে চলেছে৷ উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ হিসেবে চীন এখনো সে দেশের উপর তেমন প্রভাব খাটাতে ব্যর্থ হয়েছে৷ অন্যদিকে ঘরের দোরগড়ায় এত বড় মাত্রায় মার্কিন সমরসজ্জা তাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ বিশেষ করে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা চীনের প্রতিরক্ষা কাঠামোর জন্য বিশেষ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে, কারণ, চীনের ভূখণ্ডের একটা বড় অংশ সেটির আওতায় পড়ছে৷ এ কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার সমালোচনার পাশাপাশি সব পক্ষের উদ্দেশ্যে সংযমের ডাক দিচ্ছে বেইজিং৷
এমন পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার উপর চাপ বাড়াতে নিজেরাই চাপের মুখে পড়ছে বেইজিং৷ চীনের সক্রিয় ভূমিকার কিছু লক্ষণ চোখে পড়ছে৷ গত সপ্তাহ থেকে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে পেট্রোলিয়াম সংকট দেখা দিয়েছে৷ ফলে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি ও অনেক পণ্যের যোগান কমে গেছে৷ মূলত চীনই উত্তর কোরিয়ায় জ্বালানি সরবরাহ করে৷ জ্বালানিসহ অনেক জরুরি পণ্য চীনের ভূখণ্ড থেকেই সে দেশে আসে৷ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বড় আকারে চালু থাকলেও চীন উত্তর কোরিয়ার আচরণে বিরক্ত হয়ে কিছু ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছে বলে কিছু মহল মনে করছে৷
বিশেষজ্ঞদের অনেক পূর্বাভাষ ভুল প্রমাণ করে এখনো টিকে আছে কিম জং উন-এর স্বৈরাচারী শাসনযন্ত্র৷ শুধু তাই নয়, একের পর এক সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলকে প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া৷ এই সাফল্যের রহস্য কী?
ছবি: Reuters/KCNAকোনো ব্যক্তিকে সামান্যতম হুমকি মনে করলেই পথের কাঁটা হিসেবে তাকে নিশ্চিহ্ন করতে পিছপা হন না কিম জং উন৷ সম্প্রতি তাঁর সৎ-ভাইকে যেভাবে মালয়েশিয়ায় খুন করা হয়েছে, তার পেছনে এই মনোভাব কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এর আগেও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণের দৃষ্টান্ত রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Kambayashiনিজের পারিবারিক শাসনতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখতে ঘরে-বাইরে আস্ফালন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর কিম জং উন৷ ঘরের শত্রুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, বাইরের জগতকে ক্ষেপণাস্ত্র ও আণবিক অস্ত্র দেখিয়ে ঠেকিয়ে রাখার নীতি অনুসরণ করে চলেছেন ‘মহান নেতা’৷ সেই কৌশল কাজ করছে বলেও অনেকে মনে করছেন৷
ছবি: Reuters/KCNAউত্তর কোরিয়ার অনেক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বিফল হয়েছে৷ কিন্তু একের পর এক প্রচেষ্টা জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার উপর সামরিক হামলার কথাও এতকাল ভাবতে পারেনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Yeon-Jeপ্রশ্ন ওঠে, কার্যত একঘরে হয়ে থাকা একটি দেশ কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি আয়ত্ত করছে? সেই ১৯৫০-এর দশকের মার্কিন, রুশ বা চিনা প্রযুক্তির ভিত্তিতেই উত্তর কোরিয়া তার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে আসছে৷ তাই সেই প্রচেষ্টা বানচাল করতে সাইবার হামলা চালানোরও কোনো উপায় নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kcnaআন্তর্জাতিক স্তরে নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশ উত্তর কোরিয়া সাধারণ সীমান্তসহ একাধিক কারণে চীনের উপর নির্ভরশীল৷ তবে পিয়ংইয়ং ও বেইজিং-এর মধ্যে খোলাখুলি মতবিরোধ এখন আর বিরল ঘটনা নয়৷ এমন অবস্থা সত্ত্বেও স্থিতিশীলতার স্বার্থে চীন সে দেশের প্রতি সংযম দেখিয়ে চলেছে এবং অন্যান্য দেশকেও সেই পরামর্শ দিচ্ছে৷
ছবি: MARK RALSTON/AFP/Getty Imagesউত্তর কোরিয়ার উপর প্রভাব কমে যাওয়ায় অন্যান্য দেশগুলিও আর চিনের আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছে না৷ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাই চীনের দোরগড়ায় অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েনের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ফলে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে চিনের নিজস্ব স্বার্থের ক্ষতি হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/U.S. Department of Defense/Missile Defense Agency এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এপি)