অ্যামেরিকা সফরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং। সোমবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তার। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে উত্তর কোরিয়া নিয়ে। লি জানিয়েছেন, আলোচনায় ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার প্রধান কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগ্রহ দেখিয়েছেন।
ট্রাম্প যা বললেন
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দুই প্রেসিডেন্ট। সেখানে ট্রাম্প বলেছেন, ''কিম জং উন এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমার অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক।'' শুধু তা-ই নয়, ট্রাম্প জানিয়েছেন, কিমের বোন কিম ও জংয়ের সঙ্গে তার আরো ভালো সম্পর্ক। উল্লেখ্য, কিম ও জং উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এরপরেই ট্রাম্প বলেন, ''অনেকেই মনে করেন কিম ভালো নন। আমি তা মনে করি না। আমি কিছুদিনের মধ্যেই তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী।''
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জানিয়েছেন, তিনি অ্যামেরিকার সঙ্গে একাধিক বিষয়ে সম্পর্ক তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। জাহাজ শিল্পের মতো বিষয়ে অ্যামেরিকার সহায়তা চেয়েছেন তিনি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, লি-র সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন শিল্পের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
সাগরে জাপানি বর্জ্য, চীন, কোরিয়ায় প্রতিবাদ
ফুকুশিমা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের বর্জ্য পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়ার সিদ্ধান্তের পর থেকেই চলছে প্রতিবাদ৷ সেই প্রতিবাদে কান দেয়নি জাপান৷ ইতিমধ্যে সাগরে মিশতে শুরু করেছে তেজষ্ক্রিয় পানি৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Kim Hong-Ji/Reuters
সেই ফুকুশিমা
২০১১ সালের ১১ মার্চ ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর এক সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যায় জাপানের ফুকুশিমা দালিচি পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র৷ পরিণামে তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পরে ফুকুশিমাসহ আশপাশের এলাকায়, দেখা দেয় পরিবেশ-বিপর্যয়৷
ছবি: dapd
বিষাক্ত পানি ছাড়ায় জাতিসংঘের অনুমোদন
ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র বিস্ফোরিত হলে ১৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷ এখনো সেখানে স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরেনি৷ এরই মাঝে পরিবেশের জন্য নতুন হুমকি তৈরি করতে চলেছে ফুকুশিমার বর্জ্য পানি৷ দু বছর আগে ফুকুশিমার বর্জ্য পানি সাগরে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাপান সরকার৷ গতমাসে তাতে অনুমেদান দেয় জাতিসংঘ৷ আজ (২৪ আগস্ট, ২০২৩) তাই প্রশান্ত মহাসাগরে ফুকুশিমার বিষাক্ত পানি ছাড়তে শুরু করেছে জাপান৷
ছবি: Kyodo/Reuters
দিকে দিকে প্রতিবাদ
জাপান সাগরে তেজষ্ক্রিয় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই চলছে প্রতিবাদ৷ সবচেয়ে কড়া প্রতিবাদ আসে চীন আর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে৷ দুই দেশের পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা তো বটেই, এমনকি রাজনৈতিক দল এবং অধিকার সংগঠনগুলোও জাপানের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার৷ ওপরে ১২ আগস্ট দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সৌলে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশের ছবি৷
ছবি: KIM HONG-JI/REUTERS
চীনের প্রতিক্রিয়া
সাগরে জাপানের তেজষ্ক্রিয় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তকে ‘স্বার্থপরতা’ হিসেবে দেখে আসছে চীন৷ চীন সরকার মনে করে, নিজেদের সুবিধার বিপরীতে কারো অসুবিধা, ক্ষতি ইত্যাদি দেখতে অপারগ বলেই এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে জাপান৷ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘‘ স্বার্থপরের মতো শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে জাপানের কখনোই স্থানীয় এবং বিশ্বের মানুষদের ক্ষতি করা উচিত হবে না৷’’
