দক্ষিণ সুদানে নারী ও শিশুদের উপর ভয়াবহ যৌন সহিংসতা
৯ ডিসেম্বর ২০১৮
দক্ষিণ সুদানে নারী ও শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এই বিষয়টি নিয়ে ১৮ ডিসেম্বর আলোচনায় বসবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ সুদানে সম্প্রতি দেড়শ'রও বেশি নারী ও কিশোরীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে৷ তাদের উপর ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের যৌন অত্যাচার চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনটি জাতিসংঘ সংস্থার নেতারা৷
উত্তরাঞ্চলের শহর বেনতিউ এ হামলা চালানোর সময় অস্ত্রধারী পুরুষ, যাদের অনেকে ইউনিফর্ম পরিহিত ছিল তারা বিভিন্ন বয়সি নারীদের ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করে৷ ইউনিসেফ, ইউএন এইড এবং ইউএন পপুলেশন ফান্ড-এর প্রধানরা এক যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানান৷
তিনটি সংস্থাই ঐ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে, অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে এর বিচারের দাবি জানিয়েছেন৷ গত সপ্তাহে ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছিল, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ত্রাণ বিতরণের সময় সেখানে পৌঁছানোর পথে ১২৫ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ এক বিবৃতিতে তিনি দক্ষিণ সুদানের সব রাজনৈতিক দলকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি এসব ঘটনা তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি৷
শান্তি চুক্তি হলেও ঘরে ফিরছেন না তাঁরা
দক্ষিণ সুদানের সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সম্প্রতি একটি শান্তি চুক্তি সই হয়েছে৷ তবুও ঘরে ফেরার সাহস পাচ্ছেন না দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ছেড়ে যাওয়া বাসিন্দারা৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
নতুন দেশ
২০১১ সালে সুদান থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন একটি দেশ হিসেবে দক্ষিণ সুদানের যাত্রা শুরু হয়৷ কিন্তু মাত্র দুই বছর পরই দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও তখনকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচারের মধ্যে বিবাদের পর গৃহযুদ্ধ শুরু হয়৷
ছবি: Reuters
শান্তিচুক্তি
সম্প্রতি সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি সই হয়েছে৷ গৃহযুদ্ধে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/M. Hjaj
তবে ভয় কাটেনি
দক্ষিণ সুদানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মালাকাল৷ গৃহযুদ্ধের কারণে সেখানকার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ ঘর ছেড়ে শহরের কাছে স্থাপিত জাতিসংঘের শিবিরে বাস করছেন৷ শান্তিচুক্তি হলেও তারা এখনো বাড়ি ফেরার সাহস পাচ্ছেন না৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
মৃত্যুর ভয়
জোসেফিন আদিমিস নামের এক নারী তাঁর পরিবারের আট সদস্যের সঙ্গে জাতিসংঘের ঐ শিবিরে থাকেন৷ তিনি বলছেন, চুক্তি হলেও তিনি এখনো ফিরতে চান না, কারণ, তাঁর আশংকা কেউ তাঁর বাড়ি দখল করে আছে৷ ফলে বাড়িতে গেলে তারা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
মালাকালে যুদ্ধ
গৃহযুদ্ধের সময় এলাকাটি একেকবার এক পক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছিল৷ ফলে শহরটির প্রায় পুরোটা ধ্বংস হয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Lynch
বসবাসের অনুপযুক্ত
কয়েক বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে শহরের অবকাঠামো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে৷ যেমন, স্কুলের এই শ্রেণিকক্ষটি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
ব্যস্ততা নেই
মালাকাল একসময় ব্যস্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল৷ সেখান থেকে সুদানে মালপত্র রপ্তানি করা হতো৷ কিন্তু যুদ্ধ সেই ব্যস্ততা কেড়ে নিয়েছে৷ এখন জাতিসংঘের শিবিরের কাছে ব্যস্ত বাজার গড়ে উঠেছে৷ ফলে নীল নদের মাছ মালাকালে না গিয়ে জাতিসংঘের বাজারেই যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উৎসাহ
দেশটির আপার নীল অঞ্চলের তথ্যমন্ত্রী ঘরছাড়া মানুষদের তাঁদের বাড়িতে ফিরে যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন৷ তিনি তাঁদের বলছেন, মালাকালে এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে৷ ফলে সেখানকার সবকিছু ঠিকঠাক চলছে বলে দাবি করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
8 ছবি1 | 8
২০১৩ সাল থেকে দক্ষিণ সুদানে যৌন সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে৷ চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে যৌন সহিংসতার ২ হাজার ৩০০ টি ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগই শিশু৷ তিনটি সংস্থা বলছে, বেশিরভাগ ঘটনাই রিপোর্ট করা হয় না৷ তাই এই সংখ্যাটা অকল্পনীয়৷ ধর্ষণের পাশাপাশি এদের অমানবিকভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়৷ এছাড়া অনেকের কাছ থেকে যাবতীয় জিনিস ছিনতাই করা হয়, বিশেষ করে ত্রাণ সামগ্রী নেয়ার রেশন কার্ড৷
জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গত মাসে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, দক্ষিণ সুদানে যৌন সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছেছে৷