দনেৎস্ক থেকে সব বেসামরিক নাগরিকদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি৷ রাশিয়ার সেনাবাহিনীর জোর আক্রমণের মুখে শনিবার এই ঘোষণা দেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
রেডক্রস এবং জাতিসংঘকে ইউক্রেন জানিয়েছে, দনেৎস্ক থেকে তাদের অনেক সেনাকে বন্দি করেছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী৷ ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রথম দিন থেকে পূর্ব দনেৎস্কে হামলা চালিয়ে আসছে রুশ বাহিনী৷
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে শিশুসহ লাখো সাধারণ মানুষ আটকা পড়েছে৷ শুক্রবার ৬ জন নিহত হয়েছে৷ ইউক্রেনের সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দনেৎস্কের মুক্তাঞ্চলে এখনও বাস করছেন ২ লাখ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ, এদের মধ্যে ৫০ হাজার শিশু৷ শনিবার সন্ধ্যায় জরুরি ভিত্তিতে দনেৎস্ক খালি করার সরকারি নির্দেশ জারি করা হয়৷
পূর্ব ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনে পথের কাঁটা যারা
রুশ বাহিনী যেখানে অবস্থান করছে, সেখান থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে রয়েছেন ইউক্রেনের এই যোদ্ধারা৷ সম্ভাব্য পরিণতি হয়ত মৃত্যু–তা জেনেও শত্রুশিবিরকে রুখতে সবসময় প্রস্তুত তারা৷ বিশেষ এই ব্যাটেলিয়নের কথা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
স্নায়ুর জোর
কার্পেথিয়ান জিশ নামে এই ব্যাটেলিয়নের ফিল্ড কমান্ডার ডজভিন বলেন, ‘‘যাদের মন শক্ত, এখন তারাই যুদ্ধ করতে পারবেন৷ কঠিন এবং ভীতিকর এই যুদ্ধা’’ যুদ্ধক্ষেত্রে তার নাম ডজভিন অর্থাৎ এটি হলো ‘নম দে গেররে’৷ নিরাপত্তার কারণে নিজের আসল নাম গোপন রেখেছেন তিনি৷ তার মতো সব যোদ্ধাই জানেন কখনো না কখনো বিধ্বংসী সামরিক ট্যাঙ্কের মুখোমুখি হতে পারেন তারা৷ সম্প্রতি প্রায় অক্ষত ট্যাঙ্ক ‘পাকড়াও’ করা হয়েছে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
যীশুর ছবির সামনে
পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অগ্রগতি রুখতে কার্পেথিয়ান জিশ সবসময় প্রস্তুত৷ রুশ সেনা মোকাবিলায় কিয়েভের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছিল ইউক্রেনীয় এবং বিদেশি নাগরিকদের এই ইউনিট৷ দেখা যাচ্ছে, যীশু খ্রিস্টের একটি ছবির সামনে হ্যান্ড গ্রেনেড রেখে দিয়েছেন তারা৷ তাদের চিন্তা রুশ ড্রোনগুলিকে নিয়ে৷ সেগুলিকে ‘কালো মেঘ’ বলছেন এই ব্যাটেলিয়নের যোদ্ধারা৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
শত্রুদের ঠেকিয়ে রাখা
এই যোদ্ধারা বলছেন, তারা ইউক্রেনের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ এ এক ভয়ঙ্কর প্রতিশ্রুতি৷ এতে তারা সবাই একসঙ্গে যুক্ত৷ এক যোদ্ধা বলেন, ‘‘গতকাল ভোররাতে একটা, দুইটা এবং চারটায় গোলাবর্ষণ করছিল ওরা, যাতে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়৷ তবে আমাদের ইতিবাচক থাকতেই হবে৷’’ মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এই ব্যাটেলিয়নের যোদ্ধারা সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পেরেছেন৷ ফলে সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন তারা, পাবেন সেনা ভাতাও৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
অবকাশ কোথায়?
রুশিন নামের এক যোদ্ধা (নিরাপত্তার কারণে আসল নাম প্রকাশ গোপন রাখা হয়েছে) কার্পেথিয়ান জিশ ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি সোফায় বসে রয়েছেন৷ কিন্তু অবসর মোটেও নেই তাদের৷এক যোদ্ধা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে থাকার সম্ভাব্য পরিণতি আমরা সকলেই জানি এবং আমরা সবাই এর মধ্যেই শান্তি খুঁজে চলেছি৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
মর্টার দিয়ে আক্রমণ
কার্পেথিয়ান ব্যাটেলিয়নের যোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছেন মর্টার দিয়ে৷ আলোকচিত্রীর ছবিতে ধরা পড়েছে এই দৃশ্য৷ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাহায্যের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন অসংখ্য ইউক্রেনীয় এমনকি অনেক বিদেশি সহযোগীও৷ লিও নামের বছর তেত্রিশের এক তরুণবলেন, ‘‘আমি নাৎসি নই, আমি জাতীয়তাবাদী৷ রাশিয়ান ছাড়া সব জাতীয়তার, সব বর্ণের মানুষকে আমি সম্মান করি৷ রাশিয়ানরা শত্রু৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
টার্গেট পুটিনের ছবি
নিজেদের শারীরিক ক্ষমতায় যাতে কোনোভাবেই মরচে না ধরে, তার জন্য শারীরিক কসরত চালিয়ে যাচ্ছেন নতুন যোগ দেয়া সদস্যরা৷ প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নিতে তারা প্রশিক্ষণ নেন৷ রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের ছবি সামনে রেখে সেটিকে টার্গেট করে অনুশীলন করছেন যোদ্ধারা এমন ছবিও দেখা গিয়েছে৷ ডেনিস পোলিশচুক নামে এক যোদ্ধা বলেন, ‘‘ যুদ্ধের সময় তিনি কী করেছিলেন- সন্তানরা জানতে চাইলে তিনি বলতে পারবেন যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা
কার্পেথিয়ান জিশ ব্যাটেলিয়নের চিকিৎসক এবং সদস্য দেখে নিচ্ছেন ঘাঁটিতে পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে কি না৷ ছবিতে ধরা পড়েছে এই দৃশ্য৷ কনর নামে এক ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবক এবং ফ্রন্টলাইনে কর্মরত সাবেক সেনা চিকিৎসক বলেন, ‘‘যত বেশি সময় যুদ্ধ চলবে, এটি ততই ক্লান্তিকর হয়ে উঠবে৷’’ আহত নারী, শিশু এবং যোদ্ধাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহায়তা পেতে ব্যর্থ হওয়ার ছবি দেখে ব্রিটেন থেকে ইউক্রেনের হয়ে লড়তে এসেছেন তিনি৷
এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রোববার জানিয়েছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রাশিয়ার নৌবাহিনী হাইপারসনিক জিরকন ক্রুস মিসাইল হাতে পাবে৷ এরপরই এটা কোথায় স্থাপন করা হবে তা নির্ধারণ করবেন তারা৷
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অন্যদিকে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূর পাল্লার ক্ষেপাণাস্ত্র দিয়ে ওলেনিভকা কারাগারে হামলার পরিকল্পনা করছে, যাতে তাদের সেনারা আত্মসমর্পণ না করে৷
এদিকে, রাশিয়ার গ্যাস জায়ান্ট গ্যাজপ্রম লাটভিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে৷ শনিবার খারকিভে তিনটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি স্কুল পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে৷ রোববার সকালেও খারকিভে ব্যাপক গোলা বর্ষণ শুরু করেছে রুশ বাহিনী৷