দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের দপ্তরে পুলিশের তল্লাশি এমন এক সময়ে করা হলো যখন তাকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিসংশনের চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এদিকে, দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আটকাবস্থায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ বুধবার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের দপ্তরে তল্লাশি চালায়৷ গত সপ্তাহে তার সামরিক আইন জারির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর বিস্তৃত তদন্তের অংশ হিসেবে এই তল্লাশি চালানো হয়৷
পুলিশের তদন্তকারীরা একটি তল্লাশির পরোয়ানা প্রদর্শন করেছেন, যেখানে সুনির্দিষ্টভাবে প্রেসিডেন্টকে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে বার্তাসংস্থা ইওনহাপ লিখেছে৷ এটিকে ইউনের বিরুদ্ধে তদন্তে নাটকীয় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে৷
সাগরে জাপানি বর্জ্য, চীন, কোরিয়ায় প্রতিবাদ
ফুকুশিমা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের বর্জ্য পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়ার সিদ্ধান্তের পর থেকেই চলছে প্রতিবাদ৷ সেই প্রতিবাদে কান দেয়নি জাপান৷ ইতিমধ্যে সাগরে মিশতে শুরু করেছে তেজষ্ক্রিয় পানি৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Kim Hong-Ji/Reuters
সেই ফুকুশিমা
২০১১ সালের ১১ মার্চ ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর এক সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যায় জাপানের ফুকুশিমা দালিচি পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র৷ পরিণামে তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পরে ফুকুশিমাসহ আশপাশের এলাকায়, দেখা দেয় পরিবেশ-বিপর্যয়৷
ছবি: dapd
বিষাক্ত পানি ছাড়ায় জাতিসংঘের অনুমোদন
ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র বিস্ফোরিত হলে ১৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷ এখনো সেখানে স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরেনি৷ এরই মাঝে পরিবেশের জন্য নতুন হুমকি তৈরি করতে চলেছে ফুকুশিমার বর্জ্য পানি৷ দু বছর আগে ফুকুশিমার বর্জ্য পানি সাগরে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাপান সরকার৷ গতমাসে তাতে অনুমেদান দেয় জাতিসংঘ৷ আজ (২৪ আগস্ট, ২০২৩) তাই প্রশান্ত মহাসাগরে ফুকুশিমার বিষাক্ত পানি ছাড়তে শুরু করেছে জাপান৷
ছবি: Kyodo/Reuters
দিকে দিকে প্রতিবাদ
জাপান সাগরে তেজষ্ক্রিয় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই চলছে প্রতিবাদ৷ সবচেয়ে কড়া প্রতিবাদ আসে চীন আর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে৷ দুই দেশের পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা তো বটেই, এমনকি রাজনৈতিক দল এবং অধিকার সংগঠনগুলোও জাপানের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার৷ ওপরে ১২ আগস্ট দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সৌলে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশের ছবি৷
ছবি: KIM HONG-JI/REUTERS
চীনের প্রতিক্রিয়া
সাগরে জাপানের তেজষ্ক্রিয় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তকে ‘স্বার্থপরতা’ হিসেবে দেখে আসছে চীন৷ চীন সরকার মনে করে, নিজেদের সুবিধার বিপরীতে কারো অসুবিধা, ক্ষতি ইত্যাদি দেখতে অপারগ বলেই এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে জাপান৷ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘‘ স্বার্থপরের মতো শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে জাপানের কখনোই স্থানীয় এবং বিশ্বের মানুষদের ক্ষতি করা উচিত হবে না৷’’
ছবি: Mark Schiefelbein/AP
জাপানেও বিক্ষোভ
ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের বর্জ্য পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়ার সিদ্ধান্তে জাপানের জেলেরাও ক্ষুব্ধ, উদ্বিগ্ন৷ সাগরে বর্জ্য পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার তারা৷ জাপানের জেলেরা মনে করেন, ফুকুশিমা বিপর্যয়ের কারণে এমনিতেই সারা বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে, মাছ রপ্তানি কমেছে, প্রশান্ত মহাসাগরে বর্জ পানি ছাড়া হলে তাদের মাছ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/Reuters
দক্ষিণ কোরিয়ায় সামুদ্রিক মাছের চাহিদা কমেছে
গত মাসে পোলস্টার মিডিয়া রিসার্চের করা এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার ৬২ মানুষ মনে করেন, সি-ফুড খাওয়া এখন কমাতে হবে৷ দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে, জাপানের ছাড়া বর্জ্য পানিতে সাগরের পানি দূষিত হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হবে- তা সত্ত্বেও এত মানুষের সামুদ্রিক খাবার থেকে মুখ ফেরানো নিঃসন্দেহে দুঃশ্চিন্তার৷
ছবি: Kim Hong-Ji/Reuters
জাপানের দাবি
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সত্ত্বেও জাপান অনড়৷ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাগরে বর্জ্য পানি ছাড়ার বিষয়টিকে পরিবেশের জন্য হুমকি মনে করলেও জাপান বলেছে, ‘‘ এমন দাবির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই৷’’ জাপানের দাবি, পানি ছাড়া শুরুর পর পরীক্ষা করে দেখেছে, সাগরের পরিবেশ আগের মতোই আছে৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski
দক্ষিণ কোরিয়ায় নিষেধাজ্ঞা
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান দুক-সু জানিয়েছেন, জনমন থেকে সকল আশঙ্কা দূর না হওয়া পর্যন্ত ফুকুশিমার ফিশারিজের সব মাছ এবং সি-ফুড আমদানি বন্ধ থাকবে৷
ছবি: Jin-Man Lee/AP Photo/picture alliance
বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার
দক্ষিণ কোরিয়ায় বিক্ষোভের ঢেউ রাজধানী সৌলে অবস্থিত জাপান দূতাবাস পর্যন্ত পৌঁছে যায়৷ বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসে ঢুকে পড়লে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
ছবি: Kim Hong-Ji/Reuters
9 ছবি1 | 9
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে এক বার্তায় পুলিশ দলটি বলেছে, ‘‘বিশেষ তদন্ত দল প্রেসিডেন্টের দপ্তর, ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সি, সৌল মেট্রোপোলিটন পুলিশ এজেন্সি এবং ন্যাশনাল এসেম্বলি সিকিউরিটি সার্ভিসে অভিযান চালিয়েছে৷''
তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং তিনি এখনো জীবিত আছেন৷ নিজের পোশাকে থাকা তন্তু ব্যবহার করে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতের আগে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা গেছে৷
কোরিয়া কারেকশনাল সার্ভিসের কমিশনার জেনারেল সিং ইয়ন হেই বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণ কক্ষের এক সদস্য বাধা দিতে দরজা খুললে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা থেকে নিবৃত্ত হন৷''
দক্ষিণ কোরিয়া সংসদের প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি আবারও ইউনকে অভিসংশনের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করবে৷ ক্ষমতাসীন দল ভোটাভুটিতে বাধা দিলে গত শনিবার তাকে অভিসংশনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়৷
ইতোমধ্যে ইউনের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সামরিক আইন জারির ব্যর্থ চেষ্টার দায়ে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়েছে৷ এই চেষ্টায় তাদের ভূমিকা জানতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কর্তৃপক্ষ৷
সামরিক আইন জারির চেষ্টা দেশটির রাজনীতি এবং বিদেশ নীতি ছাড়াও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর বিরুপ প্রভাব ফেলেছে৷