বিশ্বের অর্ধেকের বেশি শিশু সংঘাত, দরিদ্রতা ও মেয়েদের বিরুদ্ধে বৈষম্য– এই তিন হুমকির যে কোনো একটির ঝুঁকিতে আছে৷ ফলে তারা ‘হঠাৎ শৈশব হারিয়ে যাওয়ার' হুমকিতে আছে বলে জানিয়েছে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’৷
বিজ্ঞাপন
শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি বুধবার ‘মেনি ফেসেস অফ এক্সক্লুশন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ এতে ১৭৫টি দেশের তালিকা তৈরি করা হয়৷ শিশুশ্রম, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া, বাল্যবিবাহ এবং অল্পবয়সে গর্ভবতী হওয়া– এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলোর ব়্যাংকিং করা হয়৷
তালিকায় বাংলাদেশ আছে ১৩০ নম্বরে৷ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত আছে ১১৩ নম্বরে, পাকিস্তান ১৪৯, শ্রীলঙ্কা ৬০, ভুটান ৯৮, মালদ্বীপ ৫২, নেপাল ১৩৮ ও আফগানিস্তান ১৬০ নম্বরে৷
তবে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে, কারণ, এখন আরও বেশি সংখ্যক শিশু স্কুলে যাচ্ছে৷ তবে শিশু, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে আরও কিছু করা সম্ভব বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷ তাদের হিসেবে, বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু এখনও স্কুল শিক্ষার বাইরে আছে৷ আর বাংলাদেশে শিশু শ্রমের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ ও বাল্যবিয়ের হার ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ বলে জানিয়েছে তারা৷ পাঁচ বছরের নীচে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি এক হাজারে ৩৪ দশমিক ২ জন৷
বিশ্ব পরিস্থিতি
প্রতিবেদন বলছে, তালিকার নীচের দিকে থাকা দেশগুলোর বেশিরভাগ মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার৷ নাইজারের নাম আছে তালিকার একেবারে শেষে৷ তার আগে আছে মালি ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের নাম৷ ‘‘এসব দেশের শিশুদের শৈশব পুরোপুরি উপভোগ করার সম্ভাবনা কম,’’ বলছে প্রতিবেদন৷
এদিকে তালিকার উপর যৌথভাবে আছে সিঙ্গাপুর ও স্লোভেনিয়া৷ জার্মানি আছে ১২ নম্বরে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অবস্থান যথাক্রমে ৩৬ ও ৩৭-এ৷
১৭৫টি দেশের মধ্যে ৯৫টি দেশ তিনটি ঝুঁকির অন্তত একটিতে উন্নতি করেছে৷ আর ২০টি দেশের শিশুরা ঐ তিন হুমকির সবগুলোরই মুখোমুখি হচ্ছে৷
বিশ্বব্যাপী শিশুদের পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন৷ এক্ষেত্রে দেশগুলোকে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) পূরণে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, সেভ দ্য চিলড্রন বাংলাদেশ)
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
বাংলাদেশে ৪৫ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷ তাদের মধ্যে ১৭ লাখের বেশি আবার কাজ করে রাজধানী ঢাকায়৷ আমাদের আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন শিশুশ্রমের কিছু চিত্র তুলে এনেছেন আপনাদের জন্য৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বেলুন কারখানায় শিশু শ্রমিক
ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের একটি বেলুন তৈরির কারখানায় কাজ করছে দশ বছরের এক শিশু৷ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৫ লাখেরও বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত, যার প্রায় ১৭ লাখেরও বেশি শিশু শ্রমিক খোদ রাজধানীতেই৷
ছবি: Mustafiz Mamun
নেই কোনো নজরদারি
কামরাঙ্গীর চরের এই বেলুন কারখানায় খোলামেলাভাবে নানা ধরনের রাসায়নিকের মাঝে কাজ করে শিশু শ্রমিকরা৷ বাংলাদেশ সরকার ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করলেও আদতে তা মানা হচ্ছে না৷ সরকারিভাবে নেই কোনো নজরদারির ব্যবস্থা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সিংহভাগই শিশু শ্রমিক
ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে কমপক্ষে দশটি বেলুন তৈরির কারখানা আছে, যেগুলোর সিংহভাগেই শিশু শ্রমিক কাজ করে৷ সড়ক থেকে একটু আড়ালে ভেতরের দিকেই কাজ করানো হয় শিশুদের৷ সপ্তাহে সাত দিনই সকাল-সন্ধ্যা কাজ করতে হয় তাদের৷ তবে শুক্রবারে আধাবেলা ছুটি মেলে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
ঢাকার কেরাণীগঞ্জে সিলভারের তৈজসপত্র তৈরির কারখানায় কাজ করে শিশু শ্রমিক আলী হোসেন৷ মারাত্মক উচ্চ শব্দের মধ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয় তাকে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ট্যানারি কারখানায় শিশু শ্রমিক
ঢাকার হাজারীবাগের একটি ট্যানারি কারখানায় বাইরে কাজ করে নোয়াখালীর আসিফ৷ বয়স মাত্র বারো৷ রাসায়নিক মিশ্রিত চামড়া শুকানোর কাজ করে সে৷ দিনে ১২ ঘণ্টারও বেশি কাজ করে সামান্য যে মজুরি পায় তা দিয়ে সংসার চালাতে মাকে সাহায্য করে আসিফ৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মায়ের সঙ্গে রাব্বি
কামরাঙ্গীর চরের একটি প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে মায়ের সঙ্গে কাজ করে চাঁদপুরের রাব্বি৷ এই কেন্দ্রের মালিক নাকি শিশু শ্রমিক নিয়োগের বিরোধী৷ মায়ের অনুরোধে রাব্বিকে কাজ দেয়া হয়েছে বলে দাবি তাঁর৷ কারণ রাব্বির মা সারাদিন খেটে যে মজুরি পান তাতে সংসার চলে না৷ সংসার চালাতে তাই কাজ করতে হচ্ছে রাব্বিকে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
হিউম্যান হলারে শিশু হেল্পার
ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী হিউম্যান হলারগুলোতে শিশু শ্রমিক চোখে পড়ার মতো৷ বাহনগুলো দরজায় ঝুলে ঝুলে কাজ করতে হয় এ সব শিশুদের৷ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকারও হয় এসব শিশুরা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ব্রিক ফিল্ডে শিশুরা
ঢাকার আমিন বাজারের বিভিন্ন ব্রিক ফিল্ডেও কাজ করে শিশু শ্রমিকরা৷ প্রতি হাজার ইট বহন করে পারিশ্রমিক পায় ১০০-১২০ টাকা৷ একটি কাঁচা ইটের ওজন কমপক্ষে তিন কেজি৷ একেকটি শিশু ৬ থেকে ১৬টি ইট এক-একবারে মাথায় নিয়ে পৌঁছে দেয় কমপক্ষে ৫০০ গজ দূরে, ইট ভাটায়৷ তাদের কোনো কর্মঘণ্টাও ঠিক করা নেই৷ একটু বেশি উপার্জনের আশায় রাত পর্যন্ত কাজ করে তারা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
লেদ কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা
পুরনো ঢাকার লালবাগের একটি লেদ কারখানায় কাজ করে ১১ বছরের শিশু রহিম৷ সারাদিন লোহা কাটা, ভারি যন্ত্রপাতি মেরামত, হাতুরি পেটানোসহ নানা রকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে সে৷