চেনস্টোরদের ফেলে দেওয়া জামাকাপড় নিয়ে দুঃস্থ মহিলাদের স্বনির্ভর হতে শেখায় দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সংস্থা৷ প্রকল্পটির নাম ক্লোদিং ব্যাংক বা বস্ত্র ব্যাংক৷
বিজ্ঞাপন
ডার্বানের ‘ক্লোদিং ব্যাংক’-এর মহিলাদের দিন শুরু হয় নাচ ও গান দিয়ে৷ ট্রেসি গিলমোর ও তাঁর এক সহযোগী মিলে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ বড় বড় চেনস্টোরগুলো যে সব জামাকাপড় বিক্রি করতে পারে না, সেগুলো এখানে কাজে লাগানো হয়৷
ট্রেসি জানালেন, ‘‘এ সবই পুরনো স্টক, নতুন করে লেবেল লাগানো হয়েছে৷ আমাদের দাতা আর পৃষ্ঠপোষকদের খুচরো বিক্রির দোকান থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে৷ পুরনো লেবেল সরিয়ে গুদামে ঝোলানো হয়েছে, যাতে মহিলারা এসে এগুলো তাদের নিজের বিক্রির জন্য কিনতে পারেন৷ কাজেই তারা তাদের নিজেদের পণ্য নিজেরাই বেছে নিচ্ছেন৷’’
মহিলারা গুদাম খোলার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছেন৷ এখানে তারা যা সস্তায় কিনতে পাবেন, তা পরে বাইরে বিক্রি করে তাদের কিছু রোজগার হবে৷ দরজা খুললেই মহিলারা সেরা পণ্যগুলি হাত করার চেষ্টা করবেন৷ প্রত্যেকেই জানেন, তাদের খদ্দেররা কী চান৷ বস্ত্র বিপনীগুলির জন্য এ সব ফেলে দেওয়ার মাল, কিন্তু আসলে অধিকাংশ জামাকাপড়ই বেশ ভালো মানের৷
নারীর ক্ষমতায়নে বস্ত্র ব্যাংক
05:32
যখন একা
নন্সেবা মাদিকিজেলা একা সন্তান প্রতিপালন করেন৷ তিনি বললেন, ‘‘আমার টাকা ছিল না, কোথাও কোনো চাকরি পাইনি, খাবার কিনতে পারতাম না, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারতাম না, কেননা আমি একা৷’’
তাবিসা মাথান্দাবিজো-র কাহিনী অনুরূপ, তিনিও একা সন্তান প্রতিপালন করেন৷ তাবিসা বললেন, ‘‘আমি জীবনে যা হতে চেয়েছিলাম, তা হতে পারিনি৷ খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম, পরিচারিকা হিসেবে কাজ করছিলাম৷ তারপর শুনলাম ক্লোদিং ব্যাংকের কথা, এরা নাকি প্রশিক্ষণ দেয়, ব্যবসা করতে শেখায়৷ আমি চিরকালই আমার ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছি, কিন্তু কীভাবে করতে হয়, কোথা থেকে ফান্ডিং পেতে হয়, এ সব জানতাম না৷’’
ক্লোদিং ব্যাংক বিশেষ করে যে সব মায়েরা একা সন্তান প্রতিপালন করছেন, তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করে৷ দক্ষিণ আফ্রিকায় দু'বছরের কম বয়সি সন্তান প্রতিপালনরত মায়েদের ৬৮ শতাংশই স্বামী বা সঙ্গিবিহীন৷ তবুও ক্লোদিং ব্যাংকের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়, বিশেষ বিশেষ শর্ত পূরণ করতে হয়৷
কম্বোডিয়ায় নারীদের ‘শাসন’
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের মতো কাম্বোডিয়াতেও মহিলারা ঘরের পাশাপাশি বাইরের কাজও করেন সমান তালে৷ কিছু কাজ, যা একান্তই পুরুষের, তাতেও তাঁরা পিছপা নন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
হাটে-বাজারে
কম্বোডিয়ার বাজারহাটে যত বেশি পুরুষ, তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক নারী ব্যবসা সামলান৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
মহিলা প্রধান
বাজারের স্থায়ী দোকান থেকে রাস্তায় দাঁড়ানো ঠেলাগাড়িতে ফলের রসের ব্যবসা, সব জায়গাতেই মহিলাদের প্রাধান্য৷
তরুণী থেকে প্রবীণা, বিভিন্ন বয়সের মহিলারা দক্ষ হাতে মাংস কাটেন, ওজন করে তুলে দেন খদ্দেরের ব্যাগে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
8 ছবি1 | 8
ট্রেসি গিলমোর বললেন, ‘‘আমরা বিশেষ করে মায়েদের দিকে নজর দিই, যার ফলশ্রুতি দ্বিগুণ হয়৷ মায়ের ক্ষমতায়নের অর্থ সন্তানের ক্ষমতায়ন, কেননা মায়েরা সর্বাগ্রে সন্তানের শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যয় করেন৷ তারপর বাসা, থাকা-খাওয়া ইত্যাদির উন্নতির চেষ্টা করেন৷’’
প্রশিক্ষণ
প্রত্যেক মহিলাকে সপ্তাহে একদিন করে মাল আলাদা করা ও সাজানোর কাজে সাহায্য করতে হয়৷ তাঁরা পুরনো লেবেল ও দামের টিকিট ইত্যাদি সরান ও টুকিটাকি মেরামত করেন৷ ক্লোদিং ব্যাংক মায়েদের একটি দু'বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়, যার ফি তাঁরা অংশত জামাকাপড় বেচে শোধ করতে পারেন৷ মহিলারা ভালোমতো প্রস্তুতি নিয়ে স্বনির্ভরতার দিকে এগোবেন, এই হল ট্রেসি গিলমোরের ইচ্ছে৷ তিনি নিজে এক সম্পূর্ণ অন্য জগতের বাসিন্দা৷
