দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য কর হ্রাসের পরিকল্পনা জার্মানির
১১ জুলাই ২০২৪
দক্ষ বিদেশি কর্মীরা জার্মানিতে চাকুরি নিলে তাদের কর হ্রাসের পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার৷ সমালোচকরা অবশ্য এই পরিকল্পনা সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কর সুবিধা, যারা অবসরের আগে লম্বা সময় কাজ করবেন তাদের বাড়তি সুবিধা দেয়া এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর মতো বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যবসার জন্য জার্মানিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে চাচ্ছে ইউরোপের দেশটির সরকার৷
জার্মানিতে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের আসতে উৎসাহ দিতেও পরিকল্পনা রয়েছে৷ দেশটির অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনার বলেন, ‘‘বিদেশি পেশাদারদের জন্য আমরা জার্মানিতে তাদের প্রথম তিন বছরের কর কমানোর ব্যবস্থা করছি৷ যোগ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে যারা আসবেন তাদের জন্য ৩০%, ২০% এবং ১০% এধরনের হ্রাসের সুযোগ থাকবে৷''
জার্মানিতে অনেকে অবশ্য এই পরিকল্পনাকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন৷ বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং ট্রেড ইউনিয়নবাদীরা এই পরিকল্পনাকে ‘‘অভ্যন্তরীণ কর্মীদের প্রতি নির্লজ্জ বৈষম্য,'' ‘‘এমন এক নীতি যা এখানকার সবার প্রতি প্রকাশ্য শত্রুতার সামিল,'' ‘‘অভ্যন্তরীণ শ্রমশক্তির প্রতি চরম উদাসীনতা'' বলে আখ্যা দিয়েছেন৷
জার্মানিতে অভিবাসন: কে, কেমন সুবিধা পাচ্ছে?
জার্মানিতে শরণার্থীরা কী ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা পান তা নিয়ে নানা সময় নানা ধরনের বক্তব্য দেন রাজনীতিবিদরা৷ এই নিয়ে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়৷ চলুন জেনে নেই এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য৷
ছবি: Bodo Schackow/dpa/picture alliance
স্বাস্থ্যসেবা
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা শুধুমাত্র অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা এই দাঁতের চিকিৎসা পেয়ে থাকেন৷ এধরনের সেবা বলতে শারীরিক আঘাত পাওয়ার মতো ব্যাপার বোঝানো হয় যার চিকিৎসা হাসপাতালে হয়ে থাকে৷ জার্মানির সমাজ কল্যাণ দপ্তর সেই সেবার খরচ বহন করে৷
ছবি: picture alliance/dpa/I. Wagner
রাজ্যভেদে নিয়ম আলাদা
জার্মানির ষোলো রাজ্যে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ তবে অধিকাংশ রাজ্যে, আশ্রয়প্রার্থীরা চিকিৎসা নেয়ার আগে সমাজ কল্যাণ দপ্তর থেকে সেটির অনুমতি নিতে হয়৷
ছবি: Paul Zinken/dpa/picture alliance
নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা
তবে, জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেলে কিংবা আশ্রয় মঞ্জুর হয়ে গেলে তখন সেই ব্যক্তি নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন, যার খরচ সংবিধিবিদ্ধ স্বাস্থ্য বিমা তহবিল থেকে আসে৷ কসমেটিক সার্জারির খরচ স্বাস্থ্যবিমা বহন করে না৷
ছবি: Friso Gensch/dpa/picture alliance
প্রাথমিক আশ্রয় ও আবাসন
জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীরা শুরুতে বিভিন্ন প্রাথমিক অভ্যর্থনাকেন্দ্রে থাকার সুযোগ পান৷ এগুলোতে সাধারণত অনেক মানুষ একত্রে থাকেন৷ সেখানে রুম শেয়ার করে থাকতে হয়৷ তবে সেখানে নিজেদের রান্নাবান্না করার আয়োজন থাকার পাশাপাশি সব বেলা খাবার সরবরাহও করা হয়৷ এসব কেন্দ্রে কয়েক সপ্তাহ থেকে ১৮ মাস অবধি থাকতে হতে পারে৷
ছবি: Patrick Pleul/picture alliance/dpa
আশ্রয়প্রার্থীদের ছড়িয়ে দেয়া হয়
অভ্যর্থনাকেন্দ্র থেকে আশ্রয়প্রার্থীদেরকে একপর্যায়ে বিভিন্ন শহরে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ এসবকেন্দ্রে কয়েক ডজন থেকে কয়েকশত মানুষ একত্রে থাকেন৷
ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance
আর্থিক সহায়তা
একজন আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে সাধারণত প্রয়োজনীয় সবকিছু পেয়ে থাকেন৷ এসবের মধ্যে রয়েছে, খাবার, থাকার ব্যবস্থা, হিটার, পোশাক, প্রসাধনী, এবং গৃহস্থলিতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য৷ পাশাপাশি একক ব্যক্তিরা পকেট খরচ হিসেবে মাসে ১৫০ ইউরো অবধি পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তবে ব্যতিক্রমও আছে
যদি আশ্রয়প্রার্থীকে খাদ্য, পোশাক এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ সম্ভব না হয়, তখন তাকে প্রতিমাসে সেসবের জন্য প্রতিমাসে ৩৬৭ ইউরো দেয়া হয়৷ পাশাপাশি তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে পারেন৷ কিন্তু সেজন্য মাসে ২০০ ইউরোর বেশি নিতে পারবেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য
জার্মান রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দেশটিতে আশ্রয় নেয়া আশ্রয়প্রার্থীদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে৷ এ নিয়ে বিতর্কও দেখা দেয়৷ কারণ, সেখানে অতিরঞ্চিত তথ্যও থাকে৷ ডয়চে ভেলে তাই এধরনের কিছু তথ্য যাচাই করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
8 ছবি1 | 8
সরকারে থাকা দলগুলোর মধ্য থেকেও এই বিষয়ে সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷ জোট সরকারের অন্যতম শরিক সবুজ দল এই ইস্যুতে জার্মান সংবিধানে উল্লেখিত সমান অধিকার এবং শ্রম আইনের দিকে ইঙ্গিত করেছে৷
দলটির আইনপ্রণেতা বেয়াটে ম্যুলার গেমেকে বলেন, ‘‘জার্মানিতে আমাদের সবাইকে সমান দেখার নীতি রয়েছে৷ এর অর্থ হচ্ছে কারো সঙ্গে মন্দ আচরণ করা উচিত নয়৷ আমার দৃষ্টিতে এটা এদেশের মানুষের প্রতি কিছুটা বৈষম্যমূলক হবে যদি আমরা বলি যে যারা অন্যদেশ থেকে আসবেন তাদের বেতনের অন্তত কিছু অংশের কর মওকুফ করা হবে৷''
জার্মান ইকোনমিক ইন্সটিটিউটের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, জার্মানিতে বর্তমানে পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার দক্ষ কর্মীর ঘাটতি রয়েছে৷ অর্থনীতিবিদদের হিসেবে এই কর্মী ঘাটতি না থাকলে দেশিটর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি বছর আরো এক শতাংশ বেশি হতে পারতো৷ সংখ্যাটি বেশ বড় কারণ ধারণা করা হচ্ছে ২০২৪ সালে জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ০.২%৷