করোনা আতঙ্কে এ বার ভারতে বন্ধ হল একটি জার্মান কোম্পানির অফিস। এ দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্রমশ বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। চীনে মৃত্যু আরও ১১৮ জনের।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব জুড়ে করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ভারতে নিজেদের তিনটি অফিস বন্ধ করে দিল জার্মান সফটওয়্যার কোম্পানি স্যাপ। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বেঙ্গালুরুর দফতরে দুই কর্মীর সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়ার পরেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তী নোটিস না আসা পর্যন্ত সমস্ত কর্মীকে বাড়িতে বসেই কাজ করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে চীনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ৭৫ হাজার। শুক্রবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে আরও ১১৮ জনের। সংক্রমণ আরও ছড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়।
করোনায় বিপর্যস্ত চীনের পর্যটন
ফরবিডেন সিটি সত্যিই এখন পরিত্যক্ত, চীনের প্রাচীরের অনেকাংশ বন্ধ, বন্ধ নানা বিনোদন পার্ক- সবই করোনা ভাইরাসের কারণে৷ ভিড় এড়াতে উৎসবের মৌসুমে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও স্থগিত করা হয়েছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
বিশ্বজুড়ে প্রভাব
নানা আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে করোনা ভাইরাসের প্রভাব দেখা গেছে৷ হংকংয়ের বিখ্যাত চিত্রকলা প্রদর্শনী ‘দ্য আর্ট ব্যাজেল হংকং’ বাতিল করা হয়েছে৷ ৭০তম বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে চীন ছোট পরিসরে অংশ নিয়েছে৷ বার্লিনে নিউ ইয়ার কনসার্টও বাতিল করেছে চীন৷
ছবি: Getty Images
ফরবিডেন সিটি
সাধারণত এই সময়ে স্থাপত্যশৈলীতে বিখ্যাত বিশ্বঐতিহ্যের অংশ চীনের ফরবিডেন সিটিতে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে৷ কিন্তু এবার ফরবিডেন যেন সত্যি এক পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
বন্ধ বিনোদন পার্ক
ডিজনিল্যান্ড সাংহাই অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের ‘ম্যাজিক কিংডম’ বন্ধ ঘোষণা করেছে৷ অথচ গত বছর নববর্ষে ছুটির এক সপ্তাহে চীনে পর্যটন খাতে আয় ছিল সাত হাজার ৮০০ কোটি টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo/Maxppp
প্রবেশ নিষেধ
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে চীন একের পর এক ঐতিহাসিক স্থাপনায় প্রবেশ-নিষেধাজ্ঞা টানিয়ে দিচ্ছে৷ চীনের প্রাচীরের অনেকাংশ এরই মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/C. G. Rawlins
ড্রাগন নৃত্য
ছবিতে ২০১৯ সালে সেনইয়াংয়ে একটি দল ড্রাগন নৃত্য পরিবেশন করছে৷ ড্রাগন নাচের মাধ্যমে চীনে বসন্তবরণ করা হয়৷ চীনা ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় দিন এ উৎসব হয়৷ ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি এই উৎসব হওয়ার কথা থাকলেও এবছর তা আর হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/Z. Wenkui
বিপদে ট্র্যাভেল ইন্ডাস্ট্রি
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে সারা বিশ্বে চলাচলের উপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ ফলে ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল ব্যবসায় জড়িতদের একের পর এক বুকিং বাতিল হচ্ছে৷
ছবি: Imago Images/Xinhua
রেস্তোরাঁর ব্যবসায় ভাটা
কেএফসি, পিৎজা হাট বা ম্যাকডোনাল্ডসের মতো জনপ্রিয় ফার্স্টফুড চেইনের রমরমা ব্যবসা আর নেই৷ করোনা আতঙ্কে সারা বিশ্বেই পর্যটক কমেছে৷