ট্রেসির জগৎ
ট্রেসি গিলমোর ছেলেবেলায় বর্ণবৈষম্য দেখেছেন: ‘‘আমরা যে একটা স্বপ্নজগতে বাস করতাম, তা আমি স্বীকার করতে বাধ্য৷ শ্বেতাঙ্গ স্কুলে যেতাম, শ্বেতাঙ্গ সমাজে থাকতাম, আমাদের জীবন সত্যিই খুব বিচ্ছিন্ন, সুরক্ষিত ছিল৷ হাইস্কুলে যাবার পর প্রথম খেয়াল করলাম, কোথাও একটা গোলমাল আছে৷ আমাদের বাবা-মায়েরা আন্দোলনকারী ছিলেন না, কিন্তু তারা আমাদের সঠিক পথটা চিনিয়ে দিয়েছেন৷’’
ক্লোদিং ব্যাংকের দুই প্রতিষ্ঠাতা দেশে ব্যাপক সামাজিক ব্যবধানকে মেনে নিতে চাননি৷ বিশেষ করে যে সব মায়েরা একা সন্তান প্রতিপালন করছেন, তাঁরা এর শিকার হচ্ছেন, কেননা বাবাদের ৫০ শতাংশ কোনোরকম আর্থিক বা অপরাপর সাহায্য দেয় না৷ কাজেই ক্লোদিং ব্যাংকের প্রশিক্ষণে ব্যক্তিত্বের বিকাশ, ব্যবসা পদ্ধতি ও কম্পিউটারের ব্যবহার শেখানো হয়ে থাকে৷
যেখানে নারীরা দেশ শাসন করেন
বিশ্বের স্বাধীন রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৫টি৷অধিকাংশ দেশই শাসন করছেন পুরুষরা৷ তবে, নারী সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের সংখ্যা হাতেগোনা হলেও যারা আছেন তারা বেশ ক্ষমতাধর৷ চলুন দেখে নিই তাঁদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Hoslet
আঙ্গেলা ম্যার্কেল
বর্তমানে ৬২ বছর বয়সি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম নিয়োগ পান ২০০৫ সালে৷ তিনিই জার্মানির প্রথম নারী সরকার প্রধান৷ চতুর্থবারের মতো এই পদে থেকে যেতে পারেন তিনি৷ সাবেক পূর্ব জার্মানিতে বেড়ে ওঠা এক যাজকের মেয়ে ম্যার্কেল রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছিলেন৷ টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে ২০১৫ সালে ‘‘পারসন অফ দ্য ইয়ার’’ ঘোষণা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Hoslet
টেরেসা মে
টেরেসা মে হচ্ছেন মার্গারেট থ্যাচারের পর যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী৷ ৬০ বছর বয়সি সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছরের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন৷ ঐতিহাসিক ব্রেক্সিট গণভোটের পক্ষে সে দেশের জনগণ রায় দেয়ার পর তিনি ক্ষমতায় আসেন৷ তিনি ঠিক কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে৷ চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে হারলে তাঁকে বিদায় নিতে হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Tyagi
সাই ইং-ভেন
সাই ইং-ভেন হচ্ছেন ‘রিপাবলিক অফ চায়না’ বা তাইওয়ানের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট৷ ২০১৬ সালের মে মাসে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্বীপটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বেইজিং, কেননা চীন মনে করে দ্বীপটি স্বাধীন নয়৷ তবে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সে দেশের কাছে নতি স্বীকার করবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন সাই৷
ছবি: Reuters/T. Siu
এলেন জনসন সার্লিফ
৭৮ বছর বয়সি এই নারী ২০০৬ সাল থেকে লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রপতি৷ তিনি আফ্রিকার প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান৷ ২০১১ সালে সার্লিফ এবং লাইবেরিয়া ও ইয়েমেনের আরো দুই নারী শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জয় করেন৷ অহিংস পথে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সংগ্রাম এবং শান্তিপ্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করায় এই সম্মাননা দেয়া হয় তাঁদের৷
ছবি: Reuters/N. Kharmis
দালিয়া গ্রেবাউসকাইতি
লিথুনিয়ার প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান দালিয়া গ্রেবাউসকাইতি৷ কারাতে ব্লাক বেল্ট থাকায় এবং কথাবার্তায় কঠোর মনোভাব প্রকাশ করায় তাঁকে অনেকেই ‘আয়রন লেডি’ বলেন৷ ৬১ বছর বয়সি গ্রেবাউসকাইতি ২০০৯ সালে প্রথমে দায়িত্ব নেন এবং ২০১৪ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন৷