ছবি: Mark Schiefelbein/AP
জাপানেও বিক্ষোভ
ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের বর্জ্য পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়ার সিদ্ধান্তে জাপানের জেলেরাও ক্ষুব্ধ, উদ্বিগ্ন৷ সাগরে বর্জ্য পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার তারা৷ জাপানের জেলেরা মনে করেন, ফুকুশিমা বিপর্যয়ের কারণে এমনিতেই সারা বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে, মাছ রপ্তানি কমেছে, প্রশান্ত মহাসাগরে বর্জ পানি ছাড়া হলে তাদের মাছ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/Reuters
দক্ষিণ কোরিয়ায় সামুদ্রিক মাছের চাহিদা কমেছে
গত মাসে পোলস্টার মিডিয়া রিসার্চের করা এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার ৬২ মানুষ মনে করেন, সি-ফুড খাওয়া এখন কমাতে হবে৷ দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে, জাপানের ছাড়া বর্জ্য পানিতে সাগরের পানি দূষিত হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হবে- তা সত্ত্বেও এত মানুষের সামুদ্রিক খাবার থেকে মুখ ফেরানো নিঃসন্দেহে দুঃশ্চিন্তার৷
ছবি: Kim Hong-Ji/Reuters
জাপানের দাবি
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সত্ত্বেও জাপান অনড়৷ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাগরে বর্জ্য পানি ছাড়ার বিষয়টিকে পরিবেশের জন্য হুমকি মনে করলেও জাপান বলেছে, ‘‘ এমন দাবির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই৷’’ জাপানের দাবি, পানি ছাড়া শুরুর পর পরীক্ষা করে দেখেছে, সাগরের পরিবেশ আগের মতোই আছে৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski
দক্ষিণ কোরিয়ায় নিষেধাজ্ঞা
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান দুক-সু জানিয়েছেন, জনমন থেকে সকল আশঙ্কা দূর না হওয়া পর্যন্ত ফুকুশিমার ফিশারিজের সব মাছ এবং সি-ফুড আমদানি বন্ধ থাকবে৷
ছবি: Jin-Man Lee/AP Photo/picture alliance
বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার
দক্ষিণ কোরিয়ায় বিক্ষোভের ঢেউ রাজধানী সৌলে অবস্থিত জাপান দূতাবাস পর্যন্ত পৌঁছে যায়৷ বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসে ঢুকে পড়লে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
ছবি: Kim Hong-Ji/Reuters
9 ছবি1 | 9
সামরিক অঞ্চলের মালিকানা
দক্ষিণ কোরিয়ার সমুদ্র অঞ্চলে অ্যামেরিকার সামরিক ঘাঁটি আছে। এদিনের বৈঠকে লি-র কাছে ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছেন, ওই সামরিক ঘাঁটির জমি অ্যামেরিকার মালিকানাধীন করে দেওয়া হোক।
ট্রাম্প বলেছেন, ''সামরিক ঘাঁটি রক্ষার জন্য আমরা দূর্গ তৈরি করেছি। তাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছি। দক্ষিণ কোরিয়াও আমাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু আমি চাই, আর লিজ নয়, দক্ষিণ কোরিয়া ওই জমি অ্যামেরিকার মালিকানাধীন করে দিক।''
লি অবশ্য এনিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেছেন, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রাম্পের চেষ্টা চোখে পড়ার মতো। ট্রাম্পকে শান্তিস্থাপক বলে ব্যাখ্যা করেছেন লি।
ট্রাম্পের তির্যক মন্তব্য
লিয়ের সঙ্গে বৈঠকের আগে ট্রাম্প অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। সমাজ মাধ্যমে ট্রাম্প পোস্ট করেন, ''কী চলছে দক্ষিণ কোরিয়ায়? বিদ্রোহ? আমরা এসব চাই না, আমরা সেখানে ব্যবসা করতে চাই।''
ঠিক কী বিষয়ে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পরে সাংবাদিক বৈঠকে এক রিপোর্টার তাকে এবিষয়ে প্রশ্ন করেন। ট্রাম্প জানান, তিনি শুনেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চার্চের উপর আক্রমণ হয়েছে। তারা আমাদের সামরিক ঘাঁটিতে ঢুকেও তথ্য সংগ্রহ করেছে। এমনটা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। তবে একই সঙ্গে তার মন্তব্য, ''এখবর সত্যি কি না, আমি জানি না।''
বস্তুত, গত কয়েকদিন দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনিফিকেশন চার্চে অভিযান চালিয়েছে দেশের প্রশাসন। এই ধরনের চার্চ অ্যামেরিকায় খুবই জনপ্রিয়।