বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ রিভিউ নিষ্পত্তির আগে কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর না করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক আইনে এই সুযোগ নেই৷
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিএনপি স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মানের কথা বলে আসলেও এর আগ পর্যন্ত বিচারের রায়ের ওপর কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷ তবে বুধবার বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড রিভিউয়ের আগে কার্যকর করা না করা নিয়ে মন্তব্য করেন৷ তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় নিয়ে রিভিউ আবেদন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে৷
ট্রাইব্যুনাল গঠন করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ সালে৷ এ বছর প্রথম রায়ে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্ন অভিযাগে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয় ‘বাচ্চু রাজাকার’ নামে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদকে৷
ছবি: AP
কাদের মোল্লার ‘বিজয়প্রতীক’, দেশজুড়ে বিক্ষোভ
গত ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় একাত্তরের কর্মকাণ্ডের জন্য ‘মিরপুরের কসাই’ নামে পরিচিতি পাওয়া কাদের মোল্লাকে৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় এবং রায়ের পর কাদের মোল্লা আঙুল উঁচিয়ে বিজয়প্রতীক দেখানোয় শুরু হয় বিক্ষোভ৷
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে প্রবল অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ দেখা দিলে আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষেরও আপিলের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়৷ এর আগে শুধু আসামিপক্ষের আপিল করার সুযোগ ছিল৷ কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের পর জামায়াতে ইসলামীও বিক্ষোভে নামে৷ দলটি মনে করে, এ রায় যথার্থ হয়নি৷ সেই থেকেই শুরু রায়ের প্রতিবাদে হরতাল৷
ছবি: Reuters
সাঈদির ফাঁসির আদেশ
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন অপরাধে ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইবুনাল৷ প্রতিবাদে হরতাল ডাকে জামায়াতে ইসলামি৷ জামায়াত এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়৷ সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর-মন্দির লুট, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ স্টেশনে হামলা,অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ – সবই ঘটেছে, অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে তখন৷
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
‘নাস্তিক’ ব্লগারদের শাস্তি দাবি
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সোচ্চার কয়েকজন ব্লগারের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয় মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজত-এ ইসলাম৷ ব্লগারদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তাঁদের ‘নাস্তিক’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সমর্থন এ আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে৷ চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখে সরকার৷
ছবি: Reuters
অবশেষে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ
মঙ্গলবার সংশোধিত আপিল আইনের আওতায় গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসি দিয়ে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় দেয় আপিল বিভাগ৷রায় ঘোষণার আগে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
উৎসবের আনন্দ
এ রায়ে আবার জেগে ওঠে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর৷ ‘মিরপুরের কসাই’ কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ শুনে সেখানে আবার নামে মানুষের ঢল৷ অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি হতে চলেছে – এটাই তাঁদের আনন্দ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
জামায়াতের হরতাল, বিক্ষোভ
কাদের মোল্লার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী৷ রায়কে ‘ভুল’ দাবি করে, অভিযুক্ত সব নেতার মুক্তির দাবিতে এ হরতাল ডেকেছে তারা৷ আবার বিক্ষোভে নেমেছে জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা৷কাদের মোল্লার আইনজীবী জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ডের রায় পর্যালোচনার জন্য আবেদন করা হবে৷ তবে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ রায় পর্যালোচনার কোনো সুযোগ নেই৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সংবাদ সম্মেলনে তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, এই রায় দুই কারণে নজীরবিহীন৷ কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পর আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের সুযোগ পায়৷ আর নিম্ন আদালতের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে উচ্চ আদালতের মত্যুদণ্ডাদেশ৷ তিনি আরো বলেন, এই বিচার প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না৷ তাই তিনি কাদের মোল্লাকে রিভিউয়ের সুযোগ দেয়ার কথা বলেন এবং রিভিউ নিষ্পত্তির আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিরোধিতা করেন৷
তবে এর জবাবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷ কারণ তাঁর বিচার প্রচলিত আইনে হয়নি৷ ১৯৭৩ সালের মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে হয়েছে৷ তিনি মনে করেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলেই কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা যাবে৷ রায়ের কপি প্রথমে ট্রাইব্যুনালে যাবে৷ সেখান থেকে যাবে কারাগারে৷ এর পর কারা কর্তৃপক্ষ রায় কার্যকর করার উদ্যোগ নেবে৷
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, এই বিচারে কোনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না৷ একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার প্রচলিত আইনে সম্ভব ছিলনা৷ পৃথিবীর কোন দেশে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার প্রচলিত আইনে হয়নি৷