ছবি: picture-alliancedpa/imaginechina/Y. Xuan
7 ছবি1 | 7
বৃহস্পতিবার দুপুরে আচমকাই নোটিস দিয়ে ভারতে তাদের সমস্ত দফতর আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় স্যাপ। কর্মীদের বলা হয়, পরবর্তী নোটিস না আসা পর্যন্ত বাড়িতে বসেই কাজ করতে হবে। ভারতে স্যাপের সব চেয়ে বড় অফিস বেঙ্গালুরুতে। এছাড়াও মুম্বই এবং দিল্লির কাছে গুরগাঁওতে তাদের আরও দু'টি দফতর আছে। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, বেঙ্গালুরুর দফতরে দুই জনের শরীরে এইচ১ এন১ ভাইরাসের সংক্রমণ মেলে। যার অর্থ সোয়াইন ফ্লু। এর পরেই প্রতিটি দফতর বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বলা হয়েছে, প্রতিটি অফিস পরিষ্কার করা হবে। জীবাণুমুক্ত করা হবে। তারপর ফের অফিস খোলা হবে। বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক যখন তুঙ্গে, তখন স্যাপের এই সিদ্ধান্ত অভিনব। তবে যে দুই কর্মী সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা এর মধ্যে ভারতের বাইরে অন্য কোনও দেশে গিয়েছিলেন কি না, কী ভাবে তাঁদের এই অসুখ হল এ সব কোনও বিষয়েই কর্তৃপক্ষ কিছু জানাতে চায়নি।
একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ যে মহামারি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১ হাজার ৩০৭টি মহামারি ঘটেছে৷ সবচেয়ে বিপজ্জনক মহামারিগুলি জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Imago/W. Quanchao
প্লেগ
একুশ শতকেও ফিরে এসেছে প্লেগ রোগ৷ ২০১৭ সালে আফ্রিকার মাদাগাস্কারে প্লেগে আক্রান্ত হন দুই হাজার ৪১৭জন৷ প্রাণ হারান ২০৯জন৷ শুধু তাই নয়, মাদাগাস্কারে যাওয়া বা সেখান থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রেও জারি হয় বিশেষ সতর্কতা৷ মোট নয়টি দেশে প্লেগ মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷
২০১৫ সালে ব্রাজিলে এডিস প্রজাতির মশা থেকে ছড়ায় এই বিশেষ ধরনের ভাইরাস৷ সদ্যোজাত শিশুদের মস্তিষ্কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে এই সংক্রমণ৷ ব্রাজিল ছাড়া আরো ৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি৷ মারা যান ১৩৭ জন৷
ছবি: Reuters/J.-C. Ulate
ইবোলা
২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকার গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনিতে নতুন করে ছড়ায় ইবোলা ভাইরাস৷ এর আগে ১৯৭৬ সালে এই সংক্রমণ লক্ষ্য করা হলেও সেইবার তা একটি অঞ্চলের মধ্যেই সীমিত ছিল৷ কিন্তু একুশ শতকে এই সংক্রমণ আটকানো যায়নি৷ এই তিনটি দেশ ছাড়াও তিনটি মহাদেশের আরো ছয়টি দেশে পৌঁছে যায় ইবোলা, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে৷ এই সংক্রমণ ছড়ানোর প্রথম দুই মাস তা ধরা না পড়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Wamenya
মেনিনজাইটিস
২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মেনিনজাইটিস রোগে মারা যান ১৩৭জন৷ এর কারণ হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে অপর্যাপ্ত টিকার কথা৷ শুধু তাই নয়, পরিচিত সংক্রমণ কয়েক দশক পরপরই নতুনভাবে ফিরে আসতে পারে, যা উন্নত পরীক্ষা ব্যবস্থা না থাকলে ধরা খুব কঠিন৷
ছবি: Imago Images/Science Photo Library
চিকুনগুনিয়া
যে এডিস প্রজাতির মশা থেকে ডেঙ্গ ছড়ায়, সেই একই মশার কামড়ে হতে পারে চিকুনগুনিয়া৷ মূলত শহরাঞ্চলে দেখা যাওয়া এই সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ১৯৫২ সালে৷ কিন্তু ২০০৭ সালে নতুন করে গাবনে তা ভয়াবহ আকার ধারন করে৷ এরপর থেকে, আফ্রিকার পাশাপাশি ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ সারা বিশ্বে ধরা পড়ে৷ শুধু ২০১৬ সালেই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন সাড়ে তিন লাখ মানুষ৷ ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই রোগে প্রাণ হারান ১৩৭জন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Cabezas
মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মের্স)
২০১৩ সালের জুলাই মাসে পারব আমিরাতে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম বা মের্স৷ তারপর থেকে সেই দেশে মোট ১২জন মারা গেলেও তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি৷ এখন পর্যন্ত, দুই হাজার ৫০৬টি কেস ধরা পড়েছে এবং মারা গেছেন ৮৬২টিজন, জানাচ্ছে হু৷ মের্স ঠেকাতে অন্যান্য পরামর্শের পাশাপাশি হু এর অন্যতম পরামর্শ হচ্ছে উটের দুধ বা মূত্র পান না করা৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Kittiwongsakul
কলেরা, ইয়েলো ফিভার
হু জানাচ্ছে, বছরে অন্তত ৪০টি কলেরার ঘটনা ধরা পড়ছে গত দশ বছরে৷ কলেরা বা ইয়েলো ফিভারের মতো পুরোনো রোগ ঘুরেফিরে আসছে কারণ আক্রান্ত দেশগুলিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ ২০০৯ সালে একুশ শতকের প্রথম ইনফ্লুয়েনজা ভাইরাস (এইচ১এন১) মহামারী ধরা পড়ে৷ ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কলেরার কারণে মারা গেছেন ৩০৮জন, ইয়েলো ফিভারে ৫৭জন ও ইনফ্লুয়েনজায় ৫১জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
সার্স
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারী ছিল সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম৷ ২০০৩ সালে চীনে এই ভাইরাস দেখা যায়৷ প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন ল্যাব থেকে ছড়িয়েছিল এই ভাইরাস৷ মোট ২৬টি দেশে ছড়ানো এই সংক্রমণে আক্রান্ত হন প্রায় ৮ হাজার জন৷ মূলত চীনে ছড়ানো এই ভাইরাস আবার ফিরে আসতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন৷ সেক্ষেত্রে নতুন করে চীনে যাওয়া বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে হু৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
এ দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনার প্রকোপ আরও বেড়েছে। শুক্রবারে দেশে আরও ৫২ জনের শরীরে করোনার জীবাণু মিলেছে বলে সে দেশের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। এই নিয়ে ১৫৬ জন আক্রান্ত হলেন সেখানে। দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণের শহর ডিগুতে করোনার প্রকোপ সর্বাধিক। শুক্রবার সে দেশের প্রশাসন ডিগু শহরটিকে করোনা ভাইরাসের স্পেশাল ম্যানেজমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পুরো শহরটিকেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
চীনে এ দিন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮৯ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১১৮ জনের। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চীনের পরিস্থিতি ক্রমশ আয়ত্ত্বে আসছে। অন্যদিকে চীনের প্রশাসন জানিয়েছে এপ্রিলের মধ্যে করোনার ওষুধ বাজারে নিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।
এ দিকে বৃহস্পতিবার করোনা নিয়ে হিংসা ছড়ায় ইউক্রেনে। এ দিনই বিমানে করে চীন থেকে তাদের নাগরিকদের দেশে নিয়ে আসে ইউক্রেন। বিমান বন্দর থেকে বাসে করে তাদের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আপাতত সেই হাসপাতালেই আইসোলেশনে রাখা হবে তাদের। বাস থেকে নামিয়ে যখন তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখনই হাসপাতালের বাইরে জড়ো হওয়া জনতার সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে পুলিশের। তবে শেষ পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।