ইউরোপের রাজনৈতিক আঙিনায় চরম দক্ষিণপন্থিদের উত্থানের প্রবণতা থেমে গেল স্পেনে৷ সাধারণ নির্বাচনে দুই প্রধান দলের ব্যর্থতার ফলে অবশ্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়ে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
স্পেনে সাধারণ নির্বাচনের তাৎপর্য শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই৷ ইউরোপীয় রাজনীতির উপরেও তার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ক্ষমতাকেন্দ্রে দুই-দলের আধিপত্যের দিন শেষ করে সে দেশে নতুন রাজনৈতিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে৷ তবে পোল্যান্ড ও ফ্রান্সের মতো সেই শক্তি কট্টর দক্ষিণপন্থি নয়৷ মূল স্রোতের দলগুলিকে সাজা দিয়ে ভোটাররা বাম ও উদারপন্থিদেরই দিকেই ঝুঁকেছেন৷
যে দেশে কয়েক দশক আগে পর্যন্ত জেনারেল ফ্রাংকোর নেতৃত্বে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা চালু ছিল, সে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তোরণের উপর বাড়তি নজর রয়েছে৷ এই প্রথম রক্ষণশীল ও সমাজতান্ত্রিক দুই বড় দল প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি৷ ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল পপুলার পার্টি সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেও প্রয়োজনীয় আসনসংখ্যা থেকে অনেক দূরে রয়ে গেছে৷ উত্থান হয়েছে নতুন দুই রাজনৈতিক দলের৷ চরম বামপন্থি ‘পোদেমোস' দল এবং মধ্যপন্থি নাগরিক দল ভোটের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পেয়ে স্পেনের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়েছে৷
চরম বামপন্থি ‘পোদেমোস' দলের সাফল্যকে ব্যয় সংকোচের নীতির বিরুদ্ধে ইউরোপের রায় হিসেবে তুলে ধরেছেন সমমনা গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস৷
নির্বাচনের এই ফলাফল নতুন সরকার গঠনের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠতে পারে৷ স্পেনের রাজনীতি জগতে কোনো পক্ষেরই এখনো জোট সরকারের কোনো অভিজ্ঞতা নেই৷ ফলে নতুন করে নির্বাচনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
স্পেনের এক সংবাদপত্র বিশেষ ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্রাফিকের মাধ্যমে পাঠকদেরই জোট গড়ার সুযোগ দিচ্ছে৷
স্পেনে দুই-দলীয় শাসন ব্যবস্থা অচল হয়ে যাবার প্রেক্ষাপট তুলে ধরছেন জোয়ানা রামিরো৷
গ্রিসের প্রতি ইইউ-র ‘ছোট’ দেশগুলোও নারাজ
পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশই আজ ঋণ মকুব করে গ্রিসকে সাহায্য করতে নারাজ৷ ব্যয় সংকোচ ও কড়া সংস্কারের সুফল ভোগ করে এ সব দেশ আজ প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের সাফল্য অর্জন করেছে৷ গ্রিসও সংস্কার চালাক – এটাই তাদের প্রত্যাশা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Y. Behrakis
সাফল্যের গর্বে লিথুয়েনিয়া
লিথুয়েনিয়ার প্রেসিডেন্ট ডালিয়া গ্রিবাউসকাইটে ইউরো এলাকার জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস সম্পর্কে কড়া মন্তব্য করেন৷ তাঁর মতে, গ্রিস শুধু কথার খেলাপ করে চলে৷ আজ কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে সেটা আগামীকাল ঠেলে দেয়৷ উল্লেখ্য, প্রায় ২৫ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল লিথুয়েনিয়া৷ কঠিন সংস্কার ও অনেক ত্যাগের পর সে দেশ আজ নিজস্ব সাফল্যে গর্বিত৷
ছবি: DW
ইউরোপের সিলিকন ভ্যালি এস্টোনিয়া
সোভিয়েত আমলের বিশাল আমলাতন্ত্র ঝেড়ে ফেলে এস্টোনিয়া আজ তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চমকপ্রদ সাফল্য দেখাচ্ছে৷ অথচ সরকারের কড়া সংস্কার কর্মসূচি সত্ত্বেও সে দেশের মানুষ চরম আত্মত্যাগ স্বীকার করে আজকের অবস্থায় পৌঁছেছেন৷ সে দেশের প্রেসিডেন্ট টোমাস হেন্ডরিক ইলভেস বলেন, ইউরো এলাকার বাকি ১৮টি দেশে গ্রিসকে বাঁচাতে কর বাড়ানোর প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করলে মানুষ কী রায় দেবে, একবার ভেবে দেখেছেন?
