1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণ আফ্রিকার ‘বর্ন ফ্রি’ প্রজন্ম

ক্যার্স্টিন ভেল্টার / আরবি১০ মে ২০১৪

তারা দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ সমাজ৷ যাদের বলা হয় ‘বর্ন ফ্রি’ প্রজন্ম৷ দক্ষিণ আফ্রিকাকে বর্ণবাদহীন দেশ হিসাবে চেনে তারা৷ নেলসন ম্যান্ডেলার পথ ধরে একটি মুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ দেখতে চায় এই তরুণরা৷

Südafrika Born Free Generation Variante
ছবি: picture-alliance/Yadid Levy/Robert Harding

দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসীদের এক চতুর্থাংশ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণ৷ অন্যান্য দেশের তরুণদের সঙ্গে তাদের বেশ পার্থক্য রয়েছে৷ তারা ‘বর্ন ফ্রি' প্রজন্ম৷ ১৯৯০-এ দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রনায়ক নেলসন ম্যান্ডেলা সগর্বে হাত উঁচু করে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন৷ ভেঙে পড়ে জাতিভেদ প্রথা৷ অন্য এক দক্ষিণ আফ্রিকার সৃষ্টি হয়৷ এই মুক্ত সমাজে জন্ম হয় নতুন প্রজন্মের৷

নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে

‘‘আমরা মুক্ত দেশে জন্ম গ্রহণ করেছি৷ আমরা কী করবো না করবো, তা নিজেরাই ঠিক করতে পারি৷'' বলেন ২০ বছর বয়সি কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী টিফানি সিমা৷ কানে তার সোনালি দুল, মাথায় লম্বা বেণি৷ জোহানেসবুর্গ ইউনিভার্সিটিতে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি৷ জোহানেসবার্গের শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকা থেকে এসেছেন তিনি৷ মা পরিচারিকা থেকে ম্যানেজার হয়েছেন৷ টিফানির কাছে অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত৷ মা শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ভাল কিছু করার উপদেশ দিয়েছেন মেয়েকে৷ বড় চার ভাই টিফানির শিক্ষার ব্যাপারে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন৷

২০ বছর আগে অ্যাপার্থাইড বা জাতিভেদের সময় কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের সমানাধিকার বা সমান সুযোগ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না৷ ‘‘আমাদের অনেক কিছু পুনরুদ্ধার করতে হবে৷ এখনও মানুষরা বর্ণ, ভাষা ও বংশের কারণে দমনের শিকার হচ্ছেন৷ এটা অবশ্য ভাল শোনায় না যে, আমার বন্ধুবান্ধবরা সবাই কালো বর্ণের৷'' বলেন টিফানি৷

সবার সমানাধিকার

আইনত সব নাগরিকেরই সমান সুযোগের অধিকার রয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে সাদা ও কালো মানুষের জীবনযাত্রায় বেশ পার্থক্য দেখা যায়৷ আজ এটা হলো অর্থ, যা দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি করছে৷ আলেক্সান্ড্রা নাশ ও মেগান টমাস স্কুল জীবন থেকেই বন্ধু৷ তাদের অনেক কিছুই আছে৷ ‘‘আমরা শ্বেতাঙ্গ মধ্যবিত্ত কিংবা বলা যায় উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি৷'' মেগান কেপ টাউনে মিডিয়া নিয়ে পড়ছেন৷ আলেক্স স্কটল্যান্ডে মেডিকেল পড়ছেন৷

আইস-ক্যাফেতে বসে বেসরকারি স্কুল কলেজ, বিরাট বাগান, ইউরোপে ছুটি কাটানো এসব বিষয় নিয়ে গল্পগুজব করেন তাঁরা৷ আসলে তাঁরা মা-বাবার মতোই একই ধরনের পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছেন৷ শুধু বর্ণবাদ ছাড়া , যা দুজনই প্রত্যাখ্যান করেন৷

‘‘যা ঘটে গিয়েছে তাতে আমাদের হাত নেই৷ কিন্তু এখন আমাদের সামাজিক অসাম্য দূর করার ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে৷'' বলেন আলেক্সান্ড্রা৷ এই দুই বান্ধবী দরিদ্রদের জন্য কাজ করেন৷ তারা রাজনীতি সচেতন৷ নিজেদের দেশের পরিস্থিতির পরিবর্তনের ব্যাপারে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন৷ তবে এখানেও শ্রেণি বৈষম্য রয়েছে৷ ‘‘কৃষ্ণাঙ্গ বা শ্বেতাঙ্গ যাই হোক না কেন, আমার সব বন্ধু বান্ধবের আগ্রহ একই ধরনের৷ আমরা ছুটি কাটাতে যাই প্রায় একই রকম জায়গায়৷ এই দেশে ইন্টিগ্রেশন সফল, তবে তা একটি শ্রেণিতে সীমাবদ্ধ৷'' জানান আলেক্সান্ড্রা৷

আলেক্সান্ড্রা নাশ ও মেগান টমাস স্কুল জীবন থেকেই বন্ধুছবি: Kerstin Welter

ওপরে ওঠার সুযোগ রয়েছে সবার

জেফরি মুলাউডসি যে সমাজে চলাফেরা করেন, সেখানে সবাই দরিদ্র ও কালো৷ জোহানেসবার্গের সবচেয়ে পুরানো টাউনশিপ আলেক্সান্ড্রায় বাস করেন এই তরুণ৷ ধনীদের পাড়া সান্ডটোন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে৷ কয়েক হাজার মানুষ ঘেঁষাঘেঁষি করে বসবাস করেন এখানে৷

তবে ২১ বছর বয়সি জেফরি এর মধ্যেই নিজস্ব এক জগত গড়ে তুলেছেন৷ পর্যটকদের জন্য সাইকেল-ট্রিপের ব্যবস্থা করেছেন ৷ এছাড়া তরুণ ব্যবসায়ীদের একটি মেন্টরিং-প্রোগ্রামে যুক্ত তিনি৷ এজন্য মাঝে মাঝে স্যুটও পরতে হয় তাঁকে৷

‘‘আমি কখনও গায়ের রং বদলাতে পারবো না৷ কিন্তু বিত্তশালী হওয়াটা অসম্ভব নয়৷ আমার মায়ের এক সেন্টও অতিরিক্ত ছিল না৷ আর আজ আমি স্কুলের ছাত্রদের জন্য জুতাও কিনে দিতে পারি৷ '' বলেন জেফরি৷ দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনও বৈষম্য রয়েছে৷ এতো শিগগির এটা শেষ হবে না৷ তবে এতে রাগ করে লাভ নেই৷ ইতিবাচক চিন্তা করতে শিখেছে ‘বর্ন ফ্রি' প্রজন্ম৷ এই প্রজন্মের দুই তৃতীয়াংশ বেকার, সুপ্রশিক্ষণও নেই৷ কিন্তু ‘বর্ন ফ্রি' প্রজন্ম আত্মপ্রত্যয়ী৷ কঠোর পরিশ্রম করলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে এবং অ্যাপার্থাইডকে দূর করতে হলে আরো কিছুটা সময় প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা৷

বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেনছবি: Kerstin Welter

গণতন্ত্র সম্ভাবনা বয়ে এনেছে

গণতন্ত্র তাদের প্রজন্মের জন্য অনেক সম্ভাবনা বয়ে এনেছে৷ এ ব্যাপারে সাদা বা কালো, ধনী বা দরিদ্র সকলেই একমত৷ মুক্তি সংগ্রামের ব্যাপারে তাদের সরাসরি অভিজ্ঞতা নেই৷ রাজনীতিবিদরাই এখন তাদের ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক৷ কিন্তু এক্ষেত্রে তারা যা দেখছেন, তা তাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে৷ প্রতিদিন অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতি সংক্রান্ত খবরাখবর শিরোনাম হয়ে ওঠে৷

ঐক্যবদ্ধ ও সফল ‘রেনবো' জাতি হিসাবে গড়ে ওঠার স্বপ্নটা ধূলিসাৎ হতে দিতে চান না তারা৷ কেননা ‘বর্ন ফ্রি' প্রজন্ম অন্য যে কোনো জায়গার চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাতেই বসবাস করতে পছন্দ করে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