১৯৯১ সাল থেকে ফিলিপাইন্সের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে অ্যামেরিকা। এই মহড়ার নাম স্থানীয় ভাষায় বালিকাতান। যার অর্থ, 'কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে'। বস্তুত, দীর্ঘদিন ধরেই অ্যামেরিকার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই সামরিকমহড়ারব্যবস্থা করছে ম্যানিলা। কিন্তু এবছর যে মহড়ার আয়োজন হয়েছে, তার আয়তন চোখে পড়ার মতো বড়। দক্ষিণ চীন সাগরে তাইওয়ানের সমুদ্র সৈকতে চীনের সামরিক মহড়ার জবাবেই অ্যামেরিকার এই আয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে চলছে মহড়া। মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে জাপানের সমুদ্রেও।
ছবি: Huizhong Wu/AP/dpa/picture allianceমার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে এলে তার ফল ভালো হবে না বলে আগেই সতর্ক করেছিল চীন। এবার কার্যত তাইওয়ান ঘিরে ধরে তারা সামরিক মহড়া শুরু করেছে। চীনের দাবি, রুটিন সামরিক মহড়া চলছে। কিন্তু যেভাবে তারা এই মহড়া শুরু করেছে, তাতে চিন্তিত তাইপেই।
ছবি: Issei Kato/REUTERSবৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা ১২টা থেকে চীন এই মহড়া শুরু করেছে। জল, স্থল এবং আকাশে মহড়া চলছে। একের পর এক যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালীর উপর দিয়ে তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে উড়ে গেছে। যুদ্ধ জাহাজ কার্যত ঘিরে রেখেছে তাইওয়ানকে। তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে যুদ্ধজাহাজ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ছবি: Hong Wei /Xinhua/IMAGOনৌ এবং স্থলসেনা লাগাতার গোলাবারুদ ছুঁড়ছে বলে অভিযোগ। একের পর এক ব্যালেস্টিক মিসাইলও তাইওয়ান প্রণালীতে সমুদ্রের জলে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। সামান্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেই তা তাইওয়ানের মূলভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে। তাইওয়ান প্রমালী চীনের মূল ভূখণ্ড এবং তাইওয়ানকে আলাদা করেছে।
ছবি: Huizhong Wu/AP/dpa/picture allianceমহড়ায় নেমেছে চীনের স্থলসেনাও। চীন লিবারেশন আর্মি অবশ্য জানিয়েছে, এটি তাদের রুটিন মহড়া। মূল ভূখণ্ড থেকে সমুদ্র লক্ষ্য করে মিসাইল ছোঁড়া হচ্ছে।
ছবি: CCTV/AP/picture allianceঅন্যদিকে জাপানের অভিযোগ, সমুদ্রে অবস্থিত জাপানের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোনে প্রপেলড মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। বস্তুত, তাইওয়ান থেকে জাপানে গেছেন ন্যান্সি পেলোসি। তার যাত্রার অব্যবহিত পরেই ওই মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। বুঝিয়ে দিয়েছে, পেলোসির তাইওয়ান সফরের জবাবেই তারা একাজ করছে।
ছবি: Hector Retamal/AFPতাইপেই জানিয়েছে, তাইওয়ানের উপর দিয়েও মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। তাইওয়ান পার করে যা জলে গিয়ে পড়েছে। গোটা তাইওয়ানে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
ছবি: Hector Retamal/AFPসম্প্রতি তাইওয়ান সফরে গেছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার পেলোসি। গত ২৫ বছরে এই পদমর্যাদার কোনো মার্কিন রাজনীতিক তাইওয়ানে যাননি। বস্তুত, তাইওয়ানের সঙ্গে অ্যামেরিকার সুসম্পর্ক থাকলেও দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তাইওয়ান স্বশাসিত একটি অঞ্চল। চীনের একাধিপত্য তারা মেনে নেয় না। গত কয়েক বছরে চীন তাইওয়ান এবং হংকংয়ের উপর চাপ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পেলোসির তাইওয়ান সফর।
ছবি: Kyodo/dpa/picture allianceচীন আগেই জানিয়ে রেখেছিল, পেলোসি এলে তার ফল ভালো হবে না। চীনের সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে পেলোসি তাইওয়ান যান। তারপরেই ভয়াবহ সেনা মহড়া শুরু করেছে চীন। তাইওয়ানের কার্যত নাকের ডগায় একাজ করা হচ্ছে।
ছবি: EASTERN THEATRE COMMAND/REUTERS প্রায় ১৭ হাজার সেনা এই মহড়ায় যোগ দিচ্ছেন। তার মধ্যে মার্কিন সেনার সংখ্যাই ১২ হাজার। রবার বুলেট নয়, আসল কার্তুজ ব্যবহার করা হবে এই মহড়ায়। দক্ষিণ চীন সাগরে একটি ভুয়া জাহাজ তৈরি করা হয়েছে। মহড়ায় অংশগ্রহণকারীরা ওই জাহাজটিকে ধ্বংস করবে। পাশাপাশি মিসাইল, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও থাকছে এই মহড়ায়।
মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান আনা হচ্ছে এই মহড়ায়। পাশাপাশি হাইমার লঞ্চার, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক জ্যাভেলিনও আনা হচ্ছে ছোট্ট ফিলিপাইন্স দ্বীপে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ফিলিপাইন্সের আগের সরকার অ্যামেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও এতটা কাছে ছিল না। বর্তমান সরকার, অ্যামেরিকাকে বিপুল গুরুত্ব দেয়। বিশেষ করে চীন তাইওয়ান সীমান্তে আগ্রাসন দেখাতে শুরু করার পর ফিলিপাইন্স আগের চেয়ে অনেক বেশি অ্যামেরিকার মুখাপেক্ষী হয়েছে।
অ্যামেরিকাও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে বদ্ধপরিকর। বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সমুদ্রে চীনের ক্ষমতা অনেক বেড়েছে। অ্যামেরিকা সেই ক্ষমতা কমাতে বদ্ধপরিকর। এবং সে কারণেই এই বিপুল মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এএফপি)