ছবি: Reuters/E. Vidal
এর্না সোলব্যার্গ
নরওয়ের সরকারপ্রধানও একজন নারী৷ ২০১৩ সালে দ্বায়িত্ব পান তিনি৷ তবে সোলব্যার্গ দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী৷ রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ে কঠোর নীতির কারণে তাঁকে ‘আয়রন এর্না’ বলা হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Wivestad Groett
বেয়াটা শিডউয়ো
পোল্যান্ডের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী বেয়াটা শিডউয়ো৷ ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে দায়িত্বে আছেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি মেয়র এবং সংসদ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/W. Dabkowski
সারা কুগোনগেলওয়া-আমাথিলা
নামিবিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী সারা কুগোনগেলওয়া-আমাথিলা ২০১৫ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন৷ তরুণ বয়সে সিয়েরা লিয়নে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে ১৯৯৪ সালে দেশে ফেরেন ৪৯ বছর বয়সি এই নারী৷ তিনি সে দেশের প্রথম নারী সরকারপ্রধান৷
ছবি: Imago/X. Afrika
মিশেল বাচিলেট
২০১৪ সাল থেকে দায়িত্বে রয়েছেন চিলির প্রেসিডেন্ট মিশেল বাচিলেট৷ তবে এটাই তাঁর প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়া নয়৷ সে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৬ থেকে ২০১০ অবধিও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Reyes
শেখ হাসিনা ওয়াজেদ
ফোর্বস ম্যাগাজিনে ২০১৬ সালে প্রকাশিত বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাশালী নারীর মধ্যে স্থান পেয়েছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ২০০৯ সাল থেকে জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্রটি শাসন করছেন তিনি৷ তবে রাজনীতিতে তিনি আছেন কয়েক দশক ধরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildfunk
কোলিন্দা গ্রাবার-কিটারোভিচ
৪৯ বছর বয়সি এই নারী ২০১৫ সালে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ অবধি সরকারের বিভিন্ন পদে, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন৷ তিনি সেদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
সালম চুবারবিশভিলি
জর্জিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন৷ ২০১৮ সালের নভেম্বরে ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Mdzinarishvili
12 ছবি1 | 12
মিলিসেন্ট
মিলিসেন্ট সেকে-র প্রশিক্ষণ প্রায় সমাপ্ত, এখন তিনি স্বাধীন ব্যবসায়ী৷ মিলিসেন্ট ক্লোদিং ব্যাংকে সস্তায় যে পোশাক-আশাক কেনেন, পরে তা ডার্বানের একটি শহরতলির রাস্তায় বিক্রি করেন৷ এভাবে তাঁর যা রোজগার হয়, তা থেকে তিনি তাঁর তিন ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাতে পারেন৷ গোড়ায় কাজটা সহজ ছিল না, কিন্তু এখন মিলিসেন্টের অনেক পরিকল্পনা: ‘‘এখন আমি আমার নিজের দোকান খোলার স্বপ্ন দেখছি, যেখানে আমি সব মালপত্র রাখতে পারব, এভাবে খোলা রাস্তায় নয়, একটা বড়সড় দোকানে৷ খুব আরামে বিক্রি করতে পারব৷’’
এই এলাকায় বেকারত্বের হার ২০ শতাংশেরও বেশি৷ মিলিসেন্ট শোনালেন, ‘‘গরিব মানে তোমার কিছু নেই, কোনো আশা নেই, শুধু কোনোমতে বেঁচে আছো, কালকের কথা ভাবার সময় নেই৷ এখানে গরিব মানে তাই৷ কাজেই ক্লোদিং ব্যাংকের প্রোগ্রামে ঢুকতে পারলে তুমি আর গরিব থাকবে না – কারণ আমরা প্রত্যেক দিন টাকা রোজগার করি৷ খেটে কাজ করি, কিন্তু রোজ টাকা পাই৷’’
দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্লোদিং ব্যাংকের পাঁচটি শাখায় মোট ৮০০ মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়৷ স্বনির্ভরতা আর নিজের ব্যবসা থেকে মিলিসেন্টের মতো মহিলারা এক নতুন ভবিষ্যতের হাতছানি দেখেন, অথবা মিলিসেন্টের ভাষায়, এক নতুন মানুষে পরিণত হন৷