ছবি: Lingvist
বাণিজ্যে লাটভিয়ার সাফল্য
লিথুয়েনিয়ার মতো লাটভিয়াও অতীতের বোঝা ঝেড়ে ফেলে নিজস্ব কৌশলগত অবস্থানের ফায়দা তুলেছে৷ রাশিয়া ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে দেশটি৷ ২০০৪ সালে লিথুয়েনিয়ায় ইউরো চালু হয়৷ ফলে অঞ্চলের অন্যান্য অনেক দেশের মতো সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভাল্ডিস ডমব্রফস্কিস মনে করেন, গ্রিসেও সংস্কার ছাড়া কোনো সমাধানসূত্র সম্ভব নয়৷ এই সত্য মেনে না নিলে ‘গ্রেক্সিট’ অনিবার্য৷
ছবি: Reuters
স্লোভাকিয়ার গাড়ি শিল্প
শুধু সংস্কার ও ব্যয় সংকোচের মাধ্যমে নয় – শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের মূলধন করে স্লোভাকিয়া গাড়ি নির্মাতাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ জার্মানির ফলক্সভাগেন বা দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়া কোম্পানি সে দেশে উৎপাদন করতে এগিয়ে এসেছে৷ অপেক্ষাকৃত কম মজুরি স্লোভাকিয়ার জন্য বাড়তি সুবিধা বয়ে এনেছে৷ বিদেশি বিনিয়োগ অর্থনৈতিক উন্নতি আরও তরান্বিত করেছে৷
ছবি: DW/E. Schuhmann
সাবেক ইয়ুগোস্লাভিয়ায় দক্ষতার প্রতীক স্লোভেনিয়া
ইয়ুগোস্লাভিয়া ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে গেছে৷ স্লোভেনিয়া কিন্তু তার অতীতের সুনাম ও সংস্কার কর্মসূচির ভিত্তিতে অতি কম সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরো এলাকার সদস্য হয়ে উঠতে পেরেছে৷ সংকটের মুখে ব্যাংকিং ব্যবস্থার কড়া সংস্কার করতে পেরেছে দেশটি৷ বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে৷ ফলে আজ সে দেশের সমৃদ্ধির ভিত্তি বেশ মজবুত৷
ছবি: Reuters
‘আমাদের সমৃদ্ধির অভ্যাস নেই’
পোল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারেক বেলকা একবার পূর্ব ইউরোপের মানুষের সহ্যশক্তি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের এখনো সমৃদ্ধির অভ্যাস হয়নি৷’’ তাঁর মতে, এই অঞ্চলের মানুষের অভিজ্ঞতা হলো, সংকট সামনে এলে সংস্কারের মাধ্যমে তা অতিক্রম করা যায়৷ আজকের কষ্ট আগামীকাল সুফল বয়ে আনে৷
ছবি: AP
গ্রিক ট্র্যাজিডি
গ্রিস একেবারেই সংস্কারে নারাজ – এই অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়৷ আন্তর্জাতিক দাতাদের চাপে সে দেশ এখনো পর্যন্ত যে সংস্কার চালিয়েছে, তার ফলে সাধারণ মানুষেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে৷ কিন্তু বিশাল আমলাতন্ত্র, কর আদায়ে গাফিলতি, প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল ব্যয়ের মতো কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে সদিচ্ছার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে না৷ অতীতের ঋণভার ছাড়াও রাষ্ট্রের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বিশাল ফারাক গ্রিসের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তুলছে